আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার........................আত্মউন্নয়ন মূলক পোস্ট

সাধারণত সম্পদকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে—মানুষ, অর্থ, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল। এই তালিকায় পঞ্চম স্থানে আমরা অনায়াসেই রাখতে পারি সময়কে। ইংরেজিতে লিখতে সবগুলোর আদ্যক্ষর হবে ‘এম’—‘ম্যান’, ‘মানি’, ‘মেশিন’র ‘মেটিরিয়াল’ এবং ‘মিনিট’। সময় এমনই এক সম্পদ, যাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে ভালোভাবে। তা নাহলে সময়ই আপনাকে কাবু করে ফেলতে পারে।

আমরা সব সময়েই শুনতে পাই সবাই বলছেন, ‘আমার একটুও সময় নেই। ’ অথচ মজার কথা হলো, আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটি দিনে একই সময় থাকে। সময়কে নিয়ন্ত্রণে তাই নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা আবশ্যক- সময় ও জীবনের লক্ষ্য ▬▬▬▬▬▬ বলা যেতে পারে, ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’ দক্ষতার সঙ্গে করতে পারলে ব্যক্তি তার স্বপ্ন সার্থক করে তুলতে পারবেন। জীবনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারবেন এবং মানসিক চাপও কমাতে পারবেন। একটু ঘুরিয়ে বলতে হলে, সময়কে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে জীবনে আপনি যা যা চান, তা পেতে সময়ই আপনাকে সাহায্য করবে।

যে কোনো পরিকল্পনা বা তা রূপায়ণের ক্ষেত্রে মূলমন্ত্র হলো এই ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’। এই কাজে গাফিলতি থাকলে পরিকল্পনাই হোক কিংবা কোনো দায়িত্ব পালন হোক সবই পন্ড হয়ে যাবে। এই ধরনের বহু নজির আমরা ইতিহাস থেকে সহজেই পেতে পারি। ইতিহাস পড়তে গিয়ে আমরা দেখি, অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে পরাস্ত হওয়ার মূল কারণ ছিল সময়ের উপযুক্ত সদ্ব্যবহার না করা। টাইম ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করবেন ▬▬▬▬▬▬ লক্ষ্য এবং অগ্রাধিকার স্থির করে নিন।

আসলে একটি দিনে আপনি কি কি কাজ করবেন, তা আগেভাগেই স্থির করে নিন। ঠিক একইভাবে তা করুন সপ্তাহ, মাস, প্রতি তিন মাস এবং একটি বছরের জন্য। কোন সময়ে আপনি সব চেয়ে ভালো কাজ করতে পারেন, তা বুঝে নিন। এই ‘প্রাইম টাইম’ আপনাকে নিজেকেই চিহ্নিত করতে হবে। আসলে কারো পক্ষেই সারা দিন একইভাবে কাজ করে যাওয়া সম্ভব নয়।

আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ভোরের দিকে ভালো কাজ করতে পারেন। কেউ আবার বেলা হলে বেশি ভালো কাজ করেন। যে সময় আপনার উৎপাদনশীলতা সবচেয়ে বেশি, সেই সময়কেই বলা হয় ‘প্রাইম টাইম’। সম্পদ হিসেবে সময়ের সবচেয়ে বেশি সদ্ব্যবহারের জন্য আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ ‘প্রাইম টাইম’ খুঁজে বের করতে হবে। এই সময়টিকেই আলাদা করে রাখতে হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল কাজগুলো সেরে ফেলার জন্য।

তাহলেই ঐ কাজগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে করা সম্ভব হবে। একটি রুটিন তৈরি করে নিন এবং তা মেনে চলুন। রুটিনমাফিক কাজ করলে তা যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এলোমেলোভাবে কাজ করলে এই সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই খেয়ালখুশি মতো কাজ করার প্রবণতা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

আমরা তো চোখের সামনে এমন অনেক ম্যানেজার, শিক্ষক, সরকারি চাকুরে, সমাজসেবী, আইনজীবী, চিকিৎসককে সর্বদাই দেখতে পাচ্ছি, যারা একটি দিনেই পাহাড় প্রমাণ কাজ সেরে ফেলছেন। আমরা হয়তো অবাক বিস্ময়ে এদের দেখে বলে থাকি, কি করে এরা এত কাজ করছেন! তাদের সাফল্যের গোপন রহস্য কিন্তু সব গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য রুটিন তৈরি করা এবং তা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলা। প্রতি কাজের জন্য সময়সীমা বেঁধে নিন ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬ প্রধান প্রধান কাজের জন্য আমাদের একটি সময়সীমা স্থির করে নিতেই হবে। সময় বেঁধে নিয়ে কাজে হাত দিলে মনঃসংযোগ বাড়ে, উৎপাদনশীলতাও বেশি হয়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আপনি কতটা সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন, তার জন্য কিন্তু বেশ চিন্তা-ভাবনা এবং বিচারবুদ্ধির প্রয়োজন হয়।

অথচ দৈনন্দিন কাজকর্মে এই বিষয়টিকে আমরা বেশির ভাগ সময়ে পাত্তা দিই না। এটা খুবই আশ্চর্যের যে, ৪৫ মিনিটে যে কাজ সেরে ফেলা যায়, তার জন্য অনেক সময়েই রেখে দেয়া হয় দু ঘণ্টা। আর এটা করলে ৪৫ মিনিটের কাজটি সারতে সত্যি সত্যিই দু ঘণ্টাই লেগে যাবে। প্রকৃত অবকাশের সময় বের করে নিন ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬ আধুনিক জীবনযাত্রার মানসিক চাপ সহ্য করে টিকে থাকতে গিয়ে আমরা অনেক সময়েই একান্ত নিজের জন্য প্রকৃত অবকাশের সময় বের করে নেওয়ার ব্যাপারটি মাথায় রাখি না। একজন দক্ষ ‘টাইম ম্যানেজার’ কিন্তু শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের অবকাশ খুঁজে নেবেন।

অথচ সব দায়িত্বই তিনি পালন করবেন। এ যুগে কাজের পরিবেশে যে রকম মানসিক চাপ বেড়েছে, তাতে নিজের শখ মেটানো, নানা ব্যাপারে আগ্রহ রাখা, এমনকি নিছক অলসভাবে কিছুটা সময় কাটানোরও প্রয়োজন রয়েছে। সময় নষ্ট ঠেকানো ▬▬▬▬▬▬ সময়কে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে সময় নষ্ট হয়, এমন কতগুলো কাজ (টাইম ওয়েস্টার্স) সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। পরিশ্রম যাতে বিফলে না যায়, তার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। কাজের কোন পর্যায়ে কিভাবে ‘টাইম ওয়েস্টার’ সক্রিয় হতে পারে, সে ব্যাপারটি একটু লক্ষ্য করা যাক : পরিকল্পনা স্তর : উদ্দেশ্যহীনভাবে কাজ, একবারে অনেক কিছু অর্জন করে ফেলার ইচ্ছা, অহেতুক তড়িঘড়ি করা।

সংগঠন স্তর : হিসাব না করে কাজ করা, শুধু শুধু কাগজপত্রের বোঝা বাড়ানো লাল ফিতের ফাঁস, ফাইল গুছিয়ে না রাখা। কর্মী পরিচালনা : প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয় এমন কর্মী রাখার প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ, কর্মীদের কাজে অনুপস্থিতি। নির্দেশনা : ক্ষমতা ঠিকভাবে ভাগ করে না দেয়া, অনুপ্রেরণার অভাব, দলবদ্ধভাবে কাজ করতে না পারা। নিয়ন্ত্রণ স্তর : অপ্রয়োজনীয় টেলিফোন ঠেকাতে না পারা, ঠিক সময়ে ‘না’ বলতে পারার অক্ষমতা। আদান-প্রদান : রুটিনের বাইরে বৈঠকের আয়োজন করা, অস্পষ্ট ভাষায় সংযোগ, অন্যের কথা না শোনা।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ : ঠিকমতো সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে দোটানায় ভোগা, সব তথ্য হাতের কাছে না রাখা, মাঝপথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সরে আসা। ম্যানেজারদের এসব বিষয়ে সর্বদাই সচেতন থাকতে হবে। তাহলে সময়ের অপচয়ও কমানো যাবে, বৃথা পরিশ্রম করার হাত থেকেও রেহাই পাবেন। টাইম ম্যানেজমেন্টে যা বিবেচ্য নয় কাজ করলেই সময় বাঁচবে : ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬ অনেক সময় মনে করা হয়, যে সমস্ত ম্যানেজার খুব পরিশ্রম করেন, তারাই তাড়াতাড়ি সব কাজ শেষ করে ফেলতে পারেন। এটা সব সময়ে সত্যি নয়।

সময়কে যিনি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তিনি সব সময়ে ব্যস্ত না-ও থাকতে পারেন। তার কৃতিত্ব বোঝা যাবে ফল দিয়ে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ : আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মনে করি যে, সিদ্ধান্ত যত উঁচু স্তরে নেয়া হবে, ততই ভালো। এটাও সব সময়ে ঠিক নয়। ক্ষমতা উপযুক্ত হাতে বণ্টন করে দিলে পরিচালনার অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরেও সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

দক্ষতা : এই ভুল ধারণা অনেকেরই থাকে যে, সবচেয়ে দক্ষ ম্যানেজারই সবচেয়ে কর্মতৎপর। কিন্তু বাস্তবে এটা সত্যি নয়। দক্ষতা হলো সব কাজ ঠিকভাবে করা। আর কর্মতৎপরতা হলো ঠিক কাজটিই করা। অহমিকা : কেউ কেউ মনে করেন, আমিই এই কাজটি সবচেয়ে তাড়াতাড়ি এবং সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারি।

কিন্তু যুক্তি দিয়ে নিজেকে বিচার করে দেখলে বুঝতে পারবেন, আরো অনেকেই একই ধরনের প্রশিক্ষণ পেয়ে এসেছেন। একই অভিজ্ঞতা তাদেরও রয়েছে। তারা সুযোগ পেলে আপনার চেয়ে ভালো কাজ করে দেখাতে পারবেন। সংগ্রহীতঃ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.