প্রিয় সামহয়্যারইনব্লগ কর্তৃপক্ষ,
আপনারা সাধারণ নিয়ম এবং প্রত্যাশা সম্পর্কে লিখেছেন,
১ক. বাক স্বাধীনতা প্রসঙ্গ:
সামহোয়্যার ইন ব্লগের যাত্রা শুরু হয়েছিলো সাধারণ মানুষের কথা বলার একটি স্বাধীন মঞ্চ হিসাবে, যেখানে সবাই তাদের চিন্তা, মতামত, সৃজনশীলতা বিনিময় করতে পারবে। চিন্তাধারা যতই চরম-পন্থী(radical) কিংবা রক্ষণশীল (conservative) হোক না কেন, তার স্বাধীন মত প্রকাশকে আমরা সমর্থন করি, যতক্ষণ না তা রাষ্টীয় আইন বা অন্যের ব্যাক্তি স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে।
গত কয়েকদিন যাবত হেফাজত নিয়ে একটা বিভীষিকাময় অবস্থা চলছে দেশে। ইসলাম ধর্মের হেফাজত করার কথা বলে জন্ম নেওয়া "হেফাজতে ইসলাম " তার জন্মের প্রথম দিকেই আঘাত হানে স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনার উপর। ধর্মের দোহাই দিয়ে পবিত্র জুম্মার নামাজের পর গত ২২শে ফেব্রুয়ারী সারা দেশে হেফাজত হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের মাতৃভাষা ও স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাসের অংশ শহীদ মিনার,৩০ লক্ষ শহীদ ও ২লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া আমার সোনার বাংলার লাল-সবুজের পতাকার উপর।
শুধু এতেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ভিতর আগুন,প্রশাসনের উপর হামলা,সংবাদ কর্মীদের নির্বিচারে হামলা করেছিল তারা।
হেফাজতের ঐ তাণ্ডবের পর সাধারণ মানুষ ঠিকই বুঝেছিল যে,তারা ইসলামের হেফাজত করতে নয় বরং জামায়াত-শিবিরের হেফাজত করতেই তাদের আগমন। যদিও তারা বার বার মুখে বলে আসছিল,নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবীতে তাদের এমন তাণ্ডবময় আচরণ। যদি শুধু নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবীতে তাদের আন্দোলন,তবে কেন হামলা করা হল শহীদ মিনারে আর পোড়ানো হল জাতীয় পতাকা?
হেফাজতের দাবীর মুখে নাস্তিক ব্লগারদের ব্লগ থেকে নিষিদ্ধ করা হয় এবং সরকার নাস্তিক ব্লগারদের বিচারের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কিন্তু তাদের তৎপরতা তাতে এতটুকু কমেনি বরং তারা আরও আগ্রাসী ভূমিকায় এগোতে থাকে। হেফাজতের গত লংমার্চ শেষের সমাবেশে দেশবাসী দেখেছে কারা তাদের সহযোগিতা করেছিল। বিএনপি আর স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবির তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতা করে চলছিল। তাদের সাথে গলা মিলিয়েছিল বিশ্ববেহায়া এরশাদ।
এবার আসি গত ৫ই মার্চের ঢাকা অবরোধ শেষের শাপলা চত্বরের সমাবেশ প্রসঙ্গে।
ইসলামের হেফাজত করতে আসা হেফাজত মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের ঢাকায় জড় করে তাদের গোপন অভিলাষ পূর্ণ করার জন্য। বিকাল থেকেই হেফাজতের মুসলিম নামধারী জঙ্গি সন্ত্রাসীরা পুরা পল্টন-মতিঝিলে শুরু করে ভয়াবহ তাণ্ডব। তাদের তাণ্ডবে যানবাহন,ব্যাংক,অফিস,সোনার দোকান সহ আগুনে নিশ্চিহ্ন করে দেয় শ'খানেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের শেষ সম্বল। ঐ আগুনে শুধু ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের জানমাল শুধু পুড়ে যায়নি পুড়ানো হয়েছে আমার ইসলাম ধর্মের ঈমানের খুঁটি পবিত্র কোরআন আর আমার রসুলের হাদিস শরীফ। ইসলাম ধর্মের সূচনা থেকে আজকের দিন পর্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় প্লান করে এত কোরআন-হাদিস কেউ সারা দুনিয়ায় পুড়িয়েছে এমন নজির কোথাও নাই।
আর হেফাজত যখন ঐ তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছিল তখন আমাদের দেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৮ দলের নেতাকর্মীদের হেফাজতের সহায়তার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঠিক তখনই আবার সাইবার জগতে জামায়াত-শিবির বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং বাঁশের কেল্লা টাইপ পেজে বোমা বানানোর নিয়ম এবং জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের প্রশাসনের উপর হামলা করার নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল হেফাজত শাপলা চত্বর দখলে রাখবে এবং তার পরের দিন ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ থেকএরতারাও যোগ দিবে হেফাজতের সাথে। ঢাকা শহরে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করা হবে সরকারকে। কিন্তু তাদের সে খায়েশ পূর্ণ হতে দেয়নি সাধারণ মানুষের জানমাল হেফাজতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ,র্যাব,বিজিবি সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আর তারপর থকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করার জন্য জামায়াত-শিবির সহ হেফাজতের গডফাদার ১৮ দলীয় জোট শুরু করল মিথ্যা প্রগাপন্ডা ছড়ানো। ১৮ দলীয় জোটের অনুগত সংবাদপত্র,ব্লগ,ফেসবুক সহ সকল গণমাধ্যমকে তারা ব্যবহার শুরু করল তাদের ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হিসেবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাত্রের অভিযানে ২হাজার,৫হাজার বা আরও বেশী মানুষ হত্যা করেছে এবং তাদের লাশ গুম করা হয়েছে বলে কান্নাকাটি শুরু করল। এতে তাদের লাভ দুইটি ঃ
১। পবিত্র কোরআন-হাদিস পোড়ানোর ঘটনা আড়াল করা
এবং
২।
সাধারণ মানুষদের প্রশাসনের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেওয়া।
আমার কথা হল,নাস্তিক ব্লগারদের ব্লগ থেকে ব্যান করা হয়েছে মহান আল্লাহ্তায়ালা এবং নবী রাসুলদের নিয়ে বাজে কথা লেখার কারণে। তবে আজ যারা কোরআন-হাদিস পুড়িয়েছে তারা কেন নাস্তিক বা মুরতাদ হিসেবে চিহ্নিত হবে না?কেন তাদের মিথ্যা প্রগাপন্ডা ছড়ানো লেখা মুছে ফেলা হবেনা?ব্লগ ব্যবহারের শর্তাবলীতে স্পষ্ট করে লেখা আছে
৩. যেসকল কারণে আমরা পোস্ট কিংবা ছবি মুছে দিতে পারি:
৩ক. যে কোন ধরণের পোস্ট যা দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে বা দেশের ক্ষতি করতে পারে এমন কোন তথ্য প্রদান করে। দেশের আইনের সাথে পোস্ট কিংবা ছবির কন্টেন্ট সঙ্গতিপূর্ণ না হলে।
৩খ. যদি পোস্ট কিংবা ছবিতে ব্যক্তি আক্রমণ, হয়রানিমূলক, কুৎসা রটনামূলক, অশ্লীলতা, কুরুচিপূর্ণ, আপত্তিকর, গালিগালাজ এবং পর্ণগ্রাফি সম্বলিত বক্তব্য কিংবা বিষয় থাকে।
৩গ. যদি কোন পোস্ট কিংবা ছবিতে অন্য কারো ব্যক্তিস্বার্থ ক্ষুন্নকারী কিংবা একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য থাকে।
৩ঘ. যেকোন ধরণের কল্পিত বা মিথ্যা পোস্ট বিশৃঙ্খলা তৈরীর উদ্দেশ্যে খবরের আকারে প্রকাশ করা হলে ।
৩ঞ. বাংলাদেশ অথবা যে কোন স্বীকৃত জাতি বা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ইতিহাস, ধর্ম বিষয়ক সত্যকে অস্বীকার করে, বিরুদ্ধাচারণ করে, অসম্মান করে অথবা সত্যের অপলাপ বা অর্থহীন পোস্ট মুছে ফেলা হতে পারে এবং ব্লগারের ব্লগিং সুবিধা সাময়িক অথবা স্থায়ীভাবে স্থগিত কিংবা বাতিল করা হতে পারে ।
উপরের নীতিমালা যদি ব্লগ কর্তৃপক্ষ আপনারাই না মানেন তবে কেন তা দিয়ে রেখেছেন?আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যখন নাস্তিক ব্লগাররা ধর্ম নিয়ে বাজে কথা লিখলে আমারা সাধারণ ব্লগাররা তার প্রতিবাদ করেছি,নীতিমালা সহ রিপোর্ট করেছি কিন্তু ব্লগ কর্তৃপক্ষের আপনারা আমাদের কথা আমলে নেন নাই। সেই কথা আমলে নিছেন গুঁতা খাওয়ার পর।
আপনারা আবারও সেই একই কাজ আবার শুরু করেছেন। হেফাজতের সমর্থনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশকে একটা অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেওয়া পোষ্টগুলা কি করে সামুর পাতায় পাতায় শোভা পাচ্ছে তা দয়া করে বলবেন নিশ্চয়ই। আর যদি মিথ্যা তথ্য দেওয়া পোষ্ট গুলাকে যদি আপনারা সমর্থন করে যাবেন,এমন নীতি নিয়ে ব্লগ চলছে তাহলে সেটাও নোটিশবোর্ডে একটা নোটিশ দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেন। তাতে আমরা কেউ বিভ্রান্ত হবনা।
বিনীত নিবেদক
ইসলাম ধর্মের নগণ্য এক অনুসারী
মামুন হতভাগা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।