বেশি কিছু চাই না, চাই শুধু মনের কথা বলতে বাংলা চলচিত্রের মহানায়ক তিনি । অসংখ্য নারী হৃদয়কে একসাথে শিহরিত করতেন তিনি। মৃত্যুর এত বছর পর ও যাকে নিয়ে বাঙালীর উৎসাহে এতটুকু ভাটা নেই ; তিনি আর কেউ নন তিনি আমাদের সবার পরিচিত চিরপচ্ছন্দের মহানায়ক উত্তম কুমার। আজকেরই দিনে ১৯৮০ সালে তাঁর অগনিত গুনমুগ্ধকে অশ্র্রুজলে ভাসিয়ে ইহ লোকের ময়া চিরদিনের মত কাটিয়ে তিনি বেহেস্ত গমন করেন। অরুন কুমার চ্যাট্টার্জী আসল নাম হলে সারা বিশ্বতাকে চেনে মহানায়ক উত্তম কুমার হিসেবেই।
৩২টা বছর কেটে গেছে কিন্তু তার স্টারডম কমেনি একফোঁটাও। আজও তার অভিনীত চলচিত্র টিভি তে আসলেই তরতর করতে বাড়তে থাকে "টি আর পি"। ৮ থেকে ৮০ সবাই ভিড় জমান টিভির সামনে তাদের প্রিয় মহানায়কের অভিনয় দেখতে।
১৯২৪ সালের ৩রা সেপ্টেমবর কলকতার আহিরীটোলায় তিনি জন্মগ্রহন করেন। ৩ ভাইয়ের মধ্য তিনীই ছিলেই বড়।
সাউথ সুবার্বান স্কুল থেকে স্কুল শেষ করে তিনি গোয়েঙ্ক কমার্স কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পড়া আর শেষ করা হয়নি তিনি কোলকাতা পোর্টট্রাস্ট্রে কেরানী হিসাবে কাজে যোগদেন। কিন্তু কাজে আর তার মনবসল না । তাই তিনি কেরানীর কাজ ছেড়ে ভাগ্যন্বেষনে নেমে পড়লেন সিনেমায়।
হিরো হিসাবে উত্তম কুমারের প্রথম ছবি "দৃষ্টিদান"।
যদিও তিনি "বসু পরিবার" নামক ছবিতে দৃষ্টি আকর্সন করেন। কিন্তু তিনি প্রথম সাফল্যের সাধ পান "অগ্নিপরীক্ষা" ছবি থেকে। এই ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন। এবং বাংলা চলচিত্রের ইতিহাসে সৃষ্টি হয় নতুন এক জুটির, যা আজও অক্ষত । যদিও উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম ছবি হল "সাড়ে চুয়াত্তর"।
উত্তম-সুচিত্রা জুটি একসাত্র প্রায় ৩০টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন যার মধ্যে - "সপ্তপদী", "হারানো সুর", "পথে হল দেরী", "সবার উপরে", "চাওয়া পাওয়া" প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ধীরে ধীরে উত্তম কুমার খ্যাতির শীর্ষে উঠতে থাকেন এবং হয়েযান বাংলা ছবির মহানায়ক। তার জন্য তাকে কম কাঠখর পোড়াতে হয়নি। নীজের দীর্ঘ ৩২ বছরের অভিনয় জীবন থেকে শুরু করে তার ব্যক্তিগত জীবনের উপর দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে।
উত্তম কুমার বহু সফল বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন।
তাঁর অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ছোটিসি মুলাকাত, অমানুষ , আনন্দ আশ্রম দেশপ্রেমী (১৯৮২) ও মেরা করম মেরা ধরম (১৯৮৭) অন্যতম। উত্তম কুমার পরিচালক হিসেবেও সফল। কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (১৯৮১), বনপলাশীর পদাবলী (১৯৭৩) ও শুধু একটি বছর (১৯৬৬) ছবির সাফল্য তাই প্রমাণ করে। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় দু’টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রথমটি নায়ক এবং দ্বিতীয়টি চিড়িয়াখানা।
চিড়িয়াখানা চলচ্চিত্রে তিনি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। রোমান্টিক ছবির ফাঁকে দু'একটা অন্য ছবিতেও অভিনয় করছেন তিনি। এর মধ্যে একদিন সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে ডাক পেলেন উত্তম 'নায়ক' ছবিতে অভিনয়ের জন্য।
সঙ্গীতের প্রতিও ছিল তার অসীম ভালবাসা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কিংবা মান্না দে'র গানেই সবচেয়ে বেশি ঠোঁট মিলিয়েছেন উত্তম।
ছবির গান রেকর্ডিংয়ের সময় শিল্পীর পাশে বসে তার অনুভূতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করতেন। এতে করে না কি পর্দায় ঠোঁট মেলাতে তার বেশ সহজ হতো। সঙ্গীতপ্রেমী উত্তম ‘কাল তুমি আলেয়া’ ছবির সবগুলো গানের সুরারোপ করেন। ছবিটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। অভিনেতা প্রযোজক, পরিচালক, সব মাধ্যমেই তিনি ছিলেন সফল।
আজকেরই দিনে ১৯৮০ সালে মাত্র ৫৬ বছর বয়েসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই মহান অভিনেতার মৃত্যু হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।