আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাঁদাবাজী কি দেশবাসীর নিয়তি?

সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরা কোথায় আছে ? ওরা লুকিয়েতো নেই। তাহলে কেন এদের নির্মূল করা যাচ্ছে না? সরকার ধরে ধরে জঙ্গি নির্মূল করতে পারলে চাঁদাবাজী বন্ধ করতে পারছে না কেন? জঙ্গি নির্মূল তাতো ছিল অসাধ্য সাধন। তবুও সরকার তাতে সফল হয়েছে। চাঁদাবাজ সন্ত্রসীরাতো আর ইঁদুরের গর্তেই লুকিয়ে নেই যে লোকসমাজে তাদের দেখা যায় না ? ওরাতো আর নিশাচর নয় , যে রাতের আঁধারে বের হয়। প্রকাশ্যে যদি থাকে তাহলে এদের নির্মুল করা যাচ্ছে না কেন ? এটিকে দলপ্রীতি, নাকি সরকারের আন্তরিকতার অভাব বলবো ।

পত্রিকায় যদ্দুর জানতে পারি তাতে, এসব চাঁদাবাদের অধিকাংশেররই বড়ভাই, লাটভাই আছেন। এরা থাকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। তাই চাঁদাবাজী হয়; বন্ধ হয় না। ঈদ এলেই বাড়ে। ঈদ আসবে কিন্তু চাঁদাবাজী হবে না তা কিন্তু কখনও হয়নি? এটা ব্যবসায়ী তথা দেশবাসীর নিয়তি।

সব সময় যা হয়, এবারও তাই হচ্ছে। পেশাদার চাঁদাবাজরা ব্যবসায়ী ও সমাজের সম্পন্ন লোকদের ফোন করে চাঁদা দাবি করছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে মোবাইলে মোটা অংকের টাকা চেয়ে শাসানি, চাঁদা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চিঠি এবং সেই সাথে ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ হিসেবে কাফনের কাপড় পাঠানোর ভয়াবহ তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া আচরণ বর্তমানে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরে আসায় চাঁদাবাজরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।

গত¬কাল একাধিক দৈনিকে রাজধানীর এক হোটেল ব্যবস্থাপককে ‘হয় চাঁদা নয় নয় মৃত্যু’ শীর্ষক রেজিস্ট্রি করা চিঠি এবং সেই সাথে দুই টুকরো কাফনের কাপড় পাঠানোর খবরে আতঙ্ক ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ছোট দোকান মালিকরা পর্যন্ত বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বলা বাহুল্য পরিস্থিতি উদ্বেগ-আতঙ্কের। পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে মিরপুরে এক ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা চেয়ে চিঠি দেয়ার খবর। ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।

না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে চাঁদাবাজরা। মৃত্যু পরোয়ানা হিসেবে কাফনের কাপড়ও পাঠিয়ে দিয়েছে তারা। এটাও বলেছেÑ পুলিশে খবর দিলে বিপদ আরো বাড়বে। শুধু বেলাল হোসেন নয় গত কয়েক দিনে আরো অনেক ব্যবসায়ীর কাছেই চাঁদা দাবি করা হয়েছে। প্রতিদিনই এমন খবর ছাপা হচ্ছে ঢাকার পত্রিকাগুলোতে।

বরাবরই ঈদ মৌসুমে চাঁদাবাজরা সক্রিয় হলেও এবার যেন অতি মাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাজধানীতে নীরব চাঁদাবাজি চলছে সবচেয়ে বেশী। ঈদ বকশিশের নামে বিভি¬নড়ব কৌশলে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশ বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্যের বিরুদ্ধেও। চাঁদা দাবির ঘটনায় কিছু ক্ষেত্রে থানায় ডায়েরি ও মামলা হলেও অধিকাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা চাঁদাবাজির বিষয়ে পুলিশকে জানাচ্ছেন না। ব্যবসায়ীরা বলছেন ‘নীরব’ চাঁদাবাজিতে তাদের এখন ত্রাহী মধূসুধন অবস্থা।

এলাকার বড় বড় সন্ত্রাসীর নাম করে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। অনেক দাগী সন্ত্রাসী এলাকায় না থাকলেও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এলাকার কিছু মাস্তান রাজনৈতিক নেতার পরিচয়েও চাঁদাবাজি করছে। পুলিশের উর্ধ্বতনদের বক্তব্য হলো, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। কোথাও চাঁদাবাজির খবর পাওয়া গেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তবে কেন চাঁদাবাজী বন্ধ হচ্ছে না ? শুধু শুকনো কথায় চিড়ে ভিজবে না। চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের সমূলে উত্পাটন করে পুলিশ বাহিনীর তত্পরতা প্রমাণ করতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে, চাঁদা দাবি করে ফোন পেলেই যেন পুলিশে খবর দেয়া হয়। তাই ব্যবসায়ীদেরও উচিত পুলিশকে সহযোগিতা করা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা থানা-পুলিশের উপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না।

চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। কোন এলাকায় কোন চক্র চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে তা পুলিশের অজানা থাকার কথা নয়। এদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকার পত্রিকায় ১৮ অক্টোবর একটি খবর ছাপা হয়েছে- চাঁদা দাবি করে কাজী বেলাল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

২০ লাখ টাকার দাবি। দাবি পূরণ না হলে মৃত্যু। চিঠির সঙ্গে পাঠানো হয়েছে কাফনের কাপড়। সময় তিন দিন। একটি ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে।

তিন দিন পর তাদের ফোন এলে তিন ঘণ্টার মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা পৌঁছাতে হবে। এর অন্যথা হলে মৃত্যু অবধারিত। তার কাছে চাঁদা চেয়ে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অনুনয়-বিনয় করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। চাঁদাবাজদের মন গলছে না।

এরা দাবিতে অনড়-“চাঁদা দিবি, নয় জান দিবি”। অজানা আশঙ্কার মধ্যেই তার সময় কাটছে। মিরপুরের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী শাহজালাল রশীদের কাছে মোবাইল ফোনে ‘শাহাদাত ভাই’-এর নামে চাঁদা দাবি করছে সন্ত্রাসীরা। মিরপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ী সুমন ও তার বাবাকে হত্যার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। ‘পাঠান’ পরিচয়ে এক সন্ত্রাসী পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে।

ফোনের পাশাপাশি মেসেজও পাঠানো হচ্ছে। পেশাদার সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি ঈদ চাঁদাবাজিতে নেমেছেন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসৎ সদস্যরাও জড়িয়ে পড়েছেন ঈদ চাঁদাবাজিতে। রাজধানীতে চাঁদাবাজির ঘটনা অহরহই ঘটে। বিদেশে পলাতক কয়েক সন্ত্রাসীর নাম ব্যবহার করেও চাঁদা চাওয়া হচ্ছে।

চাঁদাবাজদের হুমকির মুখে অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। এ কথা ঠিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষত র্যাব সদস্যরা চাঁদাবাজদের মধ্যে কিছুটা হলেও ভয় ঢুকাতে সক্ষম হয়েছে। যে কারণে সরাসরি চাঁদা চাওয়ায় ঘটনা তুলনামূলক কম। তার বদলে চলছে মাত্রাতিরিক্ত টেলিফোন চাঁদাবাজি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তাদের টার্গেটে পরিণত হন।

শুধুমাত্র ঈদ নয়, নানা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে অবিরাম চাঁদাবাজি চলছে। অনেক সময় উপলক্ষ বানিয়েও চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। এছাড়া নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে চাঁদাবাজি চলছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি রোধে যে তৎপরতা চালাচ্ছে তা মোটেও যথেষ্ট নয়। প্রভাবশালীদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজদের তৎপরতা চালানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পরিশেষে বলবো,জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বিরাজমান আতঙ্ক দূর করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে শান্তি-শৃংখলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীসহ সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শনের কোন বিকল্প নেই। এসব চাঁদাবাজদের কখনও কখনও গ্রেফতার করা হলেও আইনের ফাঁক-ফোকরে তারা সহজেই ছাড়া পায়। জেল থেকে বের হয়ে আরও বিকট চেহারা নিয়ে আবির্ভাব হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই।

এদের দমনে যেমন সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার, তেমনি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়েও ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে জনসাধারণের সহযোগিতা জরুরি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.