এইচ এম শরীফ উল্লাহ
———————
একজন সফল ব্যবসায়ী, যখন তিনি বৃদ্ধ হচ্ছেন তখন তিনি ভাবলেন যে,
তার ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য একজন বিশ্বস্ত উত্তরাধিকারী বেছে নেয়ার সময় এসেছে।
তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহীগণের কোন ব্যক্তি বা নিজের কোন সন্তানকে সরাসরি বাছাই করার পরিবর্তে অন্যরকম কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
তিনি তরুণ কার্যনির্বাহীগণকে বললেন, “এটা আমার অবসর নেয়ার সময়, এবং তার আগে পরবর্তী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে হবেন, তাঁকে বাছাই করতে হবে আমাকে। তোমাদের থেকেই একজনকে বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।
“তরুণ নির্বাহী কর্মকর্তাগণ মনে প্রচন্ড ধাক্কা খেলেন, কিন্তু প্রধান কর্মকর্তা বলতে লাগলেন, আমি আজ তোমাদের প্রত্যেককে একটিকরে বিশেষ বীজ দেব।
আমি চাই, তোমরা এ বীজটি একটি টপে বপন করবে এবং প্রতিদিন পানি সিঞ্চন করবে, আর একবছর পর ঠিক এই দিনে তোমরা কী ফলালে এই বিশেষ বীজটি থেকে যা আমি তোমাদের দিয়েছি, তা নিয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে। তখন আমি তোমাদের গাছটিকে বিচার বিবেচনা করব, এবং একজনকে আমি পরবর্তী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করব। ”
ঐ দিন জিম নামে একজন ব্যক্তি ছিল, এবং সে তাদের সবার মঙ্গল কামনা করে যারা বীজ গ্রহণ করেছিল। সে বাড়ি গেল, এবং আগ্রহের সাথে ঘটনাটি তার স্ত্রীকে বললো। তার স্ত্রী তাকে একটি পটে কিছু মাটি, কিছু মিশ্র জৈব সার একত্রে মিশ্রণ করে বীজটি বপন করে তাকে সাহায্য করলো।
প্রতিদিন, সে তাতে পানি সিঞ্চন করে এবং খুব আগ্রহের সাথে লক্ষ করে যদি বীজটি অঙ্কুরিত হয়। প্রায় তিন সপ্তাহ পর, অন্যান্য কিছু কর্মকর্তা তাদের বীজ সম্পর্কে আলোচনা করলো এবং জানাগেলো যে, তাদের অঙ্কুরিত চারাগাছগুলো বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে। জিম প্রতিদিন লক্ষ করতে লাগলো, কিন্তু কোন কিছুই অঙ্কুরিত হচ্ছে না। তিন সপ্তাহ, চার সপ্তাহ, পাঁচ সপ্তাহ অতিবাহিত হলো, এখনও কিছুই অঙ্কুরিত হচ্ছে না। এখন অন্যান্যরা তাদের চারাগাছ সম্পর্কে বলাবলি শুরু করছে।
জিমের কোন চারাগাছ জন্মালো না, এবং তাতে সে ব্যর্থতা অনুভব করছে।
ছয় মাস অতিবাহিত হলো, এখনও জিমের পটে কিছুই হচ্ছে না। এই মুহূর্তে সে ভাবলো যে, সে তার বীজটি নষ্ট করেছে। অন্যান্য সবার চারাগছ গজালো, আর তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু তারই কিছু হলো না। জিম তার সহকর্মীদের এ ব্যপারে কিছুই বলে নি……যাই হোক, সে তার পটে অব্যহতভাবে পানি সিঞ্চন ও সার প্রয়োগ করে চলছে- সে চাচ্ছে তার বীজটি অঙ্কুরিত হোক।
এক বছর চুড়ান্তভাবে অতিবাহিত হলো এবং কোম্পানির সব তরুণ নির্বাহী পরিদর্শনের জন্য তাদের চারাগাছ নিয়ে প্রধান নির্বাহীকর্মকর্তার নিকট হাজির হলো।
জিম তার স্ত্রীকে বললো যে, সে তার শূণ্য পট নিয়ে প্রধান নির্বাহীকর্মকর্তার নিকট যাবে না। কিন্তু তার স্ত্রী তাকে বললো যে, “তুমি সততার সাথে তাঁকে বলো, যা তোমার বীজের ব্যপারে ঘটেছে। ” জিম খুব একটা ভালো অবস্থা অনুভব করছে না। এটা খুব একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে তার জীবনকে, কিন্তু সে জানতো যে, তার স্ত্রী তাকে যা বলছে তা সঠিক।
পরিচালকগণের সভাকক্ষে সে তার শূণ্য পট নিয়েই উপস্থিত হলো। জিম যখন উপস্থিত হলো, অন্যান্য নির্বাহীগনের বিভিন্ন চারাগাছের বৃদ্ধি পাওয়া দেখে সে হতবাক হয়ে গেলো। আয়তন এবং আকৃতিতে এগুলো ছিলো খুব সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। জিম তার খালি পটটি মেঝের উপর রাখল এবং তার অনেক অফিস সহকারী তা দেখে হো হো করে হেসে উঠলো, তাদের কেউ আবার তার জন্য দুঃখও অনুভব করল।
যখন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত হলেন, তিনি কক্ষটি পরিদর্শন করলেন এবং তরুণ নির্বাহীগনকে সংবর্ধনা জানালেন।
জিম নিজেকে আড়াল করতে কক্ষে সবার পিছনে বসলো। “আমার, কী অসাধারণ চারাগাছ এবং ফুল তোমরা জন্মিয়েছ,” প্রধান নির্বাহীকর্মকর্তা বললেন। “আজ তোমাদের থেকেই কোন একজনকে নিযুক্ত করা হবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে!”
সব শেষে, হঠাত প্রধান নির্বাহীকর্মকর্তা কক্ষের সবার পিছনে জিমকে চিহ্ণিত করলেন, যার পটটি ছিলো শূণ্য। তিনি অর্থসংক্রান্ত পরিচালককে আদেশ করলেন, জিমকে যেন সবার সামনে নিয়ে আসে। জিম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেলো।
সে ভাবলো, “প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানে যে, আমি একজন ব্যর্থ! খুব সম্ভব তিনি আমাকে শুট করে মেরে ফেলবেন। ”
জিমকে যখন সামনে নিয়ে আসা হলো, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তার বীজে কী সমস্যা হয়ে ছিলো– জিম তার ঘটনা সব তাকে খুলে বললো। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সবাইকে বসার জন্য আদেশ করলেন, শুধু জিমকে ছাড়া। তিনি জিমের দিকে তাকালেন, এবং তারপর তরুণ নির্বাহিগণের মাঝে ঘোষণা করে বললেন, “চেয়ে দেখ, তোমাদের পরবর্তী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা! তার নাম জিম!”
জিম তা বিশ্বাস করতে পারছে না। এমন কী, সে তার বীজ ফলাতে পারে নি।
“কীভাবে সে হবে পরবর্তী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা!” অন্যান্যরা বললো।
তারপর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বললেন, “আজ থেকে এক বছর আগের ঠিক এই দিনে, এই কক্ষে, আমি সবাইকে একটি বীজ দিয়েছিলাম। আমি তোমাদের সবাইকে বলেছিলাম, এই ধর বীজটি, তা বপন কর, পানি সিঞ্চন কর এবং এক বছর পর ঠিক আজকের দিনে তা আমার নিকট নিয়ে এসো। কিন্তু আমি তোমাদের সবাইকে একটি করে সিদ্ধ করা বীজ দিয়েছিলাম; এগুলোছিলো মৃত– এই মৃত বীজ থেকে চারা গজানো ছিলো অসম্ভব তা তোমরা জনো। জিম ছাড়া, তোমাদের সবাই চারাগাছ এবং ফুল নিয়ে আমার নিকট উপস্থিত হয়েছো।
যখন তোমরা দেখলে যে, বীজটি অঙ্কুরিত হচ্ছে না, তোমরা বিকল্প অন্য একটি বীজ বপন করলে যা আমি দিয়েছিলাম তার পরিবর্তে। একমাত্র জিমই
ছিলো আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান এবং সত্যবাদী। সে-ই শুধু আমার দেয়া বীজ বপন
করা পট নিয়ে আজ উপস্থিত হয়েছে। এজন্য সে’ই একজন, যে হবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ”
* তুমি যদি সত্যবাদিতার চারাগাছ রোপন করো, তবে তুমি পরিশ্রমের ফল লাভ করবে বিশ্বস্ততা।
* তুমি যদি সদগুণাবলীর চারাগাছ রোপন করো, তবে তুমি ফল লাভ করবে অনেক বন্ধু।
* তুমি যদি বিনয়ের চারাগাছ রোপন করো, তবে তুমি নিজেকে পাবে একজন
অসামান্য ও মহৎ ব্যক্তি হিসেবে।
* তুমি যদি অধ্যাবসায়ের চারাগাছ রোপন করো, তবে তুমি ফল লাভ করবে পরিতৃপ্তির সুখের জীবন।
* তুমি যদি বিবেচনার চারাগাছ রোপন করো, তবে তুমি নিজেকে একজন মহৎ সুবিচারক হিসেবে পাবে।
* তুমি যদি কঠোর পরিশ্রমের চারাগাছ রোপন করো, তবে তুমি ফল লাভ করবে জীবন সফলতার।
* তুমি যদি ক্ষমা করার চারাগাছ রোপন করো, তবে তুমি ফল লাভ করবে মীমাংসিত শান্তিপূর্ণ সমাজ।
* তুমি যদি আল্লাহতে বিশ্বাসের চারাগাছ রোপন করো, তবে তুমি ফল লাভ করবে অবিনশ্বর সুখের ফসল।
সুতরাং, মনোযোগী হও, কীসের চারা রোপন করবে তুমি এখন; এটা হবে দৃঢ়সিদ্ধান্ত, কী তুমি পরে ফল লাভ করবে…
“যাকিছু তুমি জীবনকে দিবে, জীবন তোমাকে তা আবার ফেরত দিবে। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।