আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামিজার ঈদ ভাসে অশ্রুর বানে

সময়কে কাধে নিয়ে চলো বন্ধু কতদিন হল আরাকানের মসজিদে আজান হয় না। মসজিদের ভেতরে বালি পড়ে স্তুপি হয়ে আছে। নদীর পাড়ে কতগুলো লাশের পাশে মাথার খুলি পাওয়া গেছে মুয়াজ্জিনের। আর ইমামকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না সেই যে শেষবার জুম’আর নামাজ হয়েছিল তার পর থেকে। আরাকানের পালাতেওয়া গ্রামের শিশুরা এখন আর ভোর বিহানে কায়দা কিতাব পড়তে যায় না।

রমজান শেষ হয়ে গেল। রামিজাকে তার মা ডেকে দিল ঘুম থেকে। মা ডেকে বললো মা উঠে পড় ফজরের বেলা শেষ হয়ে যাচ্ছে। মনে নেই আজ ঈদ। মায়ের কয়েকবার ডাকার শব্দে রামিজা চোখ খুলে শুয়েই রইল।

মায়ের ডাকে ঈদ শব্দটি তার কাছে ব্যথার করুন বীন হয়ে বেজে উঠলো। আজ ঈদ কথাটি তাকে ভীষণভাবে নাড়া দিল। এই রমজান গেল তাদের দুঃখের স্মৃতি নিয়ে। বাবা ভাই আর বোনটিকে পাওয়া যাচ্ছে না। নিজেদের ঘর ছেড়ে কোন একটি ছুপড়িতে আরো অনেক উদ্বাস্তুর সাথে তারাও আশ্রয় নিয়েছে।

মৃত্যু চিন্তা প্রতি মুহুর্তেই তাড়া করে আছে তাদের। রামিজার ভাই তার বোনকে নিয়ে সাগর পথে বাংলাদেশের দিকে কোন নৌকায় চড়েছে বলে খবর জানলেও তারপর তাদের আর কোন হদীস নেই। তারা বেঁচে আছে কিনা তাও জানে না তারা। রামিজা উঠে নামাজ পড়লো। জায়ানামাজ রেখে আলো আধারীর ভোরে সে শুনতে পেল কারো আর্তনাদ শুনা যাচ্ছে।

তার মা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সেও পিছু পিছু গেল। এক মহিলা তারই এক নিকটাত্মীয়ের কাছে জানতে পারলো নদী পার হওয়ার সময় তার স্বামীকে গুলি করে মেরে ফেলেছে হায়েনারা আর মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গেছে। খবরটি জেনেই বুক ফাটা কান্ন্য়া মাতম করছেন মধ্যবয়সী মহিলাটি। রামিজাও তার পাশে গিয়ে বসে শান্তনা দেবার চেষ্টা করছিল।

কিন্তু স্বজনের মৃত্যূ সংবাদ তার হৃদয়ে মোচর দিল তার বোন ফাতেমা এবং ভাই কাসেম কেমন আছে, কোথায় আছে? শান্তনা দেবার ভাষা হারিয়ে সেও জড়িয়ে ধরলো মহিলাকে। ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো রামিজা। কে কাকে শান্তনা দিবে। তাদের আর্ত হাহাকার যেন বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছিল। মুসলিম হওয়াই কি তাদের অপরাধ? ঈমানের অগ্নিপরীায় এই মজলুমদের আর কত ফেলবেন পৃথিবীর স্রষ্টা!! আরাকানের অদূরে মুসলিম এক কবিলার এক সর্দার তাদের আশ্রয় দিয়েছেন।

এ রোজকার দৃশ্য। এ যে শোকের পল্লী। খুন, হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন আর অত্যাচারে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস। আরাকানের প্রতিটি বাড়িতে এমনই শোকের মাতম আজ। রাখাইন সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে উদ্ভাস্তু রোহিঙ্গারা।

আর আশ্রয়ের খোজে তারা সমূদ্রপথে ছুটছে বাংলাদেশের দিকে। কিন্তু এ কি! অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করতে বাংলাদেশ সীমান্তে সাজোয়া কামান আর ভারী অস্ত্র তাক করে আছে সমূদ্রের বুক লক্ষ্য করে। সামনে মৃত্যু পিছনেও মৃত্যু। তবে মানবতা কোথায় যাবে? এর উত্তরগুলো আজ বিবেকের দরজায় দুমড়ে মুচড়ে গুড়িয়ে পড়ছে নীরব অশ্রুজ্বলে। রোজই যারা উপবাস তাদের আবার কিসের ঈদ? তাদের নেই বিলাসীতার চাঁদোয়া ঢাকা রঙিন ঈদ পসরা! এরই মাঝে তাদের প্রতিবেশী আমরা বর্ণিল উৎসবে উদযাপন করছি আমাদের এই আয়োজন।

আরাকানের মুসলিমরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিজ দেশ থেকে বিতারিত তারা। বাড়িঘর ছেড়ে শুধু বেঁচে থাকার জন্য শতাব্দী পর শতাব্দী পালিয়ে বেড়াচ্ছে এই জনপদের মানুষগুলো। অন্যদিকে নাফনদীর তীরে সারিবদ্ধ রোহিঙ্গার লাশ গুনতে গর্জে উঠছে হায়েনাদের কাসিনকভ। কবে থামবে এই মজলুম মানবতার কান্না।

রামাদানের সংযম আমাদের শিখাতে চায় পৃথিবীর পরতে পরতে যেসব বনি আদম ভূখা জীবন যাপন করছে তাদের দূঃখকে উপভোগ করার জন্য। আর এই রোজা পালনের মধ্য দিয়ে ইসলাম শিখিয়েছে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকতে পারে না, যাকাত পালনের মধ্য দিয়ে ইসলাম ধনীকে দরিদ্রের দায়িত্ব গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে। রোজা পালনের পর তার প্রিয় বান্দাহদের জন্য আল্লাহ ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য নির্ধারন করেছেন। ঈদ মানে স্রষ্টাকে ভুলে উদ্দামতায় হারিয়ে যাওয়ার উৎসব নয়, ধ্বনী দরিদ্রের এককাতারে ঈদ নামাজ আর বুক মিলানোর উৎসব। এ যে মানবতার প্রতি স্রষ্টার বিশেষ নেয়ামত।

আসুন আমরা রমজানে একটু সজাগ হই, সারা বিশ্বে নির্যাতিত বনিআদমদের মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। যাকাত প্রদানের মধ্য দিয়ে দারিদ্র বিমোচনে কাজ করি। শুধু আরাকানই নয় ফিলিস্তিন, মিন্দানাও, চেচনিয়া, সোমালিয়া, ইরাক সহ পৃথিবীর ৪৫টি দেশে মুসলিমরা আজ বৈরীতার স্বীকার। যারা প্রতিদিনই রোজা রাখছে খাবার না পেয়ে। তাদের তরে দারিদ্র বিলাসী কবি নজরুল লিখেছেন, “জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসেনা নিঁদ/ মুমূর্ষ সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?/ একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার/ উঠেছে ঈদের চাঁদ হ'য়ে কি সে শিশু পাঁজরের হাড়?”দোয়া কবুলের মাস মাহে রমজান মুসলিমদের চেতনা উজ্জীবিত করার মাস।

বদরের বিজয় সূচিত হয়েছিল এই রমজানে। তাই আসুন বিশ্বময় মুসলমানদের মুক্তি চেয়ে আমরাও শানিত হই কোরআন নাজিলের এই মাসে আর কন্ঠে উচ্চারণ করি বিদ্রোহী কবি নজরুলের চির উচ্চারণ,- যতদিন না কায়েম হবে খোদার ধরায় তারই দ্বীন/ কিসের আবার ঈদের খুশি এই আনন্দ অর্থহীন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.