মরণ আমার ভালো লাগে
সঙ্গীতাচার্য (পণ্ডিত) তারাপদ চক্রবর্তী (এপ্রিল ১, ১৯০৯ - সেপ্টেম্বর ১, ১৯৭৫), ছিলেন হিন্দুস্থানি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে 'কোটালি ঘরানা'র প্রাণপুরুষ, অবিভক্ত বাংলার প্রধান সঙ্গীতজ্ঞ ও সঙ্গীত গুরু।
অধুনা বাংলাদেশের, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ায় সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তীর পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস এবং সেখানেই তাঁর জন্ম ও শৈশব। কোটালিপাড়া নাম থেকেই 'কোটালি ঘরানা'র নামের উৎপত্তি। তারাপদ চক্রবর্তী ছিলেন তাঁর পরিবারের ও ঘরানার ৪র্থ সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁর বাবা (পণ্ডিত কুলচন্দ্র চক্রবর্তী) ও কাকার কাছেই তাঁর সঙ্গীতে তালিম শুরু।
তাঁর কাকা, ন্যায়রত্ন রামচন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন নাটোরের মহারাজার দরবারের 'দ্বার পণ্ডিত' ও 'সভা গায়ক'। শৈশব অতিক্রান্ত হলে তিনি কোলকাতায় চলে যান ও গোয়ালিয়র ঘরানার পণ্ডিত সাতকড়ি মালাকারের কাছে ও পরে, আগ্রা, দিল্লী, বেনারস ও আরও অনেক ঘরানায় শিক্ষিত পণ্ডিত গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে তালিম নেন।
১৯২৯ এ, ২০ বছর বয়সে তিনি কলকাতার আলবার্ট হলে প্রথম উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করেন ও তিরিশের দশকের শুরুতে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে শিল্পী হিসাবে যোগদান করেন। ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি লিজেন্ডারি সঙ্গীতজ্ঞ রাইচাঁদ বড়ালের নজরে পড়েন ও রাইচাঁদ বড়ালের পরামর্শে তিনি কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশনার বদলে তবলা সঙ্গত করতে থাকেন। তাঁর বহু প্রতীক্ষিত সুযোগটি আসে, যখন একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানে, সঙ্গীতজ্ঞ জ্ঞানেন্দ্র প্রসাদ গোস্বামী, অসুস্থতার কারনে অংশগ্রহন করতে ব্যর্থ হন।
রাইচাঁদ বড়াল তখন জ্ঞান গোঁসাইয়ের মতো সঙ্গীতজ্ঞের স্থানে তরুন তারাপদকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করার সুযোগ দেন। তারপর সবটুকুই ইতিহাস। তাঁর সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এবং তিনি সারা ভারত জুড়ে কিংবদন্তীর সঙ্গীতশিল্পী, উস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান, উস্তাদ আব্দুল করিম খান, উস্তাদ ফৈয়াজ খান, পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ঠাকুর প্রমুখের সাথে সঙ্গীত পরিবেশন করতে থাকেন। উস্তাদ আব্দুল করিম খান, উস্তাদ ফৈয়াজ খান, পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ঠাকুর তাঁর গুণমুগ্ধ হন এবং তাঁকে অবিভক্ত বাংলায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রধানপুরুষ হিসাবে স্বীকৃতি দেন।
পণ্ডিত তারাপদ চক্রবর্তী, এভাবেই তাঁর জীবদ্দশায়ই কিংবদন্তীতে পরিণত হন।
সঙ্গীত পরিবেশনের পাশাপাশি তিনি সঙ্গীত সাধনা ও শিক্ষাদানে মনোনিবেশ করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে কোটালি ঘরানার সঙ্গীত অন্য মাত্রায় উন্নীত হয়। তিনি একইসাথে ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল, টপ্পা, ঠুমরীতে প্রভূত বুৎপত্তি অর্জন করেন। তিনি 'অতি বিলম্বিত একতাল' উদ্ভাবন করেন।
বিবিধ ঘরানার প্রভাব ও নিজের সঙ্গীত সাধনার ফলশ্রুতিতে তিনি একটি স্বতন্ত্র গায়কী রপ্ত করেন, যাকে এখন 'কোটালি গায়কী' বলা হয়। তিনি বাংলা খেয়ালের ও রাগপ্রধান সঙ্গীতের প্রবর্তক ও আদিপুরুষ। এছাড়াও তিনি লোকগীতি, ভজন, কীর্তন ইত্যাদিও গেয়ে থাকতেন। তিনি একইসাথে একজন কবিও ছিলেন এবং অনেক খেয়াল ও ঠুমরীর বন্দিশ কম্পোজ করেছিলেন। সঙ্গীত নিয়ে 'সুরতীর্থ' নামে তাঁর একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রয়েছে।
তিনি অদ্যাবধি সঙ্গীতের অন্যতম প্রধান গুরু, তথা 'সঙ্গীতাচার্য' হিসাবে সর্বজনস্বীকৃত।
তাঁর সঙ্গীত জীবনে, তিনি বিশ্বভারতী পুরস্কার, সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার সহ নানাবিধ সম্মমনায় ভূষিত হয়েছেন। তিনি একইসাথে, শিল্পিসুলভ অভিমানীও ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ভারত সরকার তাঁকে ভারতের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রীয় 'পদ্মশ্রী' খেতাবে ভূষিত করে। কিন্তু কোনও বিচিত্র ও অজানা কারনে সেই খেতাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
সেপ্টেম্বর ১, ১৯৭৫ এ সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তী পরলোকগমন করেন। তাঁর অবর্তমানে তাঁর সুযোগ্য পুত্র, পণ্ডিত মানস চক্রবর্তী ও কন্যা শ্রীলা বন্দ্যোপাধ্যায়, এখন কোটালি ঘরানার যথাযোগ্য প্রতিনিধিত্ব করছেন।
সঙ্গীতাচার্য (পণ্ডিত) তারাপদ চক্রবর্তী - রাগপ্রধান সঙ্গীত
কোয়ালিটি - ১৬০ কেবিপিএস এমপি৩
ফাইল সাইজ - ৩৭ মেগাবাইটস
ডাউনলোড - সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তী - রাগপ্রধান সঙ্গীত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।