আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কূলাঙ্গার কুলদীপ নায়ারের অবিভক্ত ভারতের স্বপ্নদোষ (ভাদা ও ভাকুরদের গাত্রদাহ)।

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয় কুলদীপ নায়ারকে বলছি: অবিভক্ত ভারতের স্বপ্ন-বিলাস ত্যাগ করুন - মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন (কপি পেষ্ট)। ১৬ নভেম্বর (২০১২) বাংলা একাডেমীর নতুন মিলনায়তনে ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার’এর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘বিয়ন্ড দ্য লাইন্স’-এর প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে লেখকের কিছু বক্তব্যকে অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত ও উদ্ভট বলে মনে হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিকভাবেই মীমাংসিত বিষয়কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামনে এনে কুলদীপ নায়ার কেবল নিজেকে বিতর্কিতই করেন নি, বরং উপমহাদেশে সংঘাত সৃষ্টির নতুন ফ্রন্ট খোলার দুরভিসন্ধি প্রকাশ করেছেন। এর আগেও কোন কোন ভারতীয় এ ধরনের স্বাপ্নিক আবদার করেছিলেন। ‘ডেইলি স্টার’ আয়োজিত ঐ অনুষ্ঠানে কুলদীপ নায়ার ‘ভারত-পাকিস্তানের দেশ ভাগ একটি ভুল পদক্ষেপ’ ছিল বলে মন্তব্য করে প্রস্তাব দিয়েছেন, ‘হিন্দু, মুসলিম, ভারতীয়, পাকিস্তানি— এসব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে এখন আমাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো ঐক্যবদ্ধ একটি দক্ষিণ এশিয়া গড়তে হবে।

মিঃ নায়ার ফতোয়া দেয়ার মুখ আপনাদের নেই। কট্টর হিন্দুত্ববাদী চেতনা থেকেই আপনি এখন হিন্দু-মুসলিম পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠার কথা বলছেন। আগে আপনারা হিন্দু পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠুন। আপনারাই প্রথম মুসলিম-বিরোধী ভূমিকায় নেমেছিলেন। মুসলিমদেরকে আপনাদের পায়ের তলায় রাখার উদ্দেশ্যে মুসলমানদের ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন ব্যর্থ করার জন্য ব্রিটিশদের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন।

কারণ উপমহাদেশে আপনারই ছিলেন ব্রিটিশদের চর - ব্রিটিশ শাসনের আপনারাই ছিলেন বেনিফেশিয়ারী, ব্রিটিশ শাসন প্রবম্বিত করার দোসর। শহীদ তিতুমীরের জমিদার বিরোধী সংগ্রাম, সিপাহী বিদ্রোহ, প্রভৃতিকে ব্যর্থ করতে কারা ব্রিটিশদের পক্ষালম্বন করেছিল? অন্যদিকে মুসলমানদের স্বাধীনতার প্রেরণাকেও আপনারা স্বীকার করতেন না। তার প্রমাণ ‘অনুশীলন সমিতি’। ‘অনুশীলন সমিতি’তে একজন মুসলমান সদস্যের নামও আপনি খুঁজে পাবেন না। তৎকালীন নোয়াখালী জিলা স্কুলের ছাত্র সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহ (সাহিত্যিক) ও মুজাফ্ফর আহমদ (মার্কসবাদী) সূর্যসেনের কাছে কাছে গিয়ে অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলে তাদেরকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, কোন মুসলমানকে ঐ দলে নেয়ার সুযোগ নেই ।

আর ঐ দলে ঢুকতে হলে ‘মা কালি’র নামে শপথ নিতে হবে। তারা দুজনই ব্যর্থ মনে সূর্য সেন-এর কাছ থেকে ফেরত আসেন। অনুশীলন সমিতির উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুশাসিত অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠিত করা। এটা ছিল চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠন। তা হলে বুঝুন সাম্প্রদায়িকতার বীজ তথা মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির দাবির জন্য সম্পূর্ণরূপে কারা দায়ী।

আপন কি স্মরণ করতে পারেন অবহেলিত পূর্ব-বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিকল্পে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব-বাংলা ও আসাম প্রদেশ গঠন করলে বাংলার অখণ্ডতার ভাওতা দিয়ে বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য আন্দোলন করে কারা উপমহাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার উন্মেষ ঘটায়? নতুন প্রদেশ হলে মুসলমানরা উপকৃত হবে, তাই বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য আপনারা মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গা শুরু করেছিলেন। অখণ্ড স্বাধীন ভারতে মুসলমানদেরকে ন্যূনতম অধিকার দিতে অস্বীকার করে কারা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার দাবি তুলতে বাধ্য করেছিল? কারা জিন্নার ১৪-দফাকে অস্বীকার করেছিল? আপনারা অস্বীকার করেছেন ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা - যেখানে ভারতকে অবিভক্তি রেখে তিনটি স্ব-শাসিত ইউনিট গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়, যে প্রস্তাব কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ মেনে নিয়েছিল। কিন্তু পরে সবাইকে বিস্মিত করে নেহেরু’র কারণে কংগ্রেস সে প্রস্তাব থেকে সরে আসে। কংগ্রেস ঐ প্রস্তাব অস্বীকার করার কারণেই ব্রিটিশদের পক্ষে ভারতকে বিভক্ত করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। আপনারা কট্টর হিন্দু হয়ে আমাদের মতো উদার মুসলমানদেরকে ছবক দিচ্ছেন মুসলিম পরিচয় ভুলে যেতে।

আপনার এ উপদেশটিও হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতা দোষেদুষ্টু। এসব ইতিহাস কাদেরকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে প্রমাণ করে? হিন্দু না মুসলমানদেরকে? ১৯০৫ সনে আপনারা অখণ্ড বাংলার জন্য জান-কোরবান ছিলেন। কিন্তু ১৯৪৭ সনে ভারত ও পাকিস্তানের বাইরে অখণ্ড স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা গঠনের জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশেম, শরৎবসু, কিরণ শংকর রায় প্রমুখের উদ্যোগকে আপনারাই ব্যর্থ করেছিলেন? আপনাদের নেহেরু শর্ত জুড়ে দিলেন ভারত ভাগ করতে হলে পাজ্ঞাব ও বাংলাকে অবশ্যই ভাগ করতে হবে, যাতে খণ্ডিত পাজ্ঞাব ও বাংলার যে অংশ পাকিস্তানে যোগ দেবে, তা অচিরেই ভারতের সাথে মিশে যেতে পারে। গত ৪১ বছরে আপনাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কর্মকাণ্ড এবং সর্বশেষ আপনার ফতোয়া প্রমাণ করে ১৯৭১ সনে আপনারা সে উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিলেন। আপনাদের লক্ষ্য ছিল মুসলিম শক্তিকে দুর্বল ও ধবংস করা এবং ধীরে ধীরে আমাদের ভূখণ্ড দখল করা।

আপনাদের উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের সৈন্য চিরকাল বাংলাদেশে মোতায়েন রাখা। আর বাংলাদেশ তাৎক্ষণিক আপনাদের পেটে না ঢুকলেও পতাকা-সর্বস্ব করদরাজ্যে পরিণত করা। আমরা সে চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছি। এখন অন্যভাবে প্রস্তাব রাখছেন। আমরা বুঝি এটা একান্তভাবেই আপনার ব্যক্তিগত প্রস্তাব নয়।

এটা হিন্দুত্ববাদী চেতনার বর্হিপ্রকাশ। আগে আপনারা দেখান আপনারা কট্টর হিন্দুত্ববাদী চেতনা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আপনারা মুখে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে বাস্তবে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। গত ৬৫ বছরে ভারতীয় মুসলমান, বিশেষত কাশ্মীরীদের সাথে, শিখদের সাথে, এমনকি হিন্দু হওয়া সত্বেও দলিত- হরিজনদের সাথে যে আচরণ করেছেন, সর্বোপরি ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশের সাথে যে আচরণ করেছেন, তাতে প্রমাণিত হয়েছে, আপনাদের মতো কট্টর সাম্প্রদায়িক বর্তমান বিশ্বে আর নেই। ব্রিটিশ আমলে আপনারা যতোখানি সাম্প্রদায়িক ছিলেন, ’৪৭ সনের পর থেকে আপনাদের সাম্প্রদায়িক হিংস্রতা হাজারগুণ বেড়েছে।

আপনাদের সাম্প্রদায়িক হিংস্রতা, মুসলিম-বিদ্বেষ এবং মুসলিমদের পায়ের নিচে রাখার মানসিকতার কারণেই ১৯৪৭ সনে পূর্ব-বাংলার মুসলমানরা ভারতের পরিবর্তে পাকিস্তানের সাথে গিয়েছিল। ১৯৪৭ সনে আপনাদের সাথে না গিয়ে আমাদের পূর্ব-পুরুষরা সঠিক কাজটি করেছিলেন বলেই ১৯৭১ সনে আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ‘এক নদী রক্ত’ পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অধিকারী হয়েছি। সেদিন পাকিস্তানের পরিবর্তে আপনাদের সাথে মিশে গেলে আমাদের অস্তিত্ব থাকতো না। শেখ মুজিব তৈরি হতো না। বাংলাদেশ নামক কোন দেশ হতো না।

হতো না প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ সুপ্রিমকোর্ট। এতো মন্ত্রী এমপি আমলা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিল্পপতি শিল্পী-সাহিত্যিক কবি সাংবাদিক হতো না। হতো না এতোগুলো বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, হাজারো ধরনের প্রতিষ্ঠান। এমনকি আপনার বই প্রকাশের জন্য ‘ডেইলি স্টার’ নামক পত্রিকাও হতো না, কিংবা মাহফুজ আনাম অথবা মতিউর রহমান নামক সাংবাদিকের অভ্যুদয়ও ঘটতো না। আমরা সিংহ ভাগই হতাম আপনাদের দিন-মজুর, কুলি, ঝি-চাকর, দর্জ্জি, জুগালি রাজমিস্ত্রী, কাঠমিস্ত্রী, দারোয়ান, বড় জোর প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক - যেমনটি হয়েছেন পশ্চিম বাংলাসহ ভারতীয় মুসলমানরা।

প্রায় এককোটি বাংলাদেশী বিদেশে যেতে পারতো না, যেমনটি পারছে না পশ্চিম বাংলাসহ আপনাদের দখলে থাকা আমাদের প্রতিবেশি সাতটি রাজ্যের অধিবাসীরা। আমাদের ঘরে ঘরে টিভিসেট, ফ্রিজ, হাতে হাতে মোবাইল ফোন, গ্রামে গ্রামে পাকা সড়ক - এ সব কিছুই থাকতো না আপনাদের সাথে যোগ দিলে। সর্বোপরি আপনার এমন অর্বাচীন ফতোয়ার জবাব দেয়ার মতো, এ চক্রান্ত প্রতিহত করার জন্য আমার মতো লাখ লাখ জয়নাল আবেদীনের অভ্যুদয় হতো না। এখন তথাকথিত অখণ্ড ভারতে যোগ দিলে পরবর্তী ৬৫ বছরে আমাদেরকে আবার ’৪৭-পূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। আমাদের সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে ২০ আগস্ট (২০০৪) সনে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সার্বজনীন পূজা উদযপান কমিটির সভায় সংগঠনটির জনৈক কর্মকর্তার ক্ষোভ আপনাকে জানাতে চাই। তিনি বলেছেন, হিন্দুদের বাড়িঘরে এখন আর মুসলিম চাকর-বাকর পাওয়া যায় না। মুসলিমরা এখন আর আমাদের বাড়িতে কাজ করতে চায় না। এই দুঃখজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ১৯৪৭ সনের পর থেকে। (দৈনিক ইনকিলাব, ২১ আগষ্ট, ২০০৪)।

মিঃ নায়ার, উপরোক্ত বক্তব্যটি স্বব্যাখ্যেয়। আপনাদের এদেশীয় প্রতিনিধিদের দুঃখবোধ অবমোচন তথা আমাদেরকে ’৪৭-পূর্ব গোলামির যুগে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই আপনি কথিত দক্ষিণ এশীয় ইউনিয়নের অর্থাৎ অখণ্ড ভারতের ফতোয়া নতুন করে সামনে এনেছেন। মূলকথা হচ্ছে আমরা সুখে আছি এটা আপনারা মেনে নিতে পারছেন না। আপনাদের মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের স্বাধীনতা-সুখ-সমৃদ্ধি সইতে পারছে না। আপনাদের মতে পূর্ব-বাংলার চাষাভূষার ছেলেরা স্বাধীন কিংবা সুখে থাকবে কেন? তাই আমাদের ওপর হাজারো ধরনের সমস্যা দুর্যোগের পর দুর্যোগ চাপিয়ে দিচ্ছেন, যাতে আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারি।

আপনারা সৎপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করলে আমরা এখন সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেতাম। অন্যদিকে আপনাদের ভয় আমরা সমৃদ্ধি অর্জন করলে আমাদের তিনদিকে থাকা আপনাদের রাজ্যগুলোর শোষিত বঞ্চিত অবহেলিত জনগণও স্বাধীনতার জন্য গর্জে উঠবে। ওদের স্বাধীনতা ঠেকানো জন্য আপনারা নানা ফ্রন্টে আমাদের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের মূল লক্ষ্যই হলো আমাদের দেশকে গিলে ফেলা, আমাদেরকে আবার ’৪৭-পূর্ব মুটে-মজুরে পরিণত করা। তা’হলেই আপনাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে চায় এমন রাজ্যগুলোর মুক্তিযুদ্ধ আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যাবে।

আর সে লক্ষ্যেই কথিত অখণ্ড ভারতের তথা গোলামীর প্রস্তাব রেখেছেন। আপনারা কখনই মুসলমানদের বন্ধু হতে পারবেন না। । মুসলিম-বিরোধী সাম্প্রদায়িকতার খোয়াড় থেকে আপনারা কখনই বেরিয়ে আসতে পারবেন না। কারণ মুসলিম-বিরোধী সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করেই হিন্দু জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উজ্জীবিত রেখে আপনারা ভারতকে বাহ্যিকভাবে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন ।

মনস্তাত্তিকভাবে ভারত বহু আগেই ভেঙ্গে গেছে। তাই জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়েছেন এবং মুসলিম বিরোধিতাকে ভারতকে অখণ্ড রাখার মহৌষধ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। মুসলিমবিরোধী চেতনার অবসান হলে আপনারা নিজেদের মধ্যেই শত্র“ খুঁজবেন। আপনাদের এতোশত জাত-পাত-বর্ণ-ভাষা-উপভাষা-আঞ্চলিকতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষ এমন প্রবল যে, ভারত কয়েকটি টুকরায় বিভক্ত হওয়াই হচ্ছে তার একমাত্র সমাধান। তাই মরহুম অখণ্ড ভারতকে জীবিত করার প্রস্তাব তাই বালসুলভ স্বপ্নবিলাস।

আপনি আত্মজীবনীতে ইতিহাস তুলে ধরেছেন। আগে ভারত বিভক্তির কারণগুলো একেবারে নিরপেক্ষভাবে লিখুন, লিখুন গত ৬৫ ধরে ভারতীয় মুসলমানদেরকে কিভাবে ঠকাচ্ছেন, বঞ্চিত রাখছেন, হত্যা করেছেন এবং এখনো করছেন। এ পর্যন্ত কতো হাজার দাঙ্গা ঘটিয়েছেন, মুসলমানদের কতো মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান আপনারা দখল করেছেন? কতো হাজার মুসলমানকে মিথ্যে অভিযোগে বছরের পর বছর জেলে আটকে রেখেছেন? মুসলমানরা ভারতের সর্বত্র আজানের সময় মাইক ব্যবহার করতে পারে কি? গরু জবাই করতে পারে কি? মুসলমানরা ভারতের কোন গ্রেডের নাগরিক - তৃতীয় না চতুর্থ? সরকারী চাকরিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব কতো? এসব ইতিহাস আপনার আত্মজীবনীতে স্থান পেয়েছি কি? এখনো যে সারা ভারতে প্রতি দিন প্রতি ক্ষণে মুসলমানরা নির্যাতিত-নিপীড়িত এমনকি আহত নিহত হচ্ছে সেগুলো স্বীকার করছেন না কেন। যে মুহূর্তে আপনি মরহুম অখণ্ড ভারত পুনর্জীবিত করার কাল্পনিক তত্ত্ব ঢাকায় আপনাদের খয়ের খা’দের সামনে বয়ান করছিলেন, ঠিক সে সময়ে আসামে এবং আপনাদের দখল করা হায়দারাবাদে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা চলছিল। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা, মসজিদ ভেঙ্গে আবার মুসলিম হত্যার উৎসব, শিখদের স্বর্ণমন্দির আক্রমণের ঘটনা আপনি দেখেন নি, আপনার আত্মজীবনীতে - চাটুকারদের ভাষায় কথিত এনসাইক্লোপেডিয়ায় - এ ধরনের হাজারো করুণ কাহিনী স্থান পায় নি, কারণ আপনারা সে ইতিহাস লুকাতে চান।

আপনাদের কালো অধ্যায়, আপনাদের কথিত মহাত্মার ভেতরে কুআত্মার আবাসস্থল, সেগুলোকেও সামনে আনুন। আপনারা কখনোই তা করবেন না। মুসলমানদের কথা না হয় বাদই দিলাম। বাংলাদেশের যে অংশটি পশ্চিম বাংলা নামে আপনাদের সাথে আছে, যেখানে ৭৫ ভাগ অধিবাসীই হিন্দু, সে পশ্চিম বাংলার অবস্থা কেমন? ব্রিটিশ শাসনের অবসানের সময় পশ্চিম বাংলা ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ও সর্বাধিক শিল্পায়িত প্রদেশ ছিল? আজ তার এমন দৈন্যদশা কেন? আপনাদের রাজিব গান্ধী কলিকাতাকে মৃত নগরী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। পশ্চিম বাংলা এখন কার দখলে? কারা কলিকাতার মূল চাবিকাঠির মালিক - বাঙালীরা - নাকি অবাঙালীরা? তাদের শিল্প-কারখানা, দোকানপাট, এমনকি ঘরবাড়ির মালিকানা কার হাতে? বাংলা ভাষা সেখান থেকে পালাচ্ছে কেন? কলিকাতা শহরের ভাষা কোনটি - বাংলা না কী হিন্দি? সেখানকার সিনেমা হলে বাংলা ছবি ঠাঁই পায় কি? বাঙালীরা কেন দিন মজুরী করার জন্য অন্য রাজ্যে হিজরত করছে? তারা তো হিন্দু, আপনাদের মতোই মুসলিমবিরোধেী।

আপনারা ভুলে যাবেন না, আমরা এখন আর ব্রিটিশ-ভারতের অশিক্ষিত মুসলমান নই, আপনাদের চাকর-বাকর নই। এখন আপনাদের সাথে সমান বিদ্যা-বুদ্ধি নিয়ে কথা বলার যোগ্যতাসম্পন্ন বহুলোক আমাদের দেশে তৈরী হয়েছে। কিছু রাজনীতিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী , সাংস্কৃতিক কর্মীকে ক্রয় করে মনে করবেন না, বাংলাদেশ জয় করে ফেলেছেন। এরাই শেষ শেষ কথা নয়। আমাদের সামনে অখণ্ড ভারতের মূলা ঝুলাবেন না।

ভারত এতো স্বর্গ হলে গত ৬৫ বছর যাবত নাগারা যুদ্ধ করতো না। কাশ্মীরী শিশুরা পর্যন্ত ভারতীয় সৈন্যদের ওপর হামলা চালাতো না। শিখরা পাঞ্চাবকে স্বাধীন খালিস্তান ঘোষণা দিতো না। গণহত্যা চালিয়েও কাশ্মীর, পাঞ্চাব, অরুনাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যাণ্ড প্রভৃতির মানুষকে দমানো যায় নি। কখন এরা ভারত থেকে ঘসে পড়ে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করুন।

অপেক্ষা করুন তামিলদের গর্জন দেখতে। যখন আপনাদের ভারত বিশাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হবার পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়ে সে মুহূর্তে আপনি অখণ্ড ভারতের তত্ত্ব হাজির করলেন কিসের ভিত্তিতে? অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন না দেখে খণ্ডিত ভারতের হিসেব কষুন। আমাদেরকে পশ্চিম বাংলার বাঙালী মনে করলে ভুল করবেন। আমরা মুসলিম পাকিস্তান ভেঙ্গেছি হিন্দুদের গোলাম হবার জন্য নয়। আপনারা কতো ভালো মানুষ এদেশের মানুষ তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছে।

আরো বেশি বুঝেছে ভারতীয় মুসলিমরা, দলিত-হরিজনরা, কাশ্মীরী, শিখ, অহমিয়া,টিপরা, মিজো, নাগা, মুনিপুরি, বদোসহ সব আদবাসীরা। কোন বুদ্ধিমান দূরদর্শী ব্যক্তি মরহুম অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন দেখবে না। আপনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কথা বলেছেন। ইউরোপে ভারতের মতো আগ্রাসী দেশ নেই বলেই ২৭টি দেশ নিয়ে জোট গঠিত হয়েছে। তাদের কেউই দানিয়ুব নদীর পানি হতে অন্যকে বঞ্চিত করে না, কোন দেশের সীমান্তে প্রতিদিন প্রতিবেশী দেশের মানুষকে খুন করা হয় না, কোন দেশের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয় নি কিংবা প্রতিবেশীকে হত্যা করে ঐ বেড়ায় টাঙিয়ে রাখা হয় না, প্রতিবেশী দেশে অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, সন্ত্রাসী পাঠানো হয় না অথবা চর তৈরি করে তাদের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশে গাড়ি-শিল্পকারখানা-দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয় না, কথায় কথায় শিল্পাঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করে কিংবা শীতকালে আন্তর্জাতিক নদীর পানি হতে বঞ্চিত করে বর্ষাকালে সবগুলোর বাঁধ খুলে দিয়ে প্রতিবেশী দেশে প্রতি বছর একাধিক কৃত্রিম বন্যা তৈরি করে তার অর্থনীতিকে ধবংস করা হয় না।

প্রতিবেশী দেশ ভাঙার জন্য চর লেলিয়ে দেয় না। প্রতিবেশী দেশের প্রেসিডেন্টদের হত্যা করা হয় না ‘র’ নামক গোয়েন্দা সংস্থার চক্রান্তে। সুতরাং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদাহরণ টানার মতো মুখ আপনাদের নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে উদাহরণ আপনি দিয়েছেন তাও আপনাদের সাম্প্রদায়িক চক্রান্তের নীল-নকশার বহির্প্রকাশ । আপনারা এ অঞ্চলের ঐক্য চান না, এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে চান।

শহীদ জিয়াউর রহমান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি জোট গঠনের আহ্বান জানালে, কেবল আপনারাই তার বিরোধিতা করেছিলেন। শহীদ জিয়ার প্রস্তাবিত জোটের প্রস্তাবে আপনারা ভারত-বিরোধিতা তথা আদিপত্যবাদ-বিরোধী গন্ধ আবিষ্কার করেছিলেন। তাই তার জীবিত অবস্থায় অন্যান্য সবদেশ রাজি থাকলেও আপনাদের বিরোধিতার কারণে সে জোট গঠিত হয় নি। আপনাদের চক্রান্ত্রে জিয়াউর রহমান প্রাণ হারানোর পর আপনাদেরই একান্ত অনুচর স্বৈরাচারী এরশাদকে ক্ষমতায় এনে আপনাদের সুবিধা তথা নীল-নকশা অনুযায়ী অথর্ব সার্ক গঠন করেছেন, আপনাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে। শর্তজুড়ে দিয়েছেন সার্কের যেকোন সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হতে হবে।

এ শর্তের কারণে আপনাদের এজেন্ডা নীল-নকশার বাইরে কোন সিদ্ধান্ত সার্ক গ্রহণ করতে পারে না। ফলে সার্কের মূল চেতনায়ই বিলুপ্ত হয়েছে, সার্ক একটি বার্ষিক বনভোজন তথা খানাপিনা ও গল্পগুজবের, সর্বোপরি আপনাদের চর তৈরীর, আড্ডায় পরিণত হয়েছে। এখন সার্কের ওপর ভর করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে আপনারা পণ্য বিক্রি, এমনকি সৈন্য মোতায়েন করার ব্যবস্থা করছেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদেরকে আর বিশ্বাস করবে না। কিছু কেনা গোলামকে ব্যবহার করে, চক্রান্তের জাল বিস্তার করে, কিংবা সামরিক অভিযান চালিয়ে সাময়িকভাবে বাংলাদেশকে দখল করা যাবে, কিন্তু চূড়ান্ত পরিণতিতে উপমহাদেশে আরো কয়েকটি মুসলিম দেশ না হোক - বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর এলাকা নিয়ে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটবে।

সুতরাং আগুনে হাত দেবেন না। কুলদীপ নায়াররা আপনারা সুখে থাকুন, আপনাদের সুখের প্রতি আমাদের কোন মোহ নেই, হিংসাও নেই। আপনারা হাজারো ধরনের চক্রান্ত-শয়তানি না করলে বাংলাদেশ দশ বছরে যে অগ্রগতি অর্জন করবে, তাতে আপনাদের মানুষই এখানে আসবে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। আমাদের ভাগ্য পরির্বতনের জন্য অখণ্ড ভারতের গোলামীর জিঞ্জির পরতে হবে না। শুধু আমাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিন।

আপনি ‘পরস্পরকে সহযোগিতা করার যে অভাব, সেটি দূর করার’ ফতোয়া দিয়েছেন। কিন্তু এ অসহযোগিতা কারা করছে? আপনার না অন্য কেউ? উপমহাদেশে যতো অশান্তির মূল হোতা তো আপনারাই - অস্ত্র প্রতিযোগিতা, সন্ত্রাসী লালন, অন্যের দেশ বিচ্ছিন্ন করা, অন্য দেশকে কোনঠাসা করা, অন্যের দেশ দখল করার কিংবা দখলে রাখার উগ্র ভূত কেবল আপনাদের ওপরই সওয়ার হয়েছে। সহযোগিতার উদাহরণ আপনারাই সৃষ্টি করুন। ফারাক্কাসহ সব বাঁধ ভেঙ্গে ফেলুন, কিংবা আন্তর্জাতিক নদীর পানি ন্যায্য হিৎসা আমাদেরকে প্রদান করুন, নতুন বাঁধ নির্মাণ কিংবা আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বন্ধ করুন, সীমান্তের বেড়া সরিয়ে নিন, সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর না চেয়ে বার্মা হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ট্রানজিট নিয়ে বার্মা হতে নাগাল্যাণ্ড তথা পূর্ব এশিয়ায় (যাকে আপনারা উত্তর-পূর্ব ভারত বলেন, যা কখনোই আপনাদের ভূখণ্ড ছিল না) প্রবেশ করুন আর বাংলাদেশকে সার্কভূক্ত সব দেশের সাথে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান করুন। আমরা সবদেশের সমন্বয়ে ট্রানজিটে বিশ্বাস করি, করিডোরে নয়।

আর সহযোগিতার নজির স্থাপন করার দায়িত্ব আপনাদের, কারণ আপনারা সর্বক্ষেত্রে অসযোগিতা করে আসছেন। সার্কের প্রস্তাবক হওয়া সত্বেও বাংলাদেশ নেপালে সার্ক সচিবালয় স্থাপনকে মেনে নিয়েছে। এতে আমাদের কোন দুঃখবোধ নেই। আমাদের ততটুকু উদারতা রয়েছে। কিন্তু সার্ক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে স্থাপন করার দাবী তোলা হলে আপনারা তারও বিরোধিতা করে এটাকে আপনাদের দেশে স্থাপনের ব্যবস্থা করেছেন।

অসহযোগিতা কারা করেছে? হিসেব করুন, আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখুন। আপনাদের সহযোগিতার বা ঐক্যবদ্ধ হবার ফতোয়ার অপর পৃষ্ঠায় রয়েছে সাম্প্রদায়িক হিংস্রতার বিকট চেহারা, আমাদের দেশকে গিলে ফেলার উন্মত্ত ক্ষুধা। আপনাদের চরিত্র ও উদ্দেশ্য আমরা ধরে ফেলেছি। সুতরাং অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন বিলাস পরিত্যাগ করুন। প্রত্যেক দেশের পৃথক স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নিন।

এতে আপনারাও বাঁচবেন। আমরাও বাঁচবো। লেখক: আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ও গবেষক ঊসধরষ: হড়ধ@ধমহর.পড়স E Mail : মূল এইখানেঃ Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।