আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টিকারী! বলল, তারা তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না!
-----------
প্রতিক্রিয়া বিষয়ক প্রাসঙ্গিক কথা: পোস্টের নাম ও পুরো লেখা এডিট করে বর্তমান ডাক্তার বিষয়ক জ্ঞান-বিবমিষা ডিলিট করা হল, শুধু হিপোক্রিটাসের কথা রাখা হল।
এই পর্যন্ত সযত্নে চোখ রেখেছিলাম যেন বিতর্কের পোস্ট না হয় আমার হাত দিয়ে। যে বিষয়ে বিতর্ক হতে পারে, তাকে উপস্থাপন করেছিলাম খেলো ও পাতলা কথার পোস্ট হিসাবে। কিন্তু ক্ষোভের কথা বলতে গিয়ে অবশেষে একটা পোস্ট বিতর্কের সুযোগ চলেই এল।
আর পোস্টের মূল বিষয়বস্তু ছিল মহান ডাক্তার বোকরাতকে নিয়ে। তাঁর অসাধারণ নীতিমালা নিয়ে। তাঁর জীবন নিয়ে।
-----------
হিপোক্রিতাসের পরিচয়
ইংরেজিতে হিপোক্রিটাস।
আরবিতে আবূ-কারাতিস।
চলতি আরবিতে বোকরাত।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মহান জনক হিসাবে তাঁকেও অভিহিত করা হয়।
গ্রীসের কো দ্বীপে সেই খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৯ সালে জন্মগ্রহণ করে ৩৭৭ সালে মৃততুবরণ করেন তিনি। মাত্র ষোল বছর বয়সে চিকিৎসাশিক্ষা শেষ করে উনআশি বছর বয়স পর্যন্ত সেবার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
তিনি ছিলেন চিকিৎসা বিদ্যার মহান প্রবর্তক অ্যাসকেলিবুসের ১৯ তম বংশধর।
উনিশ প্রজন্ম ধরে অ্যাসকেলিবুসের বংশধররাই শুধু গোপন কোডের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা শিক্ষা করতেন। আর কাউকে শেখাতেন না। কুক্ষিগত বিদ্যা ছিল তা। এদিকে রোডস আইল্যান্ডস, ক্যানিডাস ও কো থেকেও এই বিদ্যা লুপ্তির পথে এগিয়ে যায়। কারণ কাঁহাতক আর এক বংশে শিক্ষা রাখা যাবে?
এই ইশারা ইঙ্গিতের বিদ্যাকে তিনিই প্রথম লিপিবদ্ধ করা শুরু করেন।
তিনিই প্রথম বাসার পাশের একটা বাগানকে শিক্ষাস্থান করেন। যাকে গ্রিসে বলা হত আকাদেমিয়া। সেখানে তিনিই প্রথম হাসপাতাল তৈরি করেন। পারসিক সম্রাটকে চিঠি লিখে জানান,
আমি আসব না। আমি আমার কৃতীত্ব ও সেবাকর্মের বিনিময় অর্থ-সম্পদে করতে চাই না।
হিপোক্রিতাসের বাণী
যে রোগীর ক্ষুধা হয়, তিনি ক্ষুধাহীন সুস্থ মানুষের চেয়েও ভাল।
চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুমান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার যোগফল।
পুরনো অভ্যাস দ্বিতীয় অন্তর্গত স্বভাব।
রোগীর রোগের কারণ ও পরিচিতি বুঝতে পারলেই চিকিৎসা সম্ভব।
মানুষ সুস্থ অবস্থায় পশুর মত খেয়ে অসুস্থ হয়; অথচ আমি তাদের পাখির আহার দিয়ে সুস্থ করি।
আমরা জীবিত থাকার জন্য খাই, খাওয়ার জন্য জীবিত থাকি না।
এত খাওয়া উচিত না যে খাবার আহারকারীকে খেয়ে ফেলে।
প্রতিনি রোগের অষুধ রোগীর পরিপার্শ্বের প্রাকৃতিক বিষয় দিয়ে করলেই তার চিকিৎসা সবচে দ্রুত হয়।
বিশেষ প্রয়োজন না হলে অষুধ ব্যবহার করবে না।
অপ্রয়োজনে অষুধ রোগসৃষ্টির কারণ।
সুস্থতা হল গুপ্তধন। যে হারায় সে বোঝে।
নিজেকে সংযত করার যুদ্ধটা রোগ নিয়ন্ত্রণ থেকে অনেক সহজ।
রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া একটি মূল্যবান বিদ্যা।
হৃনপিন্ডের জন্য দুটি জিনিস ভয়ানক: ভয় ও দুশ্চিন্তা।
হিপোক্রিতাসের চোখে ডাক্তার যারা
স্বাধীনচেতা, বিশ্বাসী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তরুণ, পরিমিত স্বাস্থ্য, মেধাবী, মিষ্টভাষী, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী, উন্নত চরিত্র, সাহসী, নির্লোভ, ধৈর্য্যশীল, নীতিতে অটল, রোগীর ব্যথায় ব্যথী, গোপনীয়তা রক্ষাকারী, কঠিন ও তীব্র কটাক্ষ হজমকারী, মোলায়েম ও সাদা পোশাক পরিধানকারী, চলাফেরায় সমতা রক্ষাকারী, পরিচ্ছন্ন, ধীরস্থির।
হিপোক্রিতাসের শপথনামা
ছবি: হিপোক্রিতাসের শপথনামা
ক. আমি শপথ করছি যে, নিজের যোগ্যতা ও জ্ঞান অনুযায়ী এই শপথনামা ও অঙ্গীকার পূর্ণরূপে পালন করব।
খ. আমি চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিজ শিক্ষককে আপন পিতামাতার সমতুল্য মর্যাদা করব। তাঁকে আমার উপার্জনের অংশীদার বিবেচনা করব এবং যখনি তাঁর প্রয়োজন হবে, এগিয়ে যাব।
গ. আমি তার সন্তানকে আপন ভাইরূপে গণ্য করব এবং যখনি তার প্রয়োজন হবে, আমি বিনা পারিশ্রমিকে এই জ্ঞান দান করব।
ঘ. আমি আমার নিজের সন্তানকে, আমার শিক্ষাদানকারী ও সহ-শিক্ষার্থীর সন্তানদেরকে এবং ছাত্র ও অন্যদের সন্তানদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে ব্যবহারিক উদাহরণ ও মৌখিক তত্ত্বের মাধ্যমে নি:স্বার্থভাবে এ শিক্ষা দিব।
ঙ. এ শপথ যে গ্রহণ করে না, তাকে কিছুই শিখাব না।
চ. আমি আমার যোগ্যতা ও সামর্থ্য-মেধা অনুযায়ী এই জ্ঞান প্রয়োগ করব দু:খী মানুষকে দু:খ থেকে উতরে নিতে, তাদের দু:খ যাতনা বাড়াতে কখনো নয়।
ছ. আমি কখনো কাউকে বিষ দিব না। যত প্ররোচণা ও বাধ্যবাধকতাই থাক না কেন, কখনো এই কাজ করব না।
জ. কোন অবস্থাতেই কোন মহিলাকে গর্ভপাত করাব না।
ঝ. আমি আমার বিদ্যা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ও জীবনযাত্রায় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকব।
ঞ. যথাযথ জ্ঞান ছাড়া কখনোই অস্ত্রোপচার করব না।
ট. আমি যে ঘরে প্রবেশ করব, আর্তের সহায়তার জন্যই প্রবেশ করব।
ঠ. আমি জেনেশুনে কারো কোনরূপ ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করব না।
ড. বিশেষত রোগীর জন্য কষ্টদায়ক হয়, এমন কোন মন্তব্য করব না।
ঢ. রোগী পুরুষ হোক বা মহিলা, মুক্ত বা দাস- কোনরূপ পার্থক্য করব না।
ণ. আর পেশাগত কাজে গিয়ে যা দেখব-শুনব-জানব, রোগীর জন্য অসম্মানজনক না হলে এবং পেশাগত প্রয়োজন দেখা না দিলে কখনোই তা অন্য কারো কাছে প্রকাশ করব না।
আমি যদি এই অঙ্গীকার,
পালন করি ও ভঙ্গ না করি.
প্রভু যেন আমার বিদ্যায় উন্নতি দান করেন।
আর আমি যদি এই অঙ্গীকার পালন না করি ও ভঙ্গ করি,
তবে তিনি যেন আমাকে অবনতির ঘোর অন্ধকারে নিক্ষেপ করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।