আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

।।..."কৃত্তিবাসী রামায়ণ" গ্রন্থালোচনা...।।

Love does not just sit there, like a stone: it has to be made, like bread, remade all the time, made new. কথকতার অলক্ষ্যে স্বপ্নেরা কাঁদে কেউ কেউ ছুয়েঁ যায়- ভালোবাসার দরজা। উপরের কথাগুলো লিখে বন্ধু শিশির বইমেলায় ফুটপাথ থেকে বইটি কিনে দিয়েছিল। আজ হতে প্রায় পাঁচশো বছরেরও আগে সম্ভবত গৌড়ের রাজা গণেশের শাসনকালে ১৪০১-৯ এর মধ্যে কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর রামপাঁচালি রচনা করেন। এই রামপাঁচালিই পরবর্তীকালে রামায়ণ আকারে প্রচলিত হয়। কৃত্তিবাস তাঁর নিজের পরিচয় নিজেই দান করে গেছেন।

কৃত্তিবাস পঞ্চদশ শতকের প্রারম্ভে তাঁর রামায়ণ রচনা করলেও তা প্রথম মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয় ১৮০৩-৪ সালের মধ্যে শ্রীরামপুরের মিশনারী পাদ্রীদের তৎপরতায়। মহাকবি বাল্মীকি রচিত মূল সংস্কৃত রামায়ণের যথাযথ অনুবাদ করেননি কৃত্তিবাস, যদিও মূল রামায়ণের কয়েকটি ছাড়া প্রধান প্রধান আখ্যান ও উপাখ্যানগুলি কৃত্তিবাসী রামায়ণে স্থান পেয়েছে। সেকালে রামায়ণের যে সব কাহিণী লোকমুখে প্রচলিত ছিল এবং তাঁর আগে যে সব বাঙ্গালী কবি আপন আপন ভাবধারার বৈশিষ্ট্য অনুসারে যেসব রামায়ণ রচনা করেন তার থেকে উপাদান সংগ্রহ করে তাঁর রামায়ণ রচনা করেন কবি কৃত্তিবাস। এই রচনা প্রথম যখন মুদ্রিত হয় তখন সেকালের শ্রীরামপুরের পন্ডিত জয়গোপাল তর্কালংকার কৃত্তিবাসের ভাষাকে পরিমার্জিত করে প্রকাশ করেন। কিন্তু কৃত্তিবাসের মূল পান্ডুলিপিটি আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে এই পরিমাজৃনের কারণ ও ফল সম্বন্ধে পরবর্তীতে কিছুই জানা যায় নি।

গ্রন্থখানির পরিচিতি "কৃত্তিবাসী রামায়ণ" সম্পাদনা করেছেন তীর্থপতি দত্ত। প্রকাশক শ্রী কল্যাণব্রত দত্ত প্রকাশ করেছেন কলকাতার তুলি-কলম থেকে। 'তুলি কলম' সংস্করণটি ছিল ১৪০১ সালের। কলকাতার মূল্যে তখন ছিল চল্লিশ টাকা মাত্র। উন্নত নিউজপ্রিন্ট কাগজে ছাপা বলে এর মূল্য বেশ কমই রাখা হয়েছে।

৫৩৬ পৃষ্ঠা রয়েছে মুল অংশে। শুরুর দ্বিতীয় ফর্মায় ১৬টি অসাধারণ ছবি রয়েছে। কৃত্তিবাস তার রচনাতে মোট সাতটি পর্যায়ে ভাগ করে রচনা করেছেন। খুবই সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো। আদিকান্ডঃ এখানে রয়েছে বিষ্ঞুর প্রকাশ, দস্যু রত্নাকর, রামনাথ, ব্রহ্মা কর্তৃক রত্নাকরের বাল্মীকি নামকরণ, নারদ কর্তৃক শ্রীরামচন্দ্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয়দান, সূর্য্যবংশ ধ্বংস এবং হারীতের জন্ম, রাজা হরিশচন্দ্র,সগরবংশে, কপিল মুনি,ভগীরথ,মহাদেব, বারাণসী, জহ্নমুনি,কান্ডারীমুনি, সৌদাস রাজা রঘু কর্তৃক ইন্দ্রের পরাজয়,কৌশল্যার সাথে দশরথের বিবাহ, কৈকীয়, সুমিত্রা, শ্রীরামচন্দ্রের জন্ম, ভরত, লক্ষণ, শত্রুঘ্নের জন্ম, অহল্যা, সীতাদেবী সম্পর্কিত রচনা।

অযোদ্ধ্যাকান্ডঃ শ্রীরামচন্দ্রের বনবাস, ভরত সমাচার... আরণ্যকান্ডঃ বিরাধ রাক্ষস বধ, শরভঙ্গ মুনি, পঞ্চবটি বনে শ্রীরামচন্দ্রের অবস্থান, সূখপর্ণা, সীতাহরণ, মারীচ, জটায়ু, শবরী সমাচার। কিষ্কিন্ধ্যাকান্ডঃ সুগ্রীব, বালি, সম্পাতির নিকট সীতার সন্ধান লাভ। সুন্দরাকান্ডঃ সাগর উত্তীর্ণ, হনূমান, সুরসা, অশোক বন, চেড়ীগণ, ত্রিজটা, অক্ষকুমার, ইন্দ্রজীতের হনূমানকে বন্দীকরণ ও পরবর্তীতে হনূমানের আগমণ ও সীতার বার্তাপ্রদাণ. বানরগণের মধুবনে যাত্রা, বিভীষণ, শ্রীরামের লঙ্কায় যাত্রা ও শিব প্রতিষ্ঠা লঙ্কাকান্ডঃ শুক-সারণ, শার্দ্দুল চর, হরপার্ব্বতী, অঙ্গদের রায়বার, ধুম্রাক্ষ বধ, অকম্পন, রাম-রাবণের প্রথম যুদ্ধ, কুম্ভকণের্র নিদ্রাভঙ্গ পরবর্তীতে যুদ্ধে মৃত্যু, অতিকায়ে, ঔষুধ আনতে হনুমানের ঋষ্যমূক পর্ব্বতে যাত্রা, মকরাক্ষ, তরণসেনের যুদ্ধ, ইন্দ্রজীতের তৃতীয়বার যুদ্ধগমণ, মন্দোদরী, শ্রীরাম চন্দ্রের অযোধ্যা যাত্রা...। উত্তরাকান্ডঃ শ্রীরামচন্দ্রের সভায় মুনিগনের আগমন, রাক্ষসগনের জন্মবৃত্তান্ত বর্ণন, গজ-কচ্ছপের বৃত্তান্ত, মালী, সুমালী, কুবেরে জন্ম, কৈলাস এবং......অবশেষে শ্রীরাম ভরত ও শত্রুঘ্নের স্বর্গারোহণ। একটা কথা না বললেই নয়।

একমাত্র কবি কৃত্তিবাসই প্রথম তাঁর রামায়ণের মাধ্যমে তাদের মনের মানুষ ও প্রাণের দেবতা হিসাবে রামকে পৌঁছে দেন দেহাভিমানী ভক্তিভাবসর্বস্ব বাঙ্গালরি ঘরে ঘরে। ভালবাসা ও মমতায় কোমল, কর্তব্যে কঠোর, আত্নত্যাগে উদার এই রাম চরিত্রটি মানুষ হয়েও দৈব মহিমায় প্রতিষ্ঠিত, যিনি স্বর্গ মর্ত্যের সমারেখাকে মুছে দিয়ে স্বগূকে নিয়ে আসেন এই মর্তালোকের মাটিতে। আরো পড়তে চাইলে জয়তি বন্দ্যোপাধ্যায় রামায়ন নিয়ে সহজভাবে উপস্থান করে সিরিজ লিখছেন। দেখতে পারেন তার ব্লগ। আর কথাচ্ছলে মাহাভারত সিরিজ লিখছেন দীপান্বিতা  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.