আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্যভূবনে . . . একটি মানবিক ফ্যান্টাসি

গ্রহের নাম ট্রনাস(Traunas)। অদ্ভূত সুন্দর এই গ্রহে আমি একা। একমাত্র মানব। সত্যিকার অর্থে আমার হাতে করার মত কোন কাজ নেই। দিনের বেশিরভাগ সময় ডায়রিটা নিয়েই বসে থাকি।

পাতা উল্টাই,লিখি। আজও বসেছি। আজ তারিখ কত? সালটাই বা কি? ভাবনাটা আর বাড়ালাম না। জেনেই কি লাভ? আমার তো এখানে নয়টা-পাঁচটা অফিস নেই, ক্লাস নেই অথবা বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলার শিডিউল জেনেও কাজ নেই। এখানে আমার আত্নীয় নেই,নেই কোন বন্ধু-বান্ধব।

আমি একা-নিঃসঙ্গ। স্পেশ-শিপের মত একটা ঘরে বসে আছি আমি। প্রয়োজনীয় ব্যাবহার্য সবই এখানে আছে। বরং বলা যায় প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই আছে। এর কোন কিছুই আমাকে স্পর্শ করে না।

আমি ভাবি আমার ভবিষ্যত নিয়ে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমি বোধহয় দীর্ঘ এক স্বপ্নের মাঝে আছি। অথবা অদ্ভূত কোন উপায়ে আমার অলস মনের কল্পনাগুলো বাস্তবে রূপ নিয়েছে। যাই হোক না কেন আমি বেশ বুঝতে পারছি এখন এটা আমার স্বপ্ন নয়। এটাই আমার নিয়তি।

ও হ্যাঁ,আপনাদের বলি,একজন সঙ্গি অবশ্য পেয়েছি। ওর নাম T-500, যার অর্থ সে Traunas গ্রহের ৫০০ তম অধিবাসী। ও রোবট নাকি তার প্রান আছে তা আমি জানিনা। সাদা কালো রঙের মিশেলে অনেকটা পান্ডার মত দেখতে সে। ওর সাথে আমার প্রথম দেখার স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করছি . .. তুমি কে? আমি কোথায়? আমি এখানে কেন? ওকে দেখেই একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করলাম।

আমি তোমার কোন ক্ষতি করবনা-আমাকে অভয় দিল আর জানাল দশ হাজার আলোকবর্ষ দুরের এক গ্রহে এখন অবস্থান করছি আমরা। আমাকে কেন এনেছ?আমাকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাও আমি দুঃখিত যে এমুহুর্তে এটা সম্ভব নয়। তাছাড়া ইতোমধ্যে তোমার পৃথিবীর বয়স এক হাজার বছর বেড়ে গেছে। মহাকাশ ভ্রমন সংক্রান্ত সময়ের জটিলতা আমরা এখনও সমাধান করতে পারিনি। তবে মৃত্যুকে বশ মানিয়েছি আমরা।

তুমি ইচ্ছা করলে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারবে। তা কিভাবে সম্ভব? তবে কি ট্রনাসই হতে যাচ্ছে আমার স্থায়ী ঠিকানা? কোনদিনই কি ফিরবোনা আমার প্রিয় নীল সবুজ গ্রহে? হতাশ হয়ে জানতে চাইলাম আমি। ও চলে গেল। আমার জীবন মরণের এই প্রশ্ন ওর কাছে গুরুত্বহীন। দূর্ভাবনার অথৈ সাগরে পড়ে গেলাম আমি।

. . . . . . . . . বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। T-500 একদিন রিমোট কন্ট্রোল মত কিছু একটা নিয়ে আমার ঘরে আসল। সবুজ বাটনটা চাপতেই দেয়ালের বড় স্ক্রিনে একটা ছবি দৃশ্যমান হতে দেখলাম। ছবিটা ক্রমেই স্পষ্টতর হচ্ছে। তারাভরা মহাবিশ্বের একটা অংশ দেখতে পাচ্ছি।

সেখানে একটা গ্রহ দৃশ্যমান হচ্ছে। নীল এক গ্রহ। আরো কাছে আসল ছবিটা। পৃথিবী!!! নীল সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। সবুজের মাঝে তুষারশুভ্র এক পর্বতমালা সামনে আসল।

হিমালয়ই হবে । শহরের দৃশ্যপট চোখে পড়র একসময়। আমার ঢাকা শহর। বাংলাদেশ ব্যাংক আর শাপলা চত্বর পেরিয়ে একটা পার্ক,লেকের পাশে স্থির হলো ছবিটা। দৃশ্যপটে একজন তরুন আর মায়াময়ী চেহারার একজন মেয়েকে দেখা গেল।

মেয়েটির পরনে কাল শাড়ী,খোপায় একটা সাদা ফুল। অদ্ভূত সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। আমি এই মেয়েটাকে চিনি। সে আমার মৃন্ময়ী! ছেলেটি বিষন্ন। ছেলেটা আমি।

ছেলেটা হাটতে শুরু করল। একা ও নিঃসঙ্গ। হঠাৎ অবাক হয়ে আকাশপানে চাইল। কিছু একটা দেখে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। মুহুর্তেই দেয়ালের ছবিটাও অদৃশ্য হয়ে গেল।

আমার কি অপরাধ? আমাকেই কেন? আমি চিৎকার করে জানতে চাইলাম সামনে দাড়ানো প্রানীটার কাছে। তোমার গ্রহের একজনকে আমাদের প্রয়োজন ছিল। আমি দুঃখিত যে এটা তুমি। আমি আর ভাবতে পারছিনা। বোধহয় পাগল হয়ে যাব আমি।

মৃন্ময়ী,বাবা-মা,বন্ধুদের হারিয়েছি আমি অদ্ভূত এক পরিস্থিতির শিকার হয়ে। . . . . . . . . . T-500 নামের জীবটা একবার আমাকে বিস্ময়কর এক চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসল। গ্যালাক্সি জুড়ে এর নাকি সুনাম। আমি বিস্মিত হবার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছি। অনুভূতিগুলোও ভোতা হয়ে যাচ্ছে।

তবে কি এই চিড়িয়াখানাই আমার স্থায়ী ঠিকানা হতে যাচ্ছে? আমি জানতে চাইলাম। না। তবে তোমার এখানে কিছুদিন থাকতে হবে। চলমান ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরী করা হবে। পরে আন্তঃগ্যালাক্সি ভিজিটরদের কাছে তোমার প্রতিরুপ আর সত্যিকারের তোমার মধ্যে পার্থক্য থাকবে না।

. . . . . . . . আমি এখন জীবন্মৃত এক চিড়িয়া আন্তঃগ্যালাক্সি চিড়িয়াখানায়। জানিনা এর শেষ কোথায়? . . . . . . . . আরো কিছুদিন পরের কথা। আমি মুক্তি পেয়েছি। চাইলে আমি পৃথিবীতে ফিরতে পারব। আমি তবু আনন্দিত নই।

বরং একধরনের দ্বিধা-দ্বন্দে কাটছে সময়। পৃথিবীতে গিয়েই বা কি করব আর কার কার কাছে যাব? এতবছর পরের পৃথিবী এখন কেমন? আগের মত মুন্দর আর বাসযোগ্য আছে? নাকি মিসাইল,নিউক্লিয়ার বোমা অথবা পরিবেশ বিপর্যয়ে বসবাসের অযোগ্য এক ধ্বংসস্তুপ অথবা প্রানহীন,পরিত্যাক্ত। জানিনা। জানতেও ইচ্ছা করেনা আর। এখানে তো ভালই আছি।

নতুন আরো বন্ধু হয়েছে আমার। ভাল না লাগলে আশেপাশের কোন গ্রহ থেকে ঘুরে আসি। একঘেয়েমি কেটে যায়। তবুও অচেনা এক টান অনুভব করি দুরের এক নীল গ্রহের জন্য। মাঝে মাঝে বুকের গহীনকোনে চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভূত হয়।

মৃন্ময়ীর স্মৃতি আমাকে নস্টালজিক করে দেয়। আমার এই স্মৃতিকাতরতা আর মানবিক অনুভূতিগুলো দূর করার জন্য একটা ইন্জেকশন নিতে বলেছে ওরা। কিন্তু আমি চাইনা ওদের মত হতে-রোবট হতে। অমরত্বও চাইনা আমি।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.