যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১২, বৃহষ্পতিবার। ঢাকার সীসাযুক্ত বিষাক্ত বাতাস থেকে কিছুটা মুক্তির লক্ষে একটু গ্রামের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা নিলাম। কোথায় যাওয়া যায়।
ভার্সিটির এক বন্ধু থাকে মানিকগঞ্জ। সেখানেই যাওয়ার মনস্থির করলাম। গাবতলী থেকে বাসে উঠেছি সকাল ১১ টায়। দুপুর ১.৩০ টায় মানিকগঞ্জ পৌঁছি। বন্ধুর ওখানে খাওয়া দাওয়া শেষে রওনা হলাম যমুনা নদী দেখব বলে।
মানিকগঞ্জ শহর থেকে আবার বাসে করে শিবালয় উপজেলার উদ্দেশে যাত্রা। বাসে প্রচণ্ড ভীড়। দু' বন্ধু কোনোমতে বাসের দরজায় দাঁড়ানোর জায়গা পেয়েছি। তীব্র গতিতে বাস এগিয়ে চলছে। দরজার শক্ত লোহার রডটি আঁকড়ে ধরে পাদানিতে পা রেখে বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি।
এক ঝলকে একটি সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। 'দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা- গাড়ি আস্তে চালান'। বন্ধু জানাল এখানেই মিশুক- মুনীর দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। আসলেই বাঁকটি ভয়ংকর। চোখ বন্ধ করেই জায়গাটি পেরুলাম।
সামান্য একটু বৃষ্টি হয়েছে। সবুজ স্নিগ্ধ প্রকৃতি দেখতে দেখতে শিবালয় চলে আসলাম। বাস থেকে নেমে রিকশা নিলাম যমুনার পাড়ে যাবো বলে। চলতি পথেই হাতের ডানপাশে ছোট্ট একটি সাইনবোর্ড নজরে পড়ল, 'নজরুল-প্রমীলা ঘাট'।
বন্ধুর কাছে জানতে চাইলাম মানিকগঞ্জের শিবালয়ের সাথে নজরুলের সম্পর্ক কি।
ও আমাকে মানিব্যাগ থেকে একটি লিফলেট বের করে দিল। এখান থেকেই কিছুটা উদ্বৃত্ত করি-
"জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানিকগঞ্জের মেয়ে আশালতা সেনগুপ্তা দুলী ওরফে প্রমীলাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পূর্বে এবং পরে অনেকবার কাজী নজরুল ইসলাম তেওতা ও মানিকগঞ্জ সফর করেন।
১৯০৮ সালে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তেওতা গ্রামে আশালতা সেনগুপ্তার জন্ম। পিতার নাম বসন্তকুমার সেনগুপ্ত, যিনি ত্রিপুরা রাজ্যের নায়েবের পদে চাকুরী করতেন।
আশালতা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত তেওতা গ্রামেই লেখাপড়া করেন। তার পিতা অকালে মৃত্যুবরণ করলে বিধবা গিরিবালা দেবী অণূঢ়া আশালতাকে নিয়ে কুমিল্লায় চলে যান। আশালতার চাচা ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্ত এ সময় কুমিল্লার কোট অব ওয়ার্ডসের ইন্সপেক্টর ছিলেন। ১৯২১ সালের চৈত্র মাসের এক সন্ধ্যায় ইন্দ্রবাবুর বাসায় আশালতার সঙ্গে নজরুলের পরিচয় ঘটে। ১৯২২ সালে আশালতার সঙ্গে নজরুলের প্রেমের সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
এরপর ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল শুক্রবার নজরুল আশালতার সঙ্গে মুসলিম রীতি অনুসারে কলকাতায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন আশালতার নাম হয় 'প্রমীলা নজরুল ইসলাম'। এই বিবাহ হিন্দু সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। প্রমীলার চাচাতো ভাই যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক বীরেন্দ্রকুমার সেনগুপ্ত এবং তার মা বিরজা সুন্দরী দেবী পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে প্রমীলা ও তার মা গিরিবালা দেবীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। প্রমীলা ১৯৩৮ সালে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হন।
তাঁর নিম্নাঙ্গ অবশ হয়ে যায়। আমৃত্যু (১৯৬২) তিনি ঐ অবস্থাতেই নজরুলের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। প্রমীলার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে নজরুলের জন্মভূমি চুরুলিয়ায় দাফন করা হয়। "
এবার শিবালয়ে নজরুল প্রমীলার স্মৃতি বিজড়িত স্থানের কিছু ছবি-
নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত যমুনা নদীর তীরে-
ঘাটে বাধা নৌকায়-
বন্ধু আতিক
জমিদার বাড়ির সামনে ইদারা
মূল জমিদার বাড়ির অংশ
বিশাল জমিদার বাড়ির একাংশ
জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথে সম্ভবত নিরাপত্তা কক্ষ ছিল একসময়। এখন চায়ের দোকান।
জমিদার বাড়ীর কাচারী ঘরকে পাঠাগারে পরিণত করা হয়েছে।
পুরো পাঠাগারের ছবি।
নজরুল-প্রমীলার স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানটি দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। কোনো যত্ন নেই ঐতিহাসিক এই প্রাচীন নিদর্শনটির। স্থানে স্থানে খসে খসে পড়ছে ইট বালি পলেস্তারা।
গরু-ছাগলের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে স্থানটি। দরজা-জানালা লুটপাট হয়ে গেছে অনেক আগেই। একটি ঘরকে দখল করে ভূমি অফিসের সাইনবোর্ড ও দেখলাম। সরকার কি পারে না এরকম একটি ঐতিহাসিক স্থানকে সংরক্ষণ করতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।