আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২য় বিশ্বযুদ্ধ বাধার পেছনের কারন

আমি এক সাদামাটা ছেলে। এখানে ২য় বিশ্বযুদ্ধ বাধার পেছনের কারন যেগুলো খুবই গুরুত্ব পূর্ণ সেগুলো আমি একটু তুলে আনতে চাই। বেশির ভাগ পাঠকই একটী বিষয়ে একমত হবেন যে, জার্মানির হিটলারের কারনেই ২য় মহাযুদ্ধ বেধেছিল। সরল চোখে এটি সবাই দেখে থাকেন। কিন্তু, বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিচার করলে এ্কথা আসলে ভুল।

কেননা কেবলমাত্র হিটলার এর জন্য সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী নন। তৎকালীন দুনিয়াতে বিশেষত ১ম মহাযুদ্ধের পরবর্তী দুনিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ঔপনিবেশিক সংঘাতগুলিই এ যুদ্ধের দিকে দুনিয়াকে ঠেলে দিয়েছে। হিটলার সেখানে একজন বড় খেলোয়াড় । হিটলার তার 'মাইন কাম্ফ' বইতে একটী নাৎসি রাষ্ট্রের যে সমস্ত নীতি ও লক্ষ্যর কথা বলেছিলেন সেগুলো পুরন করতে কিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। যেমন, [১]চিরন্তন সংগ্রামে মানুষ হয়েছে সর্বাপেক্ষা শ্রেশ্ষ্ঠ, আর চিরন্তন শান্তিতে মানুষ হবে ধ্বংস।

[২] যদি যুদ্ধের উদ্দশ্যে কোন মৈত্রী অনুস্থিত না হয় তবে তা নিতান্ত বাজে এবং অর্থহীন। [৩] ইউরোপে কখনও দুটি রাষ্ট্রশক্তিকে মাথা তুলে দাড়াতে দিও না। জার্মানির পাশে ইতমধ্যে এমন কোন রাষ্ট্রশক্তি থাকলে অথবা ভবিষ্যতে গড়ে উঠার সম্ভাবনা থাকলে তাকে ধ্বংস করাই হবে মহত্তম কাজ। [৪] বিশ্বরাষ্ট্রসঙ্ঘ বা ঈশ্বরের কাছে আবেদন করলেও জার্মানির দখল করা রাজ্যগুলো ফেরত পাওয়া যাবে না, একমাত্র সশস্ত্র বলপ্রয়োগ ছাড়া। তিব্র প্রতিবাদের দ্বারাও নয়, একমাত্র তরবারির শক্তিতেই এ সমস্ত দেশের পুনরুদ্ধার সম্ভব।

সুতরাং পররাষ্ট্র নীতিতেও এ তরবারির সহযোগিতা খুজতে হবে। [৫] পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য হল জার্মানির সমস্ত ভূমি ও দেশগুলো ফেরত পাওয়া। [৬] কেবলমাত্র ১৯১৪ সালের জার্মান রাষ্ট্রসীমানার উদ্ধারই জার্মানির দাবী নয়। [৭] পূর্ব ইউরোপ ও বিশেষভাবে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে নতুন দেশ কেড়ে নিয়ে জার্মান সাম্রাজ্য বিস্তার করতে হবে। [৮] বর্তমানে ব্রিটেন ও ইতালিকে হাতে রেখে ফ্রান্সকে ধ্বংস করতে হবে।

এ দ্বারা ইঙ্গ-ফরাসী 'আঁতাত' বা মৈত্রী ভেঙ্গে যাবে। ফলে, জার্মানির গতি স্বছন্দ, পা্শ্বদেশ সুরক্ষিত ও কাঁচামালের পথ সুগম হবে। [৯] যে রাষ্ট্র জাতির শ্রেষ্ঠত্ব বিকাশের উপাদানগুলো এভাবে পরিপুষ্ট করে সে রাষ্ট্র একসময় বিশ্ব এর প্রভু হতে পারবে। এই ছিল তৎকালীন নাৎসি জার্মানির স্পস্ষ্ট উদ্দেশ্য ও নীতি। জার্মানির ভারসাই সন্ধি ভঙ্গ, পররাজ্যগ্রাস সাম্রাজ্য বিস্তার, ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি এবং যুদ্ধযাত্রার কোন 'মতলব' হিটলার গোপন করেন নি।

সবাই এক্ষেত্রে প্রপ্শ্ন করতে পারেন যে, হিটলারি জার্মানির এ সমস্ত মতলব জানার পরও ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকার মত শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো হিটলারকে বাধা দিলেন না? কেন এতবড় যুদ্ধের দিকে দুনিয়াকে ঠেলে দিলেন? এর প্রধান কারন হচ্ছে ইউরোপে নবগঠিত রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতি ধনতান্ত্রিক পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর তীব্র বিদ্বেষ এবং তাদের নিজেদের মধ্যকার স্বার্থসঙ্ঘাত ও বিরোধ। রাশিয়ায় কমিউনিজম যাতে মাথা তুলে দাড়াতে না পারে সেজন্য পশ্চিমা দেশগুলো অনেক আগ থেকেই অর্থাৎ গোঁড়া থেকেই চেষ্টা করছিলো। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী Lloyd George ১৯৩৩ সালে এক বক্ত্রিতায় স্পস্তভাবে বলেন যে যদি শক্তিবর্গ জামানিতে নাৎসিদের পতন ঘটায় তাহলে নিশ্চয় কোন রক্ষণশীল, সমাজতান্ত্রিক বা উদারনৈতিক শাসন প্রতিস্থিত হবে না। হবে চরম সাম্যবাদ বা Extreme Communism এর প্রতিষ্ঠা। কমিউনিস্ট রাশিয়ার চেয়ে কমিউনিস্ট জার্মানি অনেক বেশি বিপজ্জনক হবে।

১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ পারলামেন্টের হাউস অব কমন্স এর সভায় তিনি আরও স্পস্ত করে বলেন ইউরোপে কমিউনিজমের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ রক্ষণশীলদের একমাত্র বড় আশ্রয় জার্মানি এবং ২/১ বছরের মধ্যেই এজন্য জার্মানির দিকে আমাদের তাকাতে হবে। জার্মানি ইউরোপের ঠিক মাঝখানে। সুতরাং জার্মানির আত্মরক্ষার প্রাছির যদি ভেঙ্গে যায় এবং কমিউনিস্টরা যদি তাকে পেয়ে বসে তাহলে গোটা ইউরোপ সাম্যবাদী হয়ে পড়বে। সুতরাং জার্মানিকে নিন্দা না করে বরং তাকে সাদর আহবান জানানো উচিৎ। এভাবে ব্রিটিশরা হিটলারি জার্মানিকে বন্ধুর মত গ্রহন করল এবং তারা হিটলারের পক্ষপাতি হয়ে উঠল ।

ব্যংক অব ইংল্যান্ড জার্মানির অস্ত্রসজ্জার জন্য অর্থের যোগান দিতে শুরু করল। Vikers Armstrong Company জার্মানিকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করলো । [সুত্রঃ 'দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস' - বিবেকানন্দ মুখপাধ্যায়, ১ম খণ্ড] ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।