আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বজরা শাহী মসজিদ: মোঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহনকারী প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এক স্থাপত্য

বজরা শাহী মসজিদ অনেক দিন ধরে শুনছিলাম নোয়াখালীর বজরা শাহী মসজিদের কথা। সময়ের অভাবে যাওয়া হয়নি। বেশ কিছুদিন আগে নিঝুম দ্বীপ ভ্রমনশেষে ফেরার পথে একদিন অফিস ফাঁকি দিয়ে ঘুরে এলাম মোঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহনকারী প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই মসজিদটি। এতো পুরনো একটি স্থাপত্য দেখার পর স্বাভাবিকভাবেই জানতে ইচ্ছে করে এর ইতিহাস। কথা বললাম মসজিদের ইমামের সাথে এবং কিছু স্থানীয় লোকজনের সাথে।

অতপর নোয়াখালী জেলার ওয়েবসাইট থেকে বেশ কিছু তথ্য পেলাম। মসজিদের প্রবেশ পথ দিল্লীর মোগল সম্রাটগণ অবিভক্ত ভারতবর্ষে ৩০০ বছরের অধিকাল রাজত্ব করেন। এ দীর্ঘ সময়কালে মোগল সম্রাটগণ এবং তাদের উচ্চপদস্থ আমলারা বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ইমারত, মসজিদ নির্মাণ করেন যা আজো স্থাপত্য শিল্পের বিরল ও উজ্জ্বল নির্দশন হিসেবে বিরাজমান। এগুলোর মধ্যে আগ্রার তাজমহল, সেকেন্দ্রা, দেওয়ানে আম, আগ্রার দূর্গ, দিল্লীর লাল ল্লো ও দিল্লির শাহী জামে মসজিদ অন্যতম। দিল্লীর বিখ্যাত জামে মসজিদের অনুকরণে মোগল জমিদার আমান উল্লাহ খান ১১৫৪ হিজরি সাল, ১১৩৯ বাংলা মোতাবেক ১৭৪১ সালে অর্থাৎ প্রায় তিনশত বছর পূর্বে বজরা শাহী মসজিদ নির্মাণ করেন যা আজো মোগল স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে।

সুদৃশ্য ধনুকাকৃতি দরজা জমিদার আমান উল্যাহ্ তাঁর বাড়ীর সম্মুখে ৩০ একর জমির উপর উঁচু পাড় যুক্ত একটি বিশাল দীঘি খনন করেন। এ দিঘীর পশ্চিম পাড়ে মনোরম পরিবেশে আকর্ষণীয় তোরণ বিশিষ্ট প্রায় ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট প্রস্থ এবং প্রায় ২০ ফুট উঁচু ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট এ ঐতিহাসিক মসজিদখানা নির্মাণ করেন। এ মসজিদকে মজবুত করার জন্য মাটির প্রায় ২০ ফুট নিচ থেকে ভীত তৈরী করা হয়। সুদৃশ্য মার্বেল পাথর দ্বারা গম্বুজগুলো সুশোভিত করা হয়। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে ৩টি ধনুকাকৃতি দরজা।

মসজিদের প্রবেশ পথের উপর রয়েছে কয়েকটি গম্বুজ। কেবলা দেওয়ালে ৩টি কারুকার্য খচিত মিহরাব আছে। মসজিদটি তৈরির ১৭৭ বছর পর ১৯০৯ সালে একবার মেরামত করা হয়। মোগল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের বিশেষ অনুরোধে পবিত্র মক্কা শরীফের বাসিন্দা তৎকালীন অন্যতম বুজুর্গ আলেম হযরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দীক এ ঐতিহাসিক মসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে নিয়োজিত হন। তাঁর বংশধরগণ যোগ্যতা অনুসারে আজো এ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

বর্তমানে প্রথম ইমাম সাহেবের সপ্তম পুরুষ ইমাম হাসান সিদ্দীকি উক্ত মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। কিভাবে যাবেন: সড়ক বা রেলপথে যেতে হবে নোয়াখালীর মাইজদি। মাইজদী হতে সোনাইমুড়ী গামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস, সিএনজি অটোরিক্সা যোগে বজরা হাসপাতালের সম্মুখে নেমে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে ২০০ গজ পশ্চিমে গেলে বজরা শাহী মসজিদে পৌঁছা যাবে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।