আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। সূত্র বাংলানিউজ
মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে চলছে ‘গুটি চালাচালি’। কর্তা পর্যায়ের কয়েক ব্যক্তির এই অপকর্মের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাড়ে চার হাজার কর্মী। যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা (সিসিও) কাজী মনিরুল কবির।
উর্ধ্বতনদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে এখানে-ওখানে গুটি চালছেন এই মনিরুল। আর তাতে খসে পড়ছেন একের পর এক কর্মী। যারা তার অপছন্দের তালিকায় তারাই হচ্ছেন এই ক্ষতির শিকার। এই কাজ করে এরই মধ্যে সিইও টরে জনসেন ও হিউম্যান রিসোরসের প্রধান হারুন ভাট্টির প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছেন কাজি মনিরুল। গ্রামীণফোনের বর্তমান কর্মরতদের অনেকেই বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানিয়েছেন, গ্রামীণফোনে এখন চলছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর (ব্যাট) আধিপত্য। এই ব্যাট গ্রুপের একচ্ছত্র নেতৃত্বে রয়েছেন কাজি মনিরুল। আবার মাঝেমধ্যে স্বার্থ ক্ষুণ্ন হলে ব্যাটে-ব্যাটে শুরু হয় বিরোধ।
তাদের মতে, ব্যাট থেকে আসা কর্মকর্তাদের দাপটে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন গ্রামীণফোনের অন্য কর্মকর্তারা। মূলত এই ফোন কোম্পানি এখন ব্যাটের কর্মকর্তাদের দখলে।
তাদের দলবাজির কারণে অন্যরা একে একে চাকরি হারাচ্ছেন।
গ্রুপের নেতা গ্রামীণফোনের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা (সিসিও) কাজি মনিরুল কবির। তবে মনিরুল কবির তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গ্রামীণফোনে ব্যাট থেকে আসা একটি বড়সংখ্যক কর্মী রয়েছে যাদের ব্যাট নামেই ডাকা হয়, এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো থেকে আসা অনেক কর্মকর্তা দেশের বিভিন্ন কোম্পানিতেই রয়েছেন, গ্রামীণেও ব্যাটের একটি বড় গ্রুপ কাজ করে।
এদের বড় একটি অংশ আবার ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো থেকে চাকরিচ্যুত বা বিতাড়িত।
তবে এদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। কিছুদিন আগে এই ব্যাটেরই এক কর্মকর্তার কারণে চাকরিচ্যুৎ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল মনিরুল কবির। গ্রুপিংয়ের খুঁটি ধরেই ওই ধাক্কা সামলে উঠেছিলেন তিনি। তবে তারপর থেকে তিনিই হয়ে ওঠেন গ্রামীণফোনের দণ্ড-মুণ্ডের কর্তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক।
কাজি মনিরুল বিবিএ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। নেই কোনো এমবিএ ডিগ্রি। তারপরেও শুধুমাত্র কূটকৌশল কাজে লাগিয়ে তিনি দেশের বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটরের উচ্চ পদে আসীন হয়েছেন। গ্রামীণফোনে তার সহকর্মীরা একে কৌশল বলতে নারাজ। তাদের ভাষায় কূটকৌশলের বলেই তিনি এতদূর এসেছেন।
তাদের মতে মনিরুল কবির কূটকৌশলে অনেক পারদর্শী। এটিই তার প্রধান যোগ্যতা। এখন তিনি কর্মী ছাঁটাইয়ে সবচেয়ে বড় গুটি চালবাজ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
গ্রুপিংয়ের শক্তিকে ভিত্তি ধরে গ্রামীণফোন থেকে একে একে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিদায় করেছেন মনিরুল। রুবাবা দৌলা মতিন, বিদ্যুৎ কুমার বসু, প্রমোদ রঞ্জন কর্মকারের মতো দক্ষ কর্মকর্তারা তার কারণেই গ্রামীণফোন ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন একথা গ্রামীণফোনে ওপেন সিক্রেট।
সূত্র জানায়, মূলত ২০০৮ থেকে গ্রামীণফোনে ব্যাট থেকে আসা কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৮ এ মনিরুল কবির ব্যাট থেকে গ্রামীণফোনে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে ব্যাট গ্রুপ।
মনিরুল অবশ্য সরাসরি ব্যাট থেকে গ্রামীণে রিক্রুটদের দলে নন। তিনি আসেন মার্কেট এক্সেস প্রোভাইডারস থেকে ২০০৮ সালের এপ্রিলে। যোগ দেন ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার হিসেবে।
এক বছর সাত মাস পরে তার পদোন্নতি হয় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে। পেয়ে যান প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তার (সিসিও) পদ। প্রায় তিন বছর তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে সূত্র জানায়, এই পদে আসার আগে গ্রামীণফোনে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। তারই ব্যাটের সহকর্মী এবং তিনি একই পদের পদোন্নতির অপেক্ষায় ছিলেন।
ওই পর্যায়ে অবশ্য ভাগ্যের শিকে মনিরুলেন পক্ষে ছেঁড়েনি। পদোন্নতি পেয়ে যান প্রতিযোগী ব্যাটকর্মী। তবে এর জের ধরে কিছু জটিলতায় শেষ পর্যন্ত চাকরিটিই হারাতে বসেন মনিরুল। শেষ পর্যন্ত কূটকৌশল কাজে লাগিয়ে তিনি অন্য পদে পদোন্নতিও পেয়ে যান। মাত্র দেড় বছরের মাথায় তিনি চলে আসেন গ্রামীণফোনের সিসিও’র পদে।
নতুন পদে আসার পর নিজেকে আর দুর্বল করে রাখতে চাননি কাজী মনিরুল। যুগপৎ চলতে থাকে তার উর্ধ্বতনদের ‘তেলবাজি’ ও ব্যাটদের নিয়ে দলবাজি। ধীরে ধীরে দেশের বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটরে শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেন। সেই সঙ্গে গড়ে ওঠে তার নিজস্ব ‘ব্যাট-বলয়’।
মনিরুল কবির ছাড়াও ব্যাট থেকে আসা চারজন কর্মকর্তা গ্রামীণফোনের নীতি নির্ধারণী পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, গ্রামীণফোনে বর্তমানে যে গণছাঁটাই চলছে তার অন্যতম নেপথ্যের নায়ক মনিরুল কবির। চাকরিচ্যুতির নায়ক হওয়ায় মনিরুল কবির তার কমিনিউকেশন বিভাগের ২০ জন কর্মকর্তা কাউকে চাকরিচ্যুৎ করেননি। এ ব্যাপারে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, চাকরিচ্যুতিতে তার প্রভাব বলয়ে থাকা কাউকেই ছাঁটাই করা হয়নি, এতেই প্রমাণিত হয় এতে তার হাত রয়েছে। নিজের সিন্ডিকেটকে শক্তিশালী করতেই মনিরুল বেছে বেছে চাকরিচ্যুতির তালিকা করছেন। ওই নেতা জানান, চাকরি রক্ষার কথিত পরীক্ষায় ২০ নম্বরের মধ্যে ১৪ পেয়েও একজন চাকরি হারিয়েছেন।
অন্যদিকে একই পরীক্ষায় ৭ নম্বর পেয়েও চাকরিতে বহাল রয়েছেন কেউ কেউ, এটা মনিরুলের ইচ্ছাতেই হয়েছে।
উর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করার অসাধারণ দক্ষতার জন্য নাম কুঁড়িয়েছেন মনিরুল। গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে যিনিই এসেছেন তাকেই ম্যানেজ করে ফেলেছেন তিনি। হেশজেদাল প্রধান নির্বাহী থাকতে তার চাকরি যাওয়ার উপক্রম হলেছিল। অথচ হেশজেদালকে ম্যানেজ করে শেষ পর্যন্ত চাকরি রক্ষাই শুধু করেননি, পদোন্নতিও বাগিয়ে নেন।
আর পরে টরে জনসেন আসার পর শুরু থেকেই নিজেকে তার কাছাকাছি রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন। এখন টরে সবচেয়ে কাছের জনের তালিকায় কাজী মনিরুল কবির। মনিরুলের ভাগ্য খুলে দিলো গ্রামীণফোন
নাম করা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই, নেই এমবিএ ডিগ্রি। অথচ কাজি মনিরুল কবির দেশের বৃহৎ মোবাইল অপারেটরের শীর্ষ পদে চলে এসেছেন। ভালো কোনো্ একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা সত্ত্বেও মনিরুল কবিরের ভাগ্য খুলে দেয় গ্রামীণফোন।
গ্রামীণফোনে তারই সহকর্মীরা বলছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যাল থেকে ১৯৯৮ সালে বিবিএ ডিগ্রি নেন কাজি মনিরুল কবির। এরপর এমবিএ ডিগ্রি না নিয়েও এত দ্রুত ওপরে ওঠার জন্য বরাবরই কূটকৌশলের ওপর নির্ভর করেছেন।
এমবিএ ডিগ্রিধারী না থাকা সত্ত্বেও তিনি ২০০০ সালের এপ্রিলে যোগ দেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর মতো বহুজাতিক কোম্পানিতে। প্রচার আছে, যোগ্যতা নয়, লবিংয়ের মাধ্যমেই ব্যাটে চাকরি জোটে তার। চ্যানেল ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এখানে প্রায় পাঁচ বছর কাজ করেন।
এখান থেকে তিনি ২০০৫ সালের মার্চে যোগ দেন বাংলালিংকের হেড অব ডিরেক্ট সেলস ডিভিশনে। এখান থেকে রহিমআফরোজ লিমিটেডে। সেখানে ৬ মাস কাজ করার পর যোগ দেন মার্কেট এক্সেস প্রোভাইডারস লিমিটেডে।
সম্প্রতি জার্মানির বার্লিন স্কুল অব ক্রিয়েটিভ লিডারশিপ থেকে এমবিএ ডিগ্রি নেওয়ার চেষ্টা করছেন মনিরুল। এজন্য প্রায়ই তিনি জার্মানি যান।
আর এই ডিগ্রির জন্য যে অর্থ খরচ হচ্ছে তাও গ্রামীণফোন থেকে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
এমবিএ ডিগ্রি ছাড়াই গ্রামীণফোনের এমন একটি উচ্চপদে আসীন থাকার ঘটনা বিরল বলেই মনে করেন সহকর্মীদের অনেকে।
মনিরুল কবিরের বক্তব্য
কাজি মনিরুল কবির তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো থেকে আসা অনেক কর্মকর্তা দেশের বিভিন্ন কোম্পানিতেই রয়েছেন। কিন্তু এ ধরনের গ্রুপিং করার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, “এটা সত্যি গ্রামীণফোনে এসে আমার ভাগ্য খুলেছে।
তবে এই পর্যায়ে আমি একদিনে আসি নাই। এর আগে আমি ৫টি কোম্পানিতে কাজ করেছি। প্রতিটি জায়গায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেই আজ এখানে এসেছি। কঠোর পরিশ্রম করেছি আর এর সঙ্গে আমার বাবা-মায়ের দোয়া রয়েছে বলেই আজ এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। ” তিনি বলেন, “এখানে এসেই আমি থেমে থাকবো না।
আমি আরো বহুদূর যাবো। ”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে তিনি জার্মানিতে এমবিএ ডিগ্রি করছেন। তবে গ্রামীণফোনের অর্থে নয়। নিজের টাকায় এই ডিগ্রি নিচ্ছেন।
এদিকে, গ্রামীণফোনের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা হয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গেও কোনো ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করতে পারেননি কাজি মনিরুল কবির।
গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলতে পারেন না। যখনই গ্রামীণফোনের বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়, তখন বিজ্ঞাপন দিয়ে কাউ কাউকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
মার্কেটিং বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ মনিরুল কবিরের যোগাযোগ বিষয়ে কতটুকু দখল তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সম্প্রতি আন্দোলনরত কর্মীদের মতে যোগাযোগে দক্ষতা নেই বলেই তার আচরণে সবাই ক্ষিপ্ত। তবে একজন সহকর্মী জানান, একটাই যোগাযোগ কাজি মনিরুল ভালো জানেন তা হচ্ছে উর্ধ্বতনদের মন রক্ষা করে চলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।