আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেডলাইনঃ- এবার ''মেননের'' লুঙির গিট্টু পরীক্ষা করলেন ''গোলাম মাওলা রনি''

ছাগু ব্যাতিত দুনিয়ার সকল প্রানি দীর্ঘজিবী হউক এ হাল তেরা চাল হ্যায়, মকসুদ তেরা মাল হ্যায় গোলাম মাওলা রনি এ হাল তেরা চাল হ্যায়, মকসুদ তেরা মাল হ্যায়, লাখোকো আন্ধা কর দিয়াঃ। বিখ্যাত একটি উর্দু কবিতার লাইন। ভাবার্থ-ভণ্ডামি ও মোনাফেকি বা হিপোক্রেসি। কবি বলছেন, তোমার ভণ্ডামিমূলক বেশভূষা ও চালচলন লাখ লাখ মানুষকে নির্বোধ ও বোকা বানানোর কৌশলমাত্রÑ তোমার আসল উদ্দেশ্য হল প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন এবং বদ উদ্দেশ্যসমূহ হাসিল করা। কবিতার প্রেক্ষাপটে যদি সমাজকে বিবেচনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, মানুষ রাজনৈতিক ক্ষমতা ও মৌনতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভণ্ডামি করে।

আমি রাজনৈতিক ভণ্ডামির কিছু নমুনা এবং সর্বশেষে মৌনতার একটি উদাহরণ দিয়ে লেখাটি শেষ করব। মহাজোটের শরিক দলের সবারই দীর্ঘদিনের দাবি ও আকাক্সক্ষা ছিল মন্ত্রিপরিষদে যোগদানের। তাদের আচার-আচরণ সবকিছুই ছিল ক্যাবিনেটমুখী। আমরা যারা তরুণ এমপি, তারা দূর থেকে মহাজোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের দীর্ঘশ্বাস লক্ষ্য করতাম। অনেকের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমার কথাও হয়েছে।

যা হোক, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা জনাব তোফায়েল আহমেদের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মন্ত্রিপরিষদে যোগ না দেয়ার বিষয়ে তার অনেক আবেগ, বক্তব্য কিংবা হিসাব থাকতেই পারে। কিন্তু জনাব রাশেদ খান মেননের বিষয়টি অন্য সবার মতো আমাকেও ভীষণ হতবাক করেছে। মেননকে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা পাঠকদের কাছে বর্ণনা করলেই হতবাক হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হবে। রাজনৈতিক বোধ এবং বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই মেননের নাম শুনেছি।

ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মেধাদীপ্ত পদচারণা, মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাম ধারার ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব দেয়া এবং সর্বোপরি সাধারণ জীবনযাপন যে কোন তরুণের মতো আমাকেও তার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। বিশেষত, বরিশালের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারে তার জন্ম, প্রত্যেকটি ভাই-বোনের স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফলতা কিন্তু একই সঙ্গে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের কারণে তাকে প্রিয় মানুষদের তালিকায় স্থান না দিয়ে পারা যায় না। তিনি যখন ছাত্র রাজনীতির প্রবাদপুরুষ হিসেবে ষাটের দশকের ৬ দফা আন্দোলনের সময়ে সফলতার স্বর্ণ শিখরে অবস্থান করছেন ঠিক তখনই আমার জন্ম। সেই আমি যখন ৪৭০০ সিসির লেক্সাস জিপে চড়ে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলাম তখন দেখতাম রাশেদ খান মেনন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীদের মতো মান্যবর বরেণ্য ব্যক্তিরা রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রমে মাথা নুইয়ে যেত।

ভয়ে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সালাম দেয়ার সাহস পর্যন্ত পেতাম না। সেই আমি রাজনীতিতে এসে প্রায় দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। লেক্সাস জিপ বিক্রি করে একটি সাধারণ সিএনজি করা প্রাইভেট কারে ঘুরে বেড়াই। আর মেনন ভাইয়ের গাড়ির উচ্চতা লেক্সাস জিপকেও ছাড়িয়ে গেছে এবং এ গাড়ি বহরের দীর্ঘতা হƒদয়ে কম্পন ধরায়। একই পদ আমাকে ভিখারি করল এবং অনেককে করল মহারাজা।

মেনন ভাইয়ের সঙ্গে সরাসরি আমার কোনদিন কথা হয়নি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে। কিন্তু তার স্ত্রীর সঙ্গে হয়েছিল। হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। তখন আমি খবর গ্রুপে সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত। সাপ্তাহিক চিত্রবাংলার ঈদ সংখ্যায় বরেণ্য রাজনীতিবিদদের স্ত্রীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।

আরও অনেকের সঙ্গে মেননের স্ত্রীর সাক্ষাৎকার এবং একটি ছবি সংগ্রহের জন্য আমি মগবাজারে তার বাসায় যাই কোন এক পড়ন্ত বিকালে। দোতলায় থাকতেন তিনি। ভাবী অনেক জেরার পর গেট খুলে দিলেন। কথা হল। দেখলাম ঘরের সাদামাটা আসবাবপত্র।

রঙ ওঠা দেয়াল। পুরনো ফ্যান এবং কিছু ছড়ানো-ছিটনো বইপত্র। ভাবী খুবই শীর্ণকায় ছিলেন এবং চোখে পরতেন ভারি গ্লাসের চশমা। অনেকটা আদরের বড় বোনের ঢঙে কথা বলছিলেন। একদিনের ঘণ্টাখানেকের আলাপ কিন্তু স্মৃতিপটে এখনও জাজ্বল্যমান রয়েছে সেই দিনের মুহূর্তগুলো।

যা হোক, খুবই আগ্রহ হয় আমার সেই ভাবীটি এখন কেমন বাড়িতে থাকেন কিংবা তার গৃহকোণের আসবাবগুলো মেনন ভাইয়ের গাড়িগুলোর মতোই উচ্চতা বা বর্ণিলতা পেয়েছে কিনা তা দেখার জন্য। মহাজোটের সরকারের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হওয়ার পর অন্য অনেকের মতো আমিও হতাশ ছিলাম মেনন ভাই মন্ত্রী না হওয়ার কারণে। হতাশ ছিলেন স্বয়ং মেনন ভাইও। আমি এখনও স্পষ্ট মনে করতে পারি মেনন ভাইয়ের হতাশাগ্রস্ত ও বেদনাহত মুখাবয়বটির কথা, যা আমি দেখেছিলাম বঙ্গভবনে। প্রথম মন্ত্রিপরিষদ শপথ গ্রহণের দিনটিতে।

আওয়ামী লীগের কিছু সিনিয়র নেতা, মেনন ভাই ও ইনু ভাই যখন জানলেন তারা মন্ত্রী পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন না তখন সবাই এসে একত্রে বসলেন বিচারপতিদের জন্য সংরক্ষিত কিন্তু খালি আসনগুলোতে। পেছনের সারিতেই আমি বসা ছিলাম। তাদের সারিতে একমাত্র রাজনৈতিক নেতা বসা ছিলেন রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। পেছনের সারিতে বসে আমি তাদের বিমর্ষ ফিসফিসানি শুনতে পাচ্ছিলাম। যা শুনেছিলাম তা কাউকে বলতে পারিনি এবং পারবও না।

মন্ত্রী না হওয়ার এত হতাশার পরও মেনন ভাইয়ের জন্য খুশির সংবাদ ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির মতো সম্মানিত পদটি পাওয়া। আমার জানা মতে, এ পদের যতটুকু ভার কিংবা ক্ষমতার বলয় রয়েছে তার পুরোটুকুই তিনি গত সাড়ে তিন বছরে স্বগৌরবে ব্যবহার করেছেন সর্বতোভাবে। বদনামও কম হয়নি। বিশেষ করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তি বাণিজ্যের ন্যক্কারজনক খবর দেশের সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অনবরত প্রকাশিত হওয়ার কারণে সারাদেশে ছিঃ ছিঃ রব পড়ে যায়। সরকারও পড়ে মহাবিব্রতকর অবস্থায়।

যা বাংলাদেশের কোন নির্বাচনী এলাকায় হয়নি, ঠিক সেই কাজটিই সরকারকে করতে হয় মেনন ভাইয়ের জন্য। পদাধিকার বলে তিনি ছিলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সেই কমিটি বিলুপ্ত করে এডহক কমিটি করা হয় এবং এই এডহক কমিটির সভাপতি করা হয় ঢাকা জেলা প্রশাসককে। আমাদের সংসদের কোন সদস্যকে ভর্তি বাণিজ্যের অপবাদ নিয়ে অসম্মানজনকভাবে সভাপতির পদ ছাড়তে হয়নি কেবল মেনন ভাই ছাড়া। বরিশালকেন্দ্রিক রাজনীতি যারা করেন তারা অবশ্যই জানেন বরিশাল বিভাগের যাবতীয় সরকারি কাজকর্মে মেনন ভাই এবং তার সহযোগীদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি সম্পর্কে।

সরকারের প্রত্যেকটি বিভাগ ও অনুবিভাগের যাবতীয় টেন্ডারে তিনি ও তার লোকজনের ভাগ থাকে। তার লোকজন বলতে তার বোন বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমানের লোকজন। যারা আগে ছিল বিএনপি এখন হয়েছে মহাজোটের-বঞ্চিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। রাজনীতি থেকে আউট হচ্ছেন বরিশাল আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের কাণ্ডারি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। এখন সেই মেনন ভাই মন্ত্রিপরিষদে যোগ না দিয়ে হঠাৎ করেই ঋষি বা সন্ন্যাসী হয়ে গেলেন।

ইনু ভাই বলল, মেনন সাহেবরা সন্ন্যাসী নন। যা হোক, আমার জানা মতে, ওয়ার্কার্স পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিশেষত ফজলে হোসেন বাদশা এমপির বিরোধিতার জন্যই মেনন ভাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রী হতে পারেননি। কিন্তু পত্রপত্রিকায় তিনি উল্টো বিবৃতি দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করছেন। সরকারকে দুর্নীতিবাজ বলছেন।

আবার এও বলছেন, তার দল মহাজোটে আছে, থাকবে এবং সরকারের সব কাজের অংশীদার। মেনন ভাইয়ের এই বিপরীতমুখী বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে আমার একটি গল্প মনে পড়ছে। এক বয়স্ক পীর সাহেব তার মুরিদের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন জ্যৈষ্ঠ মাসে। মুরিদ তার হুজুরের খেদমতের জন্য তার অতি প্রিয় আম এবং দুধ এনে দিলেন। পীর সাহেব হাত দিয়ে আম ও দুধ মাখালেন।

তারপর কী যেন ভাবলেন এবং মুরিদকে বললেন একটি চামচ আনার জন্য। মুরিদ চামচ আনার পর হুজুর ভালো করে হাত ধুয়ে চোখ বন্ধ করে সেই মাখানো আম-দুধ চামচ দিয়ে খাওয়া আরম্ভ করলেন। এবং খাওয়া শেষ হলে চোখ খুললেন। মুরিদ তো মহা অবাক। হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলেন চোখ বুঁজে চামচ দিয়ে আম-দুধ খাওয়ার কারণ।

হুজুর উত্তর করলেন-হাত দিয়ে কচলিয়ে আম ও দুধ মাখানোর পর আম-দুধের মিশ্রণকে আমাশয়ের বিষ্ঠা বা মল মনে হচ্ছিল। তাই চোখ দিয়ে দেখে এবং হাত দিয়ে খেতে ঘৃণা হচ্ছিল। এ কারণে চোখ বন্ধ করে তিনি চামচ দিয়ে আম-দুধ খেলেন। অর্থ, বিত্ত ও ক্ষমতা নিয়ে যেমন মানুষের ভণ্ডামির শেষ নেই, তদ্রুপ নারী-পুরুষ একে অপরের কাছে নিজেকে অতিশয় সৎ কিংবা সতী প্রমাণের জন্যও বিচিত্র সব ভণ্ডামির আশ্রয় নেয়। এমন একটি মজাদার ভণ্ডামির ঘটনা আমাকে সংসদের এক সিনিয়র মহিলা এমপি বলেছিলেন।

ওই এমপির এক চাচাতো বোন ছিল, যে কিনা পাশের বাড়ির এক ছেলের সঙ্গে প্রেম করত এবং অবৈধ মেলামেশাও করত। মেলামেশার একপর্যায়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। আমাদের মহিলা এমপি তখন দশম শ্রেণীতে পড়েন। সময়টা ছিল ষাটের দশক। অভিজাত পরিবারটি খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।

সামাজিক অবস্থার কারণে গর্ভবতী মেয়েটির প্রণয় সঙ্গীটির সঙ্গে বিয়ে দেয়া সম্ভব ছিল না, কারণ সে ছিল একেবারেই নীচু জাতের। অন্যদিকে ওই সময়ে গর্ভপাতও ছিল প্রায় অজানা এবং ভয়ংকর একটি বিষয়। এ অবস্থায় দূরবর্তী গ্রামের একটি ছেলের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেয়া হয়। এই অবৈধ প্রণয়ের কথা গ্রামের অনেকেই জানত এবং গর্ভবতী হওয়ার কথা পরিবারের অনেকেই জানত। এবং আমাদের মহিলা এমপির বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি জানতেন।

যা হোক, বিয়ে হল। বাসর হল এবং বিয়ের পরদিন জামাই আমাদের মহিলা এমপিসহ অন্যান্য শ্যালিকার সঙ্গে খোশগল্প করছিলেন। শ্যালিকারা জিজ্ঞাসা করল, তাদের বোন কেমন? দুলাভাই উত্তর করলেন, ‘তোমার বোনের মতো লজ্জাবতী সতী নারী আমি জীবনে দেখিনি। তার ঘোমটা খুলতে এবং হাত ধরতে আমাকে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা চেষ্টা করতে হয়েছে ... View this link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।