আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাহলিল জিবরানের সন্তানদের নিয়ে

অভিভাবকদের উদ্দেশে বলি (আসলে নিজের উদ্দেশে, কারণ আমি নিজেও একজন অভিভাবক), অভিভাবকদের উচ্চাভিলাষ, অতিরিক্ত প্রত্যাশা ছেলেমেয়েদের জন্য বড় বোঝা, বড় চাপ হয়ে উঠতে পারে। আপনার ছেলে বা মেয়ে যা করছে, যেমন করছে, তা-ই তারিফ করতে শিখুন। রবীন্দ্রনাথ নিজে ছিলেন ‘প্রবলেম চাইল্ড’, তাকে ডজন খানেক স্কুল বদল করিয়েও পড়াশোনা করানো যায়নি। তাতে কী হয়েছে? আসুন, কাহলিল জিবরানের কবিতাটা পড়ি: অনুবাদ করি: কাহলিল জিবরানের সন্তানদের নিয়ে তোমার সন্তানেরা তোমার সন্তান নয়। জীবনের নিজের প্রতি নিজের যে তৃষ্ণা, তারা হলো তারই পুত্রকন্যা।

তারা তোমাদের মাধ্যমে আসে, তোমাদের থেকে নয়। এবং যদিও তারা থাকে তোমাদের সঙ্গে, কিন্তু তাদের মালিক তোমরা নও। তুমি তাদের দিতে পারো তোমার ভালোবাসা, কিন্তু দিতে পারো না তোমার চিন্তা, কারণ তাদের নিজেদের চিন্তা আছে। তুমি তাদের শরীরকে বাসগৃহ জোগাতে পারো, কিন্তু তাদের আত্মাকে নয়। কারণ তাদের আত্মা বাস করে ভবিষ্যতের ঘরে।

যেখানে তুমি যেতে পারো না, এমনকি তোমার স্বপ্নের মধ্যেও নয়। তুমি তাদের মতো হওয়ার সাধনা করতে পারো, কিন্তু তাদের তোমার মতো বানানোর চেষ্টা কোরো না। কারণ জীবন পেছনের দিকে যায় না, গতকালের জন্যে বসেও থাকে না। তোমরা হচ্ছ ধনুক, আর তোমাদের সন্তানেরা হচ্ছে ছুটে যাওয়া তির। ধনুর্বিদ অনন্তের পথে চিহ্নের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

যেন তার তির ছোটে দ্রুত আর দূরে। তুমি ধনুক, তুমি বাঁকো, ধনুর্বিদের হাতে তোমার বেঁকে যাওয়া যেন আনন্দের জন্য হয়। তিনি কেবল চলে যাওয়া তিরটিকে ভালোবাসেন তা-ই নয়, তিনি তো দৃঢ় ধনুকটিকেও ভালোবাসেন। রবীন্দ্রনাথের একই বিষয় নিয়ে একটা কবিতা আছে, ‘উপহার’ শিরোনামে। আমাদের সন্তানেরা নদীর মতো, তারা গান গাইতে গাইতে সব বাধা অতিক্রম করে সামনে চলতে থাকবে।

পেছন দিকে তাকানোর তাদের সময় কোথায়? আমরা, বুড়োরা, পর্বতমালার মতো স্থানু হয়ে থেকে যাব, আর নদীটির কথা মনে করব, তাকে অনুসরণ করব আমাদের ভালোবাসা দিয়ে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমরা পাহাড়, আমাদের সন্তানেরা নদী, আমরা তাদের সঙ্গে সঙ্গে ছুটে চলতে পারব না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।