আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আদ্রিতার মামার বিয়ে।

আমি মনে প্রাণে একজন মুসলিম। ঘৃণা করি ধর্ম বিদ্বেষী নাস্তিকদের এবং ধর্ম ব্যবসায়ী ছাগু তথা উগ্রবাদীদের। ক্যঁচাল পছন্দ করিনা । । আজ আমাদের গ্রামের আজাদ চাচার বিয়ে।

বিয়েতে যেতে হবে। কারন আজাদ চাচা আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৫/৭ বছর ম্যনেজার পোষ্টে চাকুরী করেছেন তাছাড়া একই গ্রামের মানুষ তাই বিয়েতে অনুপুস্হিত হওয়ার সুযোগ নেই। সেদিন ছিলো আমাদের ক্রিকেট খেলা পাশের গ্রামের সাথে। আমিও খেলতাম। একপ্রকার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে যেতে হলো।

আমি তখন ও যানতামনা আজাদ চাচা আদ্রিতার মামা হন। সেদিন বিয়েতে না গেলে হয়তো বিষয়টা অজানাই থেকে যেত। আমি গ্রামে থেকেছি ক্লাস এইটে পড়ার সময় থেকে আমাদের শররের বাসায় থেকে পড়ালেখা করছি। বছরে দুই ঈদে আর বিশেষ কারন ছাড়া গ্রামে যাওয়া হয়নি। আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি।

হঠাৎ একদিন আব্বা বললেন বাড়ি যেতে হবে তোমার আজাদের বিয়েতে। আমি বললাম এখনতো স্কুলে পড়ার চাপ আছে বিয়েতে গেলে পড়ার ক্ষতি হবে। আব্বা বললেন আমি ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় যেতে পারছিনা তাই তোমাকে পাঠাচ্ছি। কি আর করা পরদিন স্কুলে গিয়ে ছুটির দরখাস্ত জমা দিয়ে বাসায় চলে এলাম। তার পরদিন গ্রামের বাড়ি চলে এলাম।

আসার সময় আব্বা একটি খামে কিছু টাকা দিলেন জানিনা কতটাকা ছিল খামটিতে। পরে আম্মার কাছে শুনেছিলাম পাঁচহাজার টাকা ছিল। এটাই ছিল আমাদের পক্ষ থেকে বিয়েতে উপহার। আমি বাবা মার বড় সন্তান এজন্য বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে আব্বার অনুপুস্হিতিতে আমাকেই যেতে হতো। সকালে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়লাম বাল্যবন্ধুদের খোঁজে।

ওদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম রাস্তর ধারে লাটিম গাছের নিচে টংয়ে বসে। বন্ধুরা আমাকে পেয়ে পাশের গ্রামের সাথে খেলা ফাইনাল করে ফেললো। শুক্রবার খেলা একটা স্কুল মাঠে। তখন যোহরের আজান হয়ে গেছে তারপরও গল্প ছলছিল। এর মধ্য দেখি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে আদ্রিতা ও খাদিজা।

যাওয়ার সময় পিছনে ফিরে আমাদের দিকে তাকিয়েছিল। ব্যস!. বন্ধুরা হই দিয়ে উঠলো…. আমাকে নাকি আদ্রিতা পছন্দ করেছে ইত্যাদি-ইত্যাদি। বাড়ি চলে এলাম গোসল সেরে বিয়েতে যেতে হবে। বিয়ে রওয়ানা হবে দুটোয়। বাড়ি ফিরেই আম্মার কিছু কথা শুনতে হলো বিয়েতে যেতে হবে আর তুমি ঘুরে বেড়াচ্ছো ইত্যাদি।

চট জলদি রেডি হয়ে নিলাম। ব্যগ থেকে কালো জিন্স প্যন্টটা পড়লাম অফ হোয়াইট টিশার্ট পড়ে নিলাম। তারপর রয়েল ম্যরিজ স্পোর্ট পারফউমটা কয়েকবার স্পে করে জুতো পরে বের হলাম বিয়ে বাড়ির দিকে। হেটেই চলছি অল্প একটু রাস্তা হাফ কিলোরও কম। বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে একটি চেয়ার টেনে নিয়ে চুপচাপ বসে আছি পার্শে গ্রামের মুরব্বীরা বসে আছেন।

কিছুক্ষণের মধ্য আজাদ চাচা এসে আমাকে ডেকে আন্দরমহলে নিয়ে গেলেন। বিয়ে রওনা হবে সে প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি বাসর ঘর সাজানোর কাজও চলছে। আমাকে আজাদ চাচার আত্নীয় স্বজন বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। লেখাপড়া করছি কিনা কোন ক্লাসে এইসব।

কিছুক্ষণ পরপর ঘড়ি দেখছি সময় দুটো পেরিয়ে গেছে কখন!.. এখন সাড়ে তিনটা!.. আজাদ কাকাকে বললাম কাকা কখন যাবেন? সাড়ে তিনটা পার হলো। তিনি হাসলেন এবং বল্লেন বিয়ে সাদীতে সময় একটু হেরফের হয়ই। আমি খুধা তৃষ্ণায় অস্থির!.. গরমে ঘেমে একাকার!.. পকেটের রুমাল বের করে মুখ মুচছি। এরমধ্য দেখি সবাই তাড়া দিচ্ছে বাস এসেছে বাসে উঠার জন্য। লোকজন সেদিকে হাটা দিল।

আমি একগ্লাস পানি চাইলাম একজন মহিলার কাছে তিনি পানি পাঠিয়ে দিলেন। আমিতো ভ্যবাচ্যকা!.. নিন পানি!.. আদ্রিতা পানি হাতে দাড়িয়ে। গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানি শেষ করে চুপিসারে বাড়ির বাহিরে বাসের দিকে চললাম। দুইটা যানবাহন দাড়িয়ে আছে। সামনে একটা মাইক্রোবাস পেছনে একটা মুড়ির টিন মার্কা মিনিবাস।

আমি মিনিবাসটাতে সামনের দুইসিট বাদ দিয়ে বাপাশের সিটটায় বসলাম। জনে জনে লোকজন বাসে উঠলো। আমার সামনের সিটেই আদ্রিতা ও খাদিজা এসে বসলো। আমার সাথে বসেছিল আমাদের আরেক ফাষ্ট বোলার নাসিম। বাস চলা শুরু করলো।

আদ্রিতা পেছনে ফিরে আমায় বললো চিপস খাবেন? না আমি চিপস খাইনা। পকেট থেকে চুইংগামের রোল (স্পোর্টস) বের করে চিবুতে শুরু করলাম। আদ্রিতাদের ও দিলাম পাশে বসা নাসিমকেও দিলাম। ভটভট শব্দে বাস চলছে। জানালা দিয়ে বাতাসে আদ্রিতার খোলা চুল বারবার আমার মুখের সামনে চলে আসছে।

কণের বাড়িতে পৌছলাম সাড়ে চারটার দিকে। বাস থেকে নেমেই সবাই খাবার টেবিলের দিকে চললাম। খাবার অবশেষে খাবার খেয়ে শান্তি অণুভব করলাম। আমার একমাত্র সঙ্গী ছিলো নাসিম। বাদবাকী সবাই আমার চেয়ে বয়সে সিনিয়র।

বরের বন্ধুবান্ধদের টেবিলে সিগারেট চকলেট দিয়েছিল সেখান থেকে নাসিম একপ্যকেট ব্যনসন সিগারেট হাতিয়ে আনছে। আমি আর নাসিম কণের বাড়ির পাশে একটি ইউক্যলিপটাস বাগানের দিকে গেলাম। এদিক সেদিক দেখে সিগারেট ধংস শুরু করলাম। নামিততো পুরা খোর!.. একের পর এক টেনেই যাচ্ছে… আমি মোটে তিনটে শেষ করলাম। মাথা শূণ্যতা লাগছে.. তারাতাড়ি মসজিদের টউব অয়েলের গিয়ে মাথায় পানি দিলাম মুখ হাত ধুলাম পানি পান করলাম।

কিছুতেই গন্ধটা আমায় ছাড়ছিলনা। মাথা মুছবো কি দিয়ে এই চিন্তায় অস্থির!.. নাসিম এক বাড়িতে ঢুকে একটি গামছা নিয়ে এলো সেটা দিয়ে মাথা মুছলাম। তারপর গামছা ভিজিয়ে টিশার্ট খুলে শরীরটা মুছলাম। এখন অনেকটা আরাম লাগছে। ঘুম ঘুম লাগেছিল।

কখন যে আদ্রিতা আমাদের ফলো করছিল তা টের পাইনি। নাসিম যখন বললো দেখো তোমার ইয়ে তোমার অবস্থা দেখছে। সাথে সাথে সিগারেটের প্যকেটটা জুতোর গোড়ালি দিয়ে তছনছ করে দিলাম। নাসিমের নিষেধ সত্তেও। তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে।

রাত আটটার মত বাজে। বিয়ের পর্ব শেষ হতে অনেক দেরী। হয়তে অনেক রাত হয়ে যাবে। আমি আর নাসিম সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা বাড়ি ফিরে যাবো্। পরক্ষণে কণের বাড়িতে ঢুকে পেয়ে গেলাম লাবু চাচাকে আজাদ চাচার ছোট ভাই।

তাকে সিদ্ধান্তের কথা বললে তিনি আজাদ চাচার কাছে নিয়ে গেলেন আমাকে। আজাদ চাচা নিজে বের হয়ে এসে মাইক্রোবাসের ড্রাইভারকে বলে দিলেন আমাদের বাড়ি পৌছে দিতে। আমরা মাইক্রোবাসে উঠলাম। এরমধ্য মেয়েরাও উঠছে মাইকো্রতে তাদের মধ্য আদ্রিতাও ছিলো। অনেক গাদাগাদি করে মাইকো চেপে বাড়ি ফিরছি।

এরমধ্য ড্রাইভার অডিও প্লেয়ার চালিয়ে দিল। তখনকার হিট এলবাম আলিসার মেড ইন ইন্ডিয়া। আমরা সুরের মুর্ছনায় ডুবে আছি…. সজোরে এগিয়ে চলছে মাইক্রোবাস। তু কি পাগলেমে দিল দিল তু জাচা হামছে কারনে……………… কখন যে রাস্তা শেষ হলো টের পেলামনা। মাইক্রোবাসটি আমাদের বাড়ির সামনে থামলো আমি নেমে গেলাম।

বাড়িতে ঢুকে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে নিলাম। পরদিন বৌভাতে যেতে হলো। ঠিক আড়াইটায় পৌছে গেলাম আজাদ চাচার বাড়ি। খাবার টেবিলে বসে খেয়ে নিলাম। এবার নবদম্পত্তির সেলামী পর্ব।

অনেক উপহার আসছে বড় বড় বাক্সে। আর সেগুলো লিষ্ট করছে খাদিজা-আদ্রিতা। এবার আমার পালা। আমি প্যন্টের পকেট থেকে খামটা বের করলাম। আজাদ চাচাকে মুসাহাফা আর চাচীকে সালাম করে চাচার হাতে খামটা দিলাম।

চাচা সেটি খাদিজাকে দিল। আদ্রিতা এবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি নাম যেন?.. আমি বললাম লিষ্টটা আমায় দাও আমি লিখে দিচ্ছি। আমার আব্বার নামটা লিখে দিলাম। দেখি সবাই হাসছে…। বন্ধুরা কয়েকবার ডাকতে এলো খেলার জন্য।

ওদের না করে দিলাম আজ খেলতে যাবনা। চেয়ার নিয়ে বসে বসে দেখছি কে কি উপহার দিচ্ছে। একসময় আমাকে লেখার দ্বায়িত্ব দেয়া হলো। আমি সে দ্বায়িত্ব যথাযত পালন করে চলছি। আজাদ চাচা আর চাচী বিদায় নিলেন।

আমি তবুও বসেই আছি…. আদ্রিতার মা এসে পাশে বসলো বিভিন্ন বিষয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের মধ্য। আদ্রিতার মা কিন্তু আমার মায়ের বান্ধবী। একসময় চা চলে এলো। চা টা পান করে অনেকটা সতেজতা অনুভব করলাম। তারপর সবাইকে আমাদের বাড়ি আসার কথা বলে বাড়ির দিকে পথ ধরলাম।

বিকেল তখন শেষের দিকে। সন্ধ্যা নামবে নামবে ভাব। শীতল বাতাসে শরীরটা জুড়িয়ে দিল। রাস্তায় দেখা একজন বন্ধুর সাথে ওর থেকে যা শুনলাম শুনে ত থ! হয়ে গেলাম। নাসিম নাকি ছড়িয়ে দিয়েছে আদ্রিতা আর আমার প্রেম কাহিনী!! পরদিন সবাই আমাকে ক্ষ্যপায় আদ্রিতা আদ্রিতা বলে!.. রাগে দুঃখে মনে হয় নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়ি!!...  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।