যা অনুভব করি,তা বিশ্বাস করি...আর,যা বিশ্বাস করি...তা অনুভব করতে জানি... ১৯ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই, সময়ের কাঁটায় সাত দিন। হুমায়ূন আহমেদ স্যার চলে গেছেন, না ফেরার দেশে। জীবিতাবস্থায় উনি বলেছিলেন একবার সম্ভবতঃ উনার মৃত্যু হয়তো অনেকের জন্যই বেশ লাভজনক বিনোদনের খোরাক যোগাবে বেশ কিছুদি্ন।
মিথ্যে যায়নি স্যারের ভবিষ্যদ্বা্নী। উনার মৃত্যু রহস্য থেকে আরম্ভ করে দাফন-কাফন নিয়ে দেশবাসী কম জল ঘোলা করেনি।
সবচেয়ে বড় বিষয় যেটা, আর দশজন মানুষের পরিবারের সদস্য মারা গেলে তার জন্য আমাদের যতোটুকুন সমবেদনা থাকে, তার ন্যূনতম বোধ কেউ স্যারের পরিবারের জন্য দেখিয়েছে কী না সন্দেহ!
স্যারের সন্তান, স্ত্রী, ভাই সহ পরিবারের আরো অনেক মানুষ, কিন্তু, প্রিয় মানুষটির মৃত্যুতে তাঁদের একান্তভাবে শোক পালনের কোনও অধিকার নেই! তাঁদের ক্রন্দনরত ছবি, চোখ মোছার ছবি কে কার আগে পাবলিশ করতে পারে, এই নিয়ে অভিনব এক প্রতিযোগিতা আমাদের প্রিয় সাংবাদিক (নাকি সাংঘাতিক!!!!) দের মাঝে! শোক থাকবে ক্যানো তোমাদের!!!! ছবি তুলতে দাও আগে!!!!
ফেসবুক,ব্লগবাসীও পিছিয়ে নেই এতোটুকু!!! কতোখানি নিষ্ঠুর, নির্মম হলে পরে তথাকথিত হুমায়ূন ভক্ত কিছু ফেসবুক পেজ স্যারের মৃত্যুর একদিনের মাঝে তাঁর লাশের ছবি আপলোড করে লাইক, কমেন্ট ভিক্ষা চায়!! শিলার চোখের জল = ৫০ লাইক!!! নুহাশের পাঞ্জাবী=১০০ কমেন্ট!!!!!কেউ স্যারের মৃত্যুর জন্য শাওনকে দায়ী করে পারলে আগে তাঁরই শ্রাদ্ধ করে!!!! আরেকদলের মাথা-ব্যথা আবার গুলতেকিনকে নিয়ে, তিনি কেন সাবেক স্বামীকে মৃত্যু শয্যায় দেখতে যাননি, তার কৈফিয়ত এদেশের মানুষকে না দিলে তো স্যারের আত্মা শান্তি পাবেন না!!! স্যারের এতোটাই শুভকামী এরা!!! স্যারের নুহাশ-পল্লীতে নাকি ঢাকায় দাফন হবে তা নিয়েও স্যারের পরিবারের চেয়ে এই অন্তর্জাল-বাসীর দুশ্চিন্তা বেশি!!
আর মশলাদার খবরের আপডেট দিতে কতিপয় ওয়েব-বেইজড নিউজ চ্যানেল তো আছেই!! হুমায়ূন স্যারের মৃত্যুর পর শাওন কেন তাঁর ছবি তুলতে দেবেন না, কেন তিনি ইকোনমি ক্লাস ছেড়ে বিজনেস ক্লাসে দেশে ফেরার বায়না ধরবেন, তার ব্যাখ্যা তো অবশ্যই তাঁকে এই "ইয়েলো মিডিয়া" র কাছে দিতেই হবে!! স্যারের মৃত্যু-রহস্য নিয়েও এরা ক্রাইম-থ্রিলার বানিয়ে ফেলতে দ্বিধা-বোধ করেনি! যে শাওন প্রায় দশ বছর ধরে সংসার করেছেন স্যারের সাথে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পরের প্রতিটা যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্তের সাথী ছিলেন স্বামীর, অর্থাভাবে যেন তাঁর চিকিৎসার কোনও ত্রুটি না হয়, সেদিকে সবসময় সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন, স্যারের মৃত্যুর জন্য তাঁকেই দায়ী করতে এতোটুকু বাঁধেনি কারো! শুধু এতোটুকুই এদের উদ্দেশে বলা, শাওনের যদি স্যারকে খুনের পরিকল্পনা এতোটাই থাকত, তবে দুইবার অপারেশানের টেবিল পর্যন্ত যাবার সুযোগ স্যারের পাওয়া হতো না! উনারা নুহাশ-পল্লীতে স্যারের দাফন নিয়েও স্যারের বলা "বিতর্কিত" "শেষ ইচ্ছা" কেও ছাড় দেননি। সেখানে সম্পত্তি সম্পর্কিত আলোচনা টেনে শুধু মাত্র নিজদের নোংরা মানসিকতারই পরিচয় টেনেছেন মাত্র। এখানেও আমার প্রশ্নঃ স্ত্রী হিসেবে স্যারের সম্পত্তির অনেকটা অংশ এমনিতেই শাওন পাবেন, তাঁর নিজের পরিবারও যথেষ্টই ধনাঢ্য, তিনি নিজেও একাধারে অভিনেত্রী, সঙ্গীতশিল্পী, চিত্রপরিচালক; সেক্ষেত্রে শুধু "টাকা-পয়সার লোভে" শাওন হুমায়ূন স্যারকে বিয়ে করেছেন, বা তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন, কোনও প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের উর্বর উপসংহারে পৌঁছে যাওয়া কতোটা যৌক্তিকতা রাখে!!
হ্যাঁ, অনেকের কাছেই মনে হতে পারে, আমি শাওনের একচ্ছত্র পক্ষপাত-দুষ্ট আলোচনা করছি। কিন্তু, সেক্ষেত্রে আপনাদের কাছে কিছু প্রশ্নঃ ব্যক্তি-জীবনে হুমায়ূন-গুলতেকিন; অথবা হুমায়ূন-শাওন দম্পতির বিষয়ে আমরা কেউ কথা বলার অধিকার কি আসলেই রাখি? প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ-কষ্ট তাঁর একান্তই নিজস্ব, তার সবটা ভাগ তিনি সমাজের সবাইকে না ও দেখাতে পারেন। সুতরাং, ত্রিশ বছরের দাম্পত্য-জীবনের ইতি টেনে শাওনকে বিয়ে করার পক্ষে বা বিপক্ষে না জেনে নিতান্তই আষাঢ়ে গল্পে্র আসর জমাতে আলোচনা কিংবা সমালোচনা কোনওটাই করার অধিকার আমরা কেউ রাখি না।
আর প্রথম সংসারের ইতি টেনে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর নজির এটাই আমাদের সমাজে প্রথম না, যে সবাই এই মানুষটির নিতান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ের ব্যবচ্ছেদ-কল্পে ছুরি-কাঁচি নিয়ে বসে যাবো!
তাই, মিডিয়া-বাসী, অন্তর্জাল-বাসী সবার কাছে অনুরোধ, স্যারের কর্মজীবন নিয়ে, তাঁর লেখা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা-সমালোচনা করুন। কিন্তু, দয়া করে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন কে মুখরোচক আহার হিসেবে কু-উপস্থাপন থেকে বিরত থাকুন। শাওন; কিংবা তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের এবার একটু রেহাই দিন। তাঁরাও আমার, কিংবা আপনার মতোই মানুষ। প্রিয়জন মারা গেলে তাঁদের আমার-আপনার মতোই হৃদয় পোড়ে!
তাঁদের চোখের জলকে শুধু নিজের সুখকর আলোচনার জন্য আর প্লিজ পণ্য বানাবেন না।
নচেৎ, আপনার নিজেরও এমন দিন আসতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।