গোলাম মাওলা রনি : গণেশ যে উল্টে যাবে তা আমি বুঝেছিলাম চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অন্তত ১০ দিন পূর্বেই। পুরো পরিবার নিয়ে আমি তখন সেখানে ছিলাম। গিয়েছিলাম মহিউদ্দীন চৌধুরী সাহেবের নির্বাচন করার জন্য। মহীউদ্দীন চৌধুরী নিজেও বুঝেছিলেন যে, তিনি পরাজিত হবেন। তাঁর নির্বাচনী অফিসে বসে একদিন কানে কানে বলেছিলেন, রনি এই যে তুমি এসেছো, তোমার চোখ ও মুখ বলে দিচ্ছে, আমাকে সাহায্য করার জন্য।
অথচ বেশীরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা আসছে আমার সর্বনাশ করার জন্য। এই কথা বলার পর তিনি আমার পাশে বসা জনৈক সিনিয়র নেতাকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বললেন, ঐ যে চুদানির পুত বসে আছে; বসে বসে আমার পু...মারছে। সম্ভবত রাগে তিনি খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর আমি ঢাকা চলে এলাম বিষন্ন মনে। সংসদে গিয়ে দেখলাম মহল বিশেষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
আমার নির্বোধ মন মস্তিস্ক কিছুই আঁচ করতে পারলো না। পরবর্তীতে কুমিল্লা ও নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রায় একই ঘটনা ঘটলো। এই তিনটি নির্বাচনের ফলাফলের কারনে সারা দেশের ভোটারদের মন-মানষিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আর আমাদের ব্যার্থতা হলো আমরা জনগণের পরিবর্তিত মন-মানষিকতা আঁচ করতে পারিনি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলো যে কেমনে যাবে তা বুঝার জন্য বড় মানের জ্ঞানী হবার দরকার নেই।
চারটি সিটি কর্পোরেশনে সরকার দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। এতে ভেঙ্গে পরার কিছুই দেখছি না। এই পদগুলো বিএনপির দখলে ছিলো দীর্ঘদিন। বিশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ যেগুলো পেয়েছিলো সেই পরিস্থিতি না থাকার কারণে তা আবার বিএনপির দখলে গেছে। মধ্য থেকে ঐসব এলাকায় আওয়ামী লীগের ভোট বেড়েছে বই কমেনি।
যদি আমরা ২০০৫ সালের পূর্ববর্তী ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করি, তবে একথা সত্য যে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা তাদের মেয়র কালীন সময়ে যথেষ্ট কাজ করেছিল এবং সুযোগ ছিলো বিপুল সংখ্যক বিএনপির নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগে স্থান দিয়ে একীভূত করা। কিন্তু সেই কাজটি করা হয়নি।
নির্বাচনের প্রচার নীতিতে যথেষ্ট ভুল ভ্রান্তি ছিলো। ছিলো মারাত্মক অন্তদ্বন্দ। বলতে গেলে আওয়ামী লীগের লোকজন বরিশাল ও সিলেটে দাড়িয়ে থেকে দলীয় প্রার্থীর সর্বনাশ ঘটিয়ে তার পর স্থান ত্যাগ করেছে।
আবার অনেকে ঢাকা এসে বসেছিলেন। লোকজন তাদেরকে ফোন করলে উত্তর দিয়েছে, আগে ফেল করুক তারপর আসি।
সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও কোন ভূমিকা রাখেনি এই নির্বাচনে বা রাখতে পারেনি। যদি সরকারের প্রথম ১০ জন প্রভাবশালী মন্ত্রীদের তালিকা করা হয় তাহলে দেখা যাবে তাদের বেশীরভাগই স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় আগামীতে ফেল মারবে। জাতীয় পর্যায়ে এই প্রভাবশালীদের কোন ইমেজ বা ভাবমূর্তি নেই।
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক তো দূরের কথা সংযোগও নেই। প্রভাবশালীদের মধ্যে এমন কাউকে কোথাও পাঠানো যাবে না, যার কথাবার্তা শুনে কিংবা চেহারা অবলোকন করে সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হয়ে তাদের কথায় ভোট দেবেন। ফলে তাদের যে প্রভাব তা সর্বদাই ব্যবহৃত হচ্ছে দল ও সরকারের বারোটা বাজানোর জন্য। এটা আমার কথা নয়, বৈজ্ঞানিক সূত্র। অর্থ্যাৎ কোন শক্তি কখনো আবদ্ধ করে রাখা যায় না।
শক্তি যদি পক্ষে ব্যবহৃত না হয় তবে তা বিপক্ষে ব্যবহৃত হতে বাধ্য।
সার্বিক অবস্থায় ৪টি সিটি কর্পোরেশনে যা হবার তাই হয়েছে। জনগণকে দোষারোপ না করে আমরা যদি নিজেদের দিকে তাকাই তাহলে আগামী দিনের ফলাফল ভালো হবে। অন্যদিকে একে অপরের দিকে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করলে পরিনামে ক্ষতি আমাদেরই হবে
http://dnewsbd.com/single.php?id=34678 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।