আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাইজ্জা ভয়ঙ্কর -- ফ্যাসাদ ? আমি ঠিক জানি না ।

অনেকের কাইজ্জা-ফ্যাসাদ খারাপ লাগে । আমার খুব একটা খারাপ লাগে না । রাস্তার মোড়ে দু্ই সিএনজি ড্রাইভার হঠাৎ মাইরপিট লেগে গেলে আমি রিক্সা ওয়ালাকে বলি 'এই দাড়াও দাড়াও -- ফাইটিংটা একটু দেখি নেই । কি জিতবে বলো তো ?' রিক্সাওয়ালা চিন্তিত মুখে বলে 'দাড়িওয়ালাটার জোর বেশি, কিন্তু জিতব ছোটডা -- সে মাইরের টেকনিক জানে । আন্দা গুন্দা মারলে হবে না ।

মারতে হবে কায়দা করে । ' আমি দেখলাম রিক্সাওয়ালার কথাই ঠিক । প্রায় ছয় ফুট লম্বা দাড়িওয়ালা একজন মানুষকে ছোটখাট গড়নের একটা লোক ধরাশায়ী করে ফেলল । তাজ্জব ব্যাপার ! আসলেই মারতে হবে কায়দা মতো । এই মারের কায়দা সবচেয়ে যারা ভাল জানে তারা জীবনে কখনও খুব একটা মারামারি করে না ।

আমি নারীদের কথা বলছি । ঝগড়া লাগলে দেখবেন তারা এমন এমন ঘটনার রেফারেন্স নিয়ে টান দেবে যে আপনি বিস্মিত হয়ে যাবেন । আপনি পাল্টা কিছু বলতে যান সেই মুহূর্তে কিছুই পাবেন না চিন্তা করে । ফলাফল ঝগড়ায় হার । আমার বন্ধু সোবাহান এই জন্য খুবই সতর্ক ।

তার একটা খাতাই আছে এ বিষয়ে । খাতার নাম 'ঝগড়ার খাতা' । ঝগড়ার খাতায় দৈনন্দিন জীবনের খুটি নাটি সব কিছু নোট করা থাকে । এটা নাকি ঝগড়ার সময় কাজে দেয় । আশ্চর্যের বিষয় সে বিবাহিত জীবনে খুবই সুখী একজন মানুষ ।

হুমায়ূন আহমেদের দাফন নিয়ে শাওন ও অন্যদের মধ্যে ভাল একটা কাইজ্জা হয়ে গেল । আমি পেপার টেপার খুব একটা মনোযোগ দিয়ে পড়ি না । আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম ঝগড়া লাগার পর আমার পত্রিকা পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেছে । শাওন কি বলল, শীলা কি বলল, জাফল ইকবাল কি বললেন অনলাইনে সবই আমার প্রায় মুখস্ত । মোড়ের শাহজাহান ভাইয়ের চায়ের দোকানেও দেখি এই ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত অবস্থা ।

মাঝবয়েসী দুই লোকের ভেতর মাইরপিট লাগে লাগে অবস্থা । একজন শাওনের পক্ষে, আরেকজন তার চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করছে । পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হয়ে আসলে আমি তাদের একজনের কাছে গিয়ে বললাম 'ভাই আপনি তো দেখছি হুমায়ূন আহমেদের বিরাট ফ্যান । ' ভদ্রলোক একটু দম নিয়ে বলল 'তা বলতে পারেন । তবে আমার কাছে নীতির প্রশ্নে কোন আপোস নাই ।

স্যারের শঙ্খনীল কারাগার পড়ার পর থেকেই আমি তার ভক্ত । কারাগারের মানুষের জন্য তার যে মহব্বত--এই মহব্বত আর কোথায় পাবেন বলেন ? সবাই তো মনে করে কারাগারে গেলেই মানুষ শয়তান । স্যারই প্রথম তার লেখায় দেখাইছেন কারাগারেও কিছু ভাল মানুষ আছে । ' আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে এলা্ম । যে জানে না তাকে জানানো যায় ।

যে ভুল জানে তাকে জানাতে গেলে কাইজ্জা লেগে যেতে পারে । আমি কাইজ্জা দেখতে পছন্দ করি, করতে না । এ প্রসঙ্গে অভিনেতা জাহিদ হাসানের এক ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল । নাট্যদলের সবার সাথে তিনি ভারতের আগড়তলায় গেছেন । এই লোক তার দিকে ছুটে আসল 'ভাই আমি আপনার বিরাট ভক্ত ।

আপনার কোন নাটক আমি মিস করি না । ' জাহিদ বলল 'তাই নাকি?' 'জ্বি । আপনি আবুল হায়াত না ?' জাহিদ অধিক শোকে পাথর হয়ে বলল 'ভাই, আমি এখনও জাহিদ হাসান । তবে যে হারে মাথার চুল পড়ছে তাতে কিছুদিনের ভেতর আবুল হায়াত হয়ে যাব । ' গতকাল দেখলাম প্রথম আলোতে আনিসুল হক লিখেছেন সম্প্রতি হুমায়ূন আহমেদ যখন শেষ বারের মত ঢাকা এসেছিলেন তিনি নাকি তখন হুমায়ূন আহমেদকে বলেছেন 'স্যার প্রকাশনার জগতের ধ্বস ঠেকাবার জন্য আমি চাই আপনি আরও ১০ বছর বাচুন ।

এর পর আমারা সামলে নিতে পারব । ' কি নির্দয় উক্তি ! ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন মানুষকে তিনি নির্দিধায় মৃত্যুর কথা বলছেন । আনিসুল হক প্রকাশনা জগতের ধ্বস ঠেকাবেন এইটা আমি কেন গুলিস্তানের গোলাপ শাহ-র মাজারে হাত পা ছড়িয়ে যে পাগলটা বসে থাকে তাকে বিশ্বাস করানোটাও কঠিন হবে । জিজ্ঞাসা করে দেখেন সে বলবে 'কোথায় টম ক্রুজ আর কোথায় ডিএ তায়েব । টম ক্রুজের কি ডিএ তায়েব কে দিয়ে হয় ? এই যে পানি , আনিসরে বলিস মাথায় ঢালতে ।

' হুমায়ূন আহমেদ কে চারিদিকে যখন এই শোরগোল এর ভেতর হঠাৎ শুনি মন্ত্রি আবুল নাকি পদত্যাগ করেছে । সত্যি কথা বলতে কি তার সুন্দর হাসি দেখে আমার কখনই মনে হয়নি তিনি এত বড় দুর্নীতিবাজ । আমাদের পাড়ায় এক ঘুসখোর আছেন তিনিও খুব সুন্দর করে হাসেন । পাড়ায় কোন অনুষ্ঠান হলে তিনি সবচেয়ে বেশি চাদা দেন । ঘুসখোর বলে যে আমরা তার টাকা নেই না সেটা না , টাকা নেই ।

তবে আমাদের অনুষ্ঠানে সব সময় চোর বিষয়ক একটা নাটিকা রাখার চেষ্টা করি । সেখানে শেষ দৃশ্যে চোরকে আচ্ছা করে ধোলাই দেয়া হয় । এ্ই সময় দর্শক সারিতে বসে তিনি ঘামতে থাকেন । আমরা এ বিষয়টা বেশ উপভোগ করি । আবুলের পদত্যাগে আমার একটাই ভয় বিশ্ব ব্যাংকের সাথে কাইজ্জাটা নাকি মিটমাট হয়ে গেল ।

ভাই কেথাও কাইজ্জা-ফ্যাসাদ লাগলে আমাকের খবর দিয়েন । আমি দেখতে যাব । বিশেষ করে ফ্যাসাদ লাগলে তো কথাই নাই । কারণ ফ্যাসাটটা এখনও দেখা হয় নাই । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।