I will CHOOSE the TRUTH I BELIEVE . . . .
জন্মের পরে শিশুদের নাম রাখার ক্ষেত্রে শিশু-মানবটির কোন ‘উল্লেখযোগ্য’ ভূমিকা থাকে না । অথচ এই নামের উপর মানুষের কত মোহ ! নামকে বড় করার জন্যে কত কিছুই না করে মানুষ – তা সে নাম বাবলু মিঞা হোক আর পঁচা হোসেনই হোক । মানব-জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্তে কোন রকম ব্যক্তিগত অনুমতির তোয়াক্কা করা হয় না ; শুধু তাই না , জন্মের পরে নেওয়া সিদ্ধান্তটা বহন করা লাগে সারা জীবন , এমনকি মৃত্যুর পরেও এপিটাফে লেখা থাকে নাম ।
আমার জন্মের পরেও স্বাভাবিক ভাবে আত্মীয়-স্বজন এর দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না । অথচ আমার এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা ছিল না তা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি ! তবে আমার দুশ্চিন্তা না থাকলেও অন্যদের যে থাকতে পারবে না এমন তো কথা নেই ।
বিড়ম্বনাঃ
কিছু মানুষ এর চেহারায় বোধ হয় নাম লেখা থাকে । রেদওয়ান নামে আমি যে কয় জনকের দেখছি , তাদের সবার স্বাস্থ্য ভাল – গোলগাল মুখ – সহজ সরল চেহারা ।
তখন স্কুলে পড়ি । আমাদের মাঠের গ্যালারীতে বসে আড্ডা দিয়ে বের হতেই দেখি এক পৌঢ় ভদ্রলোক দাড়িয়ে আছেন মাঠের বাইরে । তখন লক্ষ্য করি নি , কিন্তু এখন মনে পড়ল উনি বেশ কিছুক্ষন ধরেই এখানে দাঁড়িয়ে আছেন – হয়ত অপেক্ষা করছেন কারো জন্যে ।
হঠাৎ আমাকে থামিয়ে বললেন , ‘আচ্ছা বাবা, তুমি কি জিতু ?’
মাথা নাড়িয়ে ওনাকে জানালাম , আমার বাবা-মা এই নামটি বিবেচনা করেন নি । ভদ্রলোক কিছুটা হতাশ হলেন ।
এরপরের ঘটনা কলেজের । তখন আমি ঢাকাতে । বন্ধু রক্তিমের বাসার সামনে অপেক্ষা করছি ।
আমার পাশ দিয়ে বাজার ব্যাগ নিয়ে বিল্ডিং এ ঢুকে পড়লেন এক আংকেল । কি মনে হতে আবার বের হয়ে আসলেন । আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জানতে চাইলেন, ‘তুমি কি অর্পনার ভাই , জিতু ?’ …
কোথাকার কোন অর্পনা , অচেনা একটা মেয়েকে না দেখেই বোন বানাবার কোন ইচ্ছা আমার নেই । ভদ্রলোককে স্পষ্টকরে বললাম, জিতু নামের সাথে আমার কোন প্রকার সম্পর্ক নেই , থাকলেও তা নেহায়েত কাকতাল মাত্র –অনভিপ্রেত এই ঘটনার দায়িত্ব্ব আমি নিতে পারব না ।
টার্মের শেষ পরীক্ষা ।
চারিদিকে উৎসবের আমেজ । স্টারে খেতে গেলাম সবাই মিলে । দোতলায় এ সময় অনেক ভীড় , আমাদের এগার জোড়া চোখ খালি টেবিল খুঁজছে । এমন সময় একজন ওয়েটার এসে আমাকে জানাল , এক ভদ্রলোক আমার সাথে কথা বলতে চান ।
ভদ্রলোককে আমি চিনতে পারলাম না ।
কিছু দিন আগে আমার কাজিনের বিয়ে হয়েছে , ইনি নতুন কোন আত্মীয় কি না , সেটা মনে করার চেষ্টা করতে করতে ওনাদের টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ালাম । এমনিতেই আমার মানুষের নাম – চেহারা মনে থাকে না – একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্যে আমি প্রস্তুত ।
কিন্তু যে প্রশ্নটা আমাকে শুনতে হল সেটার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না । ‘এই তুমি জিতু না ?’
আমি এ দফা আর অবাক হলাম না । বললাম , ‘স্যরি আংকেল, আমি জিতু না ।
’ যেন জিতু না হওয়াটা আমার কোন বিশাল অপরাধ ! ভদ্রলোকের চোখে অবিশ্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন ।
বন্ধুরা অনেক হাসাহাসি করল । কর্নেল মাহবুব (আসলে বাবার নাম) এর মতে আমার জীবনে number 23 কাহিনী আছে । আরেকজনের মতে ছোট্ট বেলাতে হারিয়ে যাওয়ার আগে আমার নাম ছিল জিতু !
সে যাই হোক । এর পরে নাম পরিবর্তনের সময়ে জিতু নামটিকে বিশেষ ভাবে বিবেচনা করব ।
এভাবে মুরুব্বিদের ‘না’ বলে বলে আর কত অভিশাপ কুড়াব !
তবে আমার নাম রাখার ছোট্ট একটা গল্প আছে ।
জন্মের পরে আব্বুকে আম্মু জিজ্ঞেস করল, তা নাম কি রাখা হবে ? আব্বু কিন্তু আমার নাম জন্মের আগেই নাম ঠিক করে রেখেছেন , উওর দিতে দেরি হয় না , ‘ ইব্রাহীম । ’ কিন্তু একটু পুরোনো ধাঁচের এই নাম পছন্দ হল না আম্মুর । নানুভাই এর কাছে গিয়ে বললেন , ‘তা নাতির জন্যে একটা নাম দেন । ’
একটু ভেবে নানু বললেন , ‘ ইব্রাহীম ।
’
নাম নিয়ে আর কোন কথা ওঠে নি । তবে এত ছোট নাম না রেখে নামের সাথে ইবনে মান্নান যোগ করে দেওয়া হল ।
একটু বড় হলাম । সারাদিন ভাবনা চিন্তা করা ছাড়া বিশেষ কাজ ছিল না । বই পড়তে ভাল বাসতাম ।
একদিন হঠাৎ বুঝতে পারলাম , আমার নামে একটা সমস্যা আছে ।
মান্নান হল আল্লাহর নাম । নামের অর্থ হয়ে যায় আল্লহর ছেলে ইব্রাহীম । হুম , চিন্তার বিষয় । ইমিডিয়েটলি পিতৃ-প্রদত্ত নামের লেজটুকু খসিয়ে ফেললাম ।
ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশনের সময় আমার নামটা বর্তমান রূপ পেল ।
বন্ধু সুমনের গল্প আরো ভয়াবহ । চাইলে এইখানে দেখতে পারেন ।
শেষ কথাঃ
নামে কি আসে যায় ! কর্মহীন মানুষের নাম - সে তো হারিয়ে যাবে মৃত্যুর সাথে সাথেই । নামের সৌন্দর্যের চাইতে কাজের মূল্য অনেক বেশি ।
এই উপলদ্ধিটা আসুক সবার মাঝে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।