আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নৈ+অক = নায়ক সালমান শাহ্‌ , নায়ক শাকিব খান , ন নায়ক জলিল

তুমি আমি আমরা ...... কিছুটা আবছা আবছা মনে পড়ছে ( বয়স নিতান্ত অল্প ছিল ) -- ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ , খুব সম্ভবত শুক্রবার বিকাল ৫টায় বিটিভির সংবাদে বলা হল চিত্রনায়ক সালমান শাহ্‌ মারা গেছেন । আমাদের বাসার পাশেই ছিল ছাত্রী মেস । চিত্রনায়ক সালমান শাহ্‌ মারা গেছেন এই কথা শুনার সাথে সাথে চারপাশে চিৎকার শুরু হয়ে গেল , মেসের মেয়েরা দৌড়ে আসতে লাগলো খবর শুনতে , এ ওকে জিজ্ঞাস করে “ এই, ঠিক শুনেছিস ” ! এক একজন মাথা ঝাঁকায় , আর এক একটা আর্তচিৎকার বের হয়ে আসে । তখন ব্রেকিং নিউজ এর যুগ ছিল না যে একনিউজ বারবার ঝিরঝির করবে চোখের ডগায় ; তারপরও সবাই অধির আগ্রহে দাড়িয়ে ছিল টিভির সামনে যদি খবর মিথ্যে হয় ! না , বিটিভি মাঝে মাঝে সত্য বলে । সালমান শাহ মরেই গেল ।

আমার মনে আছে সবার কান্না দেখে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । শক্ত করে এক আন্টির হাত ধরে রেখেছিলাম , দেখি সেও অঝোরে কাঁদছে । সালমান শাহের পোস্টার , ভিউকার্ড দেদারছে সবার হাতে হাতে ঘুরছিল । বাসার বুয়া ঘর মুছতে মুছতে বলতো ছাত্রী মেসের অনেক মেয়ে নাকি কয়েক বেলা খাওয়া দাওয়া করছে না ! অনেকে তার জন্য সারারাত নফল নামায পড়েছে , কেউ কেউ নাকি সিলেট চলে গেছে কবর দেখতে , এমন অনেক কিছু । অনেক ধরনের অনেক কথা শুনতে পারছিলাম ।

পত্রিকায় না কই যেন শুনেছিলাম কোন কোন জায়গায় সালমান শাহ্‌র মৃত্যুর খবরে কয়েকজন সুইসাইড পর্যন্ত করেছে । একসময় শুনলাম সালমান শাহকে নাকি খুন করা হয়েছে ! পরের কয়েকদিন পত্রিকা কেনার ধুম , ম্যাগাজিন এর পিছনে সবার হুমড়ি খেয়ে পড়া । বেশ কিছুদিন পত্রিকায় অনেক খবর আসলো । বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও কথা শুনা যাচ্ছিল । তারপর আসতে আসতে সব শেষ ।

খুন নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু এই রহস্য আজ পর্যন্ত অজানা ! হয়তো চিরকাল রহস্যই থেকে যাবে ! মাত্র ২৩ বছর বয়সে ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ “ কেয়ামত থেকে কেয়ামত “ চলচিত্র দিয়ে যে দিক বিজয়ের যাত্রা শুরু করেছিল সালমান শাহ হটাত করেই তা শেষ হয়ে যায় । তার মৃত্যুর পর তার অসমাপ্ত শেষের কিছু ছবির কাজ জোড়াতালি দিয়ে শেষ করা হলে “ বুকের ভিতর আগুন “ চলচিত্র দিয়ে “সালমান শাহ যুগের “ সমাপ্তি ঘটে । সালমান শাহ অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মুক্তির সময় কেয়ামত থেকে কেয়ামত (১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ), তুমি আমার ছবিটি (১৯৯৪ সালের ২২ মে), অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪ সালের ১০ জুন), সুজন সখী (১৯৯৪ সালের ১২ আগস্ট), বিক্ষোভ (১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর), স্নেহ (১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর), প্রেমযুদ্ধ (১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর), কন্যাদান (১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ), দেনমোহর (১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ), স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫ সালের ১১ মে), আঞ্জুমান (১৯৯৫ সালের ১৮ আগস্ট), মহামিলন (১৯৯৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর), আশা ভালোবাসা (১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর), বিচার (১৯৯৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি), এই ঘর এই সংসার (১৯৯৬ সালের ৫ এপ্রিল), প্রিয়জন (১৯৯৬ সালের ১৪ জুন), তোমাকে চাই (১৯৯৬ সালের ২১ জুন), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই), জীবন সংসার (১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবর), মায়ের অধিকার (১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর), চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর), প্রেম পিয়াসী (১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল), স্বপ্নের নায়ক (১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই), শুধু তুমি (১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই), আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট) ও বুকের ভেতর আগুন (১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর) নায়ক ! এর নামই নায়ক । মাত্র ছাব্বিস বছর বয়সে স্মার্ট , সুদর্শন এই নায়ক ২৮টি চলচিত্র দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে “ স্বপ্নের নায়ক “ , যে দেশের চলচিত্র শিল্প নিয়ে দিস্তা দিস্তা হতাশা , সেই দেশের এক নায়ক মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে ১৬ বছর পর আমাদের লেখায় , আমাদের স্মৃতিতে । তাকে নিয়ে এখনো হয় কল্পনা , বেঁচে থাকলে তিনি কি করতেন তা নিয়ে হয় হিসাব , যোগফল ।

নায়ক ! সত্যিকার অর্থে একেই বলে নায়ক ! হ্যাঁ ! আজও আমাদের ফিল্ম টিকে আছে , বন্দী হয়ে আছে মুস্টিমেয় দুএকজনের হাতে ! একজন নিজের ইচ্ছামতো পরিচালক , প্রযোজকদের বাটে ফেলে সুউচ্চ পারিশ্রমিক হাতিয়ে নেয় আবার আরেকজন “ কাম পোম গানা “ থেকে আমদানি হয় । একজন নায়ক যখন খ্যাতির শীর্ষে থাকে তার দায়িত্ব হয়ে দাড়ায় নিজের কারিয়ারের পাশাপাশি দেশের ফিল্মের জন্য বাড়তি কিছু করা ! শাকিব খান কি পারে না , নতুন কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী চলচিত্র দুনিয়ায় নিয়ে আসতে ? সুউচ্চ পারিশ্রমিক এর বদলে মানানসই অর্থে কাজ করতে ? নিজ ছবির গল্প , মেকিং , গানগুলোতে পরিবর্তনের ছোঁয়া আনতে ? আর কতো সেই একগেয়ে " চৌধুরী সাহেব , টাকা দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না “ বা “ আমি বুয়েটের টেক্সটাইলে পড়ি “ যুবক হয়ে থাকবে বর্তমান সময়ের এই জনপ্রিয় নায়ক ? যখন তিনি নিজেই তার চলচিত্র নিয়ন্ত্রন করছেন তখন তার কি এই সকল দায়িত্ব পালন করা উচিৎ নয় ? বাংলাদেশ চলচিত্র সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাকালীন অবস্থায় শাকিবের কাছ থেকে দর্শক এখন ভাল কিছু প্রত্যাশা করে , আধুনিক মানসম্মত ছবি চায় যা যৌক্তিক কিন্তু এই কথা কিং খান (!) কবে বুঝবে ? আপনি নায়ক হতে পেরেছেন কিন্তু জনাব , আপামর জনতার " অন্তরে অন্তরে " চলে হয়তো যেতে পারেনি , যাওয়া এতো সহজ নয় । তার জন্য একটু বেশী কিছু লাগে সালমান শাহ্‌ যেমনটি পেরেছিলেন । ওইদিকে এম এ জলিল অনন্ত টাকাকেই ফিল্ম মনে করছেন তাই জন্য শুধু এইটুকু বলা , ভাই টাকা থাকলেই নায়ক হওয়া যায় তবে সালমান শাহ হওয়া যায় না । নায়ক হতে হলে হতে হবে আমজনতার“ প্রিয়জন “ যেমনটি হয়েছিলেন মহানায়ক সালমান ! আরে জলিল মিয়াভাই জানি আপনার টাকা আছে , বুঝলাম আপনি চলচিত্রের ভাল করতে চান , উত্তম কথা ! আপনার প্রতি হাততালি ।

আপনি অন্য অভিনেতার জন্য চলচিত্র প্রযোজনায় নিজের অর্থ ব্যয় করুণ , মানুষকে একজন জোকার দেখার বদলে সৃষ্টিশীল অভিনেতা- অভিনেত্রী দেখার সুযোগ করে দিন । দেশের ছিনেমা হল তৈরির দিকে মনোনিবেশ করুণ , সম্ভব হলে দেশের ভিতর একটা মানসম্মত “আন্তর্জাতিক মানের ফিল্ম ইন্সটিটিউট “ গড়ে তুলুন ! আপনি টিভি পেপারে বড় বড় কথা বলছেন তাই আপনার উপর এই দাবী গুলো এসে যাচ্ছে । টাকার জোড়ে নায়ক খেতাব লাগিয়ে ছ্যাবলামো করে তো ভাই ফিল্মের উন্নতি করা যাবে না । আপনাদের মতো বিত্তশালীদের অবশ্যই অবশ্যই দেশীয় ফিল্মি জগতে “ মোস্ট ওয়েলকাম “ , আপনারা সুস্থ , আন্তর্জাতিক মানের চলচিত্রে বিনিয়োগ করুণ , দেশের মানুষ সালমান শাহকে যেমন নায়ক হিসেবে মনে রেখেছে আপনাদের মনে রাখবে ফিল্ম জগতের কান্ডারি হিসেবে ! ভাল কাজ এর মূল্য বাঙ্গালী দিতে জানে ভায়া ! ফেইসবুকে নিজের ভালু মানুষী ভোলের প্রোপাগান্ডা চালিয়ে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যায় না জলিল সাব ! “ এই ঘর এই সংসারে “অনেক নায়কই আসে , আসবে তবে মানুষ স্মরণ করবে সালমান শাহ্‌র মতো“ সুজন সখী ”কেই । এগিয়ে যাক বাংলাদেশের ফিল্মি দুনিয়া ।

এগিয়ে যাবেই ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।