আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই ভাই ও ভূতের গল্প

ভালো নেই । এই বছরটা মনে হয় খারাপের মধ্যেই যাবে । আমাদের ক্লাসে ক্লাসের ফাকে প্রায়ঃশই একটা আড্ডা জমে । বলতে গেলে রীতিমত মাছের বাজার হয় । সেই খানে মাছ ব্রিক্রির মত হাক-ডাক ছেড়ে জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গল্প শেয়ার করে কেউ কেউ ।

এই কেউ কেউ দলে আছে সুজন-সুমন দুই ভাই । বেশ গপ্পোবাজ । দুই ভাইয়ের একই স্বভাব । কেউ কেউ বলে দুজন ভাই হওয়াতে বেশ মিল হয়েছে । আমাদের ক্লাসে তারা রোজ রোজ গল্প শোনায় ।

দুজনই দাবী করে এগুলো গল্প নয় স্রেফ নিজেদের জীবনের ঘটনা । তবে অনেকেই হেসে ফেলে বলে- আরে যা , তোদের এই সব গল্প যে বিশ্বাস করে সে পাগল বা মাতাল ছাড়া আর কেউ নয় । সুমন মেনে নিলেও সুজন ক্ষেপে যায় । এই বিষয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে একটা অমিল দেখা যায় । বিষয়টা হল এক ভাই শান্ত অন্য ভাই রাগী ।

সেই রাগীটা হল সুজন । সে ক্ষেপে বলে- তোরা বিশ্বাস না করলে আমাদের কোন ক্ষতি নেই । আর বিশ্বাস করলেও আমাদের কোন লাভ নেই । আমরা আমাদের গল্প শেয়ার করলাম- যেটা তোরা চাস । যেদিন বলবি যে ,সুজন আর সুমন তোদের এসব বানোয়াট গল্প শুনব না সেদিন তোদের আর গল্প শোনাবো না ।

মুখে তালা এটে আমরা দুভাই তোদের গল্পই শুনব । বলে দিলাম । সুজন এরকম করে বলায় আমরা কেউ কেউ তাদের গল্প বিশ্বাস করে ফেলতে বাধ্য হই । তাদের বলা যেসব গল্প আমি নিজে বিশ্বাস করেছি তার মধ্যে একটি হল- সুমন আর সুজনকে ভূতে তাড়া করা । এত নিখুতভাবে বলেছে যে না বিশ্বাস করে কোন উপায় নেই ।

গল্পটা সুজন আর সুমনের মুখ থেকেই শোনা যাক। প্রথমেই সুজন বলে -শোন, গত ফাইনাল পরীক্ষার ছুটিতে আমি আর সুমন গেছি নানু বাড়ি । নানু আমাদের অনেকদিন পরে দেখে খুশীতে আটখানা । আমাদের জন্য পিঠা-পায়েস কত কিছু বানাল । খেতে খেতে আমার সুমনের পেট ফুটবল হয়ে গিয়েছিল ! এবার সুমন বলে- হ্যারে ভাই, অনেক খেয়েছিলাম ।

সুজন আবার গল্প বলা শুরু করে - তারপর সারাদিন শুয়ে কাটালাম । কিন্ত বিকেলের দিকে আর ভালো লাগছিল না । চিন্তা করছিলাম আমি আর সুমন বাইরে যাবো । নিশাত নামে আমাদের এক সহপাঠী প্রশ্ন করল, “বাইরে মানে কোথায় ? বুঝতে পারিনি । ” সুজনের হয়ে সুমন জবাব দেয়- আরে ! বাইরে বুঝিস না ? আমরা বাড়ির বাইরে ঘুরতে যাবো বলে ঠিক করেছিলাম ।

এবার সুজন বলতে শুরু করে- শোন, আমরা জানতাম না যে আমাদের কত বিপদ সামনে রয়েছে । আমরা নানুর কাছে বলে বাইরে ঘুরতে বেরুলাম । কাছেই ছিল বড় একটা খাল । খালের পানিতে ঢিল ছুড়েই কাটিয়ে দিলাম বিকাল । সন্ধা হয়ে কখন রাত হয়ে গেল টেরই পেলাম না ।

বাড়ীতে যাওয়া দরকার । কিন্তু আমরা শত চেষ্টা করেও বাড়ি যাওয়ার পথ খুজে পেলাম না । সব দেখি কালো অন্ধকার । আমি আর সুমন ভয়ে কাদতে লাগলাম । হঠাৎ দেখি একটা ছোট ছেলে হারিকেন হাতে হেটে হেটে যাচ্ছে ।

আমরা বুঝতে পারলাম এটাই আমাদের বাড়ীতে যাওয়ার রাস্তা । এক দৌড়ে আমি আর সুমন সে রাস্তা ধরে হাটতে থাকি সেই ছেলেটাকে অনুসরন করে । হঠাৎই আমরা খেয়াল করি আমরা যাকে অনুসরন করছি সে ছোট ছেলে নয় একটা বুড়ো লোক । আমি আর সুমন তো অবাক । আমরা নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ।

‘ লোকটার দাড়ি ছিল । ধবধবে সাদা দাড়ি ’ সুমন আরো যোগ করে । সুজন তার কথা টেনে এনে বলে- হ্যা, লোকটার ইয়া বড় দাড়ি ছিল । ধবধবে সাদা । আমরা তবুও লোকটাকে অনুসরন করছিলাম ।

হঠাৎ লোকটা থেমে যায় । আমাদের দিকে ঘুরে দাড়ায় । আমার আর সুমনের চোখ লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে বড় বড় হয়ে যায় । লোকটার দুচোখ আগুনের মত লাল । মুখে দুটি লম্বা দাত ।

বুঝলাম ভূতের পাল্লায় পড়ে গেছি । ভূতটি আমাদের দিকে উড়ে আসতে লাগল । আমরা পেছনে প্রান-পণ ছুট দিলাম । হঠাৎই আমরা দুজন জ্ঞান হারালাম । সকালে খালটার একটু দূর থেকে আমাদের অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।