আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টি২০ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ- শ্রীলঙ্কার 'এম' ম্যাজিক !

গতকাল শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় শুরু হলো টি২০ বিশ্বকাপের চতুর্থ আসর। কোন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নেই। সোজা খেলা দিয়ে শুরু। দীর্ঘ (মাঝে মাঝে বিরক্তিকর) বক্তৃতা করার সুবর্ণ সুযোগটা লঙ্কানরা হাতছাড়া করলো !!!!! এ আসরের শুরুতে কোন অঘটন নেই। পরিষ্কার ফেভারিট স্বাগতিকরাই জিতেছে।

জিম্বাবুয়ের সান্তনা টস জয়েই সীমাবদ্ধ। টস জিতে লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে পাঠান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক টেইলর। শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮২ রানের পাহাড় গড়ে তোলে। শ্রীলঙ্কার প্রধান ব্যাটসম্যানদের একজন কুমার সাঙ্গাকারা করেন ২৬ বলে ৪৪। এর পরে আছে জীবন মেণ্ডিসের ৪৩।

১৮২ রানের বিশাল পাহাড়ের পরও লঙ্কানদের ব্যাটিং বিভাগের এখানেই ছুটি। ১৮৩ রান জিম্বাবুয়ের জন্য কঠিন টার্গেট সন্দেহ নেই। মাসাকাদজা, টেইলর, চিগাম্বুরা, সীবান্দার মতো ব্যাটসম্যানদের জন্যও এটা কঠিন। কারণ লঙ্কান বোলিং শক্তি। সবার আগে আসে ভয়ানক বোলার লাসিথ মালিঙ্গার নাম।

টি২০ বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল বোলারদের একজন তিনি। অথচ কাল তিনি মূল চরিত্রতো ননই, পার্শ্ব চরিত্রও নন। কারণ বহুদিন পর মুরলীধরনের দেশের আরেক স্পিন যাদুকরের দীর্ঘ নিদ্রাভঙ্গ। তিনি অজন্তা মেণ্ডিস। মুরলীধরনের রাজত্বের ভেতরই ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন এই মায়াবী ঘূর্ণির যাদুকর।

তাঁর রহস্যময় বল কেউ পড়তেই পারছিলো না। ক্রিকেট বিশ্ব ধরে নিয়েছিলো মুরলী ছুটি নিলেও আর ভাবনা নেই। অজন্তা এসে গেছেন। ভালোই চলছিলো মুরলী অজন্তা দ্বৈরথ। কিন্তু কেমন করে যেন সব ব্যাটসম্যানরা অজন্তার বলের রহস্য ধরে ফেললেন ! অজন্তাকে নামিয়ে আনলেন মাটিতে।

সেখান থেকে সোজা পাতালে-অর্থাৎ জাতীয় দল থেকেই বাদ। এর মধ্যে বিদায় নিলেন স্পিন সম্রাট মুরলী। মুরলীর ছায়ায় ঢাকা পড়া রঙ্গনা হেরাথ হাল ধরলেন বটে সেটা তেমন টেকসই হলো না। অজন্তা মাঝে মাঝে দলে উঁকি দেন বটে। কিন্তু টিকতে পারেন না।

মাঝে একবার অসিদের বিরুদ্ধে ১৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। তারপরও দলে ঠাঁই হলো না। নয় মাস পর দলে ফিরলেন। কপালগুণে জায়গা পেলেন প্রথম একাদশে। ফিরলেন মহারাজার বেশে ! প্রথম স্পেলে ২ ওভারে ১ মেডেন, ৩ রানে ৩ উইকেট।

হ্যাট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। পরের স্পেলে ২ ওভারে ১ মেডেন, ৫ রানে ৩ উইকেট। সব মিলে ৪ ওভার ২ মেডেন, ৮ রানে ৬ উইকেট ! সোজা বিশ্ব রেকর্ড ! আগের রেকর্ডটি ছিলো উমর গুলের। গুল নিউ জিল্যাণ্ডের বিপক্ষে ৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বিশ্ব রেকর্ডটির মালিক ছিলেন। কালকের পার্শ্ব নায়কও মেণ্ডিস ! চমকালেন ? তিনিও মেণ্ডিস।

তবে জীবন মেণ্ডিস। লঙ্কানদের নবাগত অল রাউণ্ডার। আসলেই অল রাউণ্ডার। কাল ব্যাট হাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ রানের পর বল হাতে নিলেন ২৪ রানে ৩ উইকেট। ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হবার জন্য যথেষ্ট।

কিন্ত পুরণো ম্যাণ্ডিসের ফেরার দিনে এতো ভালো খেলেও কপাল পুড়লো জীবন মেণ্ডিসের ! ওয়েস্ট ইণ্ডিজের স্বর্ণযুগের কিংবদন্তী বোলার মাইকেল হোল্ডিং অবসর নেবার পর এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, আপনার এমন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। অথচ সারা জীবনে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন মাত্র ২ বার। সেটা টেস্ট প্রধান যুগের কথা বলছি। জবাবে হোল্ডিং বলেন, আমি এমন এক দলে খেলেছি সেখানে তারার মেলায় এটাই স্বাভাবিক। যেমন ধরুন আরেকবার ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হবার মতো বোলিং করেছিলাম।

দুই ইনিংস মিলে ১৪ উইকেট। সেই ম্যাচেই কিনা ভিভ রিচার্ডস খেললেন এক রাজসিক ইনিংস- ২৯৭ নট আউট। আর সময় পেলেন না ভিভ ! ফলে পুরস্কারটি আমার হাতছাড়া হয়ে গেলো ! কালকের ম্যাচ শেষে জীবন মেণ্ডিসেরও মনে হতে বাধ্য সেই কথাটি- আর সময় পেলেন না অজন্তা মেণ্ডিস ! কাল জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং কার্ডে বোলারদের নামের পাশে ছিলো শুধুই 'এম' অর্থাৎ দশটি উইকেট শিকারীর নামই শুরু 'এম' দিয়ে। ৬টি উইকেটের পাশে মেণ্ডিস (অজন্তা), আরো ৩টির পাশেও মেণ্ডিস (জীবন)। দশম নামটিও এম- মালিঙ্গা (লাসিথ)।

কালকের শ্রীলঙ্কার জয়ের পেছনেই এভাবেই কাজ করেছে 'এম' ম্যাজিক ! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।