আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাই সঠিক পরিকল্পনা-১

আগের পর্বগুলোতে আমরা দেখেছি কিভাবে পরীক্ষাভীতি একজন সম্ভাবনাময় ছাত্রের ক্যারিয়ারকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিতে পারে। আমরা এটাও জেনেছি যে এই পরীক্ষাভীতি একজন ছাত্রের মনে এমনি এমনি তৈরি হয় না। প্রত্যাশার চাপ, আশা আর বাস্তবতার ফারাক- এসবই পরীক্ষাভীতির মুল কারণ। এখন এই পরীক্ষাভীতি আমরা কাটিয়ে উঠবো কিভাবে? এর আগের পর্বে আমি মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে আলোচনা করার চেস্টা করেছি। সেখানে কিভাবে মেডিকেলে ভর্তির নিজেকে প্রস্তুত করার পাশাপাশি নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্যও সমান তালে প্রস্তুত করা যায়।

আজকে আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে বিশেষায়িত প্রযুক্তি বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় বলতে শুধু ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কেই বুঝি- ১) বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), ২) চুয়েট (চট্টগ্রাম প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), ৩)কুয়েট (খুলনা প্রকৌশল এবং প্রযক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) এবং ৪)রুয়েট (রাজশাহী প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত একই স্টাইলে এবং প্রায় কাছাকাছি সময়েই ভর্তি পরীক্ষা হয়। ভর্তি পরীক্ষা হয় ইংরেজী, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং গণিতের উপর।

পরীক্ষার ধরন লিখিত এবং ২/৩ ঘন্টাব্যাপী পরীক্ষা হয়। গণিতেতো গণিত করাই লাগে, সাথে সাথে দেখা যায় পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নেও বেশিরভাগ সময় বিষয়ভিত্তিক গণিত করা লাগছে। অর্থাৎ এই পরীক্ষাগুলোতে কোন পরিক্ষার্থীর বিষয়ভিত্তিক গাণিতিক জ্ঞান এবং প্রায়োগিক ক্ষমতার পরীক্ষা নেওয়া হয়। যে পরিক্ষার্থী যত বেশি অনুশীলন করেছে তার সফলতার হার তত বেশি এবং সাথে সাথে মাথা ঠান্ডা রেখে দ্রুতগতিতে উত্তর করাতেও পারদর্শী হতে হয়। এইচ.এস.সি পরীক্ষার মত লিখিত হওয়ায় পরিক্ষার্থীদের সফলতার জন্য তেমন বেগ পেতেও হয় না।

তবে আবার এমনি এমনি কেউ ভর্তি পরীক্ষায় টিকে যাবে না, যার সচেতন এবং সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে পারবে তারাই টিকবে। এখন একজন ছাত্র যখন ফাইনাল পরীক্ষার পর পরই ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে তখন তার মাথায় একটা জিনিসই কাজ করে – “আমাকে বেশি পরিমাণে গণিত অনুশীলন করতে হবে। “ তার পরিকল্পনার মাঝে কখনই জীববিজ্ঞান কিংবা অন্য কোন কিছু স্থান পায় না। কারণ তার দরকারও নেই। পরিকল্পনা আর চাওয়া-পাওয়া মত সব কিছু চললে ঠিক আছে।

কিন্তু যদি কোন কারণে পরিকল্পনার বাইরে কিছু ঘটে তখন? পরিকল্পনার বাইরে কিছু ঘটলে কি করা উচিত তা জানার আগে আমাদের জানতে পরিকল্পনার বাইরে কিছু ঘটার সম্ভাবনা কতটুকু? ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেমুলত দুই ধাপে যোগ্য ছাত্র-ছাত্রী বাছাই করা হয়। প্রথম ধাপে বিশেষায়িত বিষয়গুলোতে (পদার্থ, গণিত, রসায়ন এবং ইংরেজী) প্রয়োজনীয় নম্বর প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে ভর্তির আবেদনপত্র চাওয়া হয়। বুয়েটে এই চার বিষয়ে নুন্যতম ১৮ গ্রেড চাওয়া হয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাওয়া হয় ১২/ ১৩। কোন কারণে যদি (দুর্ঘটনাবশতঃ) ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর কোন পরিক্ষার্থী যদি দেখে সে এই প্রয়োজনীয় নম্বর পায়নি তবে তার আগের কয়েকমাসের প্রস্তুতি বিফলেই চলে যায়। আর এমনটা হতেই পারে।

কারণ অনেক ভালো ছাত্রও প্যানিক কিংবা হঠাৎ প্রেসারের কারণে মনমত পরীক্ষা দিতে পারে না। এরপর আসা যাক ভর্তি পরীক্ষার কথায়। সাধারণত এই ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে প্রতিটা বিষয়ের গভীর থেকে প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্ন আসতে পারে কোন পরীক্ষায় এমনটা হয় না? কিন্তু এখানে প্রসংগটা একটু ভিন্ন। পদার্থবিজ্ঞানের যে অংকটা করে আপনি পদার্থবিজ্ঞানে ৮০+ নম্বর পেয়ে এসেছেন সেই একই অংক কিন্তু আপনাকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার নিশ্চয়তা দিতে পারে না।

কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার অংকগুলো একই হলেও দেখা যাবে যে আপনি পরীক্ষার হলেই সেটা প্রথম দেখেছেন!! মাথা ঠান্ডা থাকলে যত কঠিন অংকই হোক সমাধান করা কোন ব্যাপার না। চেস্টা চালিয়ে গেলে সমাধানের পথ পাওয়া কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু ঐ যে প্যানিক আর নার্ভাসনেস- যেটা যেকোন মুহূর্তে চলে আসতেই পারে। তাই ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাহলে আমরা ধরে নিতেই পারি, There is not any certainty in life whatever you do. তাই আমাদের সবসময় একটা plan B বা দ্বিতীয় পরিকল্পনা করে রাখতে হয়।

ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া পরিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির চেস্টা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকে না। কারণ এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর অল্প সময়ের মাঝে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কি পরিমাণ Dedication আর Determination লাগে তা এক কথায় ব্যাখ্যা করে বোঝানো অসম্ভব। এখন এই plan B কিভাবে সাজানো উচিত কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করা উচিত তা নিয়ে আমরা পরবর্তী পর্বে আলোচনা করব এখানে ক্লিক করুন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।