হুমায়ূন আহমেদের দাফনের প্রশ্নে তার মা আয়েশা ফয়েজ নাতি-নাতনীদের পক্ষে অবস্থান নিলেও মেহের আফরোজ শাওন অনড় থাকায় এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
সোমবার মধ্যরাতে দখিন হাওয়ায় হুমায়ুন পরিবারের প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের মা প্রথম পক্ষের সন্তানদের মত সমর্থন করছেন বলে মুহম্মদ জাফর ইকবাল জানিয়েছেন। তবে শাওন নুহাশপল্লীতে দাফনের বিষয়ে অনড় রয়েছেন। ”
“আমাদের ভূমিকা শেষ হয়ে গেল। এখন পরিবার সিদ্ধান্ত নেবে,” বলেন তিনি।
জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, “আমার খুব ভালো লাগত, যদি আপনাদের সিদ্ধান্ত জানাতে পারতাম। আমার ভাই বারডেমের হিমঘরে পড়ে থাকুক, তা আমরা চাই না। ”
স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের মধ্যস্থতায় এই বৈঠকে হুমায়ূনের ভাই জাফর ইকবাল ও দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন দুজনই ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও শাইখ সিরাজ।
বৈঠকে কোনো মীমাংসা না হওয়ার পর রাত ১২টা ৫০ মিনিটে শাওন ছাড়া অন্যরা সংসদ ভবন এলাকায় নানকের বাড়ির পথে রওনা হন।
সেখানে হুমায়ূনের প্রথম স্ত্রীর তিন সন্তান নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ ও নুহাশ হুমায়ূন রয়েছেন।
শাওনের বাড়িতে যাওয়ার আগে প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠকে বসেন হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রীর তিন সন্তান; যারা গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে বাবার দাফনে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন।
অন্যদিকে হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন নুহাশ পল্লীতে স্বামীর দাফনের পক্ষে মত জানিয়ে বলে আসছেন, তার স্বামীর ইচ্ছাও ছিল তাই।
হুমায়ূন এক সময় নুহাশ পল¬ীতে তাকে সমাহিত করার কথা বললেও অসুস্থতার সময় দেশে ফিরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, কবরকে কেন্দ্র করে নুহাশ পল¬ীতে মাজার তৈরি হোক তা তিনি চান না।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হুমায়ূন ৬৪ বছর বয়সে গত ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে মারা যান।
অস্ত্রোপচারের আগে গত ১২ মে নুহাশ পল¬ীতে বসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি, যার অডিও রেকর্ডও রয়েছে।
তবে শাওনের দাবি, মৃত্যুর আগে তার স্বামী তাকে নুহাশ পল¬ীতেই কবর দেওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে গিয়েছিলেন।
মরদেহ ঢাকায় আনার পর সোমবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দুপুরে জাতীয় ঈদগাঁয় জানাজার পরও কবরের স্থান নিয়ে পরিবারের মধ্যে কোনো মতৈক্য না হওয়ায় এই বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
শ্রদ্ধা নিবেদনের এক ফাঁকে শহীদ মিনারের পাশে পরিবারের সদস্যরা আলোচনায় বসেন। সেখানে হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজ, স্ত্রী শাওনসহ পরিবারের সদস্যরা ছিলেন।
এরপর হুমায়ূনের ভাই অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, তারা পরে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ নেওয়া হয় জাতীয় ঈদগাঁয়। জানাজা শেষে মরদেহ রাখা হয় বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে।
বিকালে মিরপুরে হুমায়ূনের ছোট ভাই আহসান হাবীবের বাড়িতে আলোচনায় বসেন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব ছাড়াও ছিলেন নোভা ও শীলা, তাদের স্বামী এবং নুহাশ।
নোভা ও শীলার আরেক বোন বিপাশা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।
সন্ধ্যার পর নোভা সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা বেঁচে থাকতেই বলেছেন, নুহাশ পল্লী কবরস্থান হোক- তা তিনি চান না।
“এই বিষয়ে ডকুমেন্ট আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা চাই, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান বা অন্য কোথাও কবর হোক, নুহাশ পল¬ীতে নয়। আমরা চাই, এমন একটা জায়গায় কবর হোক, যেখানে সবাই যেতে পারে।
”
যত দ্রুত সম্ভব, হুমায়ূনকে দাফনের বন্দোবস্ত করার ওপর জোর দিয়েছেন সন্তানরা। নোভা বলেন, “বাবাকে এই অবস্থায় দেখে আমাদের খুব খারাপ লাগছে। ”
নোভার চাচি মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হক সাংবাদিকদের বলেন, “এরা হুমায়ূন আহমেদের সন্তান। কোথায় দাফন হবে, সে বিষয়ে তাদের স্ট্যান্ড (অবস্থান) আছে। ”
তবে নোভাদের এই অবস্থান পরিবারের মিলিত সিদ্ধান্ত নয় জানিয়ে হুমায়ূনের ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, “এই বিষয়ে পরিবারের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
”
এরপর নোভা, শীলা ও নুহাশকে নিয়ে জাফর ইকবাল রওনা হন সংসদ ভবন এলাকায় প্রতিমন্ত্রী নানকের বাড়ির পথে। আহসান হাবীব সাংবাদিকদের বলেন, “সিদ্ধান্ত নিতে দেরি দেখে প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাই তিনি ডেকেছেন। ”
আহসান হাবীবের বাড়িতে প্রয়াত লেখকের প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা থাকলেও ছিলেন না বর্তমান স্ত্রী শাওন। দুই শিশু সন্তান নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে তিনি রয়েছেন ধানমণ্ডিতে লেখকের বাড়ি ‘দখিন হাওয়া’য়।
শাওন সাংবাদিকদের বলেন, “গত ১২ তারিখ (জুলাই) সকাল ৫টায় অপারেশনে যাওয়ার আগে তিনি (হুমায়ূন) বলছিলেন- আমি জানি আমি ভালো হয়ে যাবো। তবে আমার যদি কিছু হয় আমাকে নিয়ে ওরা অনেক টানাহেঁচড়া করবে, তুমি শক্ত থেকো কুসুম। আমাকে নুহাশ পল্লীতে নিয়ে যেও। ”
এই বক্তব্যের প্রামাণ্য কোনো দলিল না থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো স্ত্রী, কোনো আত্মীয়-স্বজন অপারেশনের আগের দিন রাতে বলা কথা কি রেকর্ড করে রাখে?”
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথায় হুমায়ুন পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আক্রমণ করেন শাওন।
তিনি বলেন, “জীবিত অবস্থায় যারা হুমায়ূন আহমেদের পাশে দাঁড়ায়নি, পারিবারিক মিটিং করেননি, তাদের অধিকার নেই এখন মিটিং করার।
”
এদিকে হুমায়ূনের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিনের তিন সন্তান নোভা, শীলা, নুহাশকে নিয়ে জাফর ইকবাল প্রতিমন্ত্রী নানকের বাড়িতে বৈঠকে বসেন। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সেখানে ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও শাইখ সিরাজ।
এরপর রাত সাড়ে ১০টার পর দখিন হাওয়ায় যান তারা। তবে নোভা, শীলা ও নুহাশ দখিন হাওয়ায় যাননি।
(শাওনের আরো কিছু অজানা কৃতকর্মের খবর জানতে এক্ষুনি এটি দেখুন) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।