মাহিয়া আবেদিন রাখি। ইতালির মূল ধারার শিক্ষাঙ্গন ও মিডিয়াসহ সকল স্তরের একটি অতি পরিচিত নাম। ইতালীয় বাবা-মা’রা এখন তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য রাখিকে মডেল মনে করছেন। তারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ায় সাফল্যের তাগিদ দিতে রাখিকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করছেন। রাখির অসামান্য সাফল্য ইতালির বাংলাদেশি কমিউনিটিকে এনে দিয়েছে এক অনন্য গৌরব।
তার সাফল্যে সম্মানিত হয়েছেন সকল প্রবাসী বাংলাদেশি।
রাখির জন্ম বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার হালিমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামে। তার বাবা জয়নাল আবেদিন। মা মাসুদা আবেদিন শান্তা। তিন ভাইবোনের মধ্যে রাখি সবার বড়।
মাত্র নয় বছর বয়সে সে বাবা মার সঙ্গে ইতালিতে এসে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। এখন তার বয়স ১৯ বছর।
ইতালির ২০১২ সালের এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় রাখি অংশগ্রহণ করে ভিসেন্সা প্রভিন্সের চেক্কাতো দি মোনতেক্কিয় কলেজ থেকে। তার পরীক্ষার ফল প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাড়া পড়ে যায় সব মহলে। ইতালির প্রায় সকল জাতীয় মিডিয়া ঘিরে ধরে তাকে।
অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে দেখতে আসে রাখিকে। ফুলেল শুভেচ্ছায় ভরে দেয় তাকে। গর্বে বুক ভরে ওঠে বাবা মার। আনন্দে নেচে ওঠে রাখির ভাইবোন। খুশির বিদ্যুৎ চমক দেখা দেয় রাখির চোখেমুখে।
এত আনন্দ আর গৌরবের কারণ একটাই- রাখির অসাধারণ সাফল্য। সে প্রতিটা বিষয়ে ১০০ তে ১০০ নম্বর পেয়ে গোটা ইতালিতে প্রথম হয়েছে। শুধু প্রথম হয়েছে তাই না, ১০০ তে ১০০ নম্বর পেয়ে প্রথম বারের মতো ইতালিতে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের এসএসসি সমমানের পরীক্ষায়ও রাখি সকল বিষয়ে ১০০ তে ১০০ নম্বর পেয়েছিল। তখন ইতালির প্রেসিডেন্ট জর্জ নাপোলিতানো তাকে সম্মানসূচক আরো ১০টি করে নম্বর বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং রাখিকে প্রেসিডেন্ট ভবনে নিমন্ত্রণ করে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করেছিলেন।
রাখি জানায় সে ভবিষ্যতে একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী হতে চায়।
রাখির সাফল্য নিয়ে কথা হয় রোম থেকে প্রকাশিত মাল্টি ল্যাংগুয়েজের পত্রিকা মেইলটিং এর বাংলা বিভাগের সম্পাদক রাহিদ আহমেদ তমালের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের জন্য সুখবর খুব কম। এতোদিন শুধু দু’একটি বিদেশি সংস্থা তাদের রিপোর্টে বলত বাংলাদেশ দুর্নীতিতে শীর্ষে। আর এখন সরকার বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রায় যুদ্ধ ঘোষণা করে দুর্নীতিকে শিল্পের মর্যাদা দিয়েছে।
যা প্রকাশিত হচ্ছে দেশবিদেশের খবরের কাগজে। প্রবাসী কমিউনিটিতে অদরকারী দলাদলি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা- সব মিলিয়ে খারাপ খবরের সংখ্যাই বেশি। এরমধ্যে রাখির সাফল্য সত্যি আমাদের জন্য একটি ভালো খবর। আনন্দের খবর। গৌরব করার মতো খবর।
রাখির বাবা জয়নাল আবেদিন বলেন, প্রবাসে জীবিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু আমরা যদি সম্পদের লোভ কিছুটা সংবরণ করে সন্তানদের সময় দেই এবং সন্তানের মা যদি সন্তানের প্রতি সঠিক উপায়ে এবং সঠিক সময়ে যতœবান হন তবে আমাদের কমিউনিটিতে আরো অনেক রাখির জন্ম হবে। তারাও আমাদের জন্য সাফল্য এবং গৌরব বয়ে আনবে। রাখির বাবা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার মেয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দুইবার সকলের জন্য সম্মান বয়ে আনল।
সকল মিডিয়ায় সে খবর ফলাও করে প্রচার করা হলো। পত্রিকার পাতায় মোটা মোটা অক্ষরে ছাপা হলো ‘লা পিউ ব্রাভা এ দেল বাংলাদেশ’। অর্থাৎ ‘বাংলাদেশের সেরা মেধাবী’। ইতালির প্রেসিডেন্ট আমার মেয়েকে রাজভবনে ডেকে সম্মাননা দিলেন। স্থানীয় মেয়রসহ স্কুলের ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক থেকে শুরু করে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষ আমার মেয়ের সাফল্যে শুভেচ্ছা জানাল।
তাকে দোয়া করল। অথচ রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো প্রকারের খবর নেয়ার প্রয়োজনবোধ করল না। আমি নিজে পেপার কাটিং, ছবি ও মেয়ের সাফল্যের সার্টিফিকেটসহ দূতাবাসে মেইল করেছি। তারপরও কোনো সাড়া পাইনি। কেউ খবর নেয়নি।
যা সত্যিই আমাকে ব্যথিত করেছে।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।