আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিলার তারেক ঢাকায়। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে, পুলিশও শঙ্কিত

মানবিক দায় ও বোধহীন শিক্ষা মানুষকে প্রশিক্ষিত কুকুরে পরিণত করে....আইস্ট্যাইন। পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ওরফে 'সিরিয়াল কিলার তারেক' এখন ঢাকায়। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে আত্মগোপন করে থাকার পর সম্প্রতি সে দেশে ফিরে এসেছে। পুলিশ তার ফিরে আসার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারলেও সে ঢাকার ঠিক কোথায় অবস্থান করছে, তা এখনো খুঁজে বের করতে পারেনি। এই ভয়ংকর সন্ত্রাসী ফিরে আসায় রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও শাহজাহানপুর এলাকার বাসিন্দারা তো বটেই, এমনকি পুলিশ প্রশাসনও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশের সূত্র মতে, রাজধানীতে তাদের তালিকায় যে শীর্ষ ৯ জন সিরিয়াল কিলার আছে, তারা হচ্ছে : কালা জাহাঙ্গীর, আব্বাস, শাহাদত, প্রকাশ, শহিদ (ডাকাত শহিদ), সুইডেন আসলাম, লেংড়া তাজগির, আশিক ও তারেক। কালা জাহাঙ্গীর আর ডাকাত শহিদ মারা গেছে। প্রকাশ, শাহাদত ও লেংড়া তাজগির দেশের বাইরে আত্মগোপন করে আছে। আব্বাস কারাগারে। আশিক কোথায় আছে সে সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত নয়।

তবে রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারসহ আশপাশের এলাকা এখনো আশিকের নিয়ন্ত্রণে। তাই বলা যায়, রাজধানীতে এই মুহূর্তে যেসব পেশাদার ভয়ংকর খুনি অবস্থান করছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই কিলার তারেক। পুলিশ ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, কিলার তারেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা আছে। তার দলের সদস্যদের কাছে আছে অর্ধশতাধিক অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। পুরান ঢাকায় শাহাদত কমিশনার ও আইনজীবী হাবিব মণ্ডল, মতিঝিলে দর্পণ, পলাশ, শাহজাহানপুরে রাজীব, ধানমণ্ডিতে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত, আগারগাঁওয়ে পুলিশের এসআই হুমায়ুন কবীর, ছাত্রলীগ নেতা তপন, আঁখি এবং মগবাজারের ওয়ার্ড কমিশনার খালিদ ইমামসহ রাজধানীর অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারেক সম্পৃক্ত ছিল।

তারেক সম্পর্কে পুলিশের নথিতে উল্লেখ আছে, 'সে অতি মাত্রার ভয়ংকর একজন শীর্ষপর্যায়ের সন্ত্রাসী। স্মার্ট। সদলে দামি ও বিলাসবহুল গাড়িতে সশস্ত্র অবস্থায় চলাফেরা করে। তার সঙ্গে সব সময় দেহরক্ষী থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আরেক সন্ত্রাসী ডিশ বাবু ওরফে টমেটো বাবুর মাধ্যমে সে রাজধানীতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসাও পরিচালনা করে।

' পুলিশ আরো জানায়, তারেকের সন্ত্রাসী হিসেবে উত্থান নব্বই দশকের দিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের হাত ধরে। কালা জাহাঙ্গীরের অবর্তমানে এখন সে আরেক সন্ত্রাসী চক্র বিকাশ-প্রকাশ গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর ও খিলগাঁও এলাকায় রয়েছে তার ৫০ সদস্যের একটি বিশাল সন্ত্রাসী গ্রুপ। আর এই গ্রুপ নিয়ে সে 'কন্ট্রাক্ট কিলার' হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছে তার সন্ত্রাসী তৎপরতা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, কিলার তারেক এখন রাজধানীর ত্রাস।

দীর্ঘদিন দেশের বাইরে আত্মগোপন করে থেকে কিছুদিন আগে সে দেশে ফিরেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, তাকে রাজধানীর মতিঝিল, ধানমণ্ডি ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় কয়েকবার দেখাও গেছে। তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে এবং শ্বশুরবাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে সে কোথায় অবস্থান করছে তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরো জানান, মতিঝিল-পল্টন এলাকার ব্যবসায়ীরা এখন এই কিলার তারেকের ভয়ে তটস্থ।

তারেককে মোটা অঙ্কের টাকা বা মাসোয়ারা না দিয়ে তাঁদের পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। কিন্তু তারেক এত বেশি মাত্রার ভয়ংকর যে কেউ তার বিরুদ্ধে নতুন করে থানায় মামলা দায়ের করার সাহস পাচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফকিরাপুল ও মতিঝিল এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁরা এত দিন মোটামুটি শান্তিতেই বসবাস করে আসছিলেন। অন্য সন্ত্রাসীদেরও চাঁদা দিতে হয়েছে ও হচ্ছে, তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে। কিলার তারেক উৎপাত শুরু করেছে গত তিন-চার মাস হলো।

দামি একটি গাড়িতে করে এসে সে সবার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে গেছে। এর পর থেকে শুরু হয়েছে চাঁদা দাবি। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে অনেক ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে সে আর ২০ লাখ টাকার নিচে কারো রেহাই নেই। ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী আর সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে যে বর্তমানে সবার শীর্ষ অবস্থানে আছে তার নাম শাহাদত। রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা সে।

বর্তমানে ভারতে আত্মগোপন করে আছে। পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছেও এখন এক আতঙ্কের নাম এই শাহাদত। এখন পর্যন্ত যতজন শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে, এর পেছনেও শাহাদতের সহযোগিতা ছিল। বাংলাদেশের পুলিশ ও ভারতের স্পেশাল টাস্কফোর্সকে শাহাদত সহযোগিতা করেছে ওদের ধরিয়ে দিতে। কিলার তারেক সম্পর্কে সন্ত্রাসী শাহাদত টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলে, 'আমাকে বলা হয় আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ডন।

ভাগ্য আর কর্মের পরিহাসে আজ আমি সন্ত্রাসী। শীর্ষ সন্ত্রাসী। পালিয়ে বেড়াচ্ছি নিজের দেশ ছেড়ে। কিন্তু একটা কথা জেনে রাখুন, বাংলাদেশের অপরাধ রাজ্য বা আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ডন বলে যদি কেউ থেকে থাকে সেটা হচ্ছে কিলার তারেক। তার মতো সিরিয়াল কিলার আর একটাও এখন বাংলাদেশে নেই।

তার কাছে ৪০টির মতো জিনিস (আগ্নেয়াস্ত্র) আছে। ছদ্মবেশ ধারণ করে চলাফেরা করে তারেক। ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার নিচে সাধারণত সে কোনো খুনের কন্ট্রাক্টে যায় না। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা কিলার তারেক সম্পর্কে সবই জানে। তারা কী কাজ করে বুঝি না।

আসলে প্রশাসন সিরিয়াস হলে কোনো সন্ত্রাসীই আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারে না। অনেক সময় পুলিশ ও র‌্যাব টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আপস করে চলে। আর আমি সন্ত্রাসী হয়ে সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিই। ' View this link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.