আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহাবাগ আন্দোলনের পূর্বাপর

শাহবাগ আন্দোলনের তালটা কেটে গিয়েছিলো রাজীবের মৃত্যুতে। রাজীবের মত মৃত্যু কারো কাম্য নয়। তবে শাহবাগীরা এসময়ই কিছু মতলবী মানুষের খপ্পরে পড়ে গেল। এতে শাবাগীদের কোন দায় নেই বলা যাবে না। তারা যখন হঠাত করেই শাহবাগে দাঁড়িয়ে গেলেন, তখনও ভাবেন নি, যে তাদের পেছনে এত মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে।

তবু মানূষ দাঁড়ালো কারণ মানুষ সত্যি সত্যিই যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়। এর পর যখন সরকারি প্রশ্রয়ে আন্দোলন বড় হতে থাকলো, শাহবাগ দু’একটি শ্লোগান, আর বক্তৃতা বিবৃতি ছাড়া নিজেদের স্বাতন্ত্র্য প্রমানে ব্যর্থ হলো। তারা অবশ্য প্রমানের খুব একটা চেষ্টাও করেনি মূলতঃ দু’টি কারণে। প্রথমত এত বড় মহড়া চালু রাখতে যে অর্থের দরকার হয় সেটি তাদের ছিলোনা। দ্বিতীয়ত তারা ভেবেছিলো সরকার কে যদি সাথে পাওয়া যায় তাতে লাভ বই ক্ষতি নেই।

যেদিন সরকারি মন্ত্রীরা শাহাবাগ আন্দোলনের সাথে গলা মেলালো, বিটিভিতে শাহাবাগ আন্দোলন লাইভ টেলিকাস্ট হতে থাকলো, ইমরানের বক্তৃতার সময় তার পাশে থেকে যারা প্রম্পট করেন তাদের গলাও মাঝে মাঝে টেলিভিসনে শোনা যাওয়ায় তখন থেকেই জন মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকলো। অনেকের মনে হীরক রাজার দেশে সিনেমার শেষ দৃশ্যের কথা ঘুরে ফিরে ভাসতে থাকলো। যেখানে রাজা নিজেই নিজের মূর্তিতে দড়ি বেধে টানছেন আর বলছেন দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান। সরকারি দলের মনেও কথাটা ভেসে উঠে থাকতে পারে। তারা তখন শাহাবাগ থেকে একটু দূরত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকলেন।

কিন্তু ততদিনে যা হবার হয়ে গেছে। যে এমপিরা কোনদিন ব্লগ পড়ার সময় পান না তারাও সংসদে রাজীবের জন্যে কেঁদে ভাসিয়েছেন। তাদের কান্না শুনে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শোকে দিশেহারা হলেন। রাজীবকে শহীদ বলে ঘোষণা করা হল। শ্লোগান ঊঠলো আমরা সবাই রাজীব হব রাজীব হত্যার বদলা নেবো।

প্রথম দুদিন আজানের সময় ব্লগারদের আওয়াজ নিচু থাকলেও, রাজীবের মৃত্যুতে আজানের বিরতির কথাও তারা ভুলে গেলো। ইতমধ্যে রাজীবের অশ্লীল ব্লগিং সাধারণ মানুষের নজরে আসতে শুরু করলো। যদিও শাহাবাগের নেতারা চাঊর করতে শুরু করলো, সে সব অপাঠ্য, অশ্রাব্য রাজীবের কীর্তি নয়। তিনি শুধুই একজন প্রগতি মনস্ক ব্লগারছিলেন। কিন্তু তাকে হত্যার দায়ে নর্থ সাউথের ছাত্ররা ধরা পড়ার পর শাহাবাগীদের উপর মানুষ আস্থা হারাতে শুরু করলো।

শাহাবাগী নেট পোকাদের অনেকের কাছেই নেটের বাইরের জগতটা ঝাপসা। আর যাদের মাথা পরিষ্কার তাদের প্রভাবে অন্যরাও উপেক্ষা করতে শুরু করলো সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা। তারা ভুলে গিয়েছিলো বাঙালি ধর্মান্ধ নয় ধর্ম ভীরু। ধর্ম তাদের ব্যাবসা নয় আশ্রয়। শাহাবাগীরা যখন মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে নির্বিচারে ব্লগারদের সমর্থন দিতে থাকলো, তখন তাদের মনে হলো, গরীবের শেষ আশ্রয় টুকুও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

এর মধ্যে একের পর এক বগুড়া, সাতক্ষীরার ঘটানা ঘত্তে থাকলো। হেফাজতে ইসলামের উত্থান ঘটার পর এমন অবস্থা হলো, যে ইমরান সরকার কর্মসূচীর চাইতে নিজেকে মুসলমান প্রমানে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। শাহারিয়ার কবির, মুনতাসির মামুনের কাপাকাপি, শাহাবাগের লাঠি মিছিল সব মিলিয়ে অহিংস আন্দোলনের ধারণা পালটে যেতে থাকলো। যারা ধর্ম অবমাননার প্রচেষ্টাকে প্রগতিশীলতা, বাক স্বাধীনতা হিসাবে দেখলেন তারাই হাসনাত আব্দুল হাইয়ের একটি গল্পের কারনে যে প্রতিক্রিয়া দেখালেন তাতে বাক স্বাধীনতার সংজ্ঞা পালটে যেতে বসেছে। এখন সময় এসেছে দানা বাঁধা একটি আন্দোলনকে রাজীব ইস্যুকে পুঁজি করে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে যারা পরামর্শ দিয়েছিলো তাদের প্রকৃত মতলব খুঁজে বের করার শাহাবগের কাছে এখন আর তেমন কোন প্রত্যাশা আছে কী? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।