আমার ভাবনাই আমার পরিচয় বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীটি হচ্ছে এমন একটি শ্রেণী যারা দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার মতো অবস্থায়। একদিকে উপরে উঠবার প্রবল আকাংখা, অন্যদিকে নীচে নেমে যাবার শংকা। এই দুইয়ের মাঝখানে এক উৎকন্ঠিত জীবন যাপন করে এই শ্রেণী। এ শ্রেণীর সংখ্যাও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে উপেক্ষা করবার মতো নয়। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চাকুরীজীবি পর্যন্ত এই শ্রেণীটির সংখ্যা যেমন উল্লেখযোগ্য, তেমনি এদের ভূমিকাও সর্বক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
তাই বলে অন্য শ্রেণীগুলোর গুরুত্ব আমি একেবারেই খাটো করে দেখছিনা। এই শ্রেণীটির প্রতি আমি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এই কারণে যে, দেশের অর্থনৈতিক কোনো পরিবর্তনে সবচাইতে আগে যে শ্রেণীটি প্রভাবিত বা ভুক্তভোগী হয় তা এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীটি। চাকুরীজীবি থেকে ব্যবসায়ী পর্যন্ত এদের সংখ্যাই বেশী। তাই, বাজার যখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, তা সে আন্তর্যাতিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণেই হোক আর আভ্যন্তরীণ দুর্নীতির কারণেই হোক, তখন সবার আগে প্রকটভাবে ভুক্তভোগী হয় এই শ্রেণী। না পারে নীচে নামতে, আবার উপরে উঠবার প্রবল আকাংখা সত্বেও তা তখন হয়ে যায় সোনার হরিণ।
এমন একটি শ্রেণীকে তখন বাগে পাওয়া সুবিধাভোগীদের জন্য সহজতর হয়ে যায় এবং যেহেতু বাংলাদেশের চাকুরীজীবি তথা প্রশাসনিক পর্যায়ে যারা কাজ করেন তা সে সরকারী-বেসরকারী যে প্রতিষ্ঠানই হোক না কেনো, তখন তাদেরকে দিয়ে স্বার্থ হাসিল করা বিশেষ ঐসব সুবিধাভোগীদের জন্য অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে কোনো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়না। আর এই শ্রেণীর অধিকাংশই যখন এর সাথে জড়িত হয়ে পড়ে তখন এর প্রভাব সবস্তরেই বিশেষ করে নিম্নবিত্তের উপরে এসেও পড়ে আরও প্রকটরূপ ধারণ করে। সুতরাং বিশেষ একটি মহলের সুবিধার কারণে সমাজের গরিষ্ঠ দুটি শ্রেণীই তখন জড়িত হয়ে পড়ে এই দুর্নীতির সাথে অনেকটা উপায়ান্তর না হয়েই। সুতরাং, ঐসব অধিক মুনাফাকাংখী গোষ্ঠীর কারণে বাজার হয়ে পড়ে নিয়ন্ত্রণহীন যার প্রভাব গিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই দুটি শ্রেণীর উপরে। বাংলাদেশের বর্তমান বাজার ব্যবস্থাই তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
উচ্চশ্রেণীর সীমাহীন অর্থলোভ আর বাকী দুটো শ্রেণীর এক শ্রেণীর কোনোরকমে মান নিয়ে বেঁচে থাকবার প্রয়াস এবং অন্য শ্রেণীর কোনোভাবে দু'মুঠো অন্ন জোগাবার প্রয়াস, এই দুই প্রয়াসকে ফাঁদে ফেলে ফায়দা লুটে চলেছে ঐ অর্থলোভী শ্রেণীটি। যে কারণে দুর্নীতি আজ বাসা বেঁধেছে প্রতিটি শ্রেণীর কন্দরে কন্দরে। সুতরাং, এই বাজার ব্যবস্থাকে যদি একটা সহনীয় ও স্থিতিশীল পর্যায়ে আনা যায়; অর্থাৎ ঐ অধিক মুনাফাভোগকারীদের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করে একটি সহনীয় অবস্থায় আনা যায় এবং এতে যদি এটা নিশ্চিত হয় যে একজন চাকুরীজীবি তার বেতনের টাকায় সংসারের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন, একজন মজুর তার দিনের উপার্জন দিয়ে পরিবারের সবার মুখে কমপক্ষে দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন জোগাতে পারছেন, তাহলে দুর্নীতির এ হার অনেকাংশে কমবে বলে আমি মনে করি। তাই বলে যে ম্যাজিকের মতো একনিমিষেই পরিবর্তন হবে তাও বলছিনা এবং তা আশাও করিনা। যা ম্যাজিকের মতো আসে তা ম্যাজিকের মতোই উবে যায়।
তবে দুর্নীতি এখন একটি সামাজিক ব্যাধি যা ক্যান্সারের আকারে ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের সব স্তরে। একে নির্মূল করতে হলে অবশ্যই সামাজিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই করতে হবে বলে আমি মনে করি। এরজন্য সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে টার্গেট যে শ্রেণীগুলোকে উল্লেখ করেছি তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করার প্রয়োজন আছে এবং সাথে সাথে বাজার নিয়ন্ত্রণের যে সকল ব্যবস্থা আছে তাও নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজী একটা বড় অন্তরায় বলে আমার মনে হয়। একটি পণ্য উৎপাদনের স্থান থেকে বাজার পর্যন্ত আসতে আজকের এই আধুনিক প্রযুক্তির দিনেও শুধুমাত্র চাঁদা দেবার কারণেই তার যে মূল্য পড়ে যায় তা প্রকৃতমূল্যের চেয়ে কয়েক গুণ বেশী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।