আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সফেদা ফলের চাষ

ব্লগে কবিতা, ছড়া এবং কর্মসংস্থানমূলক প্রবন্ধ লিখব বলে আশা করি। সফেদা ফলের চাষ -মোঃ আলী আশরাফ খান। সফেদা গাছ বসতবাড়ির আঙিনা, পুকুরপাড়, রাস্তার ধার, বাগান সবখানেই লাগানো যায়। উঁচু জমি এবং পাহাড়ি অঞ্চলেও এর বাগান করা যায়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক সফেদা গাছ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৮০ কেজি সফেদা উত্পাদিত হলেও বর্তমান বাজার মূল্য ৫০ টাকা কেজি হিসেবে আয় দাঁড়াবে ৪ হাজার টাকা।

১ হেক্টর জমিতে ৩০০টি সফেদা গাছ লাগানো যায়—যা থেকে বার্ষিক বিক্রি দাঁড়াবে ১২ লাখ টাকা। ১ হেক্টরে বছরে খরচ হবে প্রায় ৬ লাখ টাকা। খরচ বাদে প্রায় ৬ লাখ টাকা প্রকৃত আয় করা সম্ভব। যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে সফেদা গাছ রোপণ করে দেশের ফল তথা পুষ্টির ঘাটতি মেটানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। কলমের চারা থেকে উত্পাদিত সফেদা গাছের উচ্চতা সর্বোচ্চ ২৫ ফুট পর্যন্ত হয়।

সফেদা গাছের পাতা চিরসবুজ এবং সুদৃশ্য। পাতা ২ থেকে ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। সফেদা গাছের কাঠ বেশ শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী। সফেদাবৃক্ষ বহুবর্ষজীবী। সারাপৃথিবীতে প্রায় ৭০০ প্রজাতির সফেদা উত্পাদিত হয়ে থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো সফেদার উত্পত্তিস্থান বলে ধারণা করা হয়। বর্তমান সময়ে উষ্ণমণ্ডলীয় অধিকাংশ দেশেই সফেদার চাষ হয়। ভারত, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভেনিজুয়েলা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, মধ্য আমেরিকা এবং আফ্রিকা মহাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে সফেদা সর্বাধিক উত্পাদিত হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই এ ফল জন্মে, তবে এর পরিমাণ খুব বেশি নয়। বৃহত্তর বরিশাল জেলা, গাজীপুর, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রাম জেলায় সফেদার বাণিজ্যিক উত্পাদন হয়ে থাকে।

চাষ-উপযোগী জাত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৬-৭টি স্থানীয় জাতের সফেদা চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত সফেদার ২টি উন্নত জাত রয়েছে যথা (ক) বারি সফেদা-১, (খ) বারি সফেদা-২। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ করার জন্য এ দুটি জাত সবচেয়ে উপযোগী। বারি সফেদা-১ জাতটি ১৯৯৬ সালে চাষের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। এ উন্নত জাতটিতে নিয়মিত ফল ধরে।

এর প্রতিটি ফলের ওজন হয় ৮০-৯০ গ্রাম। উচ্চ ফলনশীল বারি সফেদা-২ জাতটি ২০০৩ সালে চাষের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। এ জাতটি থেকে নিয়মিত ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি ফলের ওজন ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী প্রতিটি গাছ থেকে ৮০-৯০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।

চারা উত্পাদন সরাসরি বীজ থেকে এবং কলমের মাধ্যমে দু’ভাবেই সফেদার বংশবিস্তার করা সম্ভব। অঙ্গজ উপায়ে গুটি কলম, জোড় কলম ও চোখ কলম পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করা যায়। বাংলাদেশে বীজ থেকে এবং জোড় কলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়ে থাকে। সফেদা ফলের বীজের জীবনীশক্তি বহু বছর পর্যন্ত বজায় থাকে। বীজতলায় একইঞ্চি গভীর করে বীজ লাগাতে হয়।

বীজ থেকে চারা অঙ্কুরিত হতে প্রায় ১ (এক) মাস সময় লাগে। চারায় ২-৩টি পাতা বের হলে তা তুলে টবে নির্দিষ্ট স্থানে লাগাতে হবে। গ্রাফটিং বা জোড় কলমের ক্ষেত্রে রুটস্কক হিসেবে খিরনি গাছ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মহুয়া ও বকুল গাছও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খিরনি গাছের ওপর কলম করে যে সফেদা চারা পাওয়া যায় তা থেকে ৩-৪ বছরেই ফল আসতে শুরু করে।

অন্যদিকে বীজ থেকে উত্পাদিত চারা গাছে ফল আসতে ৬-৭ বছর সময় লাগে। চারা রোপণ সমতল জমিতে বর্গাকার কিংবা ষড়ভুজী পদ্ধতি অনুসরণ করে সফেদার চারা রোপণ করা যেতে পারে। এজন্য সারি থেকে সারি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব উভয় দিকে ৫ মিটার বা ১৬ ফুট এবং চারা লাগানোর জন্য গর্তের আকার হবে লম্বা, চওড়া এবং গভীরতায় ৭৫ সেন্টিমিটার। মে মাস থেকে জুলাই মাস সফেদার চারা লাগানোর জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়। তবে বছরের অন্যান্য সময়েও সফেদা চারা লাগানো যায়।

গর্তে চারা লাগানোর আগে জমি উত্তম রূপে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে করে নিতে হয়। চারা লাগানোর ১৫ দিন আগে প্রতিটি গর্তে ১০-১২ কেজি পচা গোবর সার, ৫০০ গ্রাম খৈল, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমপি সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্ত ভরে রাখতে হবে। গর্তের মাঝামাঝি অবস্থানে সফেদার চারা সোজাভাবে লাগাতে হবে। চারা লাগানোর পর গাছকে সোজা রাখার জন্য গর্তের দু’পাশে ২টি বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার সঙ্গে বেঁধে রাখা যেতে পারে। এছাড়া প্রয়োজনমত পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিচর্যা সফেদার চারা লাগানোর পর থেকে ৬ মাস পর পর প্রতিটি গাছের চারপাশে ভালোভাবে কুপিয়ে মাটি আলগা করে তার সঙ্গে ১৫-১৬ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম শুকনা খৈল, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০০ গ্রাম এমপি সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। খরার সময় প্রয়োজনীয় সেচ দিলে ফলন ভালো হয়। কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই সফেদা গাছে সাধারণত মাজরা পোকা, পাতা ছিদ্রকারী পোকা এবং এক ধরনের সাদা রঙের শোষক পোকার আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। শোষক পোকা পাতা এবং কচি ডগা শোষণ করে। এছাড়া পাকা ফলের ওপর ফলের মাছি পোকার শূককীটের উপদ্রব দেখা যায়।

এই শূককীট পাকা ফলের ভেতরে ঢুকে ফল নষ্ট করে। শুঁয়াপোকা গাছের পাতা, ফুলের কুঁড়ি এবং কচি ফলে আক্রমণ করে নষ্ট করে দেয়। এসব পোকা দমনের ক্ষেত্রে আইপিএস পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এদের দমনের জন্য ১৫-২০ মিলিলিটার ম্যালাথিয়ন বা ডাইমেক্রন ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে ছিটাতে হবে। এছাড়া সফেদার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য রোগবালাই দেখা যায় না।

ফল সংগ্রহ আমাদের দেশে সারাবছরই সফেদা গাছে ফল ধরে। তবে আশ্বিন-কার্তিক মাসে এবং বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। ফলের খোসায় যখন কিছুটা কমলা রঙের আভা দেখা দেয় তখনই ফল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। ফল পুষ্ট হলে গাছ থেকে একসঙ্গে সব ফল পেড়ে ফেলা ভালো। পাকা ফল ৩২-৩৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় প্রায় ১ মাস পর্যন্ত খাওয়ার উপযোগী থাকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।