প্রাকৃতিক দৃশ্য, ভৌগলিক কারণ, স্থানীয়দের আতিথিয়েতা, স্বল্পব্যায়ে পর্যাপ্ত বিনোদন, খাবার দাবার ইত্যাদি নানা কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ মালয়েশিয়াতে ঘুরতে আসেন। ঘুরাঘুরির পাশাপাশি কেনাকাটা একটা গুরূত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমরা যখন ভ্রমণ পরিকল্পনা করি তখন এই গুরূত্বপূর্ণ দিকটি ভুলে যাই। কিন্তু সামান্য কিছুটা সময় ইন্টারনেটে দিলে আপনি বেশ কিছু টাকা সাশ্রয় করতে পারবেন যা দিয়ে হয়ত নতুন কোন একটা কিছু করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। তাই আজকে আপনাদের আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু দোকানের বা মার্কেটের নামে শেয়ার করব যেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দের জিনিসটি অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে কিনতে পারবেন। প্রত্যেক দোকানের ওয়েব সাইট থাকে, যেখানে "প্রমোশন" বলে একটা বাটন পাবেন । ঢুকে পড়ুন এবং বাছাই করতে থাকুন আপনার পছন্দের জিনিসটি।
আমার জানাতে যদি কোন গ্যাপ থাকে বা যদি আপনি আরও ভালো কোন দোকানের নাম জানেন তবে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!
পাসার সেনি/সেন্ট্রাল মাকের্ট
এর অবস্থান মসজিদ জামেক/মসজিদ ইন্ডিয়া ও চায়না টা্উনের পাশে। এ্ই মাকের্টটা হলো আমাদের ঢাকার নিউ মার্কেট এর মতো। আপনি যদি সৌখিন জিনিস কিনতে চান আবার দামটাও ভালো চান এখানে চলে আসুন। মার্কেটে হাটাহাটি করতে করতে পা ব্যাথা হয়ে গেলে এখানে একটা মজার জিনিষ আছে। ফিস স্পা। ছোট ছোট তেলাপিয়া মাছের কামড় খেতে পারেন, আর দোতলায় ফুড কোর্ট আছে সেখানে নানান খাবার দাবার পাবেন। ট্রাই করতে পারেন।
চায়না টাউন
বাংলাদেশীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। এর অবস্থান মসজিদ জামেক/মসজিদ ইন্ডিয়া ও পাসার সেনীর পাশে। চায়নিজ মাল নিয়ে বলার কিছু নাই। ছোট একটা পরামর্শ হলো, যেকোন জিনিষের দাম ৫০% কম বলে শুরূ করূন। ওরা আমাদের গুলিস্থানের হকারদের মতো আপনার দাম শুনে ওদের ভাষায় গালি দিতে পারে। আপনি তো আর বুজবেন না, তাই কষ্ট ও পাবেন না।
এই দুই মাকের্টের পাশ যেতে যেতে আপনার মন যদি বাংলা খাবার এর জন্য ব্যাকুল হয়, তবে এর পাশেই পাবেন কোতারায়া মার্কেট। তার আশে পাশে বেশ কিছু বাংলা খাবার দোকান দেখতে পাবেন, সেখানে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড আছে। যখনই সেখানে যাবেন দেখবেন বাংলাদেশীদের আধিক্য। খিলি পান বিক্রি, যেখানে সেখানে পানের পিক, যথেষ্ট নোংরা পরিবেশ ইত্যাদি দেখে আর উচ্চ স্বরে আসিফ আর মমতাজের গান শুনে জায়গাটিকে আপনার গুলিস্থান বলে মনে হতে পারে।
মানি চেন্জার
আমি অনেক জায়গা থেকে টাকা চেন্জ করছি তবে বেস্ট রেট দেয় একটা দোকান, নামটা দেখা যায়না বাহির থেকে। তবে চেনা খুব সহজ। ধরেন মসজিদ ইন্ডিয়াতে মাইদিন এবং হানিফার মাঝে একটা মাই ব্যাংক এর শাখা আছে। আপনি মাইদিনে সামনে এসে মাই ব্যাংককে হারে ডানে রেখে সামনের রাস্তা পার হয়ে গেলেই পাবেন দোকানটা। আশে পাশে অনেকগুলো মানি চেন্জার আছে, আপনি দেখুন যাচাই করে, পার্থক্যটা টের পাবেন। আপনার সুবিধার জন্য মাই ব্যাংক থেকে ও রেট দেখে নিতে পারেন।
চকোলেট, চিপস:
১. হানিফা [মাইদিনের পাশে] আমার মতে চকোলেটের জন্য সেরা।
২. মাইদিন [http://www.mydin.com.my/] বাংলাদেশীদের অসম্ভব প্রিয় জায়গা।
ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য [আই.টি., ক্যামেরা, ইত্যাদি]
১. প্লাজা লো ইয়াট [বাংলাদেশের আই.ডি.বি. ভবনের মতো। এখানে প্রচুর অপশন আছে আপনার জন্য। কোন একটা দোকান থেকে মুল্য তালিকা নিন এরপর আস্তে আস্তে ৪-৫ তলার দোকানগুলোতে চলে যান। যত উপরে যাবেন দাম তত কমতে থাকবে। দয়া করে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কয়েক দোকান দেখুন। অনেক বাংলাদেশী ভাইরা এখানে কাজ করেন, বাংলাদেশীদের এবং অন্য দেশীদের দোকান ও যাচাই করুণ। অনেক বাংলাদেশী ভাই আপনাকে হাসতে হাসতে কোপ দিয়ে দিবে, পরে কষ্ট পাওয়ার চাইতে আগে একটু যাচাই করে নিলেই হয়। একটা বড় সুবিধা হলো আপনাকে কেউ বাংলাদেশের দোকানের মতো কিছু কেনার জন্য বাধ্য করবে না, আবার না কিনলে কটুক্তি ও করবে না। ]
২. কোর্টস হোম ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক জিনিষপত্রের অপূর্ব সমাহার।
তবে এছাড়া ও নিচের কতোগুলো চেইনশপ এর বিবরণ আছে, সেগুলোতেও একই পণ্য বিক্রি হয়। দেখতে পারেন, উপকার হবে।
জুতা, ব্যাগ, ঘড়ি
সোগো
প্লাজা লো ইয়াট এর মতো এটি জুতা, ব্যাগ এর মার্কেট।
চেইনশপসমূহ:
[সবসময়ই কোন না কোন পণ্যের ছাড় থাকেই এবং এরা পাল্লা দিয়ে 'ছাড়' দিতে থাকে। মনে রাখতে হবে, এদের ছাড়গুলোর দোকানের অবস্থানভেদে তারতম্য হয়। যেমন, ধরেন, কোন দোকানের গুলশান আউটলেট-এ যে পণ্যের ছাড় থাকবে তা মতিঝিলের আউটলেটে না ও থাকতে পারে। আরেকটি গুরূত্বপূণ ব্যাপার হচ্ছে যে, এদের অনেক আউটলেটে এবং বিশেষ করে শনিবার দিন এরা আপনাকে পলিব্যাগ দিবেনা আপনাকে কিনতে হবে। ২০ সেন্ট, মানে বাংলা টাকাং ৫ টাকা দিয়ে এক একটা পলিব্যাগ কিনতে হলে আপনার বুকে চিনচিন ব্যাথা উঠতে পারে। তাই বুদ্ধি করে সাথে ব্যাগ রাখুন।]
১. Aeon Big
২. Tesco
৩.Giant
৪. Jusco
মসলা, বাদাম, ফলমুল:
উপরের চেইন শপগুলোতে ফলমুল, বাদাম ও মসলা পাওয়া যায়। তবে চৌকিট হচ্ছে বেস্ট জায়গা। বেড়াতে এস মসলা কেনা হাস্যকর মনে হতে পারে, তবে যখন জানবেন যে, ছোটবেলায় পড়া "দারূচিনির দ্বীপ" মালয়েশিয়ার খুব কাছে এবং সেখান থেকে মসলা আসে তখন আমার মতে মসলা কেনাটা খুব কাজে দেবে আপনাকে। ভোজনপ্রিয় বাঙ্গালী হিসাবে নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন আর চমকে দিতে পারেন মা, চাচী, দাদী, নানীদের।
স্বর্ণালংকার
অনেকেই ভালো, তবে দীন জুয়েলার্সটা আমার মতে ভালো। এদের সোনার মান ও দাম বেশ ভালো। সবসময় ৯১৬ সোনা বিক্রি করে এরা। এই দোকানের অবস্থান মসজিদ জামেক/মসজিদ ইন্ডিয়াতে, মাইদীন এর উল্টা দিকে।
পোহ কং এর সোনার মান এবং গয়নার ডিজাইন খুব ভালো,কিন্তু দীনের চাইতে দাম বেশী হবে। ঠকার কোন চিন্তা ছাড়াই কিনতে পারেন।
ভালো কথা, কখনই ৯১৬ সোনা ছাড়া কিনবেন না। ৯১৬ ছাড়া সোনা অনেক কম দামে পা্বেন। কিন্তু আসলে আপনি যদি ৯১৬ ছাড়া অন্য সোনা কিনেন তবে বিশাল ধরা খাবেন। স্বর্ণের দামে তো কোন দামাদামি করা যায় না, কিন্তু আপনি মজুরীতে ভালো দামাদামি করতে পারবেন। এই সুযোগটা নিতে ভুলবেন না কিন্তু।
টেক্সটাইল
বাংলাদেশের মতো কমদামে মানসম্পন্ন এত ভালো জামা কাপড় দুনিয়াতে কোথাও মনে হয় পাওয়া যাবে না। মালয়েশিয়াতে এসে কাপড়চোপড় কেনা বোকামী তারপরও যদি কিনতেই হয় তবে চলে যান কামদার । অনেক আউটলেটের মধ্যে আমার মতে মসজিদ ইন্ডিয়ারটাতে যাওয়াই ভালো। কারণ মসজিদ ইন্ডিয়াতে অনেক কাপড়ের দোকান আছে, আপনি চাইলে সহজেই যাচাই করতে পারবেন।
আমাদের দেশের কারূপল্লীর মতো এখানে আছে কে এল ক্রাফট কম্পলেকস। দাম একটু বেশী হলেও এদের বর্ণিল সংগ্রহ আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। দুখিঃত এখন লিংক কাজ করছে না। জানতে চাইলে দয়া করে kl craft complex লিখে গুগল মামারে জিজ্ঞাস করেন।
পরিশেষে একটা ছোট্ট পরামর্শ। মালয়েশিয়াতে ট্যাকসিতে উঠতে খুব সাবধান, পারতপক্ষে একা উঠবেন না। ৩/৪ জন হলে অসুবিধা নাই। শুধু মহিলা বা ছোট বাচ্চা নিয়ে উঠা ও ঠিক নিরাপদ মনে করিনা। তবে যদি একান্তই উঠতে হয় চেষ্টা করবেন তামিল ড্রাইভার চালিত ট্যাক্সিগুলোকে পরিহার করতে। তামিলদেরকে কিভাবে চিনবেন? এরা অবশ্যই চাইনিজ এবং মালাইদের মতো দেখতে নয়, কৃষ্ণবর্ণ, অবশ্যই গোফ এবং হাস্যকর সব হেয়ার স্টাইল থাকবে। এবং এরপর ও আপনি যদি এই ধরনের ট্যাকসিতে উঠে পড়েন, ওদের সাথে কোন ঝামেলাতে যাবেন না দয়া করে। কিছু চাইলে বা দাবী করলে ওদের কথা শুনুন যদি না আপনি হাসপাতালে বা চিরস্থায়ীভাবে এই সুন্দর দুনিয়াকে বিদায় জানাতে চান। তাই ভ্রমণের জন্য ট্রেন (এল.আর.টি./মনোরেল/কে.টি.এম.) বা বাসই বেস্ট। সবার জন্য শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫৭