আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুঁক্কার টানে ব্যস্ত নগরীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভন্ন শ্রেণী-পেশার তরুণ ও যুবসমাজ।

জীবনটা বরই আজব! যখন জীবণ সাদাকালো থাকে তখন মানুষের কাছে জীবণটা মূল্যহীন মনে হয়! কিন্তু কিছু কিছু সময় আসে যা মানুষের মনকে সাত রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দিয়ে জীবণের মূল্যটা অনেক অংশে বারিয়ে দিয়ে যায়! আবার কখন চোখের পলকেই সব নিঃশ্বেষ হয়ে যায় নতুন মাদক সিসা। প্রাচীনকালের হুঁক্কার নগর-সংস্করণ। নিকোটিনের প্রভাব থেকে রেহাই পেতে হুঁক্কার উদ্ভব হয়েছিল। এখন সেই হুঁক্কাকে ব্যবহার করা হচ্ছে সিসার নিকোটিনকে ভিন্নভাবে উপভোগের কাজে। সিসায় আসক্ত শহরের ধনিক শ্রেণীর সন্তানরা।

প্রথমে এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার থেকে সিসা গ্রহণ করলেও পরবর্তী সময়ে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। পান সালসা, লিমোরা ডিলাইট, অরেঞ্জ কাউন্টি, ওয়াইল্ড মিন্ট, কিউই, ট্রিপল আপেল, চকোলাভা, ক্রেজিকেয়ারি, ব্লুবেরিসহ বিভিন্ন ফ্লেভারের সিসা পাওয়া যাচ্ছে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই মিষ্টি গন্ধ যেন ঘিরে ধরল। চারদিকে জ্বলছে লাল-নীল রঙের ডিমলাইট। চারপাশ ধোঁয়ায় ভরা।

মিউজিক প্লেয়ারে হালকা ভলিউমে বাজছে ইংরেজি গান। পরিপাটি টেবিল ঘিরে সোফায় বসে আড্ডায় মশগুল কয়েকজন তরুণ-তরুণী। তাদের সামনে একটি করে বিশেষ ধরনের হুঁকো। তামাক গ্রহণের পুরনো ধাঁচের এই যন্ত্রটি এখন বেশ জনপ্রিয় তরুণ প্রজন্মের কাছে। খোলা জায়গায় টেবিলে এমন দুটি গ্রুপ বসেছে।

আরো একাধিক গ্রুপ আছে কাচের রিজার্ভ কক্ষগুলোতে। জানা গেল, এসব কক্ষ ভাড়া হয় ঘণ্টা হিসেবে। নিচ থেকে অর্ধেক কাচে ঢাকা কক্ষের ভাড়া কম। পুরো ঢাকা কক্ষের ভাড়া বেশি। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সিসার আড্ডার চিত্রটি রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে।

এমন রেস্টুরেন্টগুলোকে অনেকেই বলছেন সিসাবার। সিসা নামের এক ধরনের ধূমপান উপকরণ বিক্রি হয় এখানে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার তরুণ ও যুবসমাজ এখন এই সিসায় বুঁদ হচ্ছে। সিসায় আসক্তি বাড়লেও এতে কোনো মাদকের উপাদান নেই বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। সিসাকে মাদক বলে প্রমাণও করতে পারেনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

এই বিতর্ক আর অভিযোগে পোয়াবারো অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের। কৌতহলী মাদকসেবী, ধূমপায়ীসহ অনেকেই দেখতে গিয়ে সিসায় আসক্ত হচ্ছেন। রাজধানীতে প্রায় ২শ রেস্টুরেন্টে সিসা বিক্রি হলেও অর্ধশতাধিক রেস্টুরেন্ট খাবার বিক্রির চেয়ে সিসা বিক্রিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। অভিভাবকদের কাছে এ রকম আতঙ্কে পরিণত হওয়া সিসার ব্যাপারে প্রশাসনের নেই কার্যকর নজরদারি। গত ৪ বছর ধরে দেশে সিসা ব্যবসার প্রসার ঘটেছে।

রাজধানীর রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি বার ও বাসাবাড়িতে তৈরি হচ্ছে আলাদা সিসার লাউঞ্জ। রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ অভিজাত এলাকায় রয়েছে বেশিরভাগ সিসাবার। সরেজমিনে গিয়ে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সিসা লাউঞ্জগুলোর মধ্যে মোহাম্মদপুরে অ্যারাবিয়ান নাইটস, ফুড কিং, ধানমন্ডির সেভেন টুয়েলভ লাউঞ্জ, এইচ টু ও লাউঞ্জ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, ঝাল লাউঞ্জ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, গুলশানের এডিট লাউঞ্জ, জোন জিরো লাউঞ্জ, মাউন্ট আল্ট্রা লাউঞ্জ, জাবেদ বাড লাউঞ্জ, ক্লাব অ্যারাবিয়ান, হাবুল-বাবুল, বনানীর মিলাউন্স, ডকসিন, কফি হাউস (বেইজিং লাউঞ্জ), মিট লাউঞ্জ, সিন্থ ফ্লোর, বেইলি রোডের থার্টি থ্রি ও খিলক্ষেত্রের হোটেল রিজেন্সি অন্যতম। এসব লাউঞ্জের ছোট ছোট কেবিনে দুজন বা তার বেশি তরুণ-তরুণী বসে সিসার পাইপ মুখে নিয়ে ধোঁয়া টানতে থাকে। আধো আলোতে চারপাশে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে।

হালকা মিউজিক তৈরি করে স্বপ্নময় মাদকতাপূর্ণ পরিবেশ। অভিযোগ আছে, এমন পরিবেশে অসামাজিক কার্যকলাপও চলছে। চার বছর আগে রাজধানীতে সিসাসেবীর সংখ্যা ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজার। বর্তমানে এ সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। সিসাসেবীদের মধ্যে ১৫ হাজার ইয়াবা ব্যবসায়ী জড়িত।

শুরুতে উচ্চবিত্ত ঘরের কিছু বিপথগামী তরুণ-তরুণীর মধ্যে সিসা সেবনের প্রবণতা লক্ষ করা গেলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বস্তরে। তরুণ-তরুণীরা সিসা সেবনকে নিজেদের আভিজাত্য ও স্মার্টনেসের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছে। শীতের সময় সিসাবারগুলোতে বেশি ভিড় থাকে। উল্লেখ্য, সিসার কলকিতে ইয়াবা ও হেরোইনের ব্যবহারের খবর পাওয়া গেলেও অভিযানে পাওয়া যায় না। নিজ নিরাপত্তাবলয়ে গড়ে তোলা এসব লাউঞ্জে অভিযানের আগেই খবর চলে যায়।

সিসায় আসক্ত হয়ে অনেকেই ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকসেবী হয়ে উঠছে। ইয়াবার আড্ডা জমে উঠছে এসব সিসাবারে। সিসায় ব্যবহার করা টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল হাসিসের নির্যাস থেকে রাসায়নিক মিশ্রণে তৈরি হয়। ১২০ কেজি হাসিস থেকে হয় ১ কেজি টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল। জাফরান, আঙুরের রস, কস্তুরী, চেরিফলসহ সুগন্ধির ফ্লেভারে মিশে যায় এ উপাদান।

মাদক না হলেও আছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিসায় মাদকের উপাদান না পাওয়া গেলেও এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একটি সিসায় প্রতি সেশনে বের হওয়া ধোঁয়ার পরিমাণ ১০০টি সিগারেটের সমান। এর মধ্যে উচ্চমাত্রার টক্সিন, কার্বন মনো-অক্সাইড, হেভি মেটালসহ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে। এতে নিকোটিনের পরিমাণও সিগারেটের দ্বিগুণ।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।