ম্যাঅ্যাও. একটি নিষ্পাপ শব্দ
মানুষের একটা চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য হল তাদের মনের বোধকে চরম পর্যায় নিয়ে যাওয়া। কখনো তা হয় আধ্যাত্মিক আর কখনো অতিরিক্ত। আমরা মাঝে মাঝে স্বজাতিদের প্রতি এত বেশি পক্ষপাতি হয়ে যাই যে অন্যদের ভাল জিনিসগুলো আমাদের চোখে পড়ে না এক অদৃশ্য মনের পর্দায় সব ভাল দিকগুলো আড়ালে চলে যায়। আর খারাপ দিকগুলোই শুধু রয়ে যায়। ধর্মের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়।
হিংসার আগুনেই পৃথিবীর সবগুলো ধর্মযুদ্ধ জায়গা করে নেয়।
এই ব্লগটিতে আমি অবশ্য আদিযুগ থেকে ধারন করে আশা এই মানব বৈশিষ্ট্যকে আপাদমস্তক বিশ্লেষণ করতে লিখিনি। আমি শুধু বলবো ব্যাক্তিজীবনে আমি যে সকল সমস্যার মোকাবেলা করেছি, চোখের সামনে দেখেছি বা আমার মনে প্রশ্ন এনেছে সে রকম বিষয় নিয়ে।
আগে বলে নিলাম আমার আসল নাম সৌরভ না। এমনকি আমি কাউকে উদ্দেশ্য করে এই নাম ব্যবহার করছি না।
আমি এখানে মূলবিষয়টাতে আলোকপাত করতে চাই। এদেশের এক বিরাট ধর্মপরায়ণ জনগোষ্ঠী তাদের সন্তানদের নাম আরবিতে রাখবার পক্ষপাতী হয় । আমি ওখানে আপত্তি করবো না, বরং শ্রদ্ধা জানাব। তবে যখন কথা আসে একটা নামের ধর্মীয়করন করায় তখন অবশ্যই তা বিশ্লেষণ করে দেখার প্রয়োজন পড়ে। একটা নাম তখনি ধর্মের সাথে যুক্ত করা যায় তখন তা ধর্মীয় কোন মূলনীতি, ঘটনা, বিষয়বস্তু বা অন্য যেকোনভাবে সম্পর্কযুক্ত।
এখন কারো নাম যদি আব্দুর রহমান, আব্দুর রহিম হয়ে থাকে তাহলে তার নামের সাথে ইসলাম জুরে যায় কেননা এই নাম তাওহীদের সাক্ষ্য বহন করে। জানিনা যার নাম রাখা হয়েছে সে জীবনের শেষ পর্যন্ত এই মহামূল্যবান বিষয়টি বিশ্বাস করে আসবে নাকি বা শুধু নামের কারনে সে যখন পাপ থেকে বিরত থাকবে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন নাম মানুষের চরিত্রের পিছনে ভাল প্রভাব ফেলে। হাদিসে আছে আল্লাহ আব্দুর রহমান, আব্দুর রহিম এ নাম গুলো পছন্দ করে (সহিহ বুখারি) তবে মহান আল্লাহ নামের সীমাবদ্ধতা দেননি। কারন তিনি সর্বজ্ঞানী, আল্লাহ জানেন সবাই এক ধরনের নাম রাখলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
।
ধরুন এক ক্লাসে ১৫০ জন ছাত্র সবাই মুসলিম, এখন ১০০ জনের নাম হাদিসে বর্ণিত শব্দ অনুযায়ী। তাহলে একজন ছাত্রকে সনাক্ত করার জন্য রোল হয়তো কাজে দিবে। তবে মানুষ বা সত্ত্বাকে সনাক্ত করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। তখন নামের চেয়ে রোলের সার্থকতা বেশি এসে পড়বে।
খেতাবি নাম ( যা কিনা কবিরা গুনাহ) রাখা বেড়ে যাবে। তাহলে বুঝা গেল নামের মাঝে বৈচিত্র্য আনা যায়। এখন নামে যে শুধু আরবি ভাষার ব্যবহার করতে হবে এমন কোন কথা নেই। তুমি আরবি নাম রাখ বা বাংলা সমস্যা নেই। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফ আর ইসলামের জন্য আলাদা ভাষার ব্যবস্থা করেননি।
বরং মানুষের ভাষাতেই দিয়েছেন যেন মানুষ তা বুঝতে পারে। এখানে বুঝতে পারা, অনুভব করতে পারাই মূল লক্ষ্য। ভাষা বা ধর্ম কেউ কারো উপর নির্ভরশীল না। ভাষা থাকে মনে আর ধর্ম থাকে বিশ্বাসে।
এখন আসি হিন্দু নামের ব্যাপারে।
এমন কিছু যা হিন্দু ধর্মীয় রীতি-নীতি, পৌরাণিক চরিত্র, মৌলিক বিষয়ের সাথে মিলে তা হিন্দু নাম হিসেবে বলা যায়। যেমনঃ কৃষ্ণ,রাম, পূজা ইত্যাদি। অবশ্যই এই নাম গুলো একজন মুসলিমের এমনকি অন্য ধর্মের ব্যবহার করা ঠিক হবে না। কেননা ইসলামের ক্ষেত্রে এসকল নাম শিরকের মত অমার্জিত পাপ হিসেবে দেখা হয়। আবার সাধারন চিন্তায় দেখলে কেউ এক ধর্মের মানুষ হয়ে অন্য ধর্মের নাম রাখলে সেটা নিজধর্মকে ছোট করার সামিল হয়।
শুধু মুসলিম না আমি যেকোন ধর্মের ক্ষেত্রেই এই কথা বলছি।
এখন আমাদের দেশে বাংলা নামের পিছনে কিছু মানুষের অ্যালার্জি আছে। শুভ, মানিক, মিথিলা,নীতি,স্বাধীন, সৌরভ, জীবন ইত্যাদি যা মুলত কোন কোন ধর্মকে প্রকাশ করে না, তবে অর্থবহ; এগুলা দেখলে তারা ভ্রুকুচি করে। যদিও বাংলায় কথা বলার সময় তাদের বিবেগ ইসলাম বলে চিৎকার করে উঠে না। আবার ইংরেজি নামের পিছনেও আছে তাদের অ্যালার্জি।
যেখানে মানুষের নাম নির্বাচনে স্বাধীনতা দেয়া আছে তখন কেন এই জায়গায় বাড়াবাড়ি করে আমি জানি না।
এটা আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, আমি কাওরে ছোট করা বা অনুভুতিতে আঘাত আনিনি, এটা আমার বিশ্বাস। কেননা, এটা আমার কাছে গোঁড়ামি মনে হয়, ধর্মপরায়নতা না, বিবেগবান সবাই এটা বুঝে।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক অনুসন্ধানলিপ্সু। প্রকৃতি, ধর্ম, বিজ্ঞান ও মানুষ সম্পর্কে আমার অনেক কৌতূহল।
তাই মানুষদের জিজ্ঞেস করে আমি বিরক্ত করে ফেলি। আমার FAQs এর মধ্যে " আপনার নামের অর্থ কি? " এই কথাও আছে। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় অনেকে নিজের নামের অর্থ জানে না। এটাকে আমি ধর্মীয় নাম, বা বাংলায় রাখা দাঁত ভাঙ্গা নামের ব্যাপারে বলছি না। বলছি কিছু সাধারন ধারনার কথা।
আমরা যে নামই রাখি তা আমাদেরকে প্রতিনিধিত্ব করে, আমার সত্ত্বাকে বহন করে। আমাদের নাম ধর্মীয় দিক থেকে হোক, আরবি হোক, বাংলা হোক বা অন্য কিছু হোক তা যেন হয় অর্থবহ, আমাদের জ্ঞেত; যাতে আমরা এর থেকে কিছুটা হলেও ভাল কিছু করার উদ্যম পাই, নামের সার্থকতার ওজুহাতে যেন আমরা নিজেদের আরও ভাল মানুষ বানাতে পারি। ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।