আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা শহর এমনই এক শহর যেখানে সত্য কথার চেয়ে মিথ্যা কথার মূল্য বেশি, অনুভূতির চেয়ে অভিনয়ের মূল্য বেশি।

আমিও শিশুর মতো/ তারই মতো মেনে নিতে পারি, যতো ব্যাথা না পাবার,/ ততো কাঁদি, ততো ঠুঁকি মাথা,/ যতো ক্ষতে বয়ে চলে- এ জীবনধারা। সামনে ঈদ। ঢাকাবাসীদের মনে আশংকা, বাড়ি যাবার টিকিট সময় মতো পাওয়া যাবে তো। যারা ইতোমধ্যে চরম আকাংখিত টিকিটটা হাতে পেয়েছেন, তারা আমার লেখা পড়ছেন আর মিটি মিটি হেসে আমাকে গালি গালাজ করছেন। আর যারা টিকিট এখনও কাটতে পারেন নি, তারা রাগে দাঁত কিড়মিড় করছেন আর আমাকে গালি বানে জর্জরিত করছেন।

আমি বাংলার আম জনতা, সবদিক থেকেই ঝাড়ি খাই। টিকিট কাটতে গিয়ে কাউন্টারে বাসের কর্মচারীর(কর্মকর্তা বলাই শ্রেয়, ঈদের বাজারে উনাদের সম্মান বোঝা আমার মতো নাদানের সাধ্যের অতীত) ঝাড়ি খাই। টিকিট কেটে ফেরার পথে সহযাত্রীর ঝাড়ি খাই। বাসে উঠলে মাঝে মাঝে সুপারভাইজারের ঝাড়ি খাই। গত সপ্তাহে গেলাম বাসের টিকিট কাটতে।

আমার বাড়ি উত্তরবংগের কোন এক জেলায়। যে বাসের টিকিট কাটতে গেলাম, সেটা ঐ অন্চলের নামকরা বাস। প্রথমেই গেলাম কল্যানপুর। সময় সকাল ৬টা ২৪ মিনিট। বললাম, ২৩ তারিখের দুইটা টিকিট দ্যান।

আমার কথা ঠিক মতো না শুনেই জনৈক বাস কর্মকর্তা বললেন, গাবতলী যান। আমি সংগে সংগে গাবতলী। গাবতলীতে পৌছানোর পর আমাকে বলা হলো, টেকনিক্যাল যান। আমি সংগে সংগে টেকনিক্যাল। টেকনিক্যালে যাবার পর আমাকে বলা হলো, গাবতলী যান।

আমি আবারো সংগে সংগে গাবতলী। গাবতলীতে যাবার পর আবারো আমাকে বলা হলো, আপনি টেকনিক্যালে যান। আমার ধৈর্য্যের চ্যুতি ঘটলো। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রাখলাম। ইতোমধ্যে এক ঘন্টা পেরিয়ে সকাল সাড়ে ৭।

এরপর আমি যে পদ্ধতি প্রয়োগ করলাম, সেটি সচরাচর মানুষের সহানুভুতি আদায় করার জন্যই আমি প্রয়োগ করে থাকি। পদ্ধতিটি ভালো কাজ দেয়। আমি মুখটা কাচুমাচু করে বল্লাম, ভাইজান, আমি ভোর ৫টা থেকে(মিথ্যা কথা) কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরছি, কিন্তু কেউ আমার কথা ঠিক মতো শুনছে না(মিথ্যা কথা), আমি একটু অসুস্থ(ডাহা মিথ্যা কথা)। আমাকে যে এতবার ঘোরানো হলো এখন আমি লাইন পাবো কিভাবে? এই বলে একটু হেচকি তুলতে লাগলাম(পাকা অভিনয়)। আল্লাহর দুনিয়ায় এখনও ভালো মানুষ আছে।

সব শুনে কাউন্টারের লোকটি আমাকে আরেক কাউন্টারে যেতে বললেন এবং ঐ কাউন্টারে ফোন করে দুটি টিকিট রাখতে বললেন। আমি দুই হাত কচলাইতে কচলাইতে তাঁর নাম জিগাইলাম। তিনি তাঁর নাম বললেন আমিন(ছদ্মনাম)। আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়েই ঊর্ধশ্বাসে সেই বাস কাউন্টারে ছুট দিলাম। কাউন্টারে পৌছেই সেখানকার কর্মচারীকে বললাম, আমি আমিন ভাইয়ের ছোট ভাই(মিথ্যা কথা), উনি আমাকে পাঠিয়েছেন, ফোন করে দুটি টিকিটও রাখতে বলেছেন, সেই টিকিট দুইটা দ্যান।

কাউন্টারের লোকগুলো আমার মুখের দিকে তাকালো। আমি কড়া গলায় বললাম, জলদি দ্যান। টিকিট দুটো হাতে পেলাম লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াই। তখনই বুঝলাম ঢাকা শহর এমনই এক শহর যেখানে সত্য কথার চেয়ে মিথ্যা কথার মূল্য বেশি, অনুভূতির চেয়ে অভিনয়ের মূল্য বেশি। টিকিট দুটো ব্যাগে লোকাল বাসে উঠলাম।

বৃষ্টির কারনে একটু ভিজে গিয়েছিলাম। পাশের সহযাত্রী কড়া চোখে একটু দুরে বসতে বলল। আমি আর তার সাথে খারাপ ব্যবহার করলাম না। দরকার কি? টিকিট নামের সোনার হরিন তো তখন আমার পকেটে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.