কি রে অরণ্য তুই একা !! হিমি আর শ্রাবণী কই ??
-আমি কি জানি ওরা কই ! ওরা না আজকে আমাদের স্যারের বাসায় নিয়ে যাবে ??
হুম ওরা তো সেটাই বলল।
- দোস্ত তোর মোবাইলে রিং হইতেছে... দেখত হিমি কল দিছে কিনা ??
হ্যাঁ, হিমির-ই ফোন। হ্যালো হিমি , কি কই তোমরা ?
“আবীর একটা প্রবলেম হইছে বুঝচ্ছ । শ্রাবণী সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পায়ে সামান্য বাথা পাইছে। ও বরফ দিচ্ছে পায়ে ।
আমাদের মনে হয় আসতে একটু দেরি হবে , তোমরা যাও । এই শোন এনায়েত স্যার কিন্তু ছাঁদের রুমে পড়ান, সোজা ছাঁদে যাবা । ”
আচ্ছা, তোমরা তাহলে আসো ... আমরা গেলাম।
-কিরে কি হইছে ? আসবে না ওরা ?
আরে শ্রাবণীর সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পায়ে বাথা পাইছে । ওদের আসতে একটু দেরি হবে , চল আমরা যাই ..
-ঐ স্যার নাকি ছাঁদে পড়ান ??
হ্যাঁ, স্যার দোতালায় থাকেন আর স্টুডেন্ট পড়ান ছাঁদের রুমে ।
-ছাঁদ কি একটা পড়ানের জায়গা হল ? বাসা বাদ দিয়া ছাঁদে পড়ায় কেন ?
এতো কথা না বইলা চল দেখি...
[ ছাঁদের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে... ]
-আরে চরম একটা ছাঁদ । স্যার তো ছাঁদটাকে পুরাই বাগান বানাই ফেলাইছে রে...অনেক ফল- ফুলের গাছ । দেখ স্যার আবার পাখিও পালে !
এতক্ষন তো অনেক কথা কইলি, স্যার বাসায় বাদ দিয়া ছাঁদে পড়ায় ক্যান ? আর এখন কও চরম ছাঁদ । ভিতরে ঢোক...
-দোস্ত কেউ তো আসে নাই রে !
কে আসছে না আসছে সেটা আমাগো দেখার বিষয় না । এখন এইখানে বস ।
তুমি তো স্টুডেন্ট ভালো , তোমার তো স্যার গো কাছে না পড়লেও চলে কিন্তু আমারে ঠিক মত পড়তে হইব । তাও যে তুই কেন খালি স্যার গো কাছে পড়স বুঝি না !!
-গাধা তুই জানস না বোর্ড ফাইনালে আমাদের কলজের সিট গার্লস কলেজে পড়ে । আর স্যার হচ্ছেন গার্লস কলেজের ইংলিশ টিচার ।
হ্যাঁ সেটা তো জানি ,আর স্যার নাকি পড়ায়-ও ভালো।
[ আবীর আর অরণ্য কথা বলছিলা, ঠিক তখনি...]
“এক্সকিউজ মি! এটা মেয়েদের বসার জায়গা।
মেয়েরা বা পাশে আর ছেলেরা কেউ আসলে ডান পাশে বসে ”।
-আবীর আমরা কিন্তু এইখানে নতুন আসছি । কারা কোন পাশে বসে সেটা কি আমরা জানি ? ভাব কম মেরে বললেই হতো ঐ পাশে চলে যেতাম। চল ঐ পাশে যাই, আবার কি না কি বলবে ! [শুনিয়ে শুনিয়ে]
“হ্যালো ! আমি ভাব মেরে বলছি মানে কি ? আমি তো ভদ্র ভাবেই বলেছি...”
-আচ্ছা বুজচ্ছি... আর ভদ্রভাবে বুঝাইতে হবে না ।
[এনায়েত স্যার রুমে ঢুকলেন ]
কি অবস্থা সবার ? সবাই কেমন আছো ?
-জি স্যার আমরা সবাই ভালো আছি ।
স্যার আপনি কেমন আছেন ?
হ্যাঁ ভালো । আচ্ছা তোমরা দুইজন মনে হয় অরণ্য আর আবীর তাই না ?
-জি স্যার ।
তোমাদের কথা হিমি ফোন করে আগেই জানিয়েছিল । তারপর বল পড়াশুনার কি অবস্থা ?
-স্যার এইতো চলতেছে। সবে মাত্র তো সেকেন্ড ইয়ারের ফার্স্ট টার্ম এক্সম গেল।
রেজাল্ট কেমন হইছে তোমাদের ?
স্যার আমার GPA ৪.৮ আসছে আর আবীরের ৪.৫ আসছে ।
ভালো, আশা করি প্রি-টেস্টে A+ পাবা । ভালো কথা এটা কিন্তু মেয়েদের ব্যাচ। তোমাদের প্রবলেমের কারনে আমি তোমাদের এই ব্যাচে নিছি । কোন প্রবলেম হলে আমাকে জানাবা।
আর সবার সাথে পরিচয় হয়ে নিও।
-আচ্ছা স্যার ।
কি ব্যাপার হিমি আর শ্রাবণী এখনও আসে নি ? ওদের যে দেখছি না ?
-স্যার, শ্রাবণী সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পায়ে বাথা পাইছে । তাই আসতে একটু দেরি হচ্ছে ।
হুম, ঠিক আছে তোমরা পড়া শুরু কর ।
--------------------------------------
[ হিমি আর শ্রাবণীর বাসা একই জায়গায় । নেক্সট ক্লাসের দিন হিমিদের সাথে কোচিং-এ যাবার পথে...]
“ অরণ্য, শুনলাম কাল তোমরা নাকি মেয়েদের জায়গায় বসছিলা ?”
-আরে তেমন কিছু না । আমরা কি জানতাম কোন পাশে মেয়েরা বসে আর কোন পাশে ছেলেরা ! গিয়ে দেখি সব খালি তাই এক পাশে বসে পরছিলাম । কেন কি হইছে ?
“ রিমি, মানে যেই মেয়েটার সাথে তোমার কথা কাটা-কাটি হয়েছিল সে বলছে তোমরা নাকি খুব ভাব নিয়ে মেয়েদের জায়গায় বসে ছিলা । ”
-ঐ মেয়ে এইকথা বলছে ! কথাই তো বললাম দুইটা কি তিনটা আর এর মধ্যে কথা কাটাকাটি বানাই ফেলছে ? আজব মেয়ে তো !!
“ রিমি এনায়েত স্যারের মেয়ে আবার স্টুডেন্টও ভালো, তাই একটু এমন ।
সে আবার বলছে মেয়েদের ব্যাচে ছেলেরা কি চায় ? থাকতে হলে ভদ্র ভাবে থাকতে হবে । ”
-এতো বড় কথা ! আমরা কি অভদ্র ভাবে ছিলাম নাকি ? তা এইসব কথা কি শুধু তোমাকেই বলছে ?
“এইসব কথা তো বলছে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মাঝে। সেখানে আমারা অনেকেই ছিলাম, শ্রাবণীও ছিল । তুমি একথা আবার রিমিকে জিজ্ঞাসা কইর না ... ? ”
-শ্রাবণী তুমি সবসময় এত চুপচাপ থাক কেন ?
“ না আসলে কথা বলার থেকে আমার শুনতে অনেক ভালো লাগে । ”
[ ক্লাসের ডান দিকে আবীর আর অরণ্য বসে আছে ঠিক তখন রিমি সহ কয়েকটা মেয়ে ক্লাসে ঢুকল ]
-আজকে কিন্তু আমরা ছেলেদের জায়গায় বসছি ।
সময় পাইনা তো তাই বাধ্য হয়ে মেয়েদের ব্যাচে পড়তে আসছি । আর ছেলেরা যে অভদ্র হয় সেটা যে উনাকে কে বলছে আল্লাহ-ই জানে ! [ অরণ্য রিমিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিল... ]
“ বুঝি না ফ্রেন্ড সার্কেলের কথা কিভাবে যে বাইরে যায় ? নেক্সট টাইম যারা কথা ফাঁস করবে তাদের খবর আছে । ”
দোস্ত রাগলে কিন্তু রিমিকে হেব্বি লাগে । আমার রিমিরে অনেক ভালো লাগছে । প্লিজ তুই একটা কিছু কর...
-এই মাইয়া বহুত ডেঞ্জারাস।
তোরে কাবাব বানাই ফেলাইব।
এইটা তুই কি কইলি অরণ্য ! আমারে কাবাব বানাইব , আচ্ছা বানাইলে বানাক তাও রাজি।
-আবীর ...আজাইরা সপ্ন দেখা বাদ দে । দেবদাস হইবি শেষমেশ ।
--------------------------------------------------------------
এভাবে অনেকটা দিন কেটে যেতে থাকে ।
প্রি-টেস্টে সবাই মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করে। কোচিং-এ অরণ্যের সাথে রিমির ছোট-খাট ঝগড়া লাগতেই থাকে । আর রিমির প্রতি আবীরের পাগলামি বাড়তেই থাকে । স্যার অরণ্যের পড়াশুনা দেখে কিছুটা মুগ্ধ হতে থাকে । ওর ইংলিশ গ্রামারের ব্যাসিক প্রচণ্ড ভালো ।
স্যারের প্রায় সব পরীক্ষাতেই ফার্স্ট হয় । কোন পরীক্ষায় কেউ খারাপ করলে মাঝে মাঝে স্যার অরণ্যের খাতা নিয়ে বলতেন – “ সবাইকে বলি এইভাবে ওর মত করে লিখবে, তাহলে রেজাল্ট ভালো হবে । ওর যেমন হাতের লেখা তেমনি ক্লিয়ার কনসেপ্ট । ”। মাঝেই হঠাৎ এক পরীক্ষায় রিমি ভালো করে ।
অরণ্য সেদিন স্যারের কাছে রিমির খাতাটা দেখার জন্য চায় । এইটা নিয়ে রিমি খুব ভালো একটা রিঅ্যাক্ট করে।
“ স্যার প্রায় এক্সমগুলোতে অরণ্য ফার্স্ট হয় । কোন সময় তো আমি বা আমরা কেউ তো স্যার আপনার কাছে তার খাতা দেখতে চাই না । আজকে হঠাৎ সে কেন স্যার আমার খাতা চাইলো ।
এটা কি jealousy না ? ”
-এমনি নিলাম খাতাটা দেখার জন্য। ভালো লিখছো তাই মার্কস ভালো পাইছো , jealousy হবে কেন ?
“ না তুমি তো কখনো আমাদের কারো খাতা নেও না , তাহলে আজ কেন নিলা ? শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা কইরো না । ”
-স্যার এই মেয়ে তো খালি ঝগড়া করে । সেই প্রথম দিন থেকেই ঝগড়া করেই আসতেছে । আর এইটা নিয়ে এভাবে রিঅ্যাক্ট করার তো কোন মানে নাই ! আর তোমরা আমার খাতা নেও না কেন ? আমি কি বলছি যে দিবো না ।
হইছে সব ঝগড়া-ঝাটি বন্ধ। এরপর থেকে আমার ক্লাসে কেউ ঝগড়া করলে তাকে পানিশমেন্ট দেয়া হবে । খালি বাচ্চাদের মত ঝগড়া কর তোমরা । আবার দেখলে হইছে ... - স্যারের ঝারি ।
------------------------------------------------
কোচিং শুরুর আগে অরণ্য প্রায় ক্লাসের কোণায় বসে খাতায় স্কেচ করতো ।
রিমি , তানিয়া , পাপড়ি সহ অনেকেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করত অরণ্য খাতায় এতো কি করে ? ওরা এই ব্যাপারে হিমি আর আবীরকে জিজ্ঞাসা করেও কোন উত্তর পায় নি । রিমির মাথায় একটা আইডিয়া আসে যেকোন ভাবেই হোক তাকে দেখতে হবে অরণ্য ঐ খাতায় প্রায় কি করে । একদিন ক্লাস শেষে অরণ্য সিঁড়ি দিয়ে নামছে । স্যারের বাসার সামনে রিমি আর তানিয়া...
“ আবীর কে দেখলাম না আজ , কোথায় সে ? আর তুমি কি এখন বাসায় যাচ্ছ ?”
- হঠাৎ আবীরের খোঁজ নিচ্ছ ? আবীর ওর মামার বাসায় গেছে । আর আমি বাসায় যাচ্ছি, কেন কিছু বলবা ?
“ না আসলে ...তোমার ক্লাস খাতাটা আমাদের একটু লাগতো।
আমি ভুলে একটা লেখা তুলি নাই। দাও তো একটু... ”
-আচ্ছা দিচ্ছি, কিন্তু হঠাৎ আমার ক্লাস খাতা ?
“ আরে বললাম না আমি ক্লাসে একটা লেখা লিখি নাই । তুমি তো সব নোট করো তাই তোমার খাতা চাইছি । সন্দেহ হচ্ছে আচ্ছা লাগবে না তোমার খাতা... ”
-তোমার সাথে ঝগড়া করার কোন ইচ্ছা নাই, নেও ।
“ একটু ওয়েট করো আমরা আসতেছি ।
”
এই কথা বলে রিমি আর তানিয়া খাতাটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভিতরে গেল । অরণ্য তো পুরা অবাক । ব্যাপার কি ভিতরে গিয়ে বসতেও বলল না ! অনেক্ষন ধরে কোন খোঁজ খবর নাই। হঠাৎ ভিতরে তানিয়া আর রিমির হাঁসির শব্দ শুনে অরণ্যের বুঝতে বাকি রইল না ব্যাপার কি ঘটছে । তার কিছুক্ষন পর তানিয়া আর রিমি হাঁসতে হাঁসতে বাইরে এসে খাতাটা দিয়ে বলে...
“ ও সরি সরি... তোমাকে ভিতরে আসতে বলতে ভুলে গেছিলাম ।
যাই হোক আমাদের কাজ শেষ , ”
-আমি জানি তোমরা কেন হাসতেছ ? নিজেদের খুব চালাক ভাবো তাই না ?
“আচ্ছা বলতো আমরা কেন হাসতেছি ? ”
- খাতায় আমি একটা শার্ট পরা মেয়ের ছবি এঁকেছিলাম । সেই মেয়টার আবার সার্টের উপরের একটা বোতামটা খোলা । তোমরা অনেকদিন ধরে চেষ্টা করতেছিলা এটা দেখার জন্য আমি আসলে খাতায় কি করি , পারো নাই আগে । আজ মিথ্যা কথা বলে দেখলা ।
“ বাপরে ছেলের মাথায় বুদ্ধি আছে ! নিজেকে খুব স্মার্ট ভাবো তাই না ? ”
-এখানে বুদ্ধিমান বা স্মার্ট এর কোন বিষয় না।
বিষয়টা হচ্ছে লজিকাল। দেখ তোমরা যদি ক্লাসে আমার খাতাটা চাইতা আমি কি মানা করতাম ? তাহলে আমি তো বুঝতেই পারতাম না তোমাদের প্ল্যান । এখন তো ধরা খেয়ে গেলা।
“ আচ্ছা লজিক বাবা সরি... আর হবে না এমন । ভালো কথা কালকে বাবা কোচিং-এ আমাদের সবাইকে একটা সারপ্রাইজ দিবে।
”
-কিসের সারপ্রাইজ ?
“ সেটা আমার বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর। আমি কি জানি ! ”
-আচ্ছা তোমরা থাক, আমি বাসায় যাবো ...by ।
--------------------------------------------
পরের দিন ক্লাস শেষে স্যার সবাইকে বললেন -“ কিছুদিন পর তোমাদের টেস্ট পরীক্ষা, আশা করব সবার এক্সম ভালো হবে । পরীক্ষার আগে আমি আমার বাসায় সব স্টুডেন্টদের নিয়ে একটা পার্টি করতে চাচ্ছি । আশা করি সবাই উপস্থিত থাকতে পারবা, আসতে কারো কোন সমস্যা হবে না ।
নেক্সট ফ্রাইডেতে আমি চাচ্ছিলাম পার্টিটা করতে... ”
স্যার আমাদের মনে হয় কারো কোন সমস্যা হবে না ।
পার্টির দিন একে একে সব স্টুডেন্ট আসলো । সবার শেষে আসলো হিমি আর শ্রাবণী । রিমির গেটআপ দেখে তো ওকে চেনাই যাচ্ছে না । রিমি, শ্রাবণী আর হিমি একসাথে কথা বলছে।
খাওয়া দাওয়ার পর ছেলেরা একপাসে বসে সবাই আড্ডা মারছে । ওদের সাথে কিছু মেয়েও আছে । কিছু মেয়ে আবার অন্য পাশে গল্প করছে । আবীরের সাথে করে গিটার নিয়ে আসছে আর তা দিয়ে টুং টুং করতেছে । ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অরণ্য ওকে সাহস দিয়ে বলল - কিরে খুব গান গাইতে ইচ্ছা করতেছে ? আরে গান শুরু কর, স্যার কিছু বলবে না ।
বুঝছি রিমিকে ইমপ্রেস করার ইচ্ছা ।
হুম্ম বুঝছসই তো... দোস্ত তোর “বৃষ্টির কণা ” গানটা গাই...?
-যা ইচ্ছা তাই কর। ভালো করে গানটা করিস কিন্তু না হলে মান সম্মান সব যাবে...
আবীর গিটারের তালে তালে গান শুরু করলো ... “সে আসে বৃষ্টির কণা হয়ে
ছুঁয়ে যায় আমায় আলতো করে
তাকে আমি দেখতেই থাকি
সেই চারুলতার খোঁজ না জানি !
যখন সে হাসে...
এ মন হাওয়ায় ভাসে
ছুটছি তার পিছু পিছু
হয়তো এ মন বলবে কিছু । ।
সে আছে হৃদয়ের অনুরণনে...
সে আসে বৃষ্টির কণা হয়ে
ছুঁয়ে যায় আমায় আলতো করে ।
জানি না সত্যি জানি না কেন এমন হয় ?
ইচ্ছে হয় তাকে ছুঁয়ে দেই
ভালবাসার কথাগুলো বলে দেই
সুখের-ই পরশ জড়িয়ে নেই এই বুকেতে
সে আছে হৃদয়ের অনুরণনে...
ছুটছি তার পিছু পিছু
বলব ভালবাসার কথা কিছু । ।
সে আসে বৃষ্টির কণা হয়ে
ছুঁয়ে যায় আমায় আলতো করে । ।
গানটা শেষ করার পর সব ছেলেরাতো অবাক ... সব মেয়ে গুলো ওদের পাশে ।
কেউ কেউ বলতছে ওয়ান মোর ওয়ান মোর...। শ্রাবণী অরণ্যের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে । অরণ্য ভাবতেছে শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে কেন ? এই মেয়েটা কখনো তো হাসে না । হাসলে তো ওকে ভালোই লাগে । হঠাৎ কেন যেন মেয়েটাকে এত সুন্দর লাগতেছে অরণ্য বুঝতে পারল না ।
চোখে কাজল আর কপালে টিপ দিছে তাই মনে হয়। সব মেয়েদের কাজল দিলে ভালো লাগে না । ওর গায়ের রং কিছুটা উজ্জল শ্যামলা আর শ্যামলা মেয়েদেরই চোখে কাজল দিলে মানায় । হঠাৎ পাশ থেকে রিমি বলে উঠল...
“ আবীর ভালোই তো গাও । তা কার গান এটা তোমার ? ”
-আরে এটা আমার লেখা না ।
সুর আর গানের কথা অরণ্যের।
“ কি অরণ্য লিখছে ! বাপরে এই ছেলে গানও লিখতে পারে ! একে তো ভালো স্টুডেন্ট , ছবি আঁকে আবার গানও লিখে ! তবে যাই বল আবীর কিন্তু অনেক ভালো গাইছে । কি অরণ্য এবার তুমি একটা গান শোনাও ... ”
-রিমি আমি গান গাইতে পারি না।
“ হুম্ম বুঝলাম । আবীর ফ্রি হয়ে এ দিকে একটু এসোতো তোমার সাথে কিছু কথা আছে ।
”
পার্টি শেষ হতেই শ্রাবণী আর হিমি অরণ্যকে বলল ওদের বাসায় পৌঁছে দিতে। রাস্তায় যেতে যেতে শ্রাবণী অরণ্যকে বলল- “ ব্যাপার কি আজকাল রিমির সাথে তো অরণ্যের ভালোই খাতির জমছে ? রিমি বলছিল ও নাকি পড়ার টাইম চেঞ্জ করবে, তা তুমিও করছ নাকি ? ”
-কি যে বল ! আমি কেন চেঞ্জ করব পড়ার টাইম ? আর খাতির-ঠাতির কিছু না । তাল মিলিয়ে চলছি আর কি...খাতির করতেছে তো আমাদের আবীর । রিমিকে তার দারুন ভালো লাগে । কিরে দেবদাস পার্বতী ডেকে কি বলল তোকে ?
কি আর বলবে... বলল কেমন আছি, দিনকাল কেমন যাচ্ছে... পড়াশুনার কি অবস্থা... এইতো হাবিজাবি।
-দোস্ত পার্বতীর রাগ তাইলে একটু কমছে...
অরণ্যের কথা শেষ না হতেই পাশ থেকে হিমি বলল - “ আবীর শোন রিমির অভ্যাস কিন্তু খারাপ । সে ছেলেদের সাথে ফ্লারটিং করে মজা পায় । এর আগেও অনেক ছেলেকে ঘুরাইছে। দেখবা তোমার সাথেও শুরু করছে। তাই আগে থেকেই সাবধান করে দিচ্ছি... ”
ফ্লারটিং করুক আর যাই করুক ঐ ঝগড়াইটটা মেয়েরেই আমার ভালো লাগছে ।
“ অরণ্য আবীর তো শেষ । শেষমেশ রিমি !! ”-হেসে বলল শ্রাবণী
আর হাইসো না ঐ যে তোমাদের বাসা চলে আসছে যাও যাও, ঐ গুড নাইট...
---------------------------------------------------------
টেস্ট এক্সমের পর আবীরের সাথে রিমির আরও ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। প্রায় ফোনে কথা হয় ওদের । কয়েক মাস পর ওদের ফাইনাল এক্সম শুরু হয়। এক্সম শেষে একদিন রাতে শ্রাবণী অরণ্যকে কল দিয়ে ওদের বাসার সামনে আসতে বলে ।
অরণ্য বাসার সামনে এলে শ্রাবণী ওকে একটা ফেবার ক্যাসেলের রং পেন্সিল বক্স দিয়ে বলে-
“ এক্সম তো শেষ এখন বাসায় বসে বসে ছবি আঁকবা , তাই দিলাম । আমাদের বাসায় চলো , তোমাকে আম্মুর সাথে পরিচয় করাই দিব । ”
- না আজকে আর যাবো না ,আন্টিকে আমার সালাম দিও । nywys গিফটের জন্য থানক্স... by
যাবার সময় অরণ্য ভাবতে থাকে শ্রাবণী হঠাৎ রং পেন্সিল দিল । অরণ্য আবীরকে একটা কল দেয়...
-দোস্ত একটু আগে শ্রাবণী আমাকে একটা রং পেন্সিল বক্স দিছে ।
বাহ পেন্সিল বক্স । আর কিছু দেয় নাই ?
-না ।
ভালো তো... কয়দিন পর দেখবা ফুল দিবো তারপর চিঠি... হাহা
-হাসিস না বেক্কেলের মত।
দেখ আমি একটা বিষয় লক্ষ করছি শ্রাবণী মনে হয় তোর প্রতি কিছুটা উইক । আমার তো রিমি আছে কয়দিন পর তোর হইব শ্রাবণী ।
-তুই দেখছোস ঘোড়ার ডিম । তুই থাক তোর রিমিরে নিয়া...ফোন রাখ।
তার ঠিক কয়েক সপ্তাহ পর শ্রাবণী আবার অরণ্যকে কল দেয়...
“ অরণ্য আমাকে একটা ছবি এঁকে দিবা ? ”
-হ্যাঁ, দিব। কেমন ছবি ? তোমার নিজের স্কেচ ?
“ না, আমি যেভাবে বলি ঠিক এভাবে একটা ছবি আঁকবা...”
“ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। সাদা পাঞ্জাবি পরা একটা ছেলে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে আর ছেলেটার ঠিক পিছনে নীল শাড়ি পরা একটা মেয়ে হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে ।
”
-এটা আবার কেমন ছবি ?
“ হ্যাঁ, যা বলছি তাই করবা । শোন বাকগ্রাউন্ড দিবা ব্ল্যাক । মনে থাকবে তো... ? ”
-হ্যাঁ, থাকবে । আচ্ছা আজকেই আঁকা শুরু করব।
[ অরণ্য ফ্রেশ হয়ে ছবি আঁকার জন্য রং পেন্সিল খুঁজতে থাকে।
তখন হঠাৎ করে শ্রাবণীর দেয়া গোল বক্সটা চোখে পড়ে ... ]
-আচ্ছা বক্সটাতো এখনো খুলি নাই । আজকে শ্রাবণীর দেয়া রং পেন্সিল দিয়েই ওর ছবিটা আঁকবো । আরে বক্সের মধ্যে মাত্র নীল, সাদা আর লাল রঙের তিনটা রংপেন্সিল ! আবার এর সাথে চিরকুট, interesting !! রং পেন্সিলগুলো বের করতেই নীল পেন্সিলটার গায়ে লেখা “ I ” , লাল পেন্সিলে “Lo♥e ” আর কালোটাতে “You”
... কি শ্রাবণী আমাকে ভালবাসে ??
[ প্রথম চিরকুটটা খুলতেই... ]
“ অরণ্য আমাকে তুমি সব সময় চুপচাপ দেখ। এই চুপচাপ মেয়েটা কোনদিনও চায় না তার চাওয়া পাওয়া গুলো শূন্যতে মিলাক। অরণ্য আমি জানি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কোনদিনও তুমি কিছু খুঁজবে না হয়তোবা খোঁজার চেষ্টাও করবে না।
তাও বৃথা চেষ্টা ...
কি অবাক হচ্ছো , অনেক কিছু বুঝতেছ না তাই না ?
আমি জানতাম এমনটাই হবে। কোন নাটক করব না। তোমাকে আমার অনেক আগে থেকেই ভালো লাগে। এই ভালোলাগাটা একতরফা , এর যোগফল যে শূন্য হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। জানো সব কিছুই ঠিক ছিল।
এই ভালো লাগাটা যে কিভাবে হল আমি নিজেও জানি না ! কোনদিনও ভাবিনি এমন হবে। আচ্ছা তুমি কি রং পেন্সিলের বক্সটার কথা ভুলে গেছিলা ? আমিতো ভাবছিলাম তুমি হয়তো ভুলেই যাবে, খুলেও আর দেখবে না বক্সটা । তোমাকে যে রং পেন্সিলের বক্সটা দিছে তাতে তিনটা রং পেন্সিল আছে। একটা তোমার প্রিয় ব্ল্যাক, সাথে গোলাপের লাল আর তার পাশের নীল রঙটা আমি । ”
….আর একটা কথা বলার ছিল...আমি তো মানুষের মন পড়তে জানি না।
জানলে হয়তো অনেক আগেই তোমাকে বুঝতে পারতাম । অলীক এক আশা বুকে বেঁধে আছি । জানিনা তোমার উত্তরটা কি হবে !
যদি “হ্যাঁ” হয় তাহলে বক্সের দ্বিতীয় নীল রঙের চিরকুটটা ছুঁয়েও দেখবে না । আর “না” হলে একবার পড়ে দেখ...
বক্সের মধ্যে আরও একটা নীল রং এর চিরকুট...!
আমি জানতাম তোমার উত্তরটা না হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই তুমি এই চিরকুটটা পড়তেছ ।
মানুষের সব চাওয়া তো পূর্ণ হয় না। তোমাকে যেভাবে আমি ছবিটা আঁকতে বলছি ঠিক সেভাবেই এঁকো। বৃষ্টিতে ভিজতে আমার ভালো লাগে। বৃষ্টিতে নীল শাড়ি পরে থাকব আমি । কাঁদলেও তুমি দেখবে না ।
আমি ওভাবে কোনদিনও একা দাঁড়িয়ে থাকতে চাই না।
-----------------------------
হ্যালো ,হিমি ?
“ হা, বল...”
আচ্ছা শ্রাবণী কি কোন ছেলেকে পছন্দ করে ? তোমাকে কখন এই বিষয়ে কিছু বলছে ?
“ না , আমাকে তো কোন সময় এই বিষয়ে কিছু বলে নাই। কেন কি হইছে ? ”
-না তেমন কিছু না। আচ্ছা রাখি পরে কল দিচ্ছি ।
[ এরপরই অরণ্য কল দিল আবীরকে ]
-দোস্ত একটা কাহিনী ঘটছে...
কি ?
-আরে শ্রাবণী আমারে একটা রং পেন্সিলের বক্স দিছিল না, সে তাতে একটা প্রপোসাল লেটার দিছে ।
ঐ কি কস তুই হারামজাদা ... মামা তোর কপাল তো খুইলা গেছে । আমি কইছিলাম না ও তোর প্রতি উইক ? দেখছোস আমি যেইটা কইছিলাম সেইটাই হইছে । দোস্ত রাজি হইয়া যা । ঐ শোন পরশু দেখা করতে বল । আবার যাইয়া আহ্লাদে গদগদ হইয়া পরিস না , পারলে একটু মেলোড্রামা করিস...
পরের দিন অরণ্য শ্রাবণীকে একটা ম্যাসেজ দিল “ আমার সাথে নেক্সটডেতে বিকাল ৫ টায় দেখা করবা ।
”
-----------------------
-নীল শাড়ি পরছ ভালো কথা কিন্তু গোলাপ নিয়া আসছ কেন?
“তোমার জন্য । “
-তোমাকে বলছি গোলাপ আনতে ? আর আমি কি তোমাকে কোনদিনও বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি বা আমাকে দেখে মনে হইছে ? আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড । এসব চিন্তা কোথা থেকে যে মাথায় আনো !
“ হ্যাঁ, , তুমি আমাকে কোনদিনও বল নাই বা কোনদিন তোমার অ্যাটিটিউড দেখেও মনে হয় নাই যে তুমি আমাকে ভালবাসো। কিন্তু কেন জানি আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলছি ! ভুল আমারই, আমি তোমাকে ভালবেসে বসে আছি । “
-তুমি তোমার নিজেকে কি ভাবো ড্রামা কুইন ? ড্রামা করো নাহ... গোলাপ, রং পেন্সিল আর চিরকুট দিয়ে বলবা আমি তোমাকে ভালবাসি ।
ভালবাসা কি এতো সস্থা ,চাইলা আর পেয়ে যাবা। জাননা মানুষের সব চাওয়ায় পূর্ণ হয় না । নিকুচি করি তোমার ভালবাসা আর রং পেন্সিলের।
“ তুমি এটা কি করলা , ভেঙ্গে ফেলে দিলা রং পেনসিলগুলো ! ”
-বেশ করেছি , ইচ্ছা হইছে ফেলছি । আরও ফেলব, যাও আমার চোখের সামনে থেকে...
“ রং পেন্সিলগুলো এভাবে না ভাঙলেও পারতা।
আর মানুষ মানুষকে এভাবে বলে ? হ্যাঁ তুমি-ই ঠিক বলছ । আমি আসলে পাগল হয়ে গেছি । I was living in some dream world…তুমি থাকো তোমাকে নিয়ে...”
অরণ্য এখন কি করবে ভেবে না পেয়ে আবীরকে আবার কল দিল...
-দোস্ত ড্রামা করতে গিয়া তো ঝাড়ি দিছি । চলে যাইতেছে তো ...
গাধা যা থামা ওরে...
এই শ্রাবণী... যাচ্ছ কোথায় ? দাঁড়াও...
আমি কিন্তু তোমার রং পেন্সিলগুলো ভাঙ্গিনি , এই যে রং পেন্সিল । আর একটা জিনিস দেখ আমি কিন্তু ছবিটা এঁকেছি , তোমার মত করে নয় আমার মত করে ।
দেখ বৃষ্টি হচ্ছে... আমি সাদা পাঞ্জাবি পড়ে হাঁটছি আর পাশেই লাল গোলাপ হাতে আমার নীল পরী । সরি তোমাকে কাঁদানোর জন্য । প্রমিছ করছি আর কাঁদাবো না ।
“ তুমি আমায় কাঁদালে কেন ? ” [ কাঁদো কাঁদো ভাবে... ]
-তোমার চিরকুট পড়ার পর আমি মনে মনে প্ল্যান করেছিলাম আগে তোমায় কাঁদাবো । তারপর তুমি কাঁদবে ।
অশ্রু গড়িয়ে পরবে গাল বেয়ে। সেই অশ্রু অতি যতনে মুছে দিব। সেই সাথে আলতো করে গাল টাও ছুয়ে নিবো । তুমি এখনও কাঁদতেছো ... তুমি আমার শ্রাবণী- আমার শরতের নীলিমার বিশালতা ।
“দেখ আমি শ্রাবণ হয়ে ধুয়ে নেব তোমার কষ্টের বনতল,
ছুঁয়ে যাব হৃদয়ের ঐ গোপন অঞ্চল ।
শ্রাবণী, তোমার দুরন্তভেলায় যেন বরষা নামে
ভালবাসার জোছনাবৃষ্টি হয় আমার মনে...”
বি. দ্র : বৃষ্টির কণা গানটা আমার এক ফ্রেন্ডের জন্য আমার রিসেন্ট কম্পোস করা। এইখানে গানটার কিছুটা অংশ দেয়া হইছে...
উত্সর্গঃ বৃষ্টির কণাকে, যে কিনা আমার কাছে শ্রাবণী নামে পরিচিত । আজ এই মেয়েটার জন্মদিন । অনেক ভাল থেকো তুমি, তোমার আগামীটা হোক ঠিক স্বপ্নের মত সুন্দর। শুভ জন্মদিন কণা...
© Anas Hassan ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।