somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এসো রাজু’র চেতনায় গড়ি সুন্দর আগামী_শেখ রফিক

১২ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস’। কোনো শিক্ষার্থী এই দৃশ্যটি দেখতে চায় কি? স্বাভাবিকভাবে সবাই বলবে, না। তাহলে শিক্ষাঙ্গনে কারা সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, কেন করছে, কার স্বার্থে করছে? এ প্রশ্নের জবাব কে দিবে? এবং সে অনুযায়ী শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাস মুক্ত করার দায়িত্ব কে নিবে? http://www.biplobiderkotha.comView this link
বুর্জোয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায়ও, রাষ্ট্রের মধ্যে যদি একটি মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগে মারা যায়_ সে জন্যও রাষ্ট্র দায়ী। রাষ্ট্র সকল মানুষের দায়িত্ব নেয়ার শর্তেই তার জন্ম। সকলের সম্মিলিত সেই যুক্তিই রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখে।
কিন্তু আমরা এ কোন রাষ্ট্রে বসবাস করি? যে রাষ্ট্রে _রাষ্ট্র পরিচালকগণ সাধারণ মানুষের উপর ষ্ট্রীম রোলার চালায়, হত্যা করে, সন্ত্রাস বানায় আর রাষ্ট্রের সম্পদ (জনগণের সম্পদ) দখল করে নেয় শুধু ভোগের নিমিত্তে। অন্যদিকে এই শাসকগোষ্ঠীর কারণে সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্ররক্ষাকারী গণদেবতারা এবং তাদের সন্তানরা মানবেতার জীবন-যাপনে বাধ্য হয়।
শুধু এখানেই শেষ নয়, গণদেবতার সন্তানরা যখন পড়তে যায় কোনো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন তারা আবার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়। স্বাধীনতার ৩৯ বছরে শুধু শিক্ষাঙ্গনে শত শত শিক্ষার্থী সন্তানকে হারিয়েছে শত শত মাতা-পিতা ও বাংলাদেশ।
“আমার জীবনের যত সাধনা, আকাঙ্খা ফানুসের মত চুপসে গেল শুধু মাত্র একটি টেলিফোনে ইমারজেন্সীতে। তখনও ভাবতে পারিনি আমার রাজু মারা গেছে! সৃষ্টিকর্তার কাছে ওর প্রাণ ভিক্ষে চাইতে চাইতে ছুটে গেছি মেডিকেলে। দেখতে দিল না আমকে। বাবু (বড় ছেলে) কাঁদছে আমাকে জড়িয়ে ধরে_রাজুর বন্ধুরাও কাঁদছে। ওরা আমাকে বাসায় চলে যেতে বলছে। ডাক্তার নাকি সুস্থ করার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। রাজু একটু সুস্থ হলেই বাসায় নিয়ে আসবে ওরা। তখনও বুঝতে পারিনি তপ্ত বুলেট ওর মাথা ভেদ করে কপাল দিয়ে বেরিয়ে গেছে”।---খাদিজা বেগম (রাজু’র মা)।
রাজু। আদর-স্নেহ আর মমতা জড়ানো একটি নাম। যে নামটি, যে ছেলেটি আজও তাঁর মাকে কাঁদায়। সংগঠনের সাথীরাও সাথী হারানোর যন্ত্রণাকে বুকে ধারণ করে পথ চলছে সুন্দর আগামী নির্মাণে। রাজুও সুন্দর আগামী নির্মাণের সাহসী যোদ্ধা ছিলেন।
মঈন হোসেন রাজু’র জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৯ জুলাই। বরিশালের মেহেদীগঞ্জে। তবে রাজুর পরিবার প্রথমে চিটাগং ও পরে ঢাকাতে বসবাস শুরু করে। বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন। মা খাদিজা বেগম। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর প্রাইমারী ও হাইস্কুল। ১৯৮৭ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে।
ঢাকাতে বসবাস করার সময়ে রাজু যুক্ত হন লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে। যুক্ত হয়ে প্রথমে শেরে বাংলা নগরে ছাত্র ইউনিয়ন গড়ে তোলার দায়িত্ব নেন। এরপর তেজগাঁও কলেজে গড়ে তোলেন ছাত্র ইউনিয়নের দূর্গ। ফলে তিনি তেজগাঁও থাকা কমিটির অন্যতম নেতা হয়ে ঊঠেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যুক্ত হন ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাথে। এ সময় তিনি ৯০’র স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত থাকার সময় প্রথমে তিনি শহীদুল্লাহ হল কমিটির সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং ওই বছর ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন (১৯৯১)।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জন্মলগ্ন থেকে নানা ধরনের শিক্ষাধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি “শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বিরোধী” আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। যখনই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে তখনই ছাত্র ইউনিয়ন তা প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। এমনই এক গৌরবের সময় ১৯৯২ সাল।
১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ভীত-সন্ত্রস- হয়ে পড়ে। সন্ত্রাস রুখে দাড়াতে ছাত্র ইউনিয়ন তার তখনকার যুক্ত মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। ছাত্রলীগ ছাত্রদলের বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মঈন হোসেন রাজু শহীদ হন। রাজু’র স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র সড়ক দ্বীপে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য অবসি'ত। রাজুর চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে চলছে ছাত্র ইউনিয়ন। এছাড়াও রুবেল, নতুন, প্রোটন দাশগুপ্ত, সুজন মোল্লাসহ আরো অনেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীই সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদ হয়েছে।
রাজুসহ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদের স্মরণে নির্মিত সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ.কে. আজাদ চৌধুরী উদ্বোধন করেন। এই ভাস্কর্য নিমার্ণে জড়িত শিল্পীরা হলেন ভাস্বর শ্যামল চৌধুরী ও তার সহযোগী গোপাল পাল। নির্মাণ ও স্থাপনের অর্থায়নে ছিলেন - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আতাউদ্দিন খান (আতা খান) ও মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি, লায়ন নজরুল ইসলাম খান বাদল।
ভাস্কর্যটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×