আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভ্যন্তরের বিহঙ্গ বিহান

চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রি-কথায় বেঁধে নেবো ভোরের খোঁপা। দিনের দিকে দিন ফিরেছে বৃষ্টি কণায় হীরের দ্যুতি পাতার গায়ে দুলছে আকর ডালে ডালে শালিক প্রীতি মাটির গন্ধে মন উচাটন দূর্বাঘাসে পায়েল শ্রুতি গাছের দেহে নতুন শাড়ী জলছবিতে আত্মরতি। । এমনি সব কথাদের ঠিকভাবে ব্যাখ্যা না করতে পারার কত সব অনুভব নিয়ে স্বপ্ন দেখি- আলোর ভেলায় স্রোতে ভাসতে থাকি। ছায়ায় ভাসি, ভাসি গানের সুরে, ভাসতে থাকি হরিয়াল পাখির বিষাদ পালকে সকালের নরম রোদে, কখনো’বা বিকেলের পাতা ঝরানো হাওয়ায়।

তিনদিক থেকে আসা স্বপ্নকে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে ছুঁতেই টলটলে দীঘির জলের উপর ঝুঁকে দেখি এক ভিনদেশী পথিক ফেরি করে আনা বিষাদের ঝুলি উপুড় করে স্নাত করিয়ে নিচ্ছে নাম না জানা বহু মানুষের কান্নার জল, ভুল-ভাল প্রেম, নানা উচাটন, অগুনতি জোনাকির শব, কার্নিশে বসে থাকা ঝড়ে ডানা ভাঙা পাখির কষ্ট, ব্ল্যাক হোলের মাঝে হারিয়ে যাওয়া পেন্সিল-কাগজ এমনকি আস্ত মানুষের আহাজারিকেও । খুব আবদার নিয়ে ভিনদেশীকে ইচ্ছে করে শুধাই গাঁয়ের এক কোণায় রাতের চাঁপা অন্ধকারে যে ঘরটি স্তব্ধ, স্থির হয়ে অপেক্ষায় থাকে বৃষ্টির সেতার শোনার; সে ঘরের চালায় কি একখণ্ড মেঘ এনে দেয়া যায় কিনা। ভিনদেশী হয়ত চাইলে হাসতে হাসতে তাও এনে দেবে। অথচ তন্নতন্ন করে তার হৃদয় খুঁড়লে দেখা যাবে নদী–জল–বাতাসের ফাঁদে সেই-ই আটকা পড়ে আছে। আটকা পড়ে আছে কোনো সুসজ্জিত কাঁচের বোতলে; খসে পড়া তারাদের স্মৃতি নিয়ে বৃত্তবন্দী হয়ে।

তবুও ভিনদেশীটি প্রখর রৌদ্রের মাঝে বাঁজাতে থাকে তৃষ্ণার মাদল। গাঁয়ের যে ঘরটিতে এখন মেঘখণ্ড ছায়া দেয়, সেখানকার কোণ ঘেঁষে যে পুকুরটি তাতে আমি মাছ হয়ে জলে নামি। কুন্তলে কুন্তলে মুখ গুঁজে খুঁজে নেই মায়া যা এতকাল হণ্যে হয়ে খুঁজেছি। ঈশ্বরের আশীর্বাদে অসহনীয় উত্তাপও গিয়ে এখন গড়ায় জাফরানি বিকেলে। রাখালিয়া বাঁশীতে আর ঝড় তোলেনা বিষাদের শীৎকার।

দলবেঁধে উড়ে যাওয়া বকের পিছুপিছু অসীম আঁধারও ত্রস্ততায় পালায়। এখন আমি খেলা করি মহাশূন্যে; একা একা নক্ষত্রের ভিড়ে। ভেসে চলি অনন্তে নক্ষত্রের আলোয় জিভে ছুঁয়ে দেখতে স্নিগ্ধ রাতের স্বাদ। ভীষণ নিভৃতে কেটে ফেলেছি ফেলে আসা অতীত, তামসের নীলাভ বিষে বেড়ে ওঠা ছায়া–মায়া–কায়ার লোভী আলজিহবা পর্যন্ত; গুড়িয়ে দিয়েছি হিংসার লেলিহান শিখায় গড়ে ওঠা বসতবাটি–হাটবাজার। পুড়ে যাক অহমিকা।

এভাবেই ভালো থাকতে চেয়েছিলাম বলে আমি আবার ঈশ্বরের করুনাধারায় ভিজতে থাকি ভিনদেশী পথিকের তরে, সে যে মোহগ্রস্ত হয়েছে আমারই মতো ঈশ্বরকে ভালবেসে। চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রিকথায় বেঁধে নিবো ভোরের খোঁপা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।