গত ২৫ জুলাই শপথ নিলেন ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব কুমার মুখোপাধ্যায়।
ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি।
অভিনন্দন বাংলাদেশের জামাইবাবুকে। সমস্যা একটাই, ভারত পৃথিবীর একমাত্র দেশ হিসাবে এখন দু’জন PM দ্বারা পরিচালিত হবে: একজন Pronab Mukharjee আরেকজন Prime Minister. (নাভিদ মাহবুব, ফেসবুক। )
শপথ পরবর্তী বক্তৃতায় তিনি বেশ কিছু কথা বলেছেন।
এর মধ্যে আমাদের সাথে সম্পর্কিত কয়েকটি লাইন "“.... এর সঙ্গে দেশের সীমান্তবাহিনীর উদ্দেশ্যে এক শুভেচ্ছাবার্তায় তিনি জানান, দেশের নিরাপত্তার জন্য তারা সর্বদা প্রস্তুত। ......"” -আনন্দবাজার অনলাইন।
ভারতের নিরাপত্তা হুমকি ফেলানি।
“.... তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর .......... প্রশংসা করে বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সীমান্তে তারা যে লড়াই করেছেন তার জন্য আমরা গর্বিত। ....”- মানবজমিন।
তিনি যদি শুধুমাত্র পাকিন্তান, চীন ইত্যাদি সীমান্ত নিয়ে কথা বলেন তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই। আপত্তি আছে যদি তিনি বাংলাদেশকেও ইঙ্গিত করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসই বলে আমরা মূলত একটি ডিফেন্সিভ দেশ। দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে এ জাতি কখনও আক্রমণ করেনি।
মূল প্রসঙ্গ: প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি হওয়ায় আমাদের মিডিয়া (বুদ্ধিজীবিদের সাথে নিয়ে) এত মাতামাতি কেন করছে? বাঙালি হিসাবে তিনি কোলকাতার।
সেই কোলকাতা’র মুখ্যমন্ত্রী'র সমর্থন তিনি পেয়েছেন নির্বাচনের মাত্র তিনদিন আগে। [কেন্দ্র থেকে বহু তদবিরের পরও] তাঁর হাতে নাকি আর বিকল্প ছিল না।
তবুও ভাল আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবার একই ভুল করেননি। মমতার ক্ষেত্রে সরকারি ঘোষণার আগেই তিনি ফোনে তাঁকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। সেই আনন্দে উৎফুল্ল মমতা বাংলাদেশ-ভারত তিস্তা চুক্তি'তে ফারাক্কা বাঁধের চেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছেন অদ্যাবধি।
আজ পর্যন্ত তাঁর সময় হয়নি একবারের জন্যও বাংলাদেশ (so called second home) সফরের। [যদিও উচ্চ পর্যায়ে একাধিকবার, এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত কোলকাতা সফর করেছেন। ] করলেই তো যন্ত্রনা! এটা-ওটা-সেটা চাইবে বজ্জাত বাংলাদেশীগুলো,করবে প্রশ্নবাণে জর্জরিত
মিডিয়ার বাড়াবাড়ির প্রসঙ্গটি নিয়ে এখন বিশ্লেষণে যাই। প্রয়াত হুমায়ূণ আহমেদের মৃত্যুর খবর কেবল আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন এডিশনে ৭ লাইনের কাভার পেয়েছিল। (সূত্র: মতিউর রহমান চৌধুরী উপস্থাপিত চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত আজকের সংবাদপত্রের একাধিক পর্ব।
) জানি না কিংবদন্তী হুমায়ূণ ফরীদি বা সেলিম আল্দ্বীন স্যারের ক্ষেত্রে কি হয়েছিল?
আবার এতদিন অঘোষিতভাবে ভারতে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ ছিল। উদানিং তা উন্মুক্ত করা হয়েছে অসংখ্য শর্তের বেড়াজালে। এর একটি হচ্ছে চ্যানেল প্রতি ভারত সরকারকে ৫ কোটি রুপি (৭ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা) লাইসেন্স ফি দিতে হবে। যতটুকু জানি ভারতীয় চ্যানেল প্রচারে উল্টো আমাদের অর্থ দিতে হয়।
কিছুক্ষণ পরে লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে।
মনে পড়ছে গত ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথা। রেটিংয়ে এটি ছিল বেইজিং অলিম্পিকের পরের স্থানে। অথচ দাদাবাবুরা পান চিবুতে চিবুতে লিখেছিলেন “"ওভার কুকড বিরিয়াণি”"। শেখ হাসিনার দুই সময়েই (গত এবং বর্তমান) কলকাতায় তাকে মূখ্যমন্ত্রী বলে সম্বোধণ করা হয়েছে। আর কত উদাহরণ দিব!!! শেষ করি প্রয়াত হুমায়ূণ আহমেদকে কোট করে “"..... জিজ্ঞেস করলাম মিলন (ইমদাদুল হক) তুমি কোলকাতার সবাইকে তুমি-তুমি কর কেন? জবাবে ওঁ বলল হুমায়ূণ ভাই জানেন না, ওঁরা আমাদের কাউকে সম্মান করে না, ছোট-বড় সবাইকে তুমি-তুমি করে, তাই আমিও তাই করি।
”"
ফিরে আসি প্রণববাবুর মিডিয়া কাভারেজ নিয়ে। দেশে প্রচার সংখ্যার শীর্ষে যে (সম্পূর্ণ) পত্রিকাটি রয়েছে তার গত ২৩ জুলাই ২০১২ এর মূল সংখ্যা থেকে নেয়া পরিসংখ্যানগুলো নিম্নরূপ:
১. পত্রিকাটির মূল অংশের পৃষ্ঠা ছিল ২৪ টি।
২. পৃষ্ঠা ৬ ও ১৬ পুরোটা জুড়েই ছিল বিজ্ঞাপন। ৮ নং পৃষ্ঠাটি ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য। ৯ নং পৃষ্ঠাটি ছিল প্রয়াত হুমায়ূণ আহমেদের বিভিন্ন ছবি সম্বলিত।
১২ ও ১৩ নং পৃষ্ঠা ছিল সহ/সম্পাদকীয় (মূলত হুমায়ূণ আহমেদ কেন্দ্রিক) ও অন্যান্য কন্টেন্ট। ১৪ নং পৃষ্ঠা জুড়ে ছিল শেয়ারের ইনডেস্ক। ১৭ পৃষ্ঠার প্রায় পুরোটা (২৫৫ বর্গ ইঞ্চি) জুড়েও ছিল বিজ্ঞাপন। বিনোদন পৃষ্ঠার (২০ নং) অর্ধেকটা ছিল বিজ্ঞাপন বাকি অর্ধেকের অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় ও স্থানের তালিকা।
সুতরাং সেদিন মুল কাগজ ছিল আনুমানিক ১৯ পৃষ্ঠার।
তাতে নিম্নরূপ পরিসংখ্যান পাওয়া যায়:
১৯ পৃষ্ঠার আনুমানিক হিসাব (বর্গ ইঞ্চিতে)
মোট স্থান ৪৬৭৪
খবর ২৭৩৪
বিজ্ঞাপন ১৯৪০ (৪১.৫০%)
আন্তর্জাতিক খবর ২৪৬ (৯%)
প্রণব বাবু মোট কভারেজ ১৪১.৩৭৫ (৩%)
প্রণব বাবু (আন্ত: পৃ: ) কভারেজ ৬৮.৬২৫ (২৮%)
আমি নিশ্চিত হুমায়ূণ ট্রাজেডি না ঘটলে সেদিন অন্তত একটি বড় উপ-সম্পাদকীয় বা কলাম আমরা পেতাম প্রণব বাবুকে নিয়ে।
প্রণব বাবুকে নিয়ে আমরা অতি উচ্ছসিত! পত্রিকার ছবিতে দেখলাম তাঁর শ্বশুড়বাড়িতে মিষ্টি খাওয়ার ধুম পড়েছিল। এটা দেখে মনে পড়ে গেল বারাক (হোসেন) ওবামার জন্মস্থানের মানুষদের ধুমসে মিষ্টি খাবার সেই দিনটির কথা। সেদিন তাঁর জন্মস্থানটি যেমন ছিল, আজও তেমনই আছে বলে মনে হয়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে মিস্টার প্রেসিডেন্ট নিজেকে আমেরিকান-নন মুসলিম বলেই এখনও দাবি করেন।
প্রণববাবুও কিন্তু নিজেকে ভারতীয় বলেই দাবী করেন, বাঙালী বা কোলকাতার সন্তান হিসাবে নয় (কিছু বিশেষ সময় ছাড়া)।
মনে রাখা প্রয়োজন জামাই তিন প্রকার- ১. শ্বশুড়বাড়ির সম্পত্তির প্রতি ভয়াবহ লোভ, ২. শ্বশুড়বাড়ির প্রতি চরম উদাসিন এবং ৩. মধ্যমপন্হী। আমাদের জামাইবাবু কোন প্রকারের, কে জানে!
স্বাধীনতার আগ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শ্রী প্রণববাবুর একক অবদান কতটা? মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায় অর্থমন্ত্রী হিসাবে কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় না করা এবং তাঁর অতীত রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্য আমাদের দিদিমা তাঁকে প্রথম সমর্থন দিতে চাননি। সেক্ষেত্রে আমাদের (সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে) দ্বিপাক্ষিক সহায়তার জন্য তাঁর কতটাই বা আগ্রহ থাকতে পারে?
১৯৭১ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায়'র ভূমিকা: আ. গাফ্ফার চৌধুরী (ব্যক্তিগতভাবে খুব একটা পছন্দনীয় নয়) এ নিয়ে কালের কণ্ঠের ১৭ জুলাই ২০১২ সংখ্যায় কলাম লিখেছিলেন। তাঁকে উদ্বৃত করছি "“...... ১৯৭১ সালে প্রণব মুখার্জি ৩৫ বছর বয়সের যুবক ছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গ বা কেন্দ্রীয় কংগ্রেস রাজনীতিতেও তেমন কেউকেটা ছিলেন না। ..... ... মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যদানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইন্দিরা গান্ধীকে তাঁর যেসব মন্ত্রী, সচিব ও উপদেষ্টা অব্যাহত সমর্থন দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কৃষ্ঞ মেনন, জগজীবন রাম, ডিপি ধর, হাকসার প্রমুখ, এমনকি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের নামও উল্লেখযোগ্য। .......... বঙ্গবন্ধু হত্যার পর হাসিনা-রেহানা দুই বোনকে জার্মানি থেকে দিল্লিতে নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রণববাবুর একটা বড় ভুমিকা ছিল। ..... ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে ডেকে নিয়ে দায়িত্বটি দিয়েছিলেন। প্রণববাবু বাঙালি বলেই তাঁকে এই দায়িত্বটি দেয়া হয়েছিল, অন্য কোন কারণে নয়।
..... হাসিনা ও রেহানার দিল্লি অবস্থানের সময় তাঁরা প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। .....”"
যদ্দুর জানি বাংলাদেশকে কোনো সুবিধাপ্রাপ্তিতে প্রণববাবু’র সরাসরি অবদান কখনই ছিল না। দেড় বছর আগে সম্পাদিত ১ বিলিয়ন ডলারের (soft) ঋণচুক্তিতে তাঁর অবদান কতটুকু জানি না। [তবে চুক্তিটি ছিল ordinary, অর্থ্যাৎ পয়সা ধার দিয়ে নিজের পণ্য/সেবা কিনতে বাধ্য করা, পরবর্তীতে সুদে-আসলে সে পয়সা আদায় করা এবং এর বদলে বিভিন্ন সুবিধা নেয়া। ] আজ পর্যন্ত সে অর্থের কিছুই ছাড় হয়নি।
উল্টো এর 'বিনিময় সুবিধা' অর্থ্যাৎ ট্রানজিটের সুবিধা (স্থল ও নৌপথে) ভারত ইতিমধ্যেই অনেকটা নিয়ে নিয়েছে। মাঝে রেলপথ সম্প্রসারণ ও কোচ আমদানি’র (ভারত থেকে) জন্য অর্থ ছাড়ের কথা থাকলেও দু’দেশের মিটার/ব্রডগেজ পার্থক্যের কারণে তা আর হয়নি। পদ্মা সেতু জটিলতার সময় তিনি বলেছিলেন ঋণের অর্থ আমরা সেখানে ব্যবহার করতে পারি। যেটা বলেননি সেটা হচ্ছে চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সাথে ট্রানজিটের অবকাঠামো তৈরী ইত্যাদি কিভাবে হবে?
রাষ্ট্রপতির ভাষণে নাকি তিনি ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক আরও জোরদারের কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতির কথা রাখতে বিএসএফ (বাংলাদেশি ফায়ারিং ফোর্স) ৫ জন বাংলাদেশিকে গুলি করেছে।
এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যে চোরাচালানীদের কথা বলে বিএসএফ গুলি করে তাতে দু’দেশের নাগরিকই রয়েছে। বিজিবি যদি চোরাচালানী আটক করতে পারে, তবে বিএসএফ শুধু গুলি করে কেন? আদেশ ছাড়া কি কোনো ডিসিপ্লিনড ফোর্স কিছু করতে পারে?
সময় এসেছে আমাদের বাংলাদেশি-বাঙালি পরিচিতি নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করার। বাঙালী চেতনা কোলকাতার কোটিখানেক মানুষ ধারণ করে। [তাও আগে তাঁরা হিন্দুস্থানী, পরে ....] আর বাংলাদেশে করে সব মিলিয়ে প্রায় ১৬/১৭ কোটি। ভৌগলিক পরিমাপও বিবেচনা করে দেখতে পারেন।
তাই একজন ভারতীয় বাঙালি রাষ্ট্রপতি হলে কোলকাতা’র জনগন অতি আনন্দ দেখাবে, আনন্দ দেখাবে তাঁর শ্বশুড়বাড়ির জনগন, আর বাংলাদেশ (রাষ্ট্র) দেখাবে আনুষ্ঠানিক আনন্দ।
গত ২৬ তারিখে অবসরপ্রাপ্ত এবং বিদগ্ধ আসাফ্-উদ্দ-দৌলা চ্যানেল আইতে বলেছিলেন, তিনি অনেকবার ভারত সফর করে এবং ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে একটি বিষয় উপলব্ধি করেছেন। ভারতের প্রশাসন বেশ শক্তিশালী। নীতি নির্ধারণ এবং তা চলমান রাখার (সরকার বদল হলেও) ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদেরও ভাববার সময় এসেছে যা নাভিদ মাহবুবের আরেকটি কৌতুক দিয়ে তুলে ধরি-
“ভারত বাংলাদেশের কাছে ডিজিটাল ক্যাবল ট্রানজিন চায় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও চেন্নাইকে যুক্ত করতে।
আসুন তাঁদের আমরা একটি ডিজিটাল ট্রানজিট দেই যা ততক্ষণ খোলা থাকবে যতক্ষণ ফারাক্কা'র স্লুইস গেটগুলো খোলা থাকবে। এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা একটি "“অ্যান্ড গেট"” তৈরী করবেন যেখানে আমরা ‘০’ ও ‘১’-এর চলাচল নিয়ন্ত্রন করব ফারাক্কার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী। ”
যাঁরা সময় করে ও ধৈর্য্য ধরে এই দীর্ঘ লেখাটি পড়লেন সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Disclaimer: The pictures used here were collected from online newspapers edition, FB and Samu. If You have any complaints, please let me know. I'll remove that concerned picture asap. Thanks. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।