আমি একাই পৃথিবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম http://www.facebook.com/kalponikvalo আমার জনৈক বন্ধু এবং আমার জনৈক পরিচিত তরুনী বেশ কিছুদিন পূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। বিবাহের পূর্বে দুজনেরই যথাক্রমে দুইটি করে অসফল প্রণয় ছিল। ঈশ্বরের বিশেষ কৃপায় তারা দুজনেই এই তৃতীয় বার এসে সফলতা অর্জন করেছেন এবং সর্বজনের আর্শিবাদপুষ্ট হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। অন্যের বিয়েতে আপামর সাধারনের আনন্দের অন্যতম প্রধান উৎস থাকে ভালো ও মজাদার খাওয়ার আইটেমগুলো।
এখানেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। বিয়ের খাবারের মেন্যু যথেষ্ঠ ভালো ছিল বিধায় আমাদের আনন্দের এবং আর্শিবাদের কোন কৃপনতাই ছিল না। আমাদের এই প্রানখোলা আর্শিবাদের ফলেই কিনা জানি না আমার বন্ধুবরটি বিবাহের কিছুদিনের মাথায় একটি স্কলারশীপ নিয়া বউ সমেত বিদেশে চলিয়া গেল।
এয়ারপোর্টে বিদায় কালে আমরা খানিকটা আবেগী হইলাম। নানারকম সান্তনা বাক্য দিয়া বুজাইলাম বর্তমানে বিদেশ আর বিদেশ নাই।
ফেসবুকের কল্যানে তাহা একেবারে হাতের নাগালেই চলিয়া আসিয়াছে। সুতরাং মন খারাপের কোন কারন নাই। আমরা ফেসবুকের মাধ্যমেই তার সাথে সংযুক্ত থাকিব।
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ফেসবুক আসলেই একটি আর্শিবাদ। এক সাথে সকলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা এবং আড্ডা দেয়ার জন্য এর চাইতে ভালো কিছু আর হতে পারে না।
ব্যস্ততার কারনে আমাদের বন্ধুদের খুব কমই দেখা হয়। তাই আমরা সকলেই ফেসবুকে সংযুক্ত থাকার চেষ্টা করি। দেশে বিদেশে সকল বন্ধুদের সাথে আমরা এইভাবেই যোগাযোগ রক্ষা করতাম।
সম্প্রতি আমার সেই বন্ধুকে ফেসবুকে ঠিক পাওয়া যাচ্ছে না। আগে যেখানে প্রায় প্রতিদিনই অনেকক্ষন কথা হত এখন তার কোন খবর নেই।
হাজার নকেও তেমন কোন রিপ্লাই দেয় না। আমিও বেশ কয়েকবার নক করেছি কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নাই। ভাবলাম বেশি ব্যস্ততা যাচ্ছে ব্যস্ত তাই হয়ত জবাব দিতে পারছে না। তাই একটা পর্যায়ে আমরা তাকে নক করা ছেড়ে দিলাম, পাশাপাশি যোগ হয়েছিল খানিকটা অভিমানও।
তবে মাঝে মাঝে তার সাড়া পাওয়া যেত, হঠাৎ হঠাৎ দু একটা ছবিতে লাইক আর কেমন যেন মেয়েলি টাইপ কমেন্টস।
আমার তোলা একটি বাচ্চার ছবি আপলোড করেছিলাম, ছবি দেখে দেখি সে কমেন্ট করেছে, আল্লাহ!!!! কি সুন্দর। ওয়াও!!! কি কিউট। কি গুটুপুটু বেইবী। আচ্ছা আমি আমি কি ছবিটা নিতে পারি!!
আমি ভাবলাম আমাকে বুঝি ব্যঙ্গ করছে। তাই আমিও পালটা জবাব দিলাম, হ্যাঁ নাও নাও, তোমার যে চেহারা তাতে এই ধরনের কিউট বাচ্চা হইতে অনেক কষ্ট করতে হবে।
ভালো কইরা বাচ্চার ছবি দেখ, লাভ হইলেও হইতে পারে।
সে রিপ্লাই দিল, ওহ! অনেকগুলো থ্যাংকু থ্যাংকু।
আমি তো পুরাই অবাক। মনে মনে ভাবলাম শালা কি কিছুটা "ইয়ে" হয়ে গেল নাকি? ঘরে বউ থাকা স্বত্তেও কেউ আবার "ইয়ে" হয় কিভাবে?? আমি অনেকের সাথে আলোচনা করলাম। মোটামুটি সবাই বেশ চিন্তিত।
আমাদের মধ্যে একজন তো বিদেশের সমাজ কিভাবে কচি তরুন প্রানে নোংরা প্রভাব বিস্তার করে এই নিয়ে একটা লেখা পত্রিকায় পর্যন্ত পাঠিয়ে দিল।
দু'দিন আগে আমার বন্ধু তানবীর সাথে দেখা। দুজন মিলে বেশ গল্প করছি। কথা প্রসংগে আমার সেই বন্ধুর কথা উঠে এল। যা শুনলাম তাতে আমি ভিমরী খাইলাম এবং আমার সেই জনৈক বন্ধুর রহস্যময় আচরনের কারন পরিষ্কার হইল।
ঘটনা হইল, আমার সেই জনৈক বন্ধুর ফেসবুক একাউন্ট এখন নাকি সে আর চালায় না, তার বউ নাকি তার ফেসবুক একাউন্টে ঢুকে বসে থাকে। জিজ্ঞেস করলাম, কেন সে কি কোন সন্দেহজনক কাজ করেছে? তানবীর বলল, জানি না! এটা নাকি অতি ভালোবাসার উপহারস্বরুপ ঘটনা, তাহা আমার সেই জনৈক বন্ধু নিজ মুখে স্বীকার করেছে।
আমার তো মাথায় আগুন ধরে গেল। এটা কেমন ধরনের কথা। তার স্ত্রী যে তার ফেসবুকে ঢুকে বসে থাকে, এটা তো চাইলে সে জানাতে পারত আমদের।
আমরা বন্ধুদের কত সিক্রেট জিনিস একসাথে গ্রুপ ম্যাসেজে শেয়ার করতাম, আমাদের কত ব্যক্তিগত ব্যাপারও সেখানে জড়িত ছিল। তাছাড়া এই যে আমরা এতবার নক করেছি, যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, সে তো কিছুই জানল না।
প্রচন্ড মেজাজ খারাপ নিয়ে অফিসে ফিরলাম। ফেসবুকে লগিন হতেই মাথায় একটা বুদ্ধি এল। একটি শিক্ষামুলক বুদ্ধি।
আমি আমার বন্ধুকে ম্যাসেজ পাঠালাম,
দোস্ত, তোকে তো অনেকবার ম্যাসেজ পাঠালাম। তোর এই গোপন ইমেইলেও ম্যাসেজ পাঠিয়েছি। হয়ত ব্যস্ততার কারনে তুই জবাব দিতে পারছিস না। আচ্ছা যাই হোক শোন, আজকে আমার সাথে তমার দেখা হয়েছিল, তমা তো খুব মন খারাপ করল। তুই বিয়ে করেছিস, এটা ওকে জানাস নি কেন? কাজটা কি ঠিক হলো? যাই হোক, তমা তো অনেক কিছুই করতে চাচ্ছিল, আমি বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করেছি।
কেএফসি খাওয়াতে হয়েছে, যাই হোক টাকা গিয়েছে ব্যাপার না। এখন শোন, তমা বলছে, তোদের নাকি কি সব ছবি আর কি সব যেন ক্লোজ কিছু ভিডিও ছিল। ও সেগুলো ফেরত চাইছে দোস্ত। বলেছে এই সব রেখে কি আর হবে। আমিও বলেছি হ্যাঁ রেখে কি আর হবে।
তা দোস্ত তুই কি সেই ছবি গুলো সাথে করে নিয়ে গিয়েছিস নাকি ঢাকার বাসায় আছে রে? যাই হোক, এইগুলো নষ্ট করে ফেলিস, তুই নতুন জীবন শুরু করেছিস, তমাকেও দে। আর এই ভিডিও বা ছবি বের হলে তো তোরই অপমান!! বুঝিস না?
ভালো থাকিস দোস্ত! ভাবীকে আমার সালাম ও অনেক শুভেচ্ছা দিস। দেশে পারলে একবার আসিস। তোর জন্য খুব মন কাদে রে!!!
সেন্ড বাটন ক্লিক করে ম্যাসেজটি পাঠিয়ে দিলাম। বাকি সবাইকেও জানালাম ব্যাপারটা কি করতে যাচ্ছি।
সবাই তো হেব্বী এক্সাইটেড। এই উপলক্ষে একটা নগদে আড্ডার ব্যবস্থা হয়ে গেল। ম্যাসেজ পাঠানোর ঠিক ২৫ থেকে ৩০ মিন পর আমার সেই জনৈক বন্ধু আমাকে সুদূর প্রবাস থেকে ফোন দিল, আমাদের বাক্যলাপটি ছিল নিম্নরুপঃ
ঐ বেটা ঐ!!!!! তমা কে?? তুই তোর ভাবিরে এই সব কি বলছস??
(ভীষন ক্রুদ্ধস্বর)
-ভাবি!!! ভাবির সাথে আবার আমার কথা হল কখন?? তোকেই পাইনা আবার ভাবিকে কোথায় পাব??
(সাত আসমান থেকে পড়ার ইমো)
ফাইজালামি মারাও আমার লগে??? তুই ফেসবুকে ম্যাসেজ দিসস না?
-শালার পোলা!! ভচকাইয়া ফালামু এক্কে বারে। ম্যাসেজ দিসি আমি তোর একাউন্টে, তোর বউ জানছে কেমনে?
(এবার আমার পালটা ঝাড়ি)
নাহ দোস্ত! আসলে আমার একাউন্টটা তোদের ভাবি ব্যবহার করে।
(খানিকটা নরম স্বরে)
-কেন?? তোর একাউন্ট তোর বউ ব্যবহার করবে কেন?? তার নিজের একাউন্ট নাই?
আমি সারাদিন ক্লাসে থাকি, বাইরে থাকি ওর আসলে কিছুর করার থাকে না।
ও তোদের সবার স্ট্যাটাস, ছবি অনেক পছন্দ করে। তোদের কথাবর্তা তার খুব ভালো লাগে। তাই সে আমার একাউন্টে ঢুকে সেগুলো পড়ে। তাছাড়া ও আমার স্ত্রী না। আমার যা তাতো সবই তারই।
- দেখ দোস্ত, তুই আমার বন্ধু। তোর সাথে আমি নানারকম দুষ্টামী করতে পারি। যেটা আমি তোর বউ এর সামনে করব না। একটা প্রাইভেসীর ব্যাপার আছে। তোর কি কোন নিজের প্রাইভেসী নাই? তাছাড়া তুই আমাদের কখনও বলিস নি যে তুই ভাবির কাছে তো একাউন্ট হ্যান্ডওভার করেছিস!!!
নাহ মানে আসলে তোদের ভাবি চাইল, তাই আমি দিয়ে দিলাম।
তাছাড়া বউ এর সাথে সবই যখন শেয়ার করতে পারি, এটা শেয়ার করলে দোষ কোথায়? তাছাড়া আমি তাকে অনেক ভালোবাসি!!
-ভালোবাসার সাথে ফেসবুক একাউন্টের কোন সম্পর্ক আছে বলে আমার জানা নাই। বউ এর সাথে সব শেয়ার কর না? খুব ভালো কথা। তা বিয়ের পর শুনলাম তুই আর ভাবি নাকি এক ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজিস? দারুন একটা শেয়ারের। আমি তোকে নিয়ে গর্বিত।
ফাজিলের মত কথা বলছিস কেন? ব্রাস কেউ শেয়ার করে নাকি?
-আমি ফাজিলের মত কথা বলছি না।
তুইই বেক্কল ফাজিলের মত কথা বলছিস। শুনে গাধা! বউ এর সাথে অবশ্যই সব কিছু শেয়ার করবি, কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপার আছে, সেখানে নুন্যতম প্রাইভেসী সবারই দরকার। সেটা তোর দরকার ভাবিও দরকার। যে ভালোবাসা জোয়ারের মত আসে, সেটার আবার ভাটার মত দ্রুতই চলে যায়। সময় থাকতে লাইনে আয়।
ভালো থাকিস এখন আমি রাখি।
এই বলে আমি ফোন রেখে দিলাম। প্রিয় পাঠক এই রকম ব্যাপার হর হামেশাই হচ্ছে। এই ধরনের অতি শেয়ারীং অনেক বিব্রতকর ঘটনার জন্ম দেয়। সম্পর্কে নষ্ট করে, পারষ্পরিক শ্রদ্ধা বিনষ্ট করে।
জীবনটা একটা বড় রচনার মত, শুধু একটা প্যারাগ্রাফের মত নয়। অনেকগুলো প্যারাগ্রাফ নিয়ে একটা রচনা হয় আর প্রত্যেক প্যারাগ্রাফে স্পেস থাকা বাঞ্চনীয়। নইলে যত ভালো লেখা হোক না কেন তা সুন্দর হয় না, পড়তে আরাম লাগে না। তেমনি জীবনে প্রিয় মানুষ বন্ধু সবার সাথেই কিছু স্পেস থাকা বাঞ্চনীয়। যে সম্পর্কে কোন স্পেস নাই, সেই সম্পর্ক কখনও ভালো হতে পারে না।
দমবন্ধ ভাব নিয়ে একটা সম্পর্ক সুখের হতে পারে না।
আমাদের সমাজে অনেক সময়ই স্বামী স্ত্রীরা একে অপরকে কোন স্পেস দেন না। সবাই সব কিছু খুব দ্রুতই জেনে নিতে চায়। মানুষ রহস্য ভালোবাসে। রহস্যের প্রতি চিরকালই মানুষের টান থাকে।
যখন রহস্য উম্মোচিত হয় তখন আর সেই আগের আগ্রহ থাকে না। এটা বাস্তব। আমি মনে করি, সকল সম্পর্কে কিছুটা রহস্য থাকা ভালো। এতে পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা, আগ্রহ ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। আমি অনেক দেখেছি, প্রেমিকার ফেসবুকের বা ইমেইলের পাসওয়ার্ডের জন্য প্রেমিকের সেকি মান অভিমান!! আমার কাছে কেউ এই ধরনের কোন অভিযোগ নিয়ে আসলে তাকে আমি প্রচন্ড তীরষ্কারের জর্জরিত করি।
আপনার কাছের মানুষ আপনার খুব গোপনীয় বিষয় অবশ্যই জানবে, সেটাতে দোষের কিছু নেই। প্রয়োজনে আপনার স্ত্রী বা আপনার স্বামী আপনার একাউন্টে ঢুকতেই পারে। কিন্তু সেটা জোর করে নয় আর সেটার জন্য রাগারাগি, মান অভিমান কোন বুদ্ধিমতার বিষয় নয়। তাছাড়া ভালোবাসার মানুষের ইমেইল পাসওয়ার্ড বা ফেসবুক আইডীতে বসে বসে ম্যাসেজ চেক যারা করে বিশ্বাসের প্রমান পেয়ে চায় তারা মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। এই ধরনের মানুষ জীবনে ঠিক সুখী হতে পারে না।
আমি মনে করি এতে নিজের ব্যক্তিত্ববোধও নষ্ট হয়।
যাই হোক, যারা ভালোবাসার নামে স্ত্রৈণ হতে চান তাদের জন্য নচিকেতার একটা গানের কয়েকটা লাইন তুলে ধরলামঃ
আমার বউ বলেছে মরতে আমায়
জীবন আর রাখতে পারব না
বউ আমার নয়নমনি ফেলতে কথা পারব না
কিন্তু মোর গুমঢ় ভারী বেচতে মাথা পারব না,
জিততে যদি না পারি তবু আমি হারব না
কিন্তু বউ এর কথায় বাদর হয়ে উঠতে বসতে পারব না ভাই,
উঠতে বসতে পারব না।
রেল লাইনে বডি দেব মাথা দেব না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।