আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহানবী(সাঃ) অবমাননা, সাম্প্রতিক ঘটনাবলিঃ সংশ্লিষ্ট সকলের ভূমিকা

এস এম আরিফ ১। ইহুদীঃ মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে সম্প্রতি তোলপাড় সৃষ্টিকারী ঘটনার মূলহোতা ইহুদীচক্র। এরা বরাবরই মুসলমান তথা মানবতাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। মানবজাতির ইতিহাসে এদের ভূমিকা জাতিগতভাবে অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয়, এতে অন্তত শিক্ষিত ও মানবতাবাধীরা একমত পোষণ করবেন। ২।

অন্যান্য সম্প্রদায়ঃ এ ঘটনায় ইহুদী ছাড়াও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ভূমিকাও যথেষ্ট নিন্দনীয় ছিল। এ ঘটনায় ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ মুখে তালাবন্ধ করে রেখে ছিলেন। আর অনেক উগ্রপন্থী হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ তাদের ধর্মের সাথে ইসলামকে তুলনা করতে সচেষ্ট ছিলেন। তারা এটা একবারও বুঝতে চেষ্টা করেনি যে, প্রত্যেকটি ধর্মেরই কিছু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অনেকেই তাদের ধর্মের মহাপুরুষ, দেবতা প্রভৃতির প্রতিকৃতির কথা তুলে ধরে বলেছেন, মহানবীর(সাঃ) প্রতিকৃতি থাকলে সমস্যা কি? তারা এও বলেছেন তাঁদের নিয়ে চলচিত্র পর্যন্ত নির্মিত হয়।

তাহলে মুসলমানদের সমস্যা কি? সমস্যা কিছুই নয়! মুসলমানদের ধর্মীয় ব্যাপারে তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন না। কারণ আপনাদের মহাপুরুষ বা দেবতাদের প্রতিকৃতি মুসলমানরা বানায়নি, বানিয়েছেন আপনারা। মুসলমানরাও তাঁদের নিয়ে চলচিত্র বানাচ্ছে এবং তাতে আপনারা গর্বও বোধ করছেন। একজন ব্লগার প্রেসক্লাবের সামনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন প্রতিথযশা কবিকে উদ্ধৃত করে বাঙ্গালী জাতিকে ‘শুয়োরের পালের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। ওই অমুসলিম ব্লগার বাঙ্গালী জাতির আড়ালে মুসলিম বাঙ্গালীদেরকেই যে এ জঘন্য কথাটি বলেছেন তা বুঝতে কাউকে বুদ্ধিজীবী হতে হয় না।

এরকম আরও অনেক নজীর আছে। ৩। মুসলিম সম্প্রদায়ঃ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে লিবিয়ায় ৪ জন আমেরিকানকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক মুসলমানও এ ঘটনায় প্রাণ দিয়েছে, যা কোন ভাবেই কাম্য ছিল না।

তাছাড়া অনেক মুসলিম দেশে সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানানোটা যেমন ঈমানী দায়িত্ব ছিল তেমনি পন্থাটা অহিংস হওয়াই সবার কাম্য ছিল। আমাদের এখন বুঝা উচিত যে, আমরা গভীর চক্রান্তের স্বীকার। তা না হলে জঙ্গিবাদের উৎপত্তি যাদের হাতে সেই ইহুদী, আমেরিকানরাই মুসলমানদের জঙ্গি বলবে কেন? আমেরিকা ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ায় যা করেছে তা কি রাষ্ট্রীয় জঙ্গিবাদ/সন্ত্রাসবাদ নয়? নিজেরা পরমাণু অস্ত্রের মালিক হয়ে উত্তর কোরিয়া, ইরানের সঙ্গে যে আচরণ করছে তা কী? বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদা কাদের স্বার্থে এবং হাতে সৃষ্টি? ইসরাইল ফিলিস্তিনে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যে গণহত্যা চালাচ্ছে তাও জঙ্গিবাদ নয়! আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারত নিয়মিত বিরতিতে মুসলিম নিধন করে যাচ্ছে, তাও জঙ্গিবাদ/সন্ত্রাসবাদ নয়। মিয়ানমার রাখাইন ও চীন উইঘুর মুসলমানদের উপর যে গণহত্যা চালিয়েছে তা কী? প্রতিটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ উগ্রপন্থী ধর্মীয় দলগুলোর কথা বলেতো শেষ করা যাবে না।

এই হচ্ছে পৃথিবীর সেরা ধর্মগুলোর পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রগুলোর সারসংক্ষেপ। এই উদাহরণগুলোর পাশে কোন কোন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর নাম বসবে তা আপনারা বসিয়ে নেন। আর অভ্যন্তরীণভাবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো কতটুকু MOSAD, FBI, RAW –এর দ্বারা নিংগৃহীত তা অন্যরা না জানলেও মুসলমানদের অজানা নয়। তারপরও আমরা নিজেদেরকে ঠিক করতে পারছি না। এ ব্যর্থতার দায়ই কিন্তু বিভিন্নভাবে পরিশোধ করতে হচ্ছে।

৪। বাংলাদেশঃ অবমাননার ঘটনায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাও অনেক সুন্দর। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক মুসলিম দেশেই যা করে দেখাতে পারেনি। তবে ইসলামী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশি হস্তক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ইসলামীমনারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর কথাই বলে আসছিল। যদিও তারা শেষ পর্যন্ত শান্তি বজায় রাখতে পারত কিনা, প্রশ্ন থেকে যায়। তবে সরকার পুলিশি প্রহরায় তাদের সে সুযোগ দিতে পারত। অপ্রীতিকর কিছু ঘটতে গেলে তখন পদক্ষেপ নেয়া যেত। এ ঘটনায় বাংলাদেশের মুসলমানেরা অপ্রীতিকর কিছু করত বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি না।

যাক, বর্ষীয়ান ইসলামী নেতাদের দ্রুত মুক্তি দিয়ে সরকার এ ঘটনার ইতি টানবে বলে আশা রাখি। ৫। বিশ্ব সম্প্রদায়ঃ এ ঘটনায় বিশ্ব সম্প্রদায় সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। পশ্চিমাবিশ্ব বাকস্বাধীনতার কথা বলে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। তারা এটা বুঝতে চেষ্টা করেননি, বাকস্বাধীনতার মানে এই নয় যে, অন্যের মতাদর্শকে কটাক্ষ করা, অন্যকে অপমান করা, ব্যথা দেয়া।

বরং বাক স্বাধীনতার নামে তারা পশুবৎ বাসেলকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন করে, তার নিরাপত্তার বিধান করে সাম্প্রদায়িকতাকে, বুদ্ধিভিত্তিক জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিয়েছে। ফ্রান্স এক্ষেত্রে এককাঠি এগিয়ে আছে। ব্রিটিশ রাজবধূর ছবি কেলেঙ্কারিতে তারা কিন্তু যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। ৬। সামহোয়ারইন ব্লগঃ এ ঘটনায় সামহোয়ারইন ব্লগের প্রাথমিক ভূমিকায় সবাই দ্বিধাবিভক্ত ছিল।

মুসলমানদের দুঃসময়েও তারা ইসলামকে কটাক্ষ করেছে বলবনা; তবে কিছু ইসলাম বিদ্বেষীর পোস্ট নিয়মিত নির্বাচিত পাতায় এনে তাদের ভূমিকাকে বিতর্কিত করে তুলে ছিল। যে পোস্টগুলোতে ইসলামকে সূক্ষভাবে আঘাত করার বা উপদেশ করার মত ব্যাপারগুলো জড়িত ছিল। যাক, শেষ পর্যন্ত সামু তাদের সে অবস্থান পরিবর্তন করেছে, সে জন্য তাদের অনেক ধন্যবাদ। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সামুর নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বিব্রতকর পরিস্থিথির সমাপ্তি ঘটাতে পারে। তাছাড়া সামু সবার জন্যই সমান।

সামুর কিছু সীমাবদ্ধতা অনেক বেদনাদায়ক। আশা করি সামু শীঘ্রই ওই সব সীমাবদ্ধতা জয় করে কিছু অসাধু ব্লগারকে প্রতিহত করে ব্লগিংটাকে আরও উপভোগ্য করে তুলবে। ৭। ব্লগার দাঁড়িপাল্লাঃ দাঁড়িপাল্লা নিকের জঘন্য ব্লগার শুধু যে ২১ তারিখেই তার সাম্প্রদায়িক, চরিত্রহীন, হিংস্র জানোয়ারসুলভ কুৎসিত রূপ দেখিয়েছে তা নয়। তার পূর্বের পোস্টগুলোও কুরুচিপূর্ণ ছিল।

সামু তার বিপক্ষে যথা সময়ে ব্যবস্থা নেয়নি বলতেই হয়। শুধু তাই নয়, দাঁড়িপাল্লার কিছু ভক্তও ছিল যারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। এরা দাঁড়িপাল্লার জঘন্য ওই পোস্টে অনেক কুৎসিত মন্তব্য করে দাঁড়িপাল্লাকে সাহায্য করেছে। দাঁড়িপাল্লা সম্পর্কে কিছু সাধারণ ব্লগার এমন কিছু কথা বলেছেন যা বাস্তবভিত্তিক বলে মনে হচ্ছে না। অনেকেই বলেছেন এটা জামায়াত শিবিরের দাঁড়িপাল্লা।

জামায়াত শিবিরের কেন দাঁড়িপাল্লা নিকেই বাজে পোস্ট করতে হবে? নিজেদের নিচুতাকে আরও স্পষ্ট করার জন্য নিশ্চয়! কিন্তু নিজেদের নিচুতা কেইবা প্রকাশ করতে চায়, বলুন? তাছাড়া একজন মুসলমান বাসেলের চেয়েও এ জঘন্য কাজটি করতে পারে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। ব্যাপারটা কিন্তু এমন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি যে, দাঁড়িপাল্লা একি সাথে মুসলমানদের আঘাত করেছে এবং জামায়েত শিবিরকেও ঘায়েল করেছে। জামায়াত শিবিরের এ ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারটা ১০০ভাগ উড়িয়ে যেমন দেয়া যায় না, তেমনি যারা আত্মবিশ্বাসীভাবে জামায়াত শিবিরকে দায়ী করেছেন তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপপ্রয়াসটাও চোখে পড়ার মত। ৮। অন্যান্য ব্লগারঃ মহানবী(সাঃ) অবমাননা ঘটনায় আমরা সাধারণ মুসলিম ব্লগাররা কোনভাবেই নিজেদের দায় এড়াতে পারিনা।

দাঁড়িপাল্লাকে সমুচিত জবাব দিতে অনেকেই তার বিরুদ্ধে অশ্লীল কথা বলেছেন, ওই মুহূর্তে না বলে থাকাটা অনেক কঠিন ছিল। যদিও তা ইসলামী শিক্ষার সঙ্গে যায় না। তবে অনেকেই সামু, মডারেটর এবং নির্বাচকদের নিয়ে ভয়াবহ, জঘন্যতম অনেক পোস্ট করেছেন। সামু কিন্তু তাদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে অনেকটা দায়মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু আমার তো মনে হয় যারা এমনটা করেছেন তারা নিজেদের বিবেকের কাছ থেকেই দায়মুক্তি পাবেন না।

তাছাড়া কুরআন, সুন্নাহও এমনটা কখনোই শিক্ষা দেয়নি। হয়ত আবেগের কথা বলবেন, কিন্তু ওই কঠিন পরিস্থিতিতে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখাটা অনেক বেশি জরুরি ছিল। সবশেষে, একজন মানুষ হিসেবে, একজন মুসলমান হিসেবে এ ধরনের কুৎসিত, সাম্প্রদায়িক, বর্বরোচিত ঘটনা পুনঃবার যেন না ঘটে সে কামনাই করি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।