somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান
চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

দাগ-১৬ (এই দাগ হৃদয়ের, এই দাগ সমাজের)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কৃতজ্ঞতায় উর্মীর দু’চোখ সজল হয়ে উঠল। আশা উর্মীকে নিয়ে হোস্টেলের মালিক মারিয়ার কাছে সমস্ত ঘটনা বলে তার প্রতি বিশেষ সহানুভূতি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করেছিল। মারিয়া প্রথম প্রথম প্রতিদিন উর্মীর খোঁজখবর নিত তার ভাল-মন্দগুলি বিশেষভাবে খেয়াল রাখত।
শৈশবে উর্মী খুব চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে ছিল। খুব বেশি কথা বলতো, সব সময় হাত আর মুখ যেন নড়তে থাকত। কোন্ গাছে পেয়ারা, বরই, আম আছে তা সে নিজেই গাছ থেকে তুলে খেত। যাকে বলে গেছো মেয়ে কিন্তু তার জীবনে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর থেকে তার জীবন যেন স্থবির হয়ে গেছে। তার চঞ্চলতা, উচ্ছ্বলতা, তারুণ্য সমস্ত কিছু যেন নিভে গেছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা এবং হোস্টেলে ওঠার পর সে যেন হিসেব করে কথা বলছে এটা হোস্টেলের কারো কারো কাছে দৃষ্টি কটু বলে মনে হয়েছিল। তার এই কম কথা বলার আচরণকে কেউ কেউ তার অহমিকা বলে মনে করেছিল।
একদিন উর্মী রিসিপশনে বসে পেপার পড়ছিল। পাশেই দু’জন মেয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। তাদের একজন উর্মীর পরিচিত নাম শোভা খুব সম্ভব তেজগাঁ কলেজে পড়ত। মেয়েটির সঙ্গে উর্মীর আগে দু’য়েকবার কথা হয়েছিল।
উর্মীকে দেখে শোভার পাশে বসা মেয়েটি জিজ্ঞেস করেছিল, কে রে মেয়েটা?
২০৫ bনাম্বার রুমে উঠেছে, স্টুডেন্ট।
কারো সঙ্গে কথা বলে না যে, খুব অহংকারী নাকি?
কি জানি আমার সঙ্গে দু’য়েকবার কথা হয়েছে, তবে বোরকা পরা অবস্থায়।
এখানে তো আমরা সবাই মেয়ে তারপরও এত পর্দা, নাকি অন্য কোন ব্যাপার আছে?
অন্য কি ব্যাপার থাকতে পারে?
এটা ঢাকা শহর কত ব্যাপার থাকতে পারে? হয়ত কেউ চিনে ফেললে কোন সমস্যা হতে পারে আর না হয় দেখতে খুব বিশ্রী টাইপের তাই নিজেকে সব সময় আড়াল করে রাখতে চায়।
আবার খুব সুন্দরও তো হতে পারে, সুন্দরী মেয়েদের আবার অহংকার বেশি হয়।
সুন্দরী মেয়েরা অহংকারী হয় তবে সুন্দরী হলে তো আর নিজের মুখ ঢাকতো না। সবাইকে দেখাত।
তুই ঠিকই বলেছিস্, হয়ত দেখতে খুব বিশ্রী তাই নিজেকে লুকাচ্ছে।
উর্মী আর একমুহূর্তও রিসিপশনে বসে থাকেনি। তার রুমে এসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছিল।

আগে কোনদিন উর্মী জানত না যে হোস্টেলে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা আছে।
সেদিনই সন্ধ্যাবেলা বুয়া বলে গেল রাত আটটায় অফিসে কাউন্সিলিং।
উর্মী কিছু বুঝতে পারেনি, কাউন্সিলিং আবার কি?
সে অফিসে ঢুকেছিল আটটা বাজার পাঁচটা মিনিট আগে, ততক্ষণে কয়েকজন মেয়ে অফিসে পৌঁছে গিয়েছিল।
মারিয়া উর্মীকে বলেছিল, উর্মী তুমি আমার পাশে বস।
উর্মী তার পাশে বসেছিল।
উর্মী একবার তাকিয়ে দেখেছিল অনেক মেয়ে এসেছিল তাদের মধ্যে শোভা এবং সেই মেয়েটিও ছিল।
মারিয়া ঠিক আটটার সময় কাউন্সিলিং শুরু করেছিল, স্নেহের মেয়েরা তোমরা সবাই এই হোস্টেলের সদস্য, আমি কখনো নিজেকে এই হোস্টেলের মালিক ভাবিনা, আমি সব সময় মনে করি আমিও তোমাদের মতো একজন সদস্য শুধু কাজটা ভিন্ন। আমার কাজ তোমাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো দেখা, তোমাদের পরষ্পরের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তার সমাধান করা। সদস্য হিসেবে তোমাদের প্রত্যেকের নিয়ম-শৃংখলা ভঙ্গ না করে স্বাধীনভাবেচলাফেরা করার অধিকার আছে এবং একজনের অধিকারের প্রতি অন্যজনের কটাক্ষ বা কোন ধরণের ঈর্ষা পোষণ করার অধিকার নাই, বলে সে শোভা আর সেই মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, কি বল শোভা, মাহবুবা?
উর্মী বুঝতে পেরেছিল শোভার পাশের মেয়েটির নাম মাহবুবা।
দু’জনে মাথা বাঁকিয়ে সায় দিয়েছিল।
উর্মী তখনো বুঝতে পারেনি, আসলে কার জন্য আজকের কাউন্সিলিং?
মারিয়া শোভাকে বলেছিল, মাহবুবা আজ তুমি আর শোভা উর্মীকে নিয়ে কি কথা বলছিলে?
দু’জনে পরষ্পরের দিকে তাকিয়েছিল, কিছু না তো।
মারিয়া গম্ভীর স্বরে বলেছিল, মিথ্যা কথা বলবে না।
মাহবুবা উর্মীর দিকে তাকিয়েছিল।
মারিয়া বলেছিল, ওর দিকে তাকাচ্ছ কেন? ও তো আমাকে কিছু বলেনি, আমি তোমাদের কাছাকাছি থেকে নিজ কানে শুনেছি। তোমরা উর্মীর চলাফেরা পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে কথা বলতে পার না।
শোভা আর মাহবুবা মাথা নত করে অপরাধীর মতো বসেছিল।
তোমরা জানো উর্মী আমাদের পরিবারের সবচেয়ে নতুন সদস্য, আমাদের সকলের উচিত ওকে স্নেহ করা। তাছাড়া উর্মীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব স্নেহ করি এবং আমার নিজের ছোট বোনের মতো আদর করি। তোমরা আমার পরিবারের অনেক পুরাতন সদস্য তাই আমি তোমাদের একবার সুযোগ দিচ্ছি তোমরা যদি উর্মীর কাছে ভুল স্বীকার কর তবে আমি তোমাদের বিরুদ্ধে আর কোন ব্যবস্থা নিব না।
সরি আপা আমাদের ভুল হয়ে গেছে।
আমাকে না উর্মীকে বল।
শোভা এবং মাহবুবা দু’জনে বলেছিল, সরি উর্মী।
উর্মীর দু’চোখ সজল হয়ে উঠেছিল।
উর্মীর বিষয়ে কেউ কোন কথা বললে আমি তাকে হোস্টেলে রাখব না এ কথাটা তোমরা সব সময় মনে রাখবে। তোমরা সবাই আরও একটা কথা মনে রাখবে আমি শুধুমাত্র বাণিজ্যিকভাবে এই হোস্টেল করিনি। তোমরা সবাই খেয়াল করেছ কারো বাড়ী থেকে টাকা আসতে দেরি হলে আমি কোন খারাপ আচরন করি না। তোমাদের প্রতি আমার স্নেহ আছে, ভালবাসা আছে, সহানুভুতি আছে। আমি আশা করি তোমরা আমার এই স্নেহ, ভালাবাসাকে কখনো দুর্বলতা মনে করবে না। তোমরা সবাই নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে কাউন্সিলিং-এ উপস্থিত হয়েছ সেজন্য তোমাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
উর্মীর প্রথম রুম মেট ছিল ঈশিতা। সে উর্মীর চেয়ে তিন বছরের সিনিয়র। সে উর্মীকে খুব স্নেহ করতো প্রায় চার বছর একসঙ্গে থাকার পর সে ভার্সিটির হল-এ সিট পেয়ে চলে যায়। তারপর আসে হেমা। উর্মী প্রথমে হেমাকে তার গ্রামের ঠিকানা বলেনি। দীর্ঘদিন একসঙ্গে একই রুমে থাকতে থাকতে একদিন উর্মী সবকিছু হেমাকে বলেছে। অবশ্য হেমা উর্মীর বিষয় কোনদিন কাউকে কিছু বলেনি। হেমা তখন একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত আর উর্মীও একটি কম্পিউটার কোর্স করছিল। উর্মী কম্পিউটার কোর্স করে একটি পত্রিকায় জয়েন্ট করেছে আর হেমা একটি মোবাইল কোম্পানীতে জয়েন্ট করেছে।
উর্মী মোবাইলটা হাতে নিতেই তার মোবাইলের রিং বেজে উঠল।
সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল, হেমা মিস্ কল দিয়েছে।
সে দরজা খুলে দিল।
হেমা উর্মীকে দেখে চমকে উঠল, কি রে ঘুমাস্নি?
উর্মী কিছু বলল না।
কেন? ঘুমাস্নি কেন? কি হয়েছে?
উর্মী রুদ্ধ কন্ঠে বলল, কিছু হয়নি।
কিছু হয়নি মানে? নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে?
কিছু হয়নি রে এমনিতেই মনটা খারাপ।
আজ কি তোর শুভ্রর সঙ্গে কথা হয়েছে?
হ্যাঁ।
কি বলল?
কিছু না, আসলে শুভ্র খুব ভাল, আমার খুব ভাল বন্ধু।
শুধুই বন্ধু নাকি আরো বেশি কিছু?
সে তো বেশি কিছু হতেই চায়।
তবে।
আমি কারো করুণার পাত্র হতে চাই না রে।
আচ্ছা বুঝছি অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমা।
না ঘুম আসছে না, তুই ঘুমাবি?
কেন কিছু বলবি?
হেমা তোর কি শুভ্রকে পছন্দ হয়েছে?
উর্মী শুভ্রকে আমার পছন্দ হয়েছে কি না তারচেয়ে শুভ্র আমাকে পছন্দ করেছে কি না সেটা বেশি জরুরী।
হ্যাঁ তুই অবশ্য ঠিকই বলেছিস্।
চলবে...View this link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ২:৪০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×