......... গল্পের আগের গল্পঃ
প্রথম পর্বের লিংক- প্রথম পর্ব
গল্প শুরুর আগেঃ
প্রথম পর্ব বের হওয়ার পর মনের আনন্দে লিখে ফেললাম দ্বিতীয় পর্ব। গল্পটি পড়লে যে কেউ বুঝতে পারবে এটা অলস মস্তিষ্কের চিন্তার ফসল। অনেক পাঠক গল্পের মারুফ জাবের চরিত্রটির সাথে বাস্তব কোন চরিত্রের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। তবে এ মিল শেষের কবিতা’র অমিত লাবণ্যের প্রথম দেখা হওয়ার মতই কাকতালীয়। বলে রাখা ভাল গল্পের সকল চরিত্রই কাল্পনিক! তো শুরু করা যাক দ্বিতীয় পর্ব..
কাহিনী সংক্ষেপঃ
চা খেতে গিয়ে শিলার সাথে দেখা হয় মারুফ জাবেরের।
শিলা সুন্দরী, তাই প্রথম কথা বলাতেই শিলার প্রেমে পড়ে যায় মারুফ জাবের। শিলার সম্পর্ক আবার পাপন নামের এক ছেলের সাথে। কিন্তু একথা মারুফ জাবেরকে জানায় না শিলা। এদিকে ফেসবুকের মাধ্যমে মারুফ জাবেরের প্রেমে পড়ে যায় শিলার বোন নীলা। নীলা দেখতে অতটা সুন্দর নয়, গায়ের রঙ ময়লা বলা যায়।
মারুফ জাবের নীলাকে পাত্তা দেয় না। বুফে খেতে শিলা, নীলা যায় এক রেস্টুরেন্টে। মারুফ জাবেরকে নিমন্ত্রণ জানায় শিলা, কিন্তু নীলা জানতে পারে না যে ঐখানে মারুফ জাবের আসবে। তাই মারুফ জাবেরকে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে দেখে মন খারাপ হয়ে যায় নীলার। সে ঐখান থেকে চলে আসে।
শিলাও নীলার পিছন পিছন চলে আসে মারুফ জাবেরের সাথে দেখা না করেই। মারুফ জাবের রেস্টুরেন্টে কাউকে পায় না...
...................................................................
৫।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে শিলাকে পেল না মারুফ জাবের। প্রায় তিন ঘন্টা হতাশ হয়ে বসেছিল সে। শিলাকে ফোন দেয়, ফোন বন্ধ পায়, বিরক্তি ফুটে উঠে মারুফ জাবেরের চোখে মুখে।
তবে প্রবল এই বিরক্তির মাঝেও রেস্টুরেন্টে খেতে আসা মেয়েরা কিছুটা হলেও আনন্দের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিল তার মনে।
ওয়েটার এসে বারবার তাকে খাবার অর্ডার করতে বলে। সে প্রতিবারই পার্ট নিয়ে বলতে থাকে I have a guest and she is very beautiful. শেষমেশ ওয়েটারের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে সে দুই পেগ হুইস্কি অর্ডার করে বসে। ওয়েটার আকাশ থেকে পড়ে, বলে স্যার আমরা হুইস্কি রাখি না। মারুফ জাবের তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হেসে উঠে।
Poor Restaurant বলে উঠে পড়ে সে।
বাইরে এসে বন্ধুর গাড়ির ড্রাইভারকে চলে যেতে বলে মারুফ জাবের। ড্রাইভার বকশিস চায়। মারুফ জাবের আবার হতাশ হয়। তবে ভবিষ্যতে অন্য কোন শিলার জন্য আবার লাগতে পারে এই ড্রাইভারকে এমন সাতপাঁচ ভেবে একশ টাকা বকশিস দিয়ে বিদায় করে ড্রাইভারকে।
এক বুক হতাশা নিয়ে হাঁটতে থাকে মারুফ জাবের। নিজেকে কেমন যেন ‘জ্যাক অ্যাস’ মনে হতে থাকে তার। শিলা এল না কেন, তার কোন সমস্যা হল নাতো, নাকি তাকে বোকা বানাল। এমনও তো হতে পারে শিলাকে ওর আব্বু আম্মু বাসা থেকে বের হতে দেয়নি। এটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এক চিলতে হাসি খেলে যায় মারুফ জাবেরের মুখে। তবে সাথে সাথেই আবার বাজে চিন্তা চলে আসে মনে। ও তো আমাকে মেসেজ দিয়ে জানাতে পারত। না এমনও তো হতে পারে ওর ফোন ওর আব্বু আম্মু নিয়ে নিয়েছে। শিলার জন্য গভীর মমতায় বুকটা হুহু করে উঠে মারুফ জাবেরের।
বৃষ্টি চলে আসে ঝুপ করে। ভিজতে ইচ্ছে করে মারুফ জাবেরের। সাথের মোবাইল, টাকা নিয়েই সমস্যা। পাশের চায়ের দোকান থেকে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট চেয়ে নেয় সে। নিজের মাথাভরা বুদ্ধিতে নিজেই অভিভূত হয় সে।
আকাশের দিকে তাকায় মারুফ জাবের। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটাকে শিলার ভালোবাসার স্পর্শ মনে হতে থাকে তার। স্বর্গীয় প্রশান্তিতে ভরে উঠে তার মন।
হঠাৎ ছুপ করে শব্দ হয় একটা। নিজের প্যান্টের দিকে তাকায় সে।
কাদায় মাখামাখি। একটা গাড়ি প্রবল বেগে চলে যেতে থাকে পাশ দিয়ে। প্রবল আক্রোশে ‘শালা’ কথাটা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তার, করার কিছুই থাকে না। শার্টের হাতা গুটিয়ে নেয় কনুই পর্যন্ত। একি! তার হাত নীল কেন! ধুর, নতুন শার্টটা থেকে রঙ উঠছে।
সস্তায় শার্ট কেনা উচিৎ হয় নাই। দোকানদারের চেহারা ভেসে উঠে চোখের সামনে। মনে মনে তাকে ‘চ’ যুক্ত গালি দিতে দিতে এগিয়ে যায় সে।
বৃষ্টি কমতে থাকে আস্তে আস্তে।
ঐ জেব্রা, দাঁড়া।
কে যেন ডাকছে পিছন থেকে । কোন কাছের বন্ধু হবে নয়ত জেব্রা নামে ডাকত না।
পিছন ফেরে মারুফ জাবের, দেখতে পায় তার বন্ধু তাকসির ছাতা নিয়ে দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে আসছে তার দিকে।
কিরে কই যাস বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে? তাকসির জিজ্ঞেস করে হাসি হাসি মুখে।
এইতো কোথাও না।
এমনি ভিজতেসি। বিরক্তি নিয়ে উত্তর দেয় মারুফ জাবের।
তোর মুখ হাত সব নীল কেন? তাকসিরের চোখে মুখে বিস্ময়।
সত্যি বললে তাকসির বুঝে ফেলবে ওর সস্তা শার্টের কথা। গরীব ভাববে তাকে।
পরে এই ব্যাপার সবাইকে ইন্টিগ্রেট করে বলবে। ওর সব বন্ধুরা কেন যেন গরীব বলে একজন আরেকজনকে অপমান করে। এরকম অপমান করে সবাই বেশ আনন্দ পায়। কোন মানে হয় না এসবের। খুব দ্রুত সব কিছু ভেবে নিল মারুফ জাবের।
তারপর অনেক কষ্টে মুখে হাসি এনে বলল, ঢাকা ভার্সিটির সামনে দিয়ে আসছিলাম। ওখানে ওদের কোন রঙ খেলা ছিল বোধহয়। এক মেয়ে চটাং করে আমার গায়ে রঙ ঢেলে দিল। আমাকে ওর ভালো লেগেছিল বোধহয়। দাঁত কেলিয়ে হাসতে থাকে মারুফ জাবের।
মারুফ জাবেরের নীল দাঁতগুলো দেখে গা ঘিনঘিন করে উঠে তাকসিরের। বলে, তোর দাঁতগুলাও দেখি নীল হয়ে গেছে।
মারুফ জাবের কিছু না বলে হাসতে থাকে। মনে মনে ভাবে শার্টের রঙ দাঁতে গেল কেমনে।
তোর হইসেটা কী? খুব বিধ্বস্ত লাগতেসে।
ছ্যাঁকাট্যাকা খাইসস নাকি? বিদ্রুপের সুরে জিজ্ঞেস করে তাকসির।
আরে ব্যাটা, মারুফ জাবের ছ্যাঁকা খায় নাকি? কীযে কস। তোর কথার জন্য হাইকোর্টে রিট হয়ে যাবে কিন্তু। তবে মনটা খারাপ। ভার্সিটির ঐ মেয়েটা ফোন নাম্বার চাইসিল।
দেই নাই। এখন মনে হচ্ছে মেয়েটারে হুদাই কষ্ট দিলাম। এক নিঃশ্বাসে অনেকগুলো কথা বলে নিজেকে তুমুল বুদ্ধিমান ভাবতে থাকে মারুফ জাবের।
চল তোরে এক পীরবাবার কাছে নিয়ে যাই। বাবা বের কইরা দিবেন ঐ মেয়ের নাম কী।
পরে তুই ফেসবুকে সার্চ দিয়ে খুঁজে নিস। আজকে বাবার ঐখানে আরশ আছে। গান বাজনা হবে। চল ঘুরে আসি। তাকসিরের চোখমুখ আনন্দে জ্বলজ্বল করতে থাকে।
বাবার নাম কীরে?
বাবার নাম নিয়া বিশাল কাহিনী আছে। হাঁটতে হাঁটতে বলতে থাকে তাকসির। শিশুকালে বাবার নাম ছিল নজরুল মিয়া। যৌবনকালে এসে বাবার বন্ধুরা বাবারে ডাকা শুরু করে এস,এম, নজরুল মিয়া নামে। এস, এম মানে হল সেইরকম মদন।
কিছুদিনের মধ্যে বাবার নাম হয়ে যায় সেইরকম মদন নজরুল মিয়া। তার কিছুকাল পরে এক মেয়ের লগে বাবার ভালবাসা হয়। ঐ মেয়ে বাবারে হেভি ছ্যাঁক মারে। ছ্যাঁক খাইয়া বাবা পাগলা হয়ে যায়। নজরুল এর ‘ন’ আর পাগলা এর ‘গলা’ মিলা হইসে নগলা বাবা।
এখন সবাই বাবারে নগলা বাবা কইয়া ডাকে। তবে কেউ কেউ আদর কইরা উলঙ্গ বাবা কয়। পূর্ণিমা রাতে মাঝে মাঝে বাবা উলঙ্গ হইয়া হের পুরান প্রেমিকার বাড়ির সামনে নাচানাচি শুরু করে। এইজন্য অনেকে উলঙ্গ বাবা কয়। তবে সাবধান! তুই উলঙ্গ বাবা বলিস না আবার, বাবা যাদের খুব মোহাব্বত করে তারাই শুধু উলঙ্গ বাবা বলতে পারে।
তুই নগলা বাবা বইলাই ডাকিস।
মারুফ জাবের অবাক হয়ে শুনতে থাকে। শুনতে শুনতে সে কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়।
বাবার ক্ষমতা কেমন? জিজ্ঞেস করে মারুফ জাবের।
ইয়া আল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ! তওবা কর, তওবা কর।
বাবার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করলে মাথায় ঠাডা পড়ে। ঠাডা বুঝস তো? বাজ পড়ব তোর মাথায়। তাকসির আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, দেখ আকাশ এখনও মেঘলা আছে, তোর মাথায় ঠাডা পড়ল বইলা।
মারুফ জাবের আঁতকে উঠে, দুই গালে হাত দিয়ে তওবা করে।
তাকসির গলা খাকারি দিয়ে বলতে থাকে, বাবার ক্ষমতা অনেক।
আমার কাহিনীটাই বলি। ক্লাস ওয়ান থেকে টুতে উঠার সময় ফেল করি আমি। সব সাবজেক্টে শূণ্য পাই। এইটা ছিল ঐ স্কুলের একটা ইতিহাস। স্কুলের হেডমাস্টার আমার মাকে ডেকে আমাকে প্রতিবন্ধীদের স্কুলে নিয়ে যেতে বলে।
আমার মাতো কেঁদে অস্থির। পরে আমাকে নিয়ে যায় নগলা বাবার কাছে। নগলা বাবা আমাকে দেখেন, দেখে ঠাস করে বাম গালে চড় মারেন। ঐ চড় খেয়ে আমার জ্বর উঠে যায়, প্রায় দশ দিন জ্বরের ঘোরে থাকি। তারপর যখন সুস্থ হই তখন আমি সব পারি।
তারপর থেকে প্রায় প্রতি পরীক্ষাতেই ফার্স্ট হয়ে আসছি। নগলা বাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় গলা কেঁপে উঠে তাকসিরের।
আরেকটা কাহিনী বলি, এটা রূপকথার মত শোনাবে। বলতে থাকে তাকসির। একবার এক মহিলা আসে নগলা বাবার কাছে।
মহিলার বাচ্চা হয় না। মহিলা তো বাবার পায়ে ধরে বসে আছে, কেঁদে একাকার। বাবা হঠাৎ গভীর ধ্যানে চলে যান। ধ্যান ভেঙ্গে বাবা বলেন, যা! চলে যা! তোর সন্তান হবে। তার প্রায় এক মাস পরেই খবর পাওয়া যায় মহিলার বাচ্চা হবে।
মহিলা তো খুশি, শিন্নি পাঠায় বাবার কাছে। তো প্রায় এক বছর পরে মহিলা বাচ্চা নিয়ে আবার আসে বাবার কাছে। এসে কান্নাকাটি। বাবা তো অবাক, বলেন, কীরে তোর তো সন্তান হয়েছে, আবার কাঁদছিস কেন? মহিলা এবার বলে, আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়েছে। বাবা বলেন কেন? মহিলা উত্তর দেয় না।
বাবা মহিলার কোলে থাকা সন্তানের দিকে তাকিয়ে আর কোন কথা বলেন না, গভীর ধ্যানে চলে যান। আশেপাশের সবাই বিস্মিত, সন্তানটা দেখতে অবিকল নগলা বাবার মত!
মারুফ জাবের বাবার ক্ষমতা শুনে বিস্মিত হয়ে যায়। তার চোখ বড় বড় হয়ে উঠে। হিমালয়ের সমান আশায় ভরে যায় তার বুক। বাবা নিশ্চয়ই পারবে তার শিলার খবর বের করে দিতে।
মারুফ জাবের, তাকসির হেঁটে যেতে থাকে। আকাশে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকায়। বাতাস এসে দোলা দিতে থাকে তাদের মনে।
প্রিয় পাঠক, তাকসির নগলা বাবার চেহারা সম্পর্কে কথা বলতে ভুলে গেছে। আমি বলে দিচ্ছি।
বাবা দেখতে অবিকল বুয়েট নামক এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিসি’র মত। তবে বাবার চুলগুলা ভিসি’র মত নয়। আসলে বাবার মাথায় কোন চুল নেই। এখানেও আরেকটি চমক। বাবার চুলবিহীন মাথাটা বুয়েট নামক ঐ একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রো-ভিসি’র সাথে মিলে যায়।
বুদ্ধিমান পাঠক সহজেই বুঝতে পারছেন এ মিল নিতান্তই কাকতালীয়!
তৃতীয় পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।