আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে গতকালও হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসকরা হামলা চালিয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের ওপর। এতে ২০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৪ সংবাদকর্মীর অবস্থা গুরুতর হলে তাদের পিজি হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনায় ইন্টার্নি চিকিৎসকরা সংবাদকর্মীদের বেশ কটি বহনকৃত গাড়ি, মটরসাইকেল ও ক্যামেরা ভাঙচুর করে।
গতকাল এ হামলার সময় পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় ঘটনায় আশপাশে উপ¯ি'ত রোগী, দর্শনার্থী ও পথচারীসহ বিপুল লোকজন হতবাক হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেলের একটি নির্ভরযোগ্যসূত্র জানিয়েছে, হামলাকারী চিকিৎসকরা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর নেতা-কর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় ছাত্রলীগ সমর্থিত এবং স্বাচিপের কর্মী হাসপাতালের রেসিডেন্ট সার্জন (ক্যাজুয়ালটি ব্লক) নাজমুল শাহীন এবং বহির্বিভাগের রেসিডেন্ট সার্জন আবদুল হাকিম, জুয়েলসহ অর্ধশত ক্যাডার হাসপাতালের সকল বিভাগের দরজা এবং করিডোরে সাংবাদিক নিষিদ্ধ পোস্টার লাগিয়ে মিছিল করছিল।
একপর্যায়ে ক্যাডাররা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেডিকেল প্রতিবেদকদের কার্যালয়ে গিয়ে রোগী রিপন এবং তার স্ত্রীকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখতে পান। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উপ¯ি'ত সকলকে এলোপাতাড়ি প্রহার এবং সেখানের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে ঘটনা¯'লে উপ¯ি'ত হন জিটিভির প্রতিবেদক-ক্যামেরাম্যান ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের আলমগীর হোসেন। এ সময় তাদের ওপর চড়াও হয়ে তাদেরও মারধর এবং ব্যবহƒত ২টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
এরপর দুপুরে খবর পেয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ক্র্যাবের নেতারা হাসপাতালের অদূরে শহীদুল্লাহ হলের গেটের সামনে জড়ো হয়।
তারা সহকর্মীদের নিয়ে পরিচালকের সঙ্গে আলোচনার জন্য জরুরি বিভাগের গেটের সামনে দিয়ে প্রশাসনিক বিভাগে যাচ্ছিলেন। এসময় জরুরি বিভাগের ভেতরে এবং আশপাশের ফুটপাতের দোকানে ওত পেতে থাকা চিকিৎসক নামধারী স্বাচিপ ক্যাডররা হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে লাঠিসোটা ও রড নিয়ে ধাওয়া করে। সাংবাদিকরা সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই তাদের এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। এ সময় সাংবাদিকরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ২৫ জন মিডিয়াকর্মী আহত হন।
আহতদের মধ্যে জাস্ট নিউজের মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, ভোরের কাগজের আসলাম, করতোয়ার রুদ্র রাসেল, দেশটিভির হাসান ও সুমন, আমাদের অর্থনীতির হালিম মোহাম্মদ, রিয়াজ, মোজাফফর, সুজন মাহমুদ, ইণ্ডিপেনডেন্ট টিভির খলিল আরাফাত, সমকালের দিপু হাজরা, ফটো সাংবাদিক নয়ন, জিটিভির সায়েদুল ইসলাম, এটিএন নিউজের মফিজুল ইসলাম, তপু ও হানিফ রাজা গুরুতর আহত হন।
এঘটনায় রাত ১২টায় এবিসি রেডিওর পক্ষ থেকে মেডিকেল প্রতিবেদক বুলবুল চৌধুরী ও ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে শাহাদাত হোসেন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মুশফিকুর রহমান, সার্জারী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শহীদ হোসেন, বর্হিবিভাগের রেসিডেন্ট সার্জন নাজমুল হাকিম শাহিন, রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান সুদীপ রঞ্জন দেব, ২১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মকর্তা ডা. সুরজিদ দাস, ইণ্টার্নী চিকিৎসক লাভলী, জুয়েল, জাহিদ, রোজেন ও প্রীতম এবং আরো অজ্ঞাত দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। এছাড়া দেশ টিভি, জিটিভি ও সমকালের পক্ষ থেকে আরো ৩টি জিডি সংশ্লিষ্ট থানায় নথিভুক্ত করা হয়েছে। এবিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজ মিয়া জানান, মামলা হয়েছে, তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যব¯'া নেয়া হবে।
এ ঘটনার পরই সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা পৃথকভাবে নিন্দা জানিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে আজ দুপুর ১২টায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দরা এঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন।
এ ঘটনার পর থেকে হাসাতালে সাংবাদিকদের অব¯'ান নিরাপদ মনে না করায় কোনো মিডিয়াকর্মী সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে যাননি। এ বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালককে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। প্রায় আধঘণ্টা এ হামলার ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। রাত সাড়ে ১২টায় এরিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার, ছিনতাই হওয়া টিভি ক্যামেরা বা টাকা উদ্ধার করা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ২২ জুলাই সংশ্লিস্ট ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল প্রতিবেদকদের ওপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।