আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানবদেহে লতিফাদির কার্যকর ভুমিকা ও অবস্থান

[ আল্লাহর রেযাবন্দির জন্য শুধু এক ধরনের এবাদত না হয়ে যেমন নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি বিবিধ এবাদত কর্ম ও তৎসম্পর্কীয় বহুবিধ নিয়ম পদ্দতি রয়েছে, তেমনি এবাদতের অন্তরনিহিত নুরপ্রাপ্তিও এক ছবকেই পূর্ণভাবে অর্জিত হয়ে যায়না। প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ছবকের। ত্বরিকতের পথ পরিক্রমায় কামেল মোকাম্মেল পীরের তাওয়াজ্জুহ প্রাপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন লতিফা সমূহে নূর আগমনের পথ সুগম করতে হয়। এবার দেখা যাক মানবদেহে প্রধান লতিফা সমূহ কি কি, এবং চরিত্র গঠনে লতিফাদি কিভাবে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। মানবদেহের প্রধান লতিফাগুলো হলো ১০টি যথাঃ (১) ক্বলব,(২) রুহঃ,(৩) সির,(৪) খফী,(৫) আখফা,(৬) নফস,(৭) বা’দ,(৮) মাহ,(৯) খাক, (১০) নার।

লতিফাদির কার্যকর ভুমিকা (১) ক্বলবঃ- প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দরবারে আহাজারির প্রক্রিয়াটি ও যথাযতভাবে অনুসৃত হওয়া বাঞ্জছনীয়। পীর প্রদত্ত নূরে ইলাহীর তাওয়াজ্জুহ প্রাপ্তিতে লতিফায়ে ক্বলবের মুখ হতে ‘আল্লাহ-আল্লাহ’ জিকির চালুর মাধ্যমে তা নুরান্বিত হতে পারলেই কেবল সত্যিকারভাবে জীবনের ভুল-ত্রুটি-গোনাহের অনুশোচনায় অশ্রু সজল চিত্তে দরদর বেগে যথার্থ রোনাজারি সম্ভব। হযরত আদম(আঃ) ন্যায় অস্থিরচিত্ত প্রসুত ক্রন্দনের মধ্যমে পরিষ্কৃত ও কলুষ মুক্ত হৃদয়েই আল্লাহর সাথে মহব্বতের সম্পর্ক প্রতিস্টিত হয়। অশ্রু-ধোয়া স্বচ্ছ ক্বলবে ধারণকৃত সৎকর্মই আল্লাহর দরবারে গৃহিত হয়। ক্বলব জারীর মাধ্যমে তওবার মকাম উত্তীর্ণ হয়; ফলশ্রুতিতে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর প্রবৃত্তি দুরীভুত হয়।

স্বীয় দোষ স্বীকার করার হিম্মত সঞ্চিত হয়। এভাবে আত্ম সমালোচনায় শুদ্দি অভিযানে ব্যক্তি ও সমাজ জীবন হয়ে ওঠে স্বচ্ছ আয়নার মত, কলুষমুক্ত ও পবিত্র। ক্বলবের অবস্থান হল- বাম দুধের দু’আঙ্গুল নিচে। (২) রুহঃ- লতিফায়ে রুহ জারীর মাধ্যমে গায়রুল্লাহর আকর্ষণ সম্পূর্ণ ছিন্ন করতঃ আল্লাহর দিকে পরিপূর্ণ রুজু হওয়ার অবস্থা অর্জিত হয়। আল্লাহ পাক কোরআন মজীদে এরশাদ করেছেন- “সমস্ত কিছু হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারই (আল্লাহর) দিকে রুজু হয়ে যাও”।

এর পুরোপুরি হাল লতিফায়ে রুহ নুরান্নিত হওয়ার মাঝে নিহিত। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর দিকে পুরোপুরি রুজু হয়ে বলেছিলেন, “নিশ্চয়ই আমি স্বীয় মুখমণ্ডল তারই দিকে মুতাওয়াজ্জাহ করছি, যিনি আকাশ মণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নহি”(সুরা-আনয়ামঃ ৭৯)। এভাবে আল্লাহর সাথে বান্দার দুরুত্ব কমে আসতে থাকলেই ভালবাসার সংযোগ দৃঢ়বদ্দ হয়; আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ়তর করার পথ ‘তরিকত’ অবলম্বন ব্যতীত শুধু ইসলামের বুলি আওড়ানোর মধ্যে সার্থকতা নেই। অতএব, আল্লাহর দিকে পরিপূর্ণভাবে ধাবিত হতে চাইলে, তাওয়াজ্জুহ প্রদানকারী পীরের ফয়েজ লতিফায়ে রুহকে করতে হবে নুরান্নিত এবং তা বজায় রাখার জন্য নিজেকে থাকতে হবে সদাসতর্ক ও সচেষ্ট। লতিফায়ে রুহের মাধ্যমে ‘মাকামে এনাবত’ বা পরিপূর্ণ রুজু হওয়ার মাকাম অর্জিত হয়।

এ লতিফার অনুশীলনে মনোযোগশক্তি বৃদ্দি পাওয়া বশতঃ স্মরণ শক্তি বর্ধিত হয়। রুহের অবস্থান হল- ডান দুধের দু’আঙ্গুল নিচে। (৩) সিরঃ- দায়িত্ব পালনে অমনোযোগিতা আজ সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছে- যার মুলে রয়েছে দুনিয়ার মোহে অন্ধ হয়ে যাওয়ার এক আকর্ষণ বিশেষ। মারেফাত বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, লতিফায়ে সির- এ ‘আল্লাহ-আল্লাহ’ জিকির চালুর মাধ্যমে দুনিয়াবি মিথ্যা মায়া-মোহ-লোভ-লালসা বিদুরীত হয়, আল্লাহর হক ও বান্দার হক আদায়ের জ্ঞান অর্জিত হয়; অর্থাৎ দুনিয়ার অনাবশ্যক আসক্তি হতে হতে মুক্তির মাধ্যমে আল্লাহর মহব্বত জাগ্রত হয়। হযরত ঈসা (আঃ) ন্যায় যোহদ বা সংসারের অনাবশ্যক প্রীতি ত্যাগের গুণাবলী সমাবিষ্ট হয়, ফলে দাহিত্ব পালনে নিবেদিত হওয়া যায়।

সিরের অবস্থান হল- বাম দুধের দু’আঙ্গুল উপরে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।