আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেওক্রাডং ম্যাডভেঞ্চার... :ফেলোশীপ টু ম্যাডনেস

এ জগতে হায়, সে ই বেশী চায় আছে যার ভূরি ভূরি। রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি। । কেওক্রাডং তো অনেকে্ই গেছেন। একসময়কার বাংলাদেশের সর্ব্বোচ্চ চূড়া বইলা কথা।

না গেলে তো মান সম্মানের ব্যাপার হইয়া খাড়য়। সুতরাং মান সম্মান আর পুরুষত্বের চ্যালেঞ্জ লইয়া আমরা মোটামুটি ৭/৮ জন বীর পুরুষ যাওনের লইগ্যা প্রস্তুতি লইলাম। কেউ ভোটকা, কেউ রুগী, কেউ সার্জন আবার কেউ বা জায়গায় জায়গায় প্রাকৃতিক কর্ম সাইরা নিশানা লাগাইবার জন্য বিখ্যাত। যাই হোক, আরেকটা কথা বইলা নেয়া ভালো, কেওক্রাডং যে যেভাবেই যাউক, আমাগো মত আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন মগামী কইরা কয়জন যে এহেন বীরত্বগাথা সৃষ্টি করছে তাই নিয়া আমার ব্যাপক সন্দেহ আছে!! ৩১শে ডিসেম্বর ভোর বেলা গিয়া বান্দরবান শহরে নামলাম এবং সেই সাথে সাথেই প্রকৃতি (প্রকৃতি বলতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভাইবা অনেকেই হয়ত ভুল করব, আসলে ব্যাপার হইল সক্কাল বেলার গৃহত্যাগ কর্মসূচী) ২ হাত একশত আশি ডিগ্রী উজাড় কইরা আমাগো ডাকাডাকি আরম্ভ করল, শুরু হইল প্রাথমিক পর্যায়ের বিপদ। আশে পাশে ঝোপ ঝাড়, বন বাদার, বাঁশ ঝাড় জাতীয় কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী খোঁজার হারিকেন অভিযান শুরু হইয়া গেল।

সৃষ্টিকর্তা বোধয় সদয় হইলেন। দেখলাম একটা হোটেল খোলার পূর্ব প্রস্তুতি নিতে আছে। কি অদ্ভুত কান্ড!!! ওই বেচারারা মানুষরে খাওয়ানের ব্যবস্থা নিবার চেষ্টায় ব্যাতিব্যাস্ত আর আমরা ছাড়ার ব্যবস্থায় লাইন ধইরা সব খাবার টেবিলে বইসা রইছি। প্রাকৃতিক আনন্দের কম্পাইলেশনের পর শুরু হইল পেট প্রোপাগান্ডা, নানা হাবিজাবি আর বড় বড় বীচীপূর্ণ্ পাহাড়ী কলা ঠাইসা বিদ্রোহ দমন করা হইল (কি স্বৈরাচারী কারবার!!!)। এইবার মৌলিক চাহিদার আরেক দাবী শুরু হইল, গৃহায়ণের দাবী (আমাগো দেশের যে ক্যা কোন উন্নতি হয় না, তার প্রাথমিক ধারনা এইখানে পাইলাম, এত দাবী-একটার পর একটা আছেই)।

কতক্ষন গরু খোঁজা পদ্ধতিতে ঘর তালাশ করা হইল, কিন্তু বাঙ্গাল বইলা কথা, শুরু হইল আরেক দফা বিদ্রোহ। দাবী একটাই, ডাইরেক্ট পরবর্তী পয়েন্টে যামু। আমাগো লগে থাকা প্যাথেট্রিক সার্জনের কল্যানে দাবী মাইনা লইতে হইল (আমার মনে এইখান থেইকাই আরব বসন্ত!!! এর সূচনা)। সোজা একটা ছাদ খোলা জীপ লইয়া যাত্রা স্টার্ট। রাস্তায় আহা কি সুন্দর দৃশ্য-আহা কি অপরূপ সৌন্দর্যের বিপুল সমাহার।

পুরা রাস্তা এইরকম দৃশ্য আর ক্ষনে ক্ষনে হাই জাম্প, লংজাম্প মারতে মারতে নাইক্ষ্যংঝিরি/কৈক্ষ্যংছরি (কি নাম রে বাবা, জোয়ান না হইলে নিশ্চিৎ দাঁত হারাইতাম) আইসা পরলাম। নামার পরে পেটের মধ্যে জুরাসিক পার্কের ডাইনোসারের দাপাদাপী টের পাইলাম, কারন ততক্ষনে দুপুর হইয়া গেছে। মাছ, ডিম, ডাইল, লবণ, মরিচ, পানি, যে যা পাইল দুর্ভিক্ষের রিলীফের মত পেটের মধ্যে বাটী চালান দিয়া দিল এবং দ্বিপ্রাহরীক অগ্নিঝরা দাবীকে আপাতত ক্ষ্যান্ত দেওয়া হইল। এইবার জানা গেল নৌকা নিয়া ওইপার যাইতে হবে, এবং সেইটা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ও বটে। সুতরাং আইজকার মধ্যেই বগা লেক যাওয়ার যে কর্মশালা ছিল তা রীতিমতো ধরাধামে আলোর মুখ দেখবার আগেই অক্কা পাইল।

কিন্তু পিছনে ফেরার রাস্তাও তো বন্ধ, সুতরাং সমরাঙ্গণে যখন আসিয়াছি, ২ পা ঠক ঠক করে কাঁপার পূর্ব পর্যন্ত দামামার আওয়াজ শুনিতে থাকিব টাইপের পণ করলাম এবং ছোট ছোট সাইজের ২ খান নৌকা ভাড়া লইয়া লইলাম। নৌকা পর্যন্ত আসতে আসতে অবশ্য আরো ২ টা গ্রুপ আমাগো পশ্চাদ্ভাবন করা শুরু করল। আমরা কিন্তু আমাগো মহানূভবতা আর উদারতার দূর্লভ পরিচয় দান কইরা তাগোরে আমাগো সঙ্গী বানাইয়া লইলাম। (আহা-রাজা হরিশ চন্দ্র যদি বাইচাঁ থাকত !!) আরেকবার অসাধারন প্রাকৃতিক নয়ণাভিরাম দৃশ্যমালা উপভোগোত্তর কার্ড খেলা, কলা খাওয়া, সুখটান দেওয়া, বন্ধুর সবেমাত্র উপহার পাওয়া গোল্ডেন ফ্রেমের চশমার উপরে বইসা পরা এবং মাঝে মাঝে নদীর মধ্যে হাটাহাটি করার মত নানাবিধ কার্যাদী সম্পন্ন কইরা আমরা রুমা বাজার আইসা পৌছাইলাম। দাবড়াইয়া গেলাম গাড়ীর স্ট্যান্ড এ, আশা-যদি যাওয়া যায় বগা!! কিন্তু মহা বেরসিক সেনা কর্মকর্তারা অন্তরায় - আয় হায়।

থাকার জন্য একটা হোটেল এ রুম ঠিক করলাম। আহা কি হোটেল, এক রুমে তিন তিনটা খাট, কিন্তু হাটাহাটির যায়গা নাই। এমন এক শৌচাগার, যার দরজা ধইরা না বসলে আদি মানবের চেহারা উম্মোচিত হইয়া যায়। থার্টি ফার্স্ট নাইটের আশা ভরসা আর মহানন্দ এইবার সুদূরপরাহত। সমস্ত আনন্দ, আশা, আকাংখা বার বার আমাগো ডাইন হাতের বুড়া আঙ্গুল দেখাইয়া বাম হাত দিয়া ঠুয়া মাইরা যাইতাসে ঠিকই - কিন্তু বঙ্গ মাতার পুলাপানের ক্ষুধার দাবানল হাইলী কনসাস, যহন তহন জাইগা উঠে।

সুতরাং আবার ভোজন পর্ব, আবার জোর জবরদস্তি জঙ্গল বিদ্রোহ দমন এবং যথাযথ রাস্তায়, বাজারে ইতস্তত ভ্রমন। অতঃপর রুমে আইলাম এবং কিছু আনন্দ করার লক্ষ্যে কোন এক বা দুইজনকে পঁচানো হইলো, কিছুক্ষন ২৯ খেলা হইল এবং কোক পেপসী দিয়া পানাভাব পূরণ করা হইল। একটা সময় যহন মনে হইল "আর পারি না আর পারি না আমার ভিশন ক্লান্ত লাগে" তহন বট্টাস কইরা শুইয়া পরলাম। অবশ্য এইরকম লেট গুড বাই করার কারন হইল খাট এবং বালিশের অভাব। পরদিন খুব সকালে উঠলাম (কারন সেই পুরান ব্যাপার, প্রকৃতি মা মণি)।

উইঠাই দেহি আমার বুকিং এ সেকেন্ড পজিশনটা এই মাত্র হারাইয়া গেছে। সুতরাং অপেক্ষা করলাম, কাজ সারলাম, ড্রেস চেঞ্জ করলাম এবং সকালের আগুন নিভাইলাম। আর্মীর অনুমতি রাতেই নিছি এবং সূফল বড়ুয়া নামে এক গাইডও নিয়া ফালাইলাম। সকালে দুপ দাপ গাড়ীতে উঠলাম এবং জার্ণি টু বগা বাই এ এগেইন ছাদখোলা জীপ থ্রু এ মারাত্মক উচা নীচা, ত্যাড়া ব্যাকা রাস্তা উইথ সামটাইম পায় হাটা শুরু হইয়া গেল। সাত সকালে কিন্তু ভেজাল আরেকটা হইছে, লেসী ভার্সাস সার্জন, কে কারে পঁচাইতে পারে যুদ্ধে লেসীর ব্যাপক নৈপুণ্যে সার্জন ধরাশায়ী।

সার্জন নারীসুলভ ক্ষোভে ক্ষোভান্বিত হইয়া লেসীরে আতকা এক ঘুসী মারল এবং সাথে সাথে আমরা জানলাম বাস্তবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ কিভাবে হয়। ( আপনারা মনে করতাছেন লেসী একজন হাল্ক?!না, আসলে ঘুসী টা লাগছে ছাদ খোলা গাড়ীর রডে)। যাই হোক ১১ টার মধ্যে বগা আইসা পরলাম এবং যথারীতি আবার ম্যাডনেস বনাম স্যাডনেস শুরু। আমাগো একমাত্র ভোটকার অফিস থেকা ফোন আসলো, তারে দ্রুত কি এক আগাছা রিলিজ দিতে ঢাকা যাইতে হইব। আমরা বাকীরা আমাগো এক রাইত থাকা আর কেওক্রাডং যাওয়ার লোল পরা লোভ সংবরনের আত্মাহূতি দিতে যামু এমন সময় ভোটকা, দাতা হাতেম তাঈ আর রাজা হরিশচন্দ্রের যৌথ রূপ নিয় আমাগো জানাইয়া দিল "তরা থাক, আমি একা যামু ঢাকা, আমার লইগা তগো আনন্দ গোল্লায় যাউক, এইটা আমি হইতে দিমু না" টিপিকাল বাংলা মিনেমার মত আবেগ আর বন্ধুতায় তহন আকাশ বাতাস মাইল স্টোনে পরিণত হইছে।

কিন্তু আমরা অত্যন্ত নিমক হারাম টাইপের, ওয় গাড়ীতে ইঠার লগে লগে আমরা আনন্দে হৈ হৈ কইরা উঠলাম এবং রাতে কি করা যায় সেই প্ল্যাণ বানান শুরু করলাম, এমন সময় আবার বুদ্ধিজীবিদের বুদ্ধিমান প্রস্তাব, চল কেওক্রাডং যাই। অর্থাৎ কেওক্রাডং ম্যাডভেঞ্চার..!!! কিছু প্রাকৃতিক দ্যশ্যাবলী ২য় পর্বে শেষ করা লাগব। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.