আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৯/১১ আক্রমণের আরেক বর্ষপূর্তি-কেউ কি মনে রেখেছে তাঁদের ???

আমি আমার আনন্দে লিখি!!! কয়েক দিন আগে শেষ হল ৯/১১ আক্রমণের আরেক বর্ষপূর্তি...কেউ কি জানেন,ঐ হামলায় অনেক বাংলাদেশীও ছিলেন?যারা জানেন পারলে আমাদের সাথে আরও শেয়ার করতে পারেন,আর আমরা যতটুকু পেরেছি,চেষ্টা করেছি সেদিনের কিছু ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরার... ৯/১১ এর ভয়ানক হামলার পরে, বাংলাদেশীদের সম্পর্কে এটাই ধারণা ছিল যে,আমাদের দেশের অন্তত (কমপক্ষে) ৫০ জন মৃত বা অনুপস্থিত রয়েছে. ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি টাওয়ার থেকে যে পরিমান ধোঁয়া বের হচ্ছিল,তা দেখে শাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন ছিল আশে পাশের সবাই,চিন্তিত ছিল পরিবারের সদস্য, বন্ধু বা সহকর্মীদেরকে নিয়ে,যারা সেদিন নিউ ইয়র্ক এর লোয়ার ম্যানহাটানে অবস্থান করছিলেন বা ট্রেড সেন্টারে কাজে ছিলেন। অনুমান করা হয়,প্রায় ৬০ জাতীয়তার মানুষ ঐ হামলার শিকার হয়েছে,এদের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে হিসাব করা হয় প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে সেটি সংশোধন করে ১২ জন বাংলাদেশীর নাম নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু এই হিসাব খুব একটা গ্রহন যোগ্যতা পায়নি তখন,কারন "কাগজের" হিসাব ছাড়াও হতে পারে অনেক বাংলাদেশি,অনেক ভিনদেশী অকানে কাজ করতেন। তাই হতাশার কথা এটাই,এর মানে হল, যে কতজন বাংলাদেশী ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ হামলায় নিহত হয়েছে সেই প্রকৃত সংখ্যা জানা কখনও হবে না ।

১২ জন নিশ্চিত বাংলাদেশী, যারা সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১ এ নিহত হয়েছিলেন,তাঁরা হলেন মোহাম্মদ সাদেক আলী, সাব্বির আহমেদ, নুরুল হক মিয়া, নুরুল এর স্ত্রীশাকিলা ইয়াসমিন , মোহাম্মদ শাহজাহান, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী, আবুল কাশেম চৌধুরী, নাভিদ হোসেন, ওসমান গনি এবং আশফাক আহমেদ আছেন. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ হাই কমিশন এই ১২ জন নিহত বাংলাদেশীদের নাম নিশ্চিত করেছে। (আরো দুটি নাম বাকি আছে যাদের নাম আমি এখানে উল্লেখ করতে / যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছি। কেউ জানলে শেয়ার করে দেয়ার অনুরোধ করছি) তালিকায় বাংলাদেশ হাই কমিশন উল্লেখ করেছে এই ১২ জনের মধ্যে আশফাক আহমেদ,নাভিদ হোসেন এবং ওসমান গনি ছাড়া বাকিরা সবাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক। এর মধ্যে আমি কয়কজনের তথ্য,যতটুকু পাওয়া সম্ভব হয়েছে,আপনাদের সাথে শেয়ার করছি... মোহাম্মদ শাহজাহান মোহাম্মদ শাহজাহান (৪১) তার স্ত্রী মানসুরার সাথে নিউ ইয়র্ক এর সীমান্তের কাছে স্প্রিং ভ্যালি তে বসবাস করতেন. তিনি Marsh & McLennan Companies, Inc. (MMC) কোম্পানিতে কম্পিউটার অ্যাডমিনের কাজ করতেন। অফিস টি ছিল ৯৩ তলা থেকে ১০০ তলা পরজন্ত,যেখানেই প্লেন চরম আক্রমন করেছিল।

কমপিউটার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর শাহজাহান এবং দুই অন্যান্য বাংলাদেশী নুরুল হক মিয়া এবং শাকিলা ইয়াসমিন সহ ২৯৫ জন মাল্টি মিডিয়া কর্মী এ হামলার সময় ঐ ফ্লোরে কাজ করছিলেন...তাদের মধ্যে কেউই বেঁচে নেই... (উপরের সারির ২য় ব্যক্তি) আবুল কাশেম চৌধুরী আবুল কাশেম চৌধুরী (৩০) ছিলেন একজন দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশী আমেরিকান, একজন সাবেক কূটনীতিক বাংলাদেশীর সন্তান। নিউ ইয়র্কে তাঁর স্ত্রী, বাবা, ভাই এবং দুই বোন নিয়ে ছিল তাঁর পরিবার। Staten Island কলেজ থেকে স্নাতকের পর চৌধুরী একটি নামকরা ব্রোকার হাউস এর উচ্চ-পদস্ত সহকারী বিশ্লেষক এবং পরবর্তীতে পুরো প্রতিষ্ঠানের অ্যাডমিন হিসাবে বহুদিন কাজ করেন. তার ভাই আবুল কায়সার চৌধুরী বলেন,আক্রমনের সময় কাশেম চৌধুরী ১০৩ তলায় ছিলেন, প্লেন ক্রাশ করার সময় তিনি লিফট থেকে তাঁর ভাইকে ফোন দিয়েছিলেন,আর এক মিনিট সময় পেলেই নাকি কাশেম চৌধুরী হয়ত নীচ তলায় নেমে আসতে পারতেন,এর পরেই ফোনের লাইন কেটে যায়...আক্রমরণের মাত্র এক মাস আগে চৌধুরী ইয়ং কিম নামক একজন কোরিয়ান-আমেরিকানকে বিয়ে করেন...(২য় সারির শেষের জন) সাব্বির আহমেদ সাব্বির আহমেদ (৪৭) WTC এর বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট ‘Windows on The World’ (উত্তর পাশের টাওয়ারের ১০৬ তলায়) কাজ করতেন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আমেরিকা আসেন,খুব পছন্দ করতেন নিজের কাজ কে এবং প্রায় ১১ বছর তিনি একই কাজ করেছেন। তাঁর স্ত্রীর নাম জেবা আহমেদ এবং এই বিবাহিত দম্পতির তিনটি সন্তান ছিল. আহমেদ এর মৃত্যুর সময়ে, তাঁর ছেলের (তানভীর) বয়স ছিল ১৬ বছর এবং মেয়ের বয়স ছিল ১৯ বছর তাঁদের বাসা ছিল মেরিন পার্ক, ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক এ।

টাওয়ার আক্রমনের সময়ে সাব্বির আহমেদ এবং আরেক বাংলাদেশী কর্মচারী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী সহ তার ৮৯ জন সহকর্মীদের সাথে রেস্টুরেন্টে কর্মরত ছিলেন। ধারণা করা হয় তখন আরও ৭৬ - ৮০ জন গেস্ট ছিলেন ঐ রেস্টুরেন্টে যাদের কেউ ই আর ফিরে আসেনি...(২য় সারির প্রথম ব্যক্তি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী (৩৮) কুইন্স, নিউ ইয়র্কে তাঁর স্ত্রী বারাহিন আশরাফীর সঙ্গে বসবাস করতেন। সালাউদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৮৭ সালে আমেরিকা চলে আসেন, এখানে তিনি রিয়েল এস্টেট নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং কম্পিউটার সায়েন্সেও ডিপ্লোমা প্রাপ্ত হন। তিনি প্রথমে বাল্টিমোরে কাজ করতেন,পড়ে নিউ ইয়র্কে ভালকিছু কাজের আশায় এসেছিলেন। তিনি নিউ ইয়র্কে থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং বিখ্যাত ‘Windows on The World’ রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসাবে কাজ শুরু করেন।

সালাউদ্দিন এবং বারাহিনের একটি ৬ বছর বয়সী ছেলে ছিল। আক্রমণের সময় বারাহিন গর্ভবতী ছিলেন। সালাউদ্দিন সাধারনত প্রতিদিন বিকালে কাজে আসতেন, কিন্তু স্ত্রীর সাথে রাতে হসপিটালে থাকতে হবে ভেবে আক্রমনের দিন তিনি সকালে রেস্টুরেন্টে কাজে আসেন...আক্রমনের ৪৮ ঘণ্টা পর বারাহিন জন্ম দেন তাঁদের ছেলে সন্তান ফরকাদ চৌধুরী কে,যখন ৮৮ অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে তাঁর স্বামী সম্ভবত অনেক দূরে...HBO টিভি চ্যানেলে “In Memoriam: New York City, 9/11/01” ডকুমেন্টারিতে বলা হয়েছে, হতে পারে এই আক্রমনের ফল,প্রথম অনাথ বাচ্চা ফরকাদ চৌধুরী ...(প্রথম সারির প্রথম ব্যাক্তি) নুরুল হক মিয়া নুরুল হক মিয়া (৩৫) ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৮০ সালের দিকে মার্কিন অভিবাসী হন এবং ১৯৮৬ সালে নুরুল Marsh & McLennan Companies, Inc., (MMC) এ যোগ দেন । ১৯৯৫ এ নুরুল এর এক বন্ধুর বিয়েতে শাকিলা ইয়াসমিন নামে এক বাংলাদেশী অভিবাশীর সাথে পরিচয় হয় এবং পাচ বছর পর ১৯৯৯ সালে তাঁরা বিয়ে করেন ।

কর্মক্ষেত্রে নুরুলের খুব ভালো সুনাম ছিল এবং মাল্টি মিডিয়ায় মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে অনেক পুরস্কার প্রদান করা হয় । নুরুল audiovisual technology নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ডিগ্রি লাভ করেন । সর্বশেষ তিনি অডিওভিস্যুয়াল টেকনোলজিস্ট হিসেবে এক নাগাড়ে ১৫ বছর কাজ করেন. নুরুল এর কর্মক্ষেত্রে ৯৩ তলায় ছিল, কিন্তু আক্রমনের সময় তিনি ৯৯ তলায় একটি মিটিং এ ছিলেন, তখন তার স্ত্রী শাকিলা যিনি নিজেও একজন মাল্টি মিডিয়া কর্মী, WTC এর ৯৭ তলায় ছিলেন। আগেই বলেছি, ঐ অফিস ছিল পুরো ৯৩ তলা থেকে ১০০ তলা পর্যন্ত। আর দুর্ভাগ্যক্রমে এই সমস্ত ফ্লোরেই আক্রমনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ে, কারণ আক্রমণকারী প্লেন আঘাত হেনেছিল WTC এর ৯৩-৯৯ ফ্লোরেই...তো আমরা ধারণা করে নিতেই পারি কি ঘটেছিল সেই স্বামী-স্ত্রীর কপালে সেই আক্রমনের দিন...(প্রথম সারি ৩য় ব্যক্তি) শাকিলা ইয়াসমিন শাকিলা ইয়াসমিন (২৬) নুরুল হক মিয়ার স্ত্রী, ১৬ বছর বয়সে আমেরিকায় গিয়েছিলেন তার বাবা শরীফ এ চৌধুরী এবং মা শওকত আরা শরিফের সঙ্গে ।

বাংলাদেশে এসএসসি সম্পন্ন করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে WAKEFIELD উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, ছয় বছর থাকার পর মার্কিন নাগরিকত্ব প্রাপ্তির পর তিনি ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে স্নাতক ডিগ্রী অরজন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি নুরুল হক মিয়াকে বিয়ে করেন, প্রাণঘাতী আক্রমণের এক বছর আগে কমপিউটার সহকারী হিসাবে তার স্বামীর কর্মস্থলে যোগদান করেন। আক্রমনের সময়ে তিনি ভবনের ৯৩ তলায় ছিলেন ... মোহাম্মদ সাদেক আলী প্রাক্তন বাংলাদেশী কূটনীতিক সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী , মোহাম্মদ সাদেক আলী (৬২) ছিলেন একজন সংবাদপত্র বিক্রেতা. নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে তিনি তাঁর স্ত্রী মমতাজের সঙ্গে বসবাস করতেন । আক্রমনের সময় খুব সম্ভবতঃ আলী লোয়ার ম্যানহাটানের ধাঁরে কাছে কোথাও ছিলেন বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ভিতরে ছিলেন...তাঁকে আর পরে পাওয়া যায়নি... ব্রুকলিন রাস্তার নতুন নামকরন... নুরুল এবং শাকিলা নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাস করতেন এবং প্রতিবেশীদের সাথে তাঁদের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল, তাদের মধ্যে ডায়ান হান্ট তাঁর প্রতিবেশীর বিয়োগান্তক মৃত্যুতে অনেক ব্যথিত হন এবং স্মরণীয় এক উদ্যোগ নেন। তিনি শাকিলা এবং নুরুল নামানুসারে ঐ বছরই ব্রুকলিনের রাস্তার পুনঃনামকরণ করার একটি উদ্যোগ উত্থাপন করেন শহর কাউন্সিলে।

তার সহকর্মী কাউন্সিলার,নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ (বিশ্বের ৮ম ধনী ব্যক্তি, রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ যিনি ব্লুমবার্গ এলপি মালিক) সকলের সম্মতিতে ডিসেম্বরে কাউন্সিলে একটি বিল (৭৪৬-এ) পাশ করেন, যার ফলে ২০০৫ সালে এভিংটন অ্যাভিনিউ এবং থার্ড এভিনিউ, ব্রুকলিন সহ নিউ ইয়র্কের ৬৭টি রাস্তার পুনরায় নামকরন করা হয়। এভিংটন অ্যাভিনিউ এবং থার্ড এভিনিউ, ব্রুকলিন এর নতুন নাম করা হয় “Shakila Yasmin & Nurul Haque Miah 9-11 Memorial Way” মেয়র ব্লুমবার্গ, সহকর্মী হান্ট এবং অন্যান্যরা চাইলে বাকি ৬০ টি দেশের মানুষের নামেও রাস্তা করতে পারতেন...কিন্তু তাঁরা করেছেন আমাদেরই এক দেশী দম্পত্তির জন্য...কয়জনই বা জানেন তাঁদের কথা ?? কে জানলো ,কে জানলো না সেটা বড় কথা না...আমার মতে, এই ভারী ভারী দালান ইটের নিচে চাপা পরে মারা যাওয়ার কষ্ট যে কী হতে পারে সেটা হয়তো বোঝার সাধ্য আমাদের কার নেই...আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি,কিন্তু শরীর নাড়াতে পারছিনা...ব্যথায় অস্থির শরীরের আনাচে-কানাচে...আর আস্তে আস্তে বের হয়ে যাচ্ছে আমার জীবন পাখি...আর আমি এক বিন্দুও নাড়াতে পারছিনা কিছু...উফফফ...কল্পনা করা যায়না এরকম ব্যথার মৃত্যু...আল্লাহ তাঁদের বেহেশত নসিব করুন... লেখকঃইয়াসির মনন (facebook.com/yasir.monon ) সম্পুর্নরূপে লেখকের অনুরোধে শেয়ার করা লেখকের লিঙ্ক আমার ফেবু তে পাবেন আমি কোন লিঙ্ক আপ্লোড করতে পারিনি ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।