জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই আমাদের দেশের মানুষের একটা প্রবণতা আমার খুব খারাপ লাগে।
আমরা যে কোন শিল্পীকে ছোট করে খুব আনন্দ পাই।
হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর তাকে যে মহান শিল্পী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বুদ্ধিজীবী সুশীলরা মুখে ফেনা তুলে ফেলল, তারাই আজ থেকে ২৫ বছর আগে হুমায়ূন আহমেদকে কথায় কথায় অপমান করত। বহুবার শুনেছি, হুমায়ূন আহমেদ খুব সস্তা দরের লেখক। তার লেখা পড়া মানে হল চটি বই পড়া।
আমার মনে আছে, হুমায়ূন আহমেদের বই হাতে আছে বলে কত বাজে কথা শুনতে হয়েছে। আমরা নাকি সস্তা পাঠক, হুমায়ূন যারা পড়ে তারা গাধা ইত্যাদি ইত্যাদি । অথচ যারা বাজে কথা বলেছে তারা এই ২৫ বছরে কিছুই করে নি। স্রেফ বসে বসে গ্যাঁজানো ছাড়া এবং মানুষের সমালোচনা করা ছাড়া তাদের বিশেষ কোন কাজ নাই।
এই রকম এক বিশেষ সুশীল হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর তার স্মরণ সভায় উপস্থিত।
ওই হারামী হুমায়ূন আহমেদের বইকে চটি বই বলত। সেই হারামী স্মরণ সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি যে কত মহান সাহিত্যিক ছিলেন সেটা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলল। আমার আর সহ্য হয় নি। আলোচনা সভা শেষ হওয়া মাত্র হারামীর বাচ্চাকে ছাই দিয়ে ধরলাম। ২৫ বছর আগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া মাত্র বলল, ওই রকম কোন কথা আমি কোন দিনও বলিনি।
পুরোপুরি অস্বীকার করল। এই ভণ্ড গত ২৫ বছরে কী করেছে ? গাঁজার কলকি টানা ছাড়া কিছুই করে নি। ভণ্ড আর কাকে বলে ?
আজকে অনন্ত জলিলকে নিয়ে তামাসা করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে যাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করতে পারলে আমাদের নিজের ব্রাহ্মণত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। যারা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে তারা আগামী ২৫ বছরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য কিছুই করবে না।
কিন্তু পাকনা পাকনা কথা বলবে।
এরাই আবার অনন্ত জলিল মারা যাওয়ার পর তিনি যে কত মহান শিল্পী ছিলেন এবং তার কত ঘনিষ্ঠ লোক ছিলেন, সেটা প্রমাণ করতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলবেন।
কেন যেন আমরা শিল্পীদের সম্মান দিতে পছন্দ করি না, তাদের অপমান করে আমাদের খুব আনন্দ লাগে। যেই দেশের যেই রীতি। ।
তার ভুলভাল ইংরেজি ডায়ালগটার মূল ম্যাসেজটা আমার ভালো লেগেছে। ওটার ভুলটা সবার চোখে পড়ছে কিন্তু দেশপ্রেমটা কারো চোখে পড়ছে না।
আপনি বাংলাদেশেরটা খাচ্ছেন, সুতরাং দেশটাকে শ্রদ্ধা করুন। - চমৎকার কথা।
তিনি বলেছেন বলে সেটা পরিহাসের কথা হয়ে যায় না।
কেবল বাংলা সিনেমার হিরো বলে তাকে পচানোর কিছু নাই। তার চেয়ে অনেক পচা নায়ক হিন্দি, তামিল, তেলেগু ভাষায় আছে। তারা কিন্তু তাদের পচায় না।
উদাহরণ হিসেবে রজনীকান্তকে নেয়া যেতে পারে। মাদ্রাজে রজনীকান্তকে দেবতার মতো সম্মান করা হয়।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মধ্যে দোষ গুণ আছে। আলোচনা যদি করতে হয়, দোষগুণ সমেত আলোচনা হবে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলি।
আমার এক বন্ধু জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমা জয়যাত্রার প্রধান সহকারী পরিচালক ছিলেন। এখন তিনি পরিচালক।
একটা চমৎকার স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসে আছেন আজ ৫ বছর। কোন প্রযোজক পাচ্ছেন না। কেউ তার ওই সিনেমায় টাকা বিনিয়োগ করতে চায় না। কারণ ওই স্ক্রিপ্টে অশ্লীল কোন নাচগানের অবকাশ নাই। এই হল বাংলাদেশ।
সমালোচনা করার পাশাপাশি এই বাস্তবতাটা নিয়াও কথা হোক।
ভালো ভালো সিনেমা অনেক নির্মাণ হয়। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম অনেক ভালো ভালো সিনেমা বানায়। সেই সিনেমাগুলোর টাকা তুলতে হয় টিভিতে চালিয়ে। কেউ হলে গিয়ে সেই সিনেমা দেখে না।
কেবল ঢাকার দুই তিনটা সিনেমা হলে মুক্তি দিয়ে কোন সিনেমার লগ্নিকৃত টাকা তুলে ফেলা সম্ভব না।
এই ব্লগে অনেকে বাংলা সিনেমাকে পচায়। ওই পচানিকে অনেকে মুভি রিভিউ বলে তারিফ করে। ওটা মুভি রিভিউয়ের জাতও না । মুভি রিভিউ মানে মুভিকে পচানো না, ভালো মন্দ সব কিছু বলা ।
তারা কিন্তু কোন দিনও সিনেমা হলে যায় না, ভালো সিনেমা মুক্তি পেলেও যায় না, খারাপ সিনেমা মুক্তি পেলেও যায় না। তারা সিনেমা হলের দর্শক না। তারা টিভিতে হিন্দি সিনেমা দেখে বা হলিউডি মুভি দেখে। অথবা তারা ডাউনলোড করে সিনেমা দেখে। তারা যেই সব সিনেমা দেখে সেগুলোর মধ্যে এ রেটেড সিনেমাও থাকে, ফালতু সিনেমা থাকে, উরাধুরা সিনেমা থাকে, ভালো সিনেমাও থাকে।
তারা কিন্তু ওই সব সিনেমাকে পচিয়ে কোন রিভিউ দেয় না। ওই সব সিনেমার রিভিউ হিসেবে তারা যা লিখে সেটা ওই মুভি কোম্পানী বিজ্ঞাপন মনে হয়। মনে হয়, তারা ওই মুভির প্রোমোশনাল লিখেছে। প্রশংসায় বিগলিত সেই সব মুভি রিভিউ। নিজের অজান্তেই তারা ওদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমার কাছে মনে হয়, এরা না বুঝেই অন্য কারো দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেকটা তারাও প্রপাগান্ডার শিকার। হিন্দি ও হলিউডি কালচার দ্বারা তারা প্রভাবিত । দেশজ কালচার বা দেশের মুভিকে ছোট করে তারা নিজেকে উচু জাতের বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকে। আপনি মুভি রিভিউ নামের এই পচানি লেখার আগে একবার অন্তত ভাবুন ---
আপনি কারো দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছেন না তো - নিজের অজান্তেই।
তাদের দেখার তালিকায় কখনও বাংলা সিনেমা থাকে না। এরা মূলত বাংলা সিনেমার দর্শকই না। কারণ হল বাংলা সিনেমা সম্পর্কে নেতিবাচক প্রপাগান্ডা। প্রপাগান্ডা চালিয়ে বাংলা সিনেমাটাকে এতটা খেলো করা হয়েছে যে, এখন যে কোন সিনেমা সেটা ভালো হোক বা মন্দ হোক, বাংলা সিনেমা হলেই পচানো হয়। সুতরাং ভদ্রলোকের সংজ্ঞায় এটা অবশ্যই যোগ করা আছে যে, তিনিই সুশীল ও ভদ্রলোক যিনি হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখেন না।
যিনি হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখেন, তিনি ভদ্রলোক নন। ভালো সিনেমাগুলো এই নেতিবাচক প্রপাগান্ডার শিকার হয়ে সিনেমা হলে দর্শক পায় না। ফলে পুরো ইন্ডাস্ট্রি এখন ধুকছে। এই ভুয়া নেতিবাচক প্রপাগান্ডা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
বাংলা সিনেমাকে পচিয়ে আর যাই হোক, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কোন লাভ হয় না।
দরকার গঠনমূলক সমালোচনা। খুব বেশি দরকার। কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনার ভীষণ ভীষণ অভাব। গঠনমূলক সমালোচনা করা ভালো, সেটা ভীষণভাবে দরকার আছে কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই পচানোর কোন মানে হয় না।
অফটপিক : এই পোস্টের মন্তব্য হিসেবে এসেছিল কথাগুলো।
কিন্তু দেখলাম, এই বিষয়ে একটা আলাদা পোস্ট হতে পারে। সুতরাং ...
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।