বোকারা ভাবে তারা চালাক, চালাকরা ভাবে তারা চালাক। আসলে সবাই বোকা। বোকার রাজ্যে আমাদের বসবাস দেখা হয় নাই ছক্ষু মেলিয়া
ঘরে হতে দু পা ফেলিয়া...
আরে ভাই চক্ষু মেলুন, দুপা ফেলুন, দেখুন বাংলার রুপ। আর রূপসী বাংলার শ্রেষ্ঠ পর্যটন স্থানগুলোর অন্যতম পার্বত্য চট্টগ্রাম। আর এই এলাকার রানী নিঃসন্দেহে বান্দরবান।
আসুন দেখে নেই বান্দরবানের আদ্যোপান্ত।
বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি বান্দরবান, বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতিসম্পন্ন স্থান। বাংলাদেশের ভিতরে, বান্দরবানকে ঘিরে রয়েছে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি। অন্যদিকে রয়েছে মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং আরাকান প্রদেশের সীমান্ত। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং (১০০৩ মিটার) বান্দরবান জেলায় অবস্থিত, যা "বিজয়" বা "মদক মুয়াল" নামেও পরিচিত।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ "কেওক্রাডং" (৮৮৩ মিটার) এবং সর্বোচ্চ খাল "রাইখিয়াং" এই জেলায় অবস্থিত। এখানকার অন্য দুটি দর্শনীয় স্থান হলো চিম্বুক পাহাড় ও বগা লেক। এখানকার সড়কপথে সংযোগগুলো হচ্ছে চিম্বুক - রুমা, বান্দরবান - রোয়াংছড়ি - রুমা, আজিজনগর - গজালিয়া - লামা, খানহাট - ধোপাছড়ি - বান্দরবান, বান্দরবান - চিম্বুক - থানচি - আলীকদম - বাইশারী - ঘুনধুম এবং চিম্বুক - টঙ্কাবতী - বারো আউলিয়া।
বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপ কথায় আছে অত্র এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর ।
আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃ্দ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে "ম্যাঅকছি ছড়া " হিসাবে । অর্থ্যাৎ মার্মা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছিঃ অর্থ বাঁধ ।
কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে । বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মার্মা ভাষায় বান্দরবানের প্রকৃত নাম "রদ ক্যওচি ম্রো"।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বালাঘাটায় রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির। এটি সম্পূর্ণরূপে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার মন্দিরগুলোর অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মুর্তিটি এখানে রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে এটি হলো "বুদ্ধ ধাতু জাদি"। এছাড়া শহরের মধ্যেই রয়েছে জাদিপাড়ার রাজবিহার এবং উজানীপাড়ার বিহার। শহর থেকে চিম্বুকের পথে যেতে পড়বে বম ও ম্রো উপজাতীয়দের গ্রাম। প্রান্তিক হ্রদ, জীবননগর এবং কিয়াচলং হ্রদ আরও কয়েকটি উল্লেখ্য পর্যটন স্থান। রয়েছে মেঘলা সাফারী পার্ক, যেখানে রয়েছে দুটি সম্পূর্ণ ঝুলন্ত সেতু।
সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ, ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য হতে পারে একটি মনোহর অভিজ্ঞতা। বান্দরবান শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শৈল প্রপাত একটি আকর্ষণীয় পাহাড়ি ঝর্ণা।
এছাড়া বাংলাদেশের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং এবং বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং এই বান্দরবান জেলাতেই অবস্থিত। মৌসুমগুলোতে এই দুটি পর্বতশৃঙ্গে আরোহন করার জন্য পর্যটকদের ভীড় জমে উঠে। পর্যটকরা সাধারণত বগা লেক থেকে হেঁটে কেওক্রাডং এ যান।
অনেকেই আছেন যারা কেওক্রাডং না গিয়ে বগা লেক থেকে ফিরে আসেন। এই হ্রদটিও বিশেষ দর্শনীয় স্থান। হ্রদসন্নিহিত এলাকায় বম উপজাতিদের বাস। এছাড়া অন্যান্য আকর্ষণের মধ্যে আছে:
• বাকলাই ঝরণা
• বগা লেক
• বুদ্ধ ধাতু জাদি
• চিম্বুক পাহাড় রেঞ্জ
• চিনরি ঝিরি ঝরণা
• ফাইপি ঝরণা
• জাদিপাই ঝরণা
• কেওকারাডং
• মেঘলা
• মিরিংজা পর্যটন
• নাফাখুম
• রেমাক্রি
• নীলাচল
• নীলগিরি
• থানচি
• পতংঝিরি ঝরণা
• প্রান্তিক লেক
• রাজবিহার
• উজানিপারা বিহার
• রিজুক ঝরণা
• সাংগু নদী
• শৈল প্রপাত
• তাজিডং
• উপবন পর্যটন
• নীলগিরিঃ আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন কার না জাগে, মেঘে গা ভাসাতে ইচ্ছে কার না করে। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও মেঘে গা ভাসানো সম্ভব বান্দরবানে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩২০০ফুট উচ্চতায় অবস্থিত নীলগিরি পর্যটন স্পটে হাত বাড়ালেই মেঘ ছোঁয়া যায়। বান্দরবানের প্রধান পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে নীলগিরি অন্যতম। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কের ৪৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় চিম্বুক পাহাড় থেকে থানচি উপজেলা সড়কে আরও ২৬ কিলোমিটার। এরপরই আপনি পৌঁছে যাবেন নীলগিরি পর্যটন স্পটে। নীলগিরিতে মেঘ আর রোদের মধ্যে চলে লুকোচুরি খেলা।
কখন এসে মেঘ আপনাকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে বুঝতেই পারবেন না। সেনা নিয়ন্ত্রিত নীলগিরিতে আকর্ষণীয় কয়েকটি কটেজে রাত যাপনেরও ব্যবস্থা আছে। আকাশনীলা, মেঘদূত এবং নীলাতানাসহ নানা নামের সুসজ্জিত কটেজগুলোর ভাড়াও খুব বেশি নয়। খাওয়া-দাওয়ারও ভালো ব্যবস্থা রয়েছে নীলগিরিতে।
• মেঘলা পর্যটন কমপ্লে¬ক্সঃ বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান।
এখানে বিশাল লেকের উপর আকর্ষণীয় দুটি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। চিত্ত বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে ক্যাবল কার, শিশু পার্ক, সাফারি পার্ক, চিড়িয়াখানা, স্পিড বোটে ভ্রমণের সুবিধা এবং থাকার জন্য রেষ্ট হাউজ। এছাড়াও কমপ্লে¬¬ক্সে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলা চা বাগান মেঘলা পর্যটন স্পটের সৌন্দর্যে যোগ করেছে অন্যরকম মাত্রা। পর্যটকদের সুবিধার্থে নিচে নামতে রাস্তার পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় সিঁড়িও।
• নীলাচলঃ নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রটিও শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় নীলাচল পর্যটন স্পটটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অত্যন্ত পছন্দের স্থান। গাড়িতে ও পায়ে হেঁটেও সহজে নীলাচলে যাওয়া যায়। পর্যটকের সুবিধার জন্য নীলাচলে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় কাঁচের টাওয়ার, দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি, গোলঘর এবং চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট। রাত যাপনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। নীলাচল হতে খোলা চোখে অনায়াসে দেখা যায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী।
সন্ধ্যায় নীলাচল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা।
• শৈল প্রপাতঃ বান্দরবানে যাবেন আর শৈল প্রপাত দেখবেন না, তা কি হয়। বান্দরবান-রুমা এবং থানছি সড়কের ৫ মাইল নামকস্থানে প্রাকৃতিক এই ঝর্ণার অবস্থান। শহর থেকে শৈল প্রপাতে যেতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। শৈল প্রপাত ঝর্ণার স্ফটিক স্বচ্ছ পানিতে গা ভেজাতে মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
। রাস্তার পাশে শৈল প্রপাতের অবস্থান হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়।
• বৌদ্ধ ধাতু স্বর্ণ জাদীঃ প্রায় ষোলশ' ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন বৌদ্ধ স্বর্ণ মন্দির 'বুদ্ধ ধাতু স্বর্ণ জাদী'। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি তীর্থ স্থান হলেও পর্যটকদের কাছেও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি পাহাড়ী জনগোষ্ঠীসহ ১৪টি সমপ্রদায়ের লোকজনের কাছেও বুদ্ধ ধাতু স্বর্ণ জাদী অত্যন্ত পবিত্র স্থান।
এটিকে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধমন্দির বলা হয়। এর নির্মাণশৈলী, কারুকার্য, স্বর্ণখচিত অবকাঠামো যে কারোরই মন কাড়ে। একশ তেইশটি সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে হয় এই মন্দিরে। এখানে রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক বৌদ্ধ মূর্তি। প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে মন্দির এলাকায় বসে মেলা।
• চিম্বুক পাহাড়ঃ বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার দুইশ ফুট। চিম্বুক পাহাড়কে ঘিরেই পাহাড়ী মুরুং (ম্রো) জনগোষ্ঠীর বাস। ষ্টেশন ও টাওয়ার স্থাপন করেছে। পর্যটকদের দৃষ্টিতে এ টাওয়ার খুবই আকর্ষণীয়।
এখান থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখা যায়।
• প্রাকৃতিক জলাশয় বগালেকঃ প্রাকৃতিক জলাশয় বগালেক সৃষ্টির পেছনে নানা কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে। পাহাড়িরা এটিকে দেবতার লেক বলেও চেনে। পাহাড়ের উপরে শান বাঁধানো বেষ্টনিতে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে বগালেকের অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় দু'তিনশ' ফুট উঁচু পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বগালেকটি বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
বর্ষা মৌসুমে বগালেকে যাতায়াত করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই সেখানে শীতে যাওয়াই ভালো। শুষ্ক মৌসুমে বগালেকে মোটর সাইকেল কিংবা জীপ গাড়িতে করেও যাওয়া যায়। বগালেক যেতে সাথে শুকনো খাবার, পানি, টর্চলাইট ও জরুরী ওষুধ সাথে রাখা দরকার। পর্যটকদের রাতযাপনের সুবিধার্থে বগালেকে জেলা পরিষদের রেষ্ট হাউজ এবং স্থানীয়ভাবে আরো দুটি গেস্ট হাউজ রয়েছে।
• রুমা জলপ্রপাত (রিজুক ঝর্ণা)ঃ প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি রুমা জলপ্রপাত। সব মৌসুমেই সচল রুমা জলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি ঝরে পড়ে সরাসরি নদীতে। নদীপথে রুমা থেকে থানছি যেতে রুমা জলপ্রপাতের (রিজুক ঝর্ণা) এ দৃশ্য চোখে পড়ে। রিজুক, রেমাক্রি ওয়াহ এবং তেছরী প্রপাত-এই তিন অপরূপা অরণ্য কন্যাকে দেখতে প্রতি বছর ভিড় করেন হাজার হাজার পর্যটক। রুমা থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় সহজেই জলপ্রপাত এবং ঝর্ণায় যাওয়া যায়।
• দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গঃ দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং বা বিজয়। এটির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ফুট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া কেওক্রাডং পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ৩৩২ ফুট। দুটি পর্বত শৃঙ্গই রুমা উপজেলায় অবস্থিত। রুমা থেকে তাজিংডং (বিজয়) চূড়ার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং কেওক্রাডং পাহাড়ের দূরত্ব রুমা উপজেলা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
হেঁটে যেতে হয় পর্বত চূড়াগুলোতে। তবে শুষ্ক মৌসুমে জীপ গাড়িতে করে তাজিংডং চূড়ার কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব।
তথ্যসূত্রঃ
http://www.bandarban.gov.bd/
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।